এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কেয়া | 78.203.***.*** | ০৩ মে ২০১৭ ২২:১৬365984
  • সপ্তাহান্তে সন্ধেবেলা চায়ের কাপ হাতে টিভির সামনে বসি মাঝে মাঝে। ওই সময়ে কলকাতার কয়েকটা চ্যানেলে সকালের বাংলা গানের অনুষ্ঠান হয়। নামী গায়ক গায়িকা এলে অনুষ্ঠান অন্য মাত্রা পায় সে তো জানা কথা। অনামীরাও কেউ কেউ মুগ্ধ করেন। কিন্তু সবসময় নয়।

    আকাশবাণী আর দূরদর্শনে যাঁরা গাইতে আসেন, সকলেই একটা পরীক্ষা পদ্ধতির (অডিশন) মধ্য দিয়ে নির্বাচিত। গ্রেডেড শিল্পী। একটা ন্যূনতম যোগ্যতামান পেরিয়ে এসেছেন তাঁরা। তাই গান শুনতে বসে আঁতকে উঠতে হয় না। কিন্তু অন্য প্রাইভেট চ্যানেলে সেরকম কোনও নির্বাচন পদ্ধতি নেই। কখনো কখনো সেখানে গান শুনে প্রশ্ন আসে, কীভাবে এমন শিল্পী নির্বাচিত হয়ে গান শোনাতে এলেন!
    চ্যানেল পাল্টাতে হয়। কিংবা একেবারে বন্ধ।

    ফেসবুকেই চোখে পড়ল গায়ক শুভদীপ মুখার্জির একটা পোস্ট। তিনি লিখছেন:
    "আর কতদিন প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলো (২/১ টা বাদ দিয়ে) নতুন ভাল শিল্পীদের বিনা পয়সায় মর্নিং শো-এ গান গাইয়ে এক্সপ্লয়েট করবে? আর্টিস্টরা ফেসবুকে ছবি দেওয়ার জন্য নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে, আর কতদিন গাইবে? প্রতিবাদ করো। আমি শুরু করে দিয়েছি অলরেডি।"
    প্রতিষ্ঠিত নামী শিল্পীদের বিনা পারিশ্রমিকে গান গাইতে বলবে, কবিতা শোনাতে বলবে- প্রাইভেট চ্যানেলের এতখানি ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস হবে না। তাঁরা করবেনই বা কেন? তত নামী মুখ নন কিন্তু চ্যানেল কর্তাদের পরিচিত- তাঁদের সঙ্গেও এমন করা যায় না। অতএব, রইল বাকি নতুন গায়ক গায়িকারা। তাঁরাই, যাকে বলে বলির পাঁঠা।

    শুভদীপ মুখার্জির পোস্টে নতুন অনেকে তাঁদের অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছেন। কেউ কেউ আক্ষেপ করেছেন, টাকা দিতে না পারলে আজকাল চ্যানেল অনুষ্ঠান জোটে না। এমনকি, যিনি গান শেখাচ্ছেন তিনিও কোনও অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ করে দিলে তার জন্য আলাদা টাকা নেন। কোরাস গানের জন্য একটা টাকার অঙ্ক। একক গান হলে তার দ্বিগুণ টাকা।
    আকাশবাণী বা দূরদর্শনে গেয়ে নতুন শিল্পীরা পারিশ্রমিক পান। অন্যদিকে অভিযোগ- বেশিরভাগ প্রাইভেট চ্যানেলে পারিশ্রমিকের গল্পই নেই, উল্টে টাকা দিয়ে স্লট নেওয়া।

    যাঁর গলায় গান আছে কিন্তু চ্যানেলকে দেবার মতো আর্থিক জোর নেই, তাঁর গান শ্রোতা অবধি পৌঁছচ্ছে না। আর যাঁর যোগ্যতা যথেষ্ট নয়, টাকার জোরে তিনি চলে আসছেন গান গাইতে। চেনা-পরিচিতরা ফোন করে ভাল ভাল বিশেষণের বন্যা ছুটিয়ে দিচ্ছেন। সঙ্গে ফেসবুকে ছবি। আর কী চাই! কিছু অখুশি শ্রোতা-দর্শক চ্যানেল বদলালে কিস্যু আসে যায় না চ্যানেল কর্তাদের।

    এ ছবিটা কিন্তু শুধু গানের জগতেই নয়। প্রায় সর্বত্রই।
    বছর কয়েক আগের একটা ঘটনা বলি। নিজের দেখা।

    একটা এফ এম চ্যানেলের জন্য নাটকের সিরিজের রেকর্ডিং চলছে স্টুডিওতে। নাটকে একটা স্কুলে পড়া কিশোরের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য একটি ছেলে এসেছে মা-র সঙ্গে। ক্লাস সেভেন বা এইট। সেদিন স্কুল ছুটি।
    বেশ ভাল অভিনয় করল ছেলেটি। পরিচালক বাইরে এসে ছেলেটির মা কে ডেকে বললেন, "ও খুব ভাল করেছে। ভাবছি, আর একটা নাটকেও একটা ছোট্ট অংশ ওকে দিয়েই করাব। আপনি কি আর একটু সময় দিতে পারবেন?"
    ছেলেটির মা 'হ্যাঁ' বলতে পরিচালক চলে গেলেন ভেতরে। রেকর্ডিং এ।
    'হ্যাঁ' বলেছেন বটে। ভদ্রমহিলার মুখ কিন্তু শুকিয়ে গেছে। বাইরে কেউ কেউ খেয়াল করলেন ব্যাপারটা। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে সঙ্কোচ করছিলেন।
    শেষে অনেক ইতস্তত করে ভদ্রমহিলা মিউজিক কম্পোজারকে বলেই ফেললেন:
    "আচ্ছা পরের নাটকটা কি আজই করতে হবে?"
    "আপনার কি তাড়া আছে? দেরি হয়ে যাবে খুব?"
    "না … মানে তাড়া ঠিক নয়… সুযোগ পেয়েছে যখন করতে পারলে তো খুবই ভাল কিন্তু আমি ঠিক দুটো নাটকের জন্য রেডি হয়ে আসিনি তো … তাই …"
    "বাড়িতে ফোন করে দিন না। খুব বেশি সময় লাগবে না। সেরকম হলে ওর অংশটা আলাদা করে রেকর্ড করে নেওয়া হবে।"
    "না না বাড়ি নিয়ে চিন্তা নেই। আসলে… মানে আমি তো একটা নাটকের কথাই ভেবেছিলাম … তাই মানে … ইয়ে… দুটো নাটকের টাকা নিয়ে রেডি হয়ে আসিনি…"
    "দুটো নাটকের টাকা? আপনি টাকা আনবেনই বা কেন?"
    "ওমা! ও যে নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পেল! তার জন্যে টাকা দিতে হবে না? এরকমই তো দিতে হয়। আমার ছেলে তো … …- এর (সেলিব্রেটি!) কাছে নাটক আর কবিতা শেখে। ওখান থেকে যেখানেই সুযোগ করে দেয় ওকে- টাকা দিতে হয় তো তার জন্য। সেই হিসেবেই একটা নাটকের জন্য টাকা এনেছি। এখন দুটো নাটক হলে তো ডবল টাকা … এখন অতটা সঙ্গে নেই …! "

    ছেলেটি দুটো নাটকে অভিনয়ের জন্য সাম্মানিক পেয়েছিল সেদিন। আকাশবাণীতে অডিশন দিয়ে সুযোগ পেলেও সাম্মানিক প্রাপ্য হবে তার, টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান করতে হবে না - এটাও জেনেছিলেন তার মা।

    সন্তানের প্রতিভাকে সকলের সামনে তুলে ধরতে সকলেই ভালবাসি। কিন্তু যে শিশু-কিশোররা আজ এভাবে সুযোগ পাচ্ছে, কে বলতে পারে বড় হতে হতে তাদের মনে এই ধারণাই দৃঢ় হবে না, যে টাকা দিতে পারলেই সুযোগ আসে! যোগ্যতা বড় কথা নয়!
    তখন? প্রতিভায় বা যোগ্যতামানের নিরিখে তাদের থেকে সত্যিই এগিয়ে থাকা মানুষকে টপকে তারা চলে আসতে পারে সামনের সারিতে। অর্থের বিনিময়ে। এবং সম্পূর্ণ নির্দ্বিধায়। কারণ, তারা তো দেখেছে তাদের বাবা মা টাকা দিয়ে সুযোগ কিনে নিয়েছেন।
    সেদিন কি লজ্জিত হবেন মা বাবা-রা একটুও? তার চেয়ে এখন আপোস না করাটাই কি ভাল নয়?

    অ্যাকাডেমিক শিক্ষা, সঙ্গীত, নাটক - যাই হোক, শেখার আসল উদ্দেশ্য কিন্তু ভালটুকু অন্তরে গ্রহণ করা। সেই ভালটুকু দিয়ে আরও উৎকর্ষের সন্ধান করা। তাতেই মনুষ্যত্বের বিকাশ। এই কথাটা বাবা মা ছাড়া আর কে ভাল শেখাতে পারেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন