এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • একক | 53.224.***.*** | ২৩ মার্চ ২০১৭ ০৭:৩৬364946
  • ভয় পাবেন না । লিখুন ।
  • শুভ্রাংশু সরকার | 57.15.***.*** | ২৩ মার্চ ২০১৭ ০৭:৩৯364949
  • কাল বাড়ি ফেরার পথে যে অভিজ্ঞতা হল, তাতে ভয় পেয়েছি. হ্যাঁ. আই রিপিট. আমি ভয় পেয়েছি. নিজের জন্যে নয়. এই দেশটার জন্যে. এই রাজ্যটার জন্যে.

    ট্রেনে আমি সাধারণত ভ্যান্ডার বগিতে যাতায়াত করি. বিড়ি খাওয়া যায় তাই. আর বেশি রাতের ট্রেনের ভ্যান্ডার বগি হল হীরের খনি. কতরকমের মানুষ!! কতরকমের অভিজ্ঞতা!! লেখালেখি করতে পারলে সেসব নিয়ে খান দুয়েক বেস্ট সেলার সিওর নামিয়ে দিতাম. কন্টেন্টই কাজ করে দিত..
    আজও ১০:৪০ মিনিটের শান্তিপুর লোকালে সামনের ভ্যান্ডারে উঠে অভ্যাসমত গেটে দাঁড়িয়ে গেছি. সময় মত ট্রেন ছাড়ল. ইতিমধ্যে একজন লোক পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন. পরনে জামা, প্যান্ট, কাঁধে ব্যাগ. হাতে সান্ধ্য খবরের কাগজ,চোখে চশমা. জামাকাপড় ইস্ত্রিবিহীন হলেও পরিস্কার. ট্রেন চলা শুরু হতেই কাগজটা পড়া শুরু করলেন. কারশেডের কাছে ট্রেন এসেছে যখন, তিনি ঐপাশের লোকটাকে বলে উঠলেন
    '' পুরো চোর, সব চোর. মদন, মুকুল, শোভন, ববি সব চোর. সারদার অর্ধেক টাকা মদনের কাছে. ওকে কিছু বলবে নাকি দল? '' (এখান থেকে আমি শুনেছি. আগে কিছু কথা হয়ে থাকতে পারে)
    ঐপাশের লোক - কেন দিদি?
    চশমা- দিদি কিছু করেনি. চারপাশের লোকগুলোই শেষ করে দিল.
    ঐপাশের লোকের গলা এবার চড়ল. '' হয়নাকি এরকম? দলের মাথা দিদি. দিদি জানে না আর এরা চুরি করে ফেলল!!''
    এতক্ষণে লোকটাকে খেয়াল করলাম. পরনে আধময়লা টিশার্ট আর লুঙ্গি. গাল ভাঙা. খোঁচা খোঁচা দাড়ি. একটা ফুলের বস্তা সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন.
    কথা খানিক এগোলো. মাঝে চশমা পরা লোকটা বলল, '' সিপিএম এদের থেকে অনেক ভাল ছিল. ওরা সোনার ডিম দেওয়া হাঁসের পেটকাটেনি. রয়েসয়ে খেয়েছে. শিক্ষিত চোর ছিল''
    ট্রেন গতি নিয়েছে. এবারে হালকা চালে বললাম, '' এসব বলে লাভ কী? আবার ভোট হলে তো ওরাই জিতবে. ''
    পাশের লোকটা বলল '' উপায় কী?অপশন কোথায় আর? ''
    এবার লুঙ্গি পরা লোকটা গলা চড়ালেন..
    ''কেন? বিজেপি আছে তো এখন''
    আচমকা কেউ ঠাটিয়ে চড় মারলে এর থেকে কম চমকাতাম. সত্যি বলছি.
    যথাসম্ভব ঠাণ্ডা গলায় বললাম, ''বিজেপি!! কী বলছেন!সে তো আরও ভয়ানক... ''
    ''কেন? উত্তরপ্রদেশে জিতল যে!আমাদের বাংলাতেই যত ভুলভাল প্রচার. সন্ত্রাসবাদ,(বোধহয় মৌলবাদ বলতে চাইছিলেন) দাঙ্গা সব ফালতু. বাংলার বাইরে সব জায়গায় জিতছে কী করে তাহলে? ''
    আরেকবার বললাম,''মুজফফরনগর এর রায়ট, অসমের রায়ট, বাবরি মসজিদ, গোধরা সবই কী......''
    কথা শেষ করতে দিলেন না লোকটা.. '' সব গুজব. সব গুজব. ওসব হলে বিজেপি জেতে নাকি?''
    শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল ভয়ের চোটে. এই যদি গ্রাস রুটের লোকের মনোভাব হয়, যদি এগুলো তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাহলে ভবিষ্যৎ ভীতিজনক, প্রচন্ড ভয়ের. সিরিয়াসলি ভয় পাওয়ার মত. রাইট উইংয়ের মৌলবাদী মত গুলোও তো এবার থেকে লোকে সত্যি বলে মানা শুরু করবে!!!
    কিন্তু সত্যিকারের ভয় পাওয়ার কারণ এর পরে ঘটলো. উল্টো দিকের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোক এবার এগিয়ে এসে তিনজনের কাছে দাঁড়ালেন. পরনে নীল শার্ট. ইন করে পরা. কালো ট্রাউজার. পায়ে লেদারের শু. আমার দিকে আঙুল তুলে বললেন '' ধুলাগড়ে কী হয়েছিল? কাশ্মীরের হিন্দু গুলো কোথায় গেল? গোধরায় আগে হিন্দুদের পোড়ানো হয়নি ট্রেনের মধ্যে?''
    লুঙ্গি পরা লোকটা এর সাথেই বলে চলেছেন, ''অত কিছু করলে বিজেপি রাজ্যে রাজ্যে জেতে কী করে? ইউপির জিতটা দেখলেন? টিভি রিপোর্টে যত বলেছিল, তার থেকেও বেশি ভোট পেয়েছে......''
    নীল জামা ওদিকে বলেই যাচ্ছেন. '' হিন্দুদের স্বার্থ হিন্দুরা না দেখলে কে দেখবে? এই ভূলভাল মানসিকতা ছাড়ুন............ ''
    আমার তখন চিন্তাভাবনা অসাড় হয়ে আসছে. গলার আওয়াজ কমে আসছে. মনে মনে ভাবছি, এই মানসিকতা গুলো কবে তৈরি হল এ রাজ্যে! নীল জামা, লুঙ্গি আর চশমা অনর্গল কিছু বলে যাচ্ছেন. মাঝে মাঝে কানে আসছে '' বাংলায় দাঙ্গার ভয়টা পুরো গুজব '', "মুসলিম গুলো তোষণ পেয়ে বাড় বেড়ছে''" তৃণমূলের উপর ভরসাটা পুরো চলে গেছে,"..... গোটা বগির সবাই হাঁ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে. কেউ কেউ হালকা হাসছেন.
    একসময় গা ঝাড়া দিয়ে গলায় জোর এনে বললাম"দাদা, হিন্দু মুসলমান হওয়ার আগে মানুষ হলে পরে হয় না?" নীল জামা পরা লোকটা চলে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, '' আমি মানুষ. আপনি অসাধারণ মানুষ'' কথাবার্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল এরপর.
    লুঙ্গি পরা লোকটা এরপর বললেন "দাদা কিছু মনে করবেন না. এবিপি, ২৪ ঘণ্টাতে বসে যেসব লোকগুলো বড় বড় কথা বলে, তাতে ভরসা হয় না." দূর থেকে শুনছি নীল জামা বলছে,"আরে বাবা আরএসএস স্বাধীনতার আগে থেকে আছে. এতদিন ধরে ভুলভাল কাজ করে কেউ টিকতে পারে নাকি? "
    আমি ততক্ষণে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি. আর মনে মনে ভাবছি, এই যদি গ্রাউন্ড রিয়েলিটি হয়, তাহলে খুব খুব খারাপ সময় আসছে. একজন বলছেন,"২০১৯ এ হবে না. ২০২৪ এ বিজেপি আসবেই". "একটু ঠিকঠাক নেতা পেলেই বিজেপি ফাটিয়ে দেবে"
    তৃণমূলের সমর্থনের ভিত্তি কিন্তু আলগা হচ্ছে. নিজের পোষা কালকেউটের ছোবল এবার খাবেই. আর যেসব তাত্ত্বিকরা ভাবছেন, 'ইউপির রেজাল্ট নিয়ে চাড্ডিদের নাচনকোদন সার. এ বাংলায় দাঁত ফোটাতে পারবে না" তাঁদের বলব রিয়েলিটি চেকের সময় হয়ে এসেছে. গ্রাউন্ড রিয়েলিটি কিন্তু দ্রুত পাল্টাচ্ছে. আসলে এটা হয়তো অনিবার্য ছিল. কোনও দেশে বামপন্থী রাজনীতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলে সেখানে ফ্যাসিস্ট শাসন শক্তিশালী হবেই. এখনও এ রাজ্যের বামপন্থী দল গুলো স্বপনকুমারের গল্পের মত 'কোথা হইতে কী হইল, . বিজেপি পলাইয়া গেল' টাইপ কিছু হবে ভেবে বসে থাকলে, ইতিহাসেও ঠাঁই হবে না তাঁদের. কারণ ফ্যাসিস্টরা ইতিহাসটাও নিজেদের মত করে তৈরি করে নেয়. খুব খারাপ সময় আসছে. লোকের মনোভাব দ্রুত পাল্টাচ্ছে. আর খারাপের দিকে সেটা.
  • শুভ্রাংশু সরকার | 57.15.***.*** | ২৩ মার্চ ২০১৭ ০৭:৩৯364948
  • কাল বাড়ি ফেরার পথে যে অভিজ্ঞতা হল, তাতে ভয় পেয়েছি. হ্যাঁ. আই রিপিট. আমি ভয় পেয়েছি. নিজের জন্যে নয়. এই দেশটার জন্যে. এই রাজ্যটার জন্যে.

    ট্রেনে আমি সাধারণত ভ্যান্ডার বগিতে যাতায়াত করি. বিড়ি খাওয়া যায় তাই. আর বেশি রাতের ট্রেনের ভ্যান্ডার বগি হল হীরের খনি. কতরকমের মানুষ!! কতরকমের অভিজ্ঞতা!! লেখালেখি করতে পারলে সেসব নিয়ে খান দুয়েক বেস্ট সেলার সিওর নামিয়ে দিতাম. কন্টেন্টই কাজ করে দিত..
    আজও ১০:৪০ মিনিটের শান্তিপুর লোকালে সামনের ভ্যান্ডারে উঠে অভ্যাসমত গেটে দাঁড়িয়ে গেছি. সময় মত ট্রেন ছাড়ল. ইতিমধ্যে একজন লোক পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন. পরনে জামা, প্যান্ট, কাঁধে ব্যাগ. হাতে সান্ধ্য খবরের কাগজ,চোখে চশমা. জামাকাপড় ইস্ত্রিবিহীন হলেও পরিস্কার. ট্রেন চলা শুরু হতেই কাগজটা পড়া শুরু করলেন. কারশেডের কাছে ট্রেন এসেছে যখন, তিনি ঐপাশের লোকটাকে বলে উঠলেন
    '' পুরো চোর, সব চোর. মদন, মুকুল, শোভন, ববি সব চোর. সারদার অর্ধেক টাকা মদনের কাছে. ওকে কিছু বলবে নাকি দল? '' (এখান থেকে আমি শুনেছি. আগে কিছু কথা হয়ে থাকতে পারে)
    ঐপাশের লোক - কেন দিদি?
    চশমা- দিদি কিছু করেনি. চারপাশের লোকগুলোই শেষ করে দিল.
    ঐপাশের লোকের গলা এবার চড়ল. '' হয়নাকি এরকম? দলের মাথা দিদি. দিদি জানে না আর এরা চুরি করে ফেলল!!''
    এতক্ষণে লোকটাকে খেয়াল করলাম. পরনে আধময়লা টিশার্ট আর লুঙ্গি. গাল ভাঙা. খোঁচা খোঁচা দাড়ি. একটা ফুলের বস্তা সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন.
    কথা খানিক এগোলো. মাঝে চশমা পরা লোকটা বলল, '' সিপিএম এদের থেকে অনেক ভাল ছিল. ওরা সোনার ডিম দেওয়া হাঁসের পেটকাটেনি. রয়েসয়ে খেয়েছে. শিক্ষিত চোর ছিল''
    ট্রেন গতি নিয়েছে. এবারে হালকা চালে বললাম, '' এসব বলে লাভ কী? আবার ভোট হলে তো ওরাই জিতবে. ''
    পাশের লোকটা বলল '' উপায় কী?অপশন কোথায় আর? ''
    এবার লুঙ্গি পরা লোকটা গলা চড়ালেন..
    ''কেন? বিজেপি আছে তো এখন''
    আচমকা কেউ ঠাটিয়ে চড় মারলে এর থেকে কম চমকাতাম. সত্যি বলছি.
    যথাসম্ভব ঠাণ্ডা গলায় বললাম, ''বিজেপি!! কী বলছেন!সে তো আরও ভয়ানক... ''
    ''কেন? উত্তরপ্রদেশে জিতল যে!আমাদের বাংলাতেই যত ভুলভাল প্রচার. সন্ত্রাসবাদ,(বোধহয় মৌলবাদ বলতে চাইছিলেন) দাঙ্গা সব ফালতু. বাংলার বাইরে সব জায়গায় জিতছে কী করে তাহলে? ''
    আরেকবার বললাম,''মুজফফরনগর এর রায়ট, অসমের রায়ট, বাবরি মসজিদ, গোধরা সবই কী......''
    কথা শেষ করতে দিলেন না লোকটা.. '' সব গুজব. সব গুজব. ওসব হলে বিজেপি জেতে নাকি?''
    শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল ভয়ের চোটে. এই যদি গ্রাস রুটের লোকের মনোভাব হয়, যদি এগুলো তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাহলে ভবিষ্যৎ ভীতিজনক, প্রচন্ড ভয়ের. সিরিয়াসলি ভয় পাওয়ার মত. রাইট উইংয়ের মৌলবাদী মত গুলোও তো এবার থেকে লোকে সত্যি বলে মানা শুরু করবে!!!
    কিন্তু সত্যিকারের ভয় পাওয়ার কারণ এর পরে ঘটলো. উল্টো দিকের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোক এবার এগিয়ে এসে তিনজনের কাছে দাঁড়ালেন. পরনে নীল শার্ট. ইন করে পরা. কালো ট্রাউজার. পায়ে লেদারের শু. আমার দিকে আঙুল তুলে বললেন '' ধুলাগড়ে কী হয়েছিল? কাশ্মীরের হিন্দু গুলো কোথায় গেল? গোধরায় আগে হিন্দুদের পোড়ানো হয়নি ট্রেনের মধ্যে?''
    লুঙ্গি পরা লোকটা এর সাথেই বলে চলেছেন, ''অত কিছু করলে বিজেপি রাজ্যে রাজ্যে জেতে কী করে? ইউপির জিতটা দেখলেন? টিভি রিপোর্টে যত বলেছিল, তার থেকেও বেশি ভোট পেয়েছে......''
    নীল জামা ওদিকে বলেই যাচ্ছেন. '' হিন্দুদের স্বার্থ হিন্দুরা না দেখলে কে দেখবে? এই ভূলভাল মানসিকতা ছাড়ুন............ ''
    আমার তখন চিন্তাভাবনা অসাড় হয়ে আসছে. গলার আওয়াজ কমে আসছে. মনে মনে ভাবছি, এই মানসিকতা গুলো কবে তৈরি হল এ রাজ্যে! নীল জামা, লুঙ্গি আর চশমা অনর্গল কিছু বলে যাচ্ছেন. মাঝে মাঝে কানে আসছে '' বাংলায় দাঙ্গার ভয়টা পুরো গুজব '', "মুসলিম গুলো তোষণ পেয়ে বাড় বেড়ছে''" তৃণমূলের উপর ভরসাটা পুরো চলে গেছে,"..... গোটা বগির সবাই হাঁ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে. কেউ কেউ হালকা হাসছেন.
    একসময় গা ঝাড়া দিয়ে গলায় জোর এনে বললাম"দাদা, হিন্দু মুসলমান হওয়ার আগে মানুষ হলে পরে হয় না?" নীল জামা পরা লোকটা চলে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, '' আমি মানুষ. আপনি অসাধারণ মানুষ'' কথাবার্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল এরপর.
    লুঙ্গি পরা লোকটা এরপর বললেন "দাদা কিছু মনে করবেন না. এবিপি, ২৪ ঘণ্টাতে বসে যেসব লোকগুলো বড় বড় কথা বলে, তাতে ভরসা হয় না." দূর থেকে শুনছি নীল জামা বলছে,"আরে বাবা আরএসএস স্বাধীনতার আগে থেকে আছে. এতদিন ধরে ভুলভাল কাজ করে কেউ টিকতে পারে নাকি? "
    আমি ততক্ষণে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি. আর মনে মনে ভাবছি, এই যদি গ্রাউন্ড রিয়েলিটি হয়, তাহলে খুব খুব খারাপ সময় আসছে. একজন বলছেন,"২০১৯ এ হবে না. ২০২৪ এ বিজেপি আসবেই". "একটু ঠিকঠাক নেতা পেলেই বিজেপি ফাটিয়ে দেবে"
    তৃণমূলের সমর্থনের ভিত্তি কিন্তু আলগা হচ্ছে. নিজের পোষা কালকেউটের ছোবল এবার খাবেই. আর যেসব তাত্ত্বিকরা ভাবছেন, 'ইউপির রেজাল্ট নিয়ে চাড্ডিদের নাচনকোদন সার. এ বাংলায় দাঁত ফোটাতে পারবে না" তাঁদের বলব রিয়েলিটি চেকের সময় হয়ে এসেছে. গ্রাউন্ড রিয়েলিটি কিন্তু দ্রুত পাল্টাচ্ছে. আসলে এটা হয়তো অনিবার্য ছিল. কোনও দেশে বামপন্থী রাজনীতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলে সেখানে ফ্যাসিস্ট শাসন শক্তিশালী হবেই. এখনও এ রাজ্যের বামপন্থী দল গুলো স্বপনকুমারের গল্পের মত 'কোথা হইতে কী হইল, . বিজেপি পলাইয়া গেল' টাইপ কিছু হবে ভেবে বসে থাকলে, ইতিহাসেও ঠাঁই হবে না তাঁদের. কারণ ফ্যাসিস্টরা ইতিহাসটাও নিজেদের মত করে তৈরি করে নেয়. খুব খারাপ সময় আসছে. লোকের মনোভাব দ্রুত পাল্টাচ্ছে. আর খারাপের দিকে সেটা.
  • শুভ্রাংশু সরকার | 57.15.***.*** | ২৩ মার্চ ২০১৭ ০৭:৩৯364947
  • কাল বাড়ি ফেরার পথে যে অভিজ্ঞতা হল, তাতে ভয় পেয়েছি. হ্যাঁ. আই রিপিট. আমি ভয় পেয়েছি. নিজের জন্যে নয়. এই দেশটার জন্যে. এই রাজ্যটার জন্যে.

    ট্রেনে আমি সাধারণত ভ্যান্ডার বগিতে যাতায়াত করি. বিড়ি খাওয়া যায় তাই. আর বেশি রাতের ট্রেনের ভ্যান্ডার বগি হল হীরের খনি. কতরকমের মানুষ!! কতরকমের অভিজ্ঞতা!! লেখালেখি করতে পারলে সেসব নিয়ে খান দুয়েক বেস্ট সেলার সিওর নামিয়ে দিতাম. কন্টেন্টই কাজ করে দিত..
    আজও ১০:৪০ মিনিটের শান্তিপুর লোকালে সামনের ভ্যান্ডারে উঠে অভ্যাসমত গেটে দাঁড়িয়ে গেছি. সময় মত ট্রেন ছাড়ল. ইতিমধ্যে একজন লোক পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন. পরনে জামা, প্যান্ট, কাঁধে ব্যাগ. হাতে সান্ধ্য খবরের কাগজ,চোখে চশমা. জামাকাপড় ইস্ত্রিবিহীন হলেও পরিস্কার. ট্রেন চলা শুরু হতেই কাগজটা পড়া শুরু করলেন. কারশেডের কাছে ট্রেন এসেছে যখন, তিনি ঐপাশের লোকটাকে বলে উঠলেন
    '' পুরো চোর, সব চোর. মদন, মুকুল, শোভন, ববি সব চোর. সারদার অর্ধেক টাকা মদনের কাছে. ওকে কিছু বলবে নাকি দল? '' (এখান থেকে আমি শুনেছি. আগে কিছু কথা হয়ে থাকতে পারে)
    ঐপাশের লোক - কেন দিদি?
    চশমা- দিদি কিছু করেনি. চারপাশের লোকগুলোই শেষ করে দিল.
    ঐপাশের লোকের গলা এবার চড়ল. '' হয়নাকি এরকম? দলের মাথা দিদি. দিদি জানে না আর এরা চুরি করে ফেলল!!''
    এতক্ষণে লোকটাকে খেয়াল করলাম. পরনে আধময়লা টিশার্ট আর লুঙ্গি. গাল ভাঙা. খোঁচা খোঁচা দাড়ি. একটা ফুলের বস্তা সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন.
    কথা খানিক এগোলো. মাঝে চশমা পরা লোকটা বলল, '' সিপিএম এদের থেকে অনেক ভাল ছিল. ওরা সোনার ডিম দেওয়া হাঁসের পেটকাটেনি. রয়েসয়ে খেয়েছে. শিক্ষিত চোর ছিল''
    ট্রেন গতি নিয়েছে. এবারে হালকা চালে বললাম, '' এসব বলে লাভ কী? আবার ভোট হলে তো ওরাই জিতবে. ''
    পাশের লোকটা বলল '' উপায় কী?অপশন কোথায় আর? ''
    এবার লুঙ্গি পরা লোকটা গলা চড়ালেন..
    ''কেন? বিজেপি আছে তো এখন''
    আচমকা কেউ ঠাটিয়ে চড় মারলে এর থেকে কম চমকাতাম. সত্যি বলছি.
    যথাসম্ভব ঠাণ্ডা গলায় বললাম, ''বিজেপি!! কী বলছেন!সে তো আরও ভয়ানক... ''
    ''কেন? উত্তরপ্রদেশে জিতল যে!আমাদের বাংলাতেই যত ভুলভাল প্রচার. সন্ত্রাসবাদ,(বোধহয় মৌলবাদ বলতে চাইছিলেন) দাঙ্গা সব ফালতু. বাংলার বাইরে সব জায়গায় জিতছে কী করে তাহলে? ''
    আরেকবার বললাম,''মুজফফরনগর এর রায়ট, অসমের রায়ট, বাবরি মসজিদ, গোধরা সবই কী......''
    কথা শেষ করতে দিলেন না লোকটা.. '' সব গুজব. সব গুজব. ওসব হলে বিজেপি জেতে নাকি?''
    শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল ভয়ের চোটে. এই যদি গ্রাস রুটের লোকের মনোভাব হয়, যদি এগুলো তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাহলে ভবিষ্যৎ ভীতিজনক, প্রচন্ড ভয়ের. সিরিয়াসলি ভয় পাওয়ার মত. রাইট উইংয়ের মৌলবাদী মত গুলোও তো এবার থেকে লোকে সত্যি বলে মানা শুরু করবে!!!
    কিন্তু সত্যিকারের ভয় পাওয়ার কারণ এর পরে ঘটলো. উল্টো দিকের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোক এবার এগিয়ে এসে তিনজনের কাছে দাঁড়ালেন. পরনে নীল শার্ট. ইন করে পরা. কালো ট্রাউজার. পায়ে লেদারের শু. আমার দিকে আঙুল তুলে বললেন '' ধুলাগড়ে কী হয়েছিল? কাশ্মীরের হিন্দু গুলো কোথায় গেল? গোধরায় আগে হিন্দুদের পোড়ানো হয়নি ট্রেনের মধ্যে?''
    লুঙ্গি পরা লোকটা এর সাথেই বলে চলেছেন, ''অত কিছু করলে বিজেপি রাজ্যে রাজ্যে জেতে কী করে? ইউপির জিতটা দেখলেন? টিভি রিপোর্টে যত বলেছিল, তার থেকেও বেশি ভোট পেয়েছে......''
    নীল জামা ওদিকে বলেই যাচ্ছেন. '' হিন্দুদের স্বার্থ হিন্দুরা না দেখলে কে দেখবে? এই ভূলভাল মানসিকতা ছাড়ুন............ ''
    আমার তখন চিন্তাভাবনা অসাড় হয়ে আসছে. গলার আওয়াজ কমে আসছে. মনে মনে ভাবছি, এই মানসিকতা গুলো কবে তৈরি হল এ রাজ্যে! নীল জামা, লুঙ্গি আর চশমা অনর্গল কিছু বলে যাচ্ছেন. মাঝে মাঝে কানে আসছে '' বাংলায় দাঙ্গার ভয়টা পুরো গুজব '', "মুসলিম গুলো তোষণ পেয়ে বাড় বেড়ছে''" তৃণমূলের উপর ভরসাটা পুরো চলে গেছে,"..... গোটা বগির সবাই হাঁ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে. কেউ কেউ হালকা হাসছেন.
    একসময় গা ঝাড়া দিয়ে গলায় জোর এনে বললাম"দাদা, হিন্দু মুসলমান হওয়ার আগে মানুষ হলে পরে হয় না?" নীল জামা পরা লোকটা চলে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, '' আমি মানুষ. আপনি অসাধারণ মানুষ'' কথাবার্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল এরপর.
    লুঙ্গি পরা লোকটা এরপর বললেন "দাদা কিছু মনে করবেন না. এবিপি, ২৪ ঘণ্টাতে বসে যেসব লোকগুলো বড় বড় কথা বলে, তাতে ভরসা হয় না." দূর থেকে শুনছি নীল জামা বলছে,"আরে বাবা আরএসএস স্বাধীনতার আগে থেকে আছে. এতদিন ধরে ভুলভাল কাজ করে কেউ টিকতে পারে নাকি? "
    আমি ততক্ষণে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি. আর মনে মনে ভাবছি, এই যদি গ্রাউন্ড রিয়েলিটি হয়, তাহলে খুব খুব খারাপ সময় আসছে. একজন বলছেন,"২০১৯ এ হবে না. ২০২৪ এ বিজেপি আসবেই". "একটু ঠিকঠাক নেতা পেলেই বিজেপি ফাটিয়ে দেবে"
    তৃণমূলের সমর্থনের ভিত্তি কিন্তু আলগা হচ্ছে. নিজের পোষা কালকেউটের ছোবল এবার খাবেই. আর যেসব তাত্ত্বিকরা ভাবছেন, 'ইউপির রেজাল্ট নিয়ে চাড্ডিদের নাচনকোদন সার. এ বাংলায় দাঁত ফোটাতে পারবে না" তাঁদের বলব রিয়েলিটি চেকের সময় হয়ে এসেছে. গ্রাউন্ড রিয়েলিটি কিন্তু দ্রুত পাল্টাচ্ছে. আসলে এটা হয়তো অনিবার্য ছিল. কোনও দেশে বামপন্থী রাজনীতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলে সেখানে ফ্যাসিস্ট শাসন শক্তিশালী হবেই. এখনও এ রাজ্যের বামপন্থী দল গুলো স্বপনকুমারের গল্পের মত 'কোথা হইতে কী হইল, . বিজেপি পলাইয়া গেল' টাইপ কিছু হবে ভেবে বসে থাকলে, ইতিহাসেও ঠাঁই হবে না তাঁদের. কারণ ফ্যাসিস্টরা ইতিহাসটাও নিজেদের মত করে তৈরি করে নেয়. খুব খারাপ সময় আসছে. লোকের মনোভাব দ্রুত পাল্টাচ্ছে. আর খারাপের দিকে সেটা.
  • boka | 37.63.***.*** | ২৩ মার্চ ২০১৭ ২৩:২১364950
  • এই ভয়টা আমিও পাচ্ছি। চেনা পরিচিত, বন্ধু বান্ধব, সাধারণ পেঁচি পাবলিক - সবাই মোটামুটি ওই নীল জামার মতোই ভাবছেন। যতই উল্টো বলা, ততই চেপে বসছে, যদিও অন্য রাস্তা দেখছিনা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন