এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যুদ্ধ, জনতা ও কিছু খটকা

    Abin Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ মে ২০২৫ | ৭৯ বার পঠিত
  • পহেলগাঁও এ বর্বরোচিত সন্ত্রাসবাদী হানার পর থেকেই একটা প্রত্যাঘাতের প্রত্যাশা কাজ করছিল। সেটা হয়েছে। নিশ্চয়ই খুব সফল ভাবেই হয়েছে। মাসুদ আজহারের পরিবারের জনা দশেক ব্যক্তি মারা গেছে। আরো অনেক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। নিরীহ নিরস্ত্র পর্যটক দের হত্যার প্রতিকার করতে এরকম কিছু হয়তো অনিবার্য ছিল। সরকার ও সেনাদলের এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু খবর ছড়ানোর পর থেকেই সমাজের বিভিন্ন অংশে এক ধরণের অদ্ভুত উল্লাস দেখা যাচ্ছে। কেউ মিম বানাচ্ছে, কেউ ফিল্মি সংলাপ দিয়ে আরো কি কি হতে চলেছে তার আভাস দিচ্ছে, কেউ মিসাইলের বিস্ফোরণের দীপ্তি কে মধ্যরাতের সূর্য বলছে, কেউ এই প্রত্যাঘাতের নামকরণে অভিভূত হয়ে দেবী মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। এমনকি ক্রিকেটের মাঠে ভারতীয় সেনা বাহিনীকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। রাজনৈতিক সমাজ নাগরিক সমাজের সর্বত্র অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে। OTT তে উরি, বর্ডার, পল্টন ইত্যাদি সব ফৌজি, দেশাত্মবোধক সিনেমার ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিজ্ঞাপন আসছে। 
    ভারতীয় সেনাবাহিনীর শৌর্য, ত্যাগ ও মাহাত্ম্যের সম্পর্কে আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। যে পরিস্থিতে, যে ঝুঁকি নিয়ে, প্রিয়জন থেকে শতেক যোজন দূরে ওনারা যে কর্তব্য করেন তা আমার দ্বারা তো হতনা। তাই ওনাদের প্রতি স্বতস্ফূর্ত শ্রদ্ধা রয়েছে। ওনাদের স্যালুট করতে তাই কোন দ্বিধা নেই।
    কিন্তু খটকা টা লাগে এই উল্লাস, অহমিকা ও খিল্লির পরিবেশ দেখে। গতবার ক্যাপ্টেন অভিনন্দন এর প্লেন কে গুলি করে নামানো হয়েছিল, উনি বন্দী ছিলেন দুদিন। আমাদের পরিবারের কেউ ঐ পরিস্থিতিতে থাকলে কি মনে উল্লাস বা হাস্যরস জাগত? ইতিমধ্যেই পাকিস্তানি গুলিবর্ষণে এক ডজন গ্রামবাসী মারা গেছেন। আরো অনেকে ঘরছাড়া। তাদের বাড়ি ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি যুদ্ধ পরিস্হিতির অবনতি ঘটে তবে আরো প্রাণ যাওয়ার শঙ্কা আছে, আরো মানুষের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এগুলো ভেবে কি তামাশা আসে? সন্ত্রাসবাদী শক্তি ও তাদের সমর্থনকারী রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ ক্ষেত্রবিশেষে অনিবার্য। আমরাও এখন তেমনি অবস্থায়। কিন্ত বিষয়টা একতরফা নয়। পাকিস্তানের সামরিক বা আর্থিক অবস্থা যতই করুণ বলে প্রচারিত হোক না কেন, তারা প্রত্যাঘাত করা থেকে পিছপা হবেনা বলেই মনে হয় - অন্তত ইতিহাস তাই বলে। সেসব মাথায় রেখে নিজেদের উল্লাস, বাচালতা ও তামাশার প্রবণতা কিঞ্চিৎ সংযত করাই শ্রেয় কারণ কোন প্রতিক্রিয়ার সরাসরি প্রভাবই আমাদের নিজেদেরকে সেই বিপদে ফেলবেনা যা সৈনিকদের মোকাবিলা করতে হয় ও হবে। এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের সেনার আক্রমণও ক্ষেত্রবিশেষে নিরীহের মৃত্যু ডেকে আনবে অনিবার্য ভাবে। এই ধরণের অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধে সেটা এড়ানো মুশকিল। কিন্তু নিরীহের নিধনের প্রতিকার কি অনিচ্ছাকৃত নিরীহ নিধনের মাধ্যমে হয়? সে হোক বা না হোক, নিরীহের নিধনে উল্লাস অবশ্যই অমানবিক। আসলে আমাদের আবেগ ও নৈতিকতার জগতে এমন এক বিপর্যয় ঘটে গেছে যে যুদ্ধ ব্যাপারটাও ক্লাব ফুটবল বা ভিডিও গেমের জগতের সাথে একীভূত হয়ে গেছে। তাই জয় পরাজয় নিয়ে যুযুধান সমর্থকেরা যেভাবে আস্ফালন করে বা উল্লাস প্রকাশ করে, যুদ্ধ ও তার পরিণতি নিয়েও আমরাও তাই করতে লেগেছি। যেভাবে একদা হাল্লার মন্ত্রী "শুন্ডির ও দেব পিন্ডি চটকে" বলে লম্ফঝম্প করতেন, আমরাও তাই শুরু করেছি। ধ্বংস, ক্ষয়, মৃত্যু, ত্রানশিবির ইত্যাদি সংক্রান্ত সব মানবিক অনুভূতি গুলো ক্রমশ ফিকে হয়ে পড়েছে। থাকছে শুধু অন্যের বীরত্বের সুদ হিসেবে পাওয়া দাদাগিরির (সৌরভ গাঙ্গুলির অর্থে নয়) প্রমোদ। সেই কারণেই কোথায় কখন পাকিস্তানে কি বিস্ফোরণ ঘটল তার ঠেলায় সমাজমাধ্যমে ছবি ও নিদানের বন্যা বয়ে যাচ্ছে - হয়ত হতাশাগ্রস্ত পুরুষ মন এহেন আগ্রাসনের ছবি দেখে কোন বিচিত্র উত্তেজনা অনুভব করে, আত্মরতিতে উদ্বেল হয়ে ওঠে। হয়ত। 
    এইসব উত্তেজনার রেশ যতদিন থাকবে ততদিন লোকে আবার অন্য প্রশ্ন গুলোও করবেনা - কাদের নজরদারির গাফিলতিতে পহেলগাঁও এ সন্ত্রাসীরা বেছে বেছে মানুষ খুনের সুযোগ ও সময় পেলো? তেলের দাম কমেনা কেন? সব কেন্দ্রীয় সংস্থার যাবতীয় প্রচেষ্টার পর ও কেন কোন অপরাধীর যথার্থ শাস্তি হয়না? মাঝখান থেকে WhatsApp university বলবে আশেপাশে নজর রাখ, সন্দেহজনক কার্যালাপ দেখলেই পুলিশ ডাকো, খাবার মজুত কর, পকেটে ৫০০০০ নগদ রাখ ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ যৎসামান্য যা স্বাধীনতা বাকি আছে সেটাও স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিয়ে মারাঠীকে বাংলাদেশী আর জিও ফাইবারকে গুপ্তচরের নেটওয়ার্ক ভেবে নির্বোধের ঢক্কানিনাদে নিয়োজিত হওয়া।
    আমার বিচলিত লাগে। সীমান্তের বাসিন্দাদের কথা ভেবে। গোলার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা তেজীয়ান তরুণ সৈনিকের কথা ভেবে। সৈনিকদের পরিজনের কথা ভেবে। তাই প্রার্থনা করি তাদের সুরক্ষার, প্রার্থনা করি সন্ত্রাস ও হানাহানি মুক্ত স্বদেশের। আর প্রার্থনা করি হিংসার ব্যাপারীদের ধান্দাবাজি ছুঁড়ে ফেলা জনতার।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:6890:54e5:a6d5:***:*** | ০৮ মে ২০২৫ ২০:৫৭731178
  • ভাল লাগল 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন