এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কৌটিল্য সংবাদ ১ : ট্রাম্প গাজা আর ডিপসিক 

    Debanjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৪৭ বার পঠিত
  • পর্ব ১
    গত কয়েকদিন ধরেই দুনিয়ার দুটো বড় ব্যাপার আমার মাথায় ঘুরছিলো। প্রথমে বাজারে এল ডিপসিক এবং ধামাকা দেখিয়ে সারা দুনিয়ার মার্কেট ফেলে দিয়ে খোদ আম্রিকার প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের লোকসান করিয়েই ছাড়লো। এরপরই সামনে এলো ট্রাম্প সাহেবের প্রস্তাব, গাজাকে জনশূন্য করে সেখানে একটা রিভিয়েরা গোছের বানানোর প্রস্তাব। তা আমি মুখ্যুসুখ্যু মানুষ, ভাবলাম যে এদুটো ঘটনার মধ্যে কোন যোগসূত্র কি আছে! ভাবতে ভাবতেই আরেকটা প্ল্যান মাথায় এলো। আমি গত বছর একটা লেখাতে পড়েছিলাম যে লেখক স্পেঙ্গলার (এটা অবশ্যই ছদ্মনাম, ভালোনাম ডেভিড পি গোল্ডমান) কয়েক শতাব্দী আগের ইউরোপের এক রাজপুরুষ কার্ডিনাল রিচিলেও (সঠিক ফরাসি উচ্চারণটা কি কোনো সহৃদয় পাঠক জানালে ভালো লাগবে) এর আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করে, তার কাছ থেকে বর্তমান সময়ের ভূ রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতেন। তা আমার এরকম কিছু একটা করবার ইচ্ছা চাগাড় দিলো। আমার নিজের মোটাবুদ্ধিতে তো এসব ডিপসিক বা গাজার মত জটিল বিষয় ঢুকবেনা বলেই বাহুল্য। কিন্তু আমি কাকে ডাকবো! কিভাবেই বা ডাকবো! এই ব্যাপারটাকে অবশ্য খুব সহজ ভাববার উপায় নেই। তা দিনক্ষণ ঠিক করে কুম্ভমেলাতে পাড়ি দিলাম আমি। এসময়ে ওখানে অনেক অঘোরীরা আসে আর ওরা নিশ্চয় এসব আত্মার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে অনেককিছুই জানে। তা বহুকষ্টে আমি এরকম একজন রেপুটেড অঘোরী বাবার দেখা পেলাম। কিভাবে সেই অঘোরী বাবার দেখা পেলাম আর সেই অঘোরীকে কেমন দেখতে সেসব নিয়ে আর সময় নষ্ট করবো না আপনাদের কেন না বইমেলাতে এরকম অনেক তন্ত্রের উপরে বেড়ে ভূতের গল্প পাওয়া যায় পারলে সেসব পড়বেন আপনারা!

    তো অঘোরীর সঙ্গে প্রথম দেখা হবার তিনদিন পরে তিনি ঘাটে রাত দশটার পরে আসতে বললেন। বুক ঢিবঢিব করছিলো যদি অঘোরী আমার উপরেই ওর পোষা ভূত লেলিয়ে দেয় বা নিদেনপক্ষে বিদেশ বিভুঁই তে একলা পেয়ে সব লুটে নেয়! তখন ট্রাম্প গাজা বা ডিপসিক কেউই বাঁচাতে আসবেনা। কিন্তু শেষমেশ কৌতুহলেরই জয় হলো। তিনদিন পরে রাত এগারোটা নাগাদ অঘোরী বাবার সঙ্গে দেখা করলাম উনি যেখানে বলেছিলেন। অঘোরী আমায় দেখে হাতে একটা ছিলিম তুলে দিয়ে বললেন, এখন মাহেন্দ্রক্ষণ বেটা, পরলোকের দরজা খুলবে আস্তে আস্তে, তুই যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাস, এই ছিলিমে কয়েকটা টান মেরে চোখ বন্ধ করে শুধু তার কথাই ভাববি। তা গাঁজা কেন সিগারেটও জীবনে টানিনি কখনোই! কোনোরকমে কল্কেটা হাতে নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম অর্থশাস্ত্রের শ্রষ্টা কৌটিল্যের।

    রাজনীতিতে এরকম খাসা ব্রেন এদেশে কটা জন্মেছে! ট্রাম্প গাজা ডিপসিক এসব টাফ জিয়োপলিটিক্সের প্রশ্ন তো ওনার মাথাতেই ঢুকবে শুধু। সেদিনটা পূর্ণিমার খুবই কাছাকাছি ছিল, চোখ বন্ধ করবার আগে চাঁদের সামান্য আলোতে দূরে অঘোরীবাবাকে বসে থাকতে দেখে ছিলাম আবছায়া ভাবে। কতক্ষন কেটেছিলো জানিনা হঠাৎ মনে হলো কানের কাছে ফিসফিস করে কে যেন বলছে, “বর্বর সন্তান, আমাকে এমন অসময়ে আবাহন করলি কেন?” কথাটা মনে হলো কেউ যেন মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ধড়মড় করে চোখ খুলে দেখি সামনে অঘোরীবাবার মতোই দেখতে কেউ বসে আছে, তবে অঘোরীর সঙ্গে তার একটি ফারাক। অঘোরীবাবার লম্বা একমাথা চুলদাড়ি জট পাকানো ছিলো এনার সেই আবছা চাঁদের আলোতে অস্পষ্ট মনে হলো চুলদাড়ি নেই কিন্তু মাথাজোড়া টাক আর একটি পুরুষ্টু টিকি। ভাবতে ভাবতেই মাথার ভিতরে আরেকটা মেসেজ পেলাম, “তাড়াতাড়ি কর, তোর জন্যে বেশিক্ষন থাকতে পারবো না”। আমি আর বেশি সময় নষ্ট না করেই ভাবতে লাগলাম “মহান কৌটিল্য, ট্রাম্পের গাজাতে রিভিয়েরা ঘোষণা আর ডিপসিকের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে?” কিছুক্ষন কোন কিছু ঘটলোনা তবে তারপরে মাথার মধ্যে আবার সেই ফিসফিস মেসেজ পেলাম, “তুই বড় অদ্ভুত প্রশ্ন করলি বর্বর সন্তান, দাঁড়া একটুক্ষণ তোর কথার জবাব দিচ্ছি।” চোখ বন্ধ করে বেশ কিছুক্ষন থাকবার পরে হঠাৎ সেই আওয়াজ আবার শুনলাম, “বর্বর সন্তান, তোর প্রশ্নের বিষয়ে কথা বলতে হলো কয়েকজন ম্লেচ্ছ যবন দার্শনিকের সঙ্গে!” আমি শুধালাম “তারা কারা গুরুদেব মহান কৌটিল্য ?” “সব আমার উত্তরসূরী। তুই হয়তো নাম শুনলে চিনতে পারবি বর্বর। সুন জু, ইব্ন খালদুন আর মেকিয়াভেলী। ইব্ন খালদুনটা আবার ওর সঙ্গে ওদের এলাকার আরেকটা ছোকরাকে নিয়ে এসেছিলো, ওর নাম স্টিভ জব্বস না কি যেন রে, খালদুন বললো তোর ডিপসিকের ব্যাপারটা ওই ভালো বুঝতে পারবে।” আমার চোখ বোজা অবস্থাতেই গলা ধরে এল, “কি বলছেন গুরুদেব কৌটিল্য, আমার কি সৌভাগ্য!” গলাটা এবার কানে কিরকম খনখনে শোনালো, “তাড়াতাড়ি শোন রে বর্বর ছোকরা, আমার হাতে বেশী সময় নেই” - গুরুদেব কৌটিল্য যেটা বললেন শুনতে শুনতে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
    “বর্বর সন্তান, তোদের ওই যে সৌদী নামের যেসব আরব শেখেরা আছে ওরা গত সত্তর বছর ধরে দুনিয়াকে তেল বেচে যা লাভ করে তোরা যেটাকে বলিস ট্রেড সারপ্লাস, সেটা আমেরিকার ব্যাংকে জমা রাখে। এখন তোদের রাশিয়ার পুতিনও এটাই করতো। কিন্তু তিন বছর আগের ওই ইউক্রেন না কিসের যুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা ওর জমানো টাকা সব আটকে দিয়েছে। এই দেখে সৌদীরাও চাপে পড়েছে। কোনদিন না আমেরিকার মতিগতি ওদের বিরুদ্ধে যায়! আমেরিকাকে তো বিশ্বাস নেই তাই ওরা এই গত কয়েকটা বছর ওই সিলিকন ভ্যালি না কিসের জানি সব শেয়ার কিনতো। এখন সিলিকন ভ্যালিতে যত মালিকেরা তোদের ওই ট্রাম্প না কি তার বন্ধু আর ওকে ভোটে জেতাবার পিছনে হাতটাও ওদেরই। তাই ওদের হাতে রাখলে ট্রাম্পকেও হাতে রাখতে পারবে ভেবেছিলো। তলে তলে অবশ্য চিনের ব্যাংকেও কিছু না কিছু টাকা রাখবার একটা প্ল্যান ছিলো ওদের। ওই ডিপসিক না কী যেন এসেই গোলটা বাধালো। চীনারা বলছে ওই ট্রাম্পের বন্ধু সিলিকন ভ্যালির মালিকদের থেকে অনেক বেশী ভালো কাজ ওদের ডিপসিক করবে আর অনেক কম খরচে! শুনেই তো চক্ষু চড়কগাছ সিলিকন ভ্যালির মালিকদের। এতদিনের লাভের গুড় এই ভুঁইফোড় এসে খেয়ে নেবে যে বড়! মধ্যিখানে ট্রাম্পকে (মানে ওর সিলিকন ভ্যালির মালিক বন্ধুদেরকে) সৌদীরা আমেরিকাতে এক ট্রিলিয়ন ডলার দেবে বলেছিলো কিন্তু এখন ডিপসিকের কেরামতি দেখে ওরা দুবার ভাবছে। এতেই ট্রাম্প চাপে। গাজা নিয়ে চাপ দেবার আসল উদ্যেশ্যঃ ওই সৌদীদের সাফসাফ পষ্টাপষ্টি বলে দেওয়া যে বাপুরা তোমরা ওসব ডিপসিক টিপসিকের কথা ভুলেও মাথায় এনো না আমাদের যা টাকা রাখছিলে তেমনই রাখবে।”

    গুরুদেবের প্রণাম করবার উপায় নেই যেহেতু তেনার তো দেহই নেই তাই জিজ্ঞেস করলাম, “গুরুদেব মহান কৌটিল্য আবার কবে কিভাবে আপনার সঙ্গে দেখা হবে?” মাথার মধ্যে খনখনে শব্দটা যেন একটা ঝালাপালা হয়ে গেলো এবার “বর্বর পাষণ্ড, বর্বর পাষণ্ড ….” কোনোরকমেই এবার থাক্তে না পেরে চোখ খুলে ফেললাম। দেখি কৌটিল্য অঘোরী বাবা কেউ কোথাওই নেই আমি ঘাটের ধারে শুধু গাঁজার কল্কেটা হাতে নিয়ে বসে আছি। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন