দুর্গাপূজা শেষ। আজ লক্ষ্মীপুজো। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মা লক্ষ্মী এখন বাংলার প্রতিটি ঘরে অধিষ্ঠিতা। তাই তিনি বেশ মুডে আছেন। পালদের ঘর থেকে রিকশায় চড়ে ভক্তদের বাড়িতে যাওয়ার পথে দেয়ালে চোখ পড়তেই লক্ষ্মীর নজরে এলো নতুন এক জিনিস—“লক্ষী ভাণ্ডার।”
হাতের ছোট্ট ঝাঁপিটি যে আজ এত বড় ভাণ্ডারে রূপান্তরিত হয়ে গ্রামেগঞ্জে লক্ষ্মীমনিদের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে, তা ভেবে মা লক্ষ্মীর মন আনন্দে ভরে উঠল। মৃদু হাসি ফুটে উঠল তাঁর ঠোঁটে।
রিকশা থেকে নেমে মা লক্ষ্মী ভক্তের বাড়িতে গ্যাট হয়ে বসলেন। সন্ধ্যা হয়ে এলো। সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি। ভক্তদের কথা শুনে বুঝলেন, পুজোর পর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হবে। কিন্তু বড় সমস্যা হল পুরোহিতের কোনো পাত্তা নেই। রাত গড়াচ্ছে, সবাই উৎকণ্ঠায়।
অবশেষে রাত দশটায় পুরোহিত মশাই হাজির হলেন। তবে সাইকেলে চড়ে নয়, ঠেলতে ঠেলতে। তাঁকে দেখে সবাই বিস্মিত।
— "একি মশাই, এই আপনার সন্ধ্যের সময়?"
— "আর বলবেন না। মেয়ে স্কুল থেকে সাইকেল পেয়েছে। ভাবলাম, এটাতে চড়েই তাড়াতাড়ি আসব। কিন্তু শেষমেশ এটা আমার বোঝা হয়ে দাঁড়াল!"
সবাই হেসে উঠল। তবে পুরোহিত মশাইয়ের আর দেরি করা চলে না। দ্রুত পুজোর আয়োজন শুরু হল। পুজো শেষ করে তিনি অঞ্জলির সময় সবাইকে বললেন,
"সবাই হাত জোড় করে বলুন—
জয় জয় দেবী চরা চর সারে,
প্রতিমাসে টাকা পাই,
লক্ষী ভাণ্ডারে।
কাজ নাই, টাকা পাই,
ভারী মজা ভাই।
এসো লক্ষী, বস লক্ষী,
বলো, আর বেশি কি চাই।
জয় মা! জয় মা!"
সবাই একসঙ্গে হাত জোড় করে এই মন্ত্র পড়তে পড়তে থমকে গেল। একজন ভক্ত বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
— "ও ঠাকুর মশাই, এটা আবার কেমন মন্ত্র?"
— "কেন? এটাই তো লক্ষী ভাণ্ডারের মন্ত্র। এখন লক্ষ্মী নয়, লক্ষী ভাণ্ডারই হট কেক!"
মা লক্ষ্মী তখন নিজেকে সামলাতে না পেরে মুচকি হেসে উঠলেন। তাঁর ঝাঁপি এবার সত্যিই ভাণ্ডার হয়ে উঠেছে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।