আজ দুর্গাষ্টমী। সবার অঞ্জলি হয়ে গেছে, শুধু এক যুগল বাকি। ঠাকুর মশাই প্রবীণ মানুষ, ধর্ম ব্যবসায়ী। পুজো-অর্চনা করেই তাঁর সংসার চলে।
“নাও মা, অঞ্জলি দাও,” বললেন ঠাকুর মশাই।
মেয়েটি অঞ্জলি শেষে একটি একশো টাকার নোট প্রণামি হিসেবে ঠাকুর মশাইকে দিল। ঠাকুর মশাই বেজায় খুশি হলেন।
মেয়েটি বেরোতে যাবে, তখন হঠাৎ কে যেন কানের কাছে বলে উঠল,
“কিরে, সবাইকে অঞ্জলি দিলি, শুধু আমি বাদ?”
মেয়েটি চমকে প্রতিমার দিকে তাকাল। দেখল, সিংহ মামা হাসছে।
“ঠিক কথাই তো,” ভাবল সে। “কেউ তো কখনও সিংহ মামাকে অঞ্জলি দেয় না।”
সে ফিরে এসে বলল, “ও ঠাকুর মশাই, আমি সিংহকে অঞ্জলি দেব। আমায় একটু ফুল, বেলপাতা দিন আর সিংহের অঞ্জলির মন্ত্র বলুন।”
ঠাকুর মশাই হতবাক। সিংহের অঞ্জলি! এমন কথা তিনি বাপের জন্মে শোনেননি।
মন্ত্র? সিংহের মন্ত্র? কি মুশকিল! এক্ষুনি মেয়েটি একশো টাকার নোটও দিয়েছে। কিছু বলাও যাচ্ছে না। আর “জানি না” বললে পৈতের সম্মান যাবে।
তিনি মনে মনে ভাবলেন,
“এই যে এতদিন ধরে দেবদেবীদের জন্য অঞ্জলির মন্ত্র বলি, এতে তো তাদের রূপের বর্ণনা থাকে। তাহলে সিংহের রূপের বর্ণনা করলেই তো হবে। একটু অং-বং-চং যোগ করলেই চলবে।”
ঠাকুর মশাই গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
“ঠিক আছে মা। এই নাও ফুল আর বেলপাতা। এবার মন্ত্র বলো—
দেবীর বাহন,
চার পায়ে হেলানো,
জিভ তার ফ্যালানো,
দাঁত তার ক্যালানো,
এতে পুষ্পাঞ্জলি সিংহায় নমঃ।
দাও মা, এবার সিংহের পায়ে ফুল আর বেলপাতা দিয়ে দাও।”
মেয়েটি মন্ত্র পড়ে সিংহের পায়ে অঞ্জলি দিল।
সে দেখল, সিংহ মামার মুখটা সত্যিই বেশ হরষিত হয়ে উঠল।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।