এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পদাতিক মৃণালঃ মৃণাল সেনের শতবর্ষে এক জরুরী নাট্য অর্ঘ্য

    Sandipan Majumder লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৪১ বার পঠিত
  • বাংলা চলচ্চিত্রের ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে বাংলা থিয়েটার জগতের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। সত্যজিত নিয়মিত থিয়েটার দেখতে যেতেন এবং সেখান থেকে বহু অভিনেতাকে নিজের ছবিতে ছোট বড় চরিত্রে নির্বাচন করেছেন। ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতে বিমলার চরিত্রে নাব্দীকারের স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের অভিনয়ের কথা অনেকেরই স্মরণে আছে। ঋত্বিক ঘটকের আই পি টি এ সংসর্গ, মতান্তর, থিয়েটারের জীবন নিয়ে ‘কোমল গান্ধার’ সিনেমা নির্মাণ -- তাও অজানা নয় আমাদের। মৃণাল সেনও কিন্তু থিয়েটারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার একাধিক ছবিতে চিত্রনাট্য রচনার আংশিক বা পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায়। অনুমান করা যায়, সত্তর দশকের গোড়ায় কলকাতার থিয়েটারে বের্টোল্ট ব্রেখটের নাটক মঞ্চায়নের যে জোয়ার এসেছিল মৃণাল তার দ্বারাও কিছুটা প্রভাবিত হয়েছিলেন। অন্তত কলকাতা ট্রিলজির তিনটি ছবি এবং ‘কোরাস’ ছবির আঙ্গিক সেই কথাই বলে। ফলে বাংলা থিয়েটারের তরফ থেকেও মৃণালের জীবন ও শিল্পকর্মের আধারে তাঁর সময়, শিল্প, জীবনদর্শন ও রাজনীতিকে ছুঁয়ে দেখার একটা প্রয়াস জরুরী ছিল। সেই প্রচেষ্টাই আমরা দেখলাম ঋত্বিক নাট্যগোষ্ঠী আয়োজিত ‘দেশ বিদেশের নাট্যমেলা’র নবম দিনে ১৬ ই ডিসেম্বর রবীন্দ্র সদনে সমুদ্র গুহ নির্দেশিত স্পন্দন প্রযোজিত নাটক ‘পদাতিক মৃণাল’ নাটকের মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে।

    স্পন্দনের ঐতিহ্য অনুযায়ী এই নাটকও একটি নিখাদ ডকু-ড্রামার উদাহরণ। একই সঙ্গে এটি এক জীবনীমূলক নাটকও বটে। সঙ্গে রয়েছে পেছনের পর্দায় মৃণাল সেনের বিভিন্ন সিনেমা থেকে প্রাসঙ্গিক অংশের প্রক্ষেপণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের ক্লাস থেকে এই নাটকের মৃণাল চর্চার শুরু যেখানে চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হন মৃণাল সেন — তাঁর শিল্পের দর্শন, রাজনৈতিক বিশ্বাসের কথা বলতে। এর পর মঞ্চে আসেন একে একে গীতা সেন, সত্য বন্দোপাধ্যায়, অনুপকুমার, কে কে মহাজনের মত চরিত্ররা যাঁরা মৃণাল সেনের জীবন ও শিল্পের আধারকে পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন। রেফারেন্স হিসেবে আলোচনায় এসেছে পি সুন্দরাইয়া, হরেকৃষ্ণ কোঙার থেকে আন্তনিও গ্রামশ্চির মত মার্কসবাদী ব্যক্তিত্বের প্রসঙ্গ। এমনকি সাদাত হোসেন মান্টো, প্রেমচাঁদ মুন্সীর প্রসঙ্গ আলোচনায় মঞ্চে হাজির হন মৃণাল সেনের ‘অন্তরীণ’ ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে ডিম্পল কাপাডিয়ার চরিত্র। না, মৃণাল সেনের মত বহুমুখী ব্যক্তিত্বের দীর্ঘ, সৃষ্টিশীল জীবনের সব কিছুই ধরা যাবে একটিমাত্র নাটকে সেটা আশা করা বাহুল্য মাত্র। অনালোচিত আছে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউইনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয়ের পর তাঁর দীর্ঘদিন ছবি না করতে পারার প্রসঙ্গও। কিন্তু মৃণাল সেনের শিল্পী চরিত্রের যে দিকটায় এই থিয়েটার গুরুত্ব দিতে চেয়েছে তা হল তাঁর আপোষহীনতা, প্রতিবাদধর্মিতা ও শৈল্পিক চলিষ্ণূতা। তাই শেষ দৃশ্যে কলকাতা মহানগরীর প্রতিবাদের ছবি তুলতে ব্যস্ত রাস্তায় অর্ধশায়িত মৃণাল সেনের আসল ছবির সঙ্গে মিলে যায় মঞ্চের ওপর অভিনীত মৃণাল সেনের চরিত্র। মৃণালকে নিয়ে এক তথ্যচিত্রের নির্মাণকে কেন্দ্র করে যে সাব টেক্সট এই থিয়েটারের মূল টেক্সট হয়ে ওঠে তা যে চলমান থাকবে সেই আশ্বাসে নাটক শেষ হয়।

    মৃণাল সেনের চরিত্রে প্রবীর ঘোষের নির্বাচন যথাযথ। তাঁর রূপসজ্জা, কন্ঠস্বর, বাচনভঙ্গী মৃণাল সেনের নাট্যমূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠায় অনেকটাই সফল। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় দেবাশিস সিনহার মেক আপ খুব ভালো হলেও মৃণাল সেনের সঙ্গে কথোপকথনের সময় তাঁকে অতটা গৌণ ভূমিকায় দেখে মন ভরে নি। বিশেষত সত্যবাবুর পাণ্ডিত্যের খ্যাতিও কিছু কম ছিল না যখন। মেক আপ এবং অভিনয়, উভয় দিক থেকেই ব্যর্থ মনে হছে মৃণালের সহধর্মিনী গীতা সেনের চরিত্রটি। গীতা সেনকে নিছক গৃহবধূ বানিয়ে বাজারের হিসেব রাখা আর পোষাক গোছানোর ভূমিকায় সীমায়িত রাখা হল কেন বুঝলাম না। ভারতীয় গণনাট্য সংঘের নাটক, সমকালীন রাজনৈতিক প্রসঙ্গও যথেষ্ট এসেছে। চলমান রাজনৈতিক আবহে মৃণাল সেনের মত আপোসহীন, জিজ্ঞাসাতুর, নিরীক্ষাময় শিল্লীর জীবনকে সম্পর্কিত করে দেখা – ‘বাম সাংস্কৃতিক’ মহলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই জরুরী কাজটি সম্পন্ন করার জন্য স্পন্দন এবং নির্দেশক সমুদ্র গুহকে ধন্যবাদ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন