এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  রাজনীতি

  • ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৭১

    দীপ
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৫১ বার পঠিত
  • ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর মেজর রাও ফরমান আলীর নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা একটি জাতিকে সম্পূর্ণভাবে ‌ধ্বংস করার জন্য তদানীন্তন ঢাকার বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্বদের ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করেছিলো। 
    তেপ্পানো বছর পর আবার সেই মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল করে তাণ্ডবনৃত্য করছে!
    ইতিহাস বারবার পুনরাবৃত্ত হয়!
    --------------------------------------------------------------------

    ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী দরজা খুলে হাসিমুখে বললেন- কেমন আছ বাবা ?
    (তিনি ধরেই নিলেন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি তাঁর ছাত্র)
    কলিমউল্লাহ বলল- স্যার ভালো আছি । আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন স্যার ?
    (তিনি তাকে চিনতে পারেন নি । চিনতে পারার কথাও না)
    তারপরও হাসিমুখে বললেন- চিনতে পারবনা কেন ? অবশ্যই চিনেছি। 
    (মিথ্যা বলার কারণ হলো তিনি অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, যতবার কোনো ছাত্রকে দেখে তিনি না চেনার কথা বলেছেন, ততবারই তারা ভয়ঙ্কর মনে কষ্ট পেয়েছে । এক ছাত্র তো কেঁদেই ফেলেছিল)
    ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন- বাবা, তোমার নামটা যেন কী ?
    - কলিমউল্লাহ।
    - হ্যাঁ, তাই তো। কলিমউল্লাহ। এখন পরিষ্কার মনে পড়েছে। তুমি কি খাওয়াদাওয়া করেছ ?
    - জি না স্যার ।
    - এসো আমার সঙ্গে চারটা ভাত খাও । আয়োজন খুব সামান্য । ভাত, ডিম ভর্তা । ঘরে আরো ডিম আছে । তোমাকে ডিম ভেজে দেব। ঘরে এক কৌটা ভালো গাওয়া ঘি ছিল, কৌটাটা খুঁজে পাচ্ছি না।
    কলিমউল্লাহ বলল- এখন খেতে পারব না । আপনার কাছে আমি একটা অতি জরুরী কাজে এসেছি ।
    - জরুরী কাজটা কী ?
    - মিলিটারির এক কর্নেল আপনার সাথে কথা বলতে চান ।
    ধীরেন্দ্রনাথ রায় বিস্মিত হয়ে বললেন- আমার সাথে মিলিটারির কী কথা ?
    - আমি জানি না । তবে স্যার আপনার ভয়ের কিছু নেই । আমি সঙ্গে আছি ।
    ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন- তুমি আমার কোন ব্যাচের ছাত্র বলো তো ?
    - কথা বলে সময় নষ্ট করতে পারব না । মিটিংটা শেষ করে আসি, তারপর গল্প করব ।
    - দুইটা মিনিট অপেক্ষা করো, ভাতটা খেয়ে নিই । আমি খুব ক্ষুধার্ত । সকালে নাশতা করিনি।
    - ভাত খাবার জন্যে অপেক্ষা করার সময় নাই স্যার।
    - তাহলে দাঁড়াও, পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে আসি । আমার সঙ্গে কি কথা বুঝলাম না । সে আমার ছাত্র না তো? করাচি ইউনাভার্সিটিতে আমি দু'বছর মাষ্টারি করেছি । প্রফেসর সালাম সাহেব সেখানে আমার কলিগ ছিলেন ।
    কলিমউল্লাহ বলল- আপনার ছাত্র হবার সম্ভাবনা আছে । কর্নেল সাহেব যেভাবে বললেন "স্যারকে একটু নিয়ে আসো"... তাতে মনে হচ্ছে উনি আপনার ছাত্র ।
    ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী গাড়িতে উঠে দেখলেন.. গাড়ি ভর্তি মানুষ । তারা সবাই চিন্তায় অস্থির । ধীরেন্দ্রনাথ রায় তাদের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে হাসলেন । ভুলে তিনি চশমা ফেলে এসেছেন বলে তাদের কাউকে চিনতে পারলেন না । চোখে চশমা থাকলে এদের অনেককেই তিনি চিনতেন । বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা সেই গাড়িতে বসেছিলেন । তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে বধ্যভূমিতে....

    (জোছনা ও জননীর গল্প : হুমায়ূন আহমেদ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:198b:2569:678:5634:1232:***:*** | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৩৯744303
  • "ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ছোট করে দেখানোর একটা প্রবণতাও আমাদের আছে। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পর কেউ যদি বাংলাদেশে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ওবং ছোটগল্প পড়ে যুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা করতে চায় তাহলে তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিষয়ে কিছুই জানবে না। আমাদের গল্প উপন্যাসে বিদেশী সৈন্যবাহিনীর বিষয় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। লেখকরা হয়তো ভেবেছেন এতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবের হানি হবে।
    ঋণ স্বীকারে অগৌরবের কিছু নেই। মহান জাতি এবং মহান মানুষরাই ঋণ স্বীকার করেন। আমি আমার বইটিতে আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্যে যেসব ভারতীয় সৈন্য প্রাণ দিয়েছেন তাদের একটা তালিকা দিতে চেয়েছিলাম, যাতে পাঠকরা এই দীর্ঘ তালিকা পড়ে একবার শুধু বলেন-'আহারে'! 
     
     (জোছনা ও জননীর গল্প: হুমায়ন আহমেদ)
  • ar | .***.*** | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০৭744307
  • এর আগের দুটো লাইন!!
    "তিনি যখন খেতে বসবেন, তখন দরজার কড়া
    নড়ল। তিনি দরজা খুলতেই কলিমউল্লাহ এসে তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করল।"
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন