সময়টা ছিল বড় অশান্ত সময়, সাথী পরিচয় করিয়ে দেয়, মেয়েটির নাম উমা, আমাদের সাথেই পড়ে। আমি একটু আগেই ওকে দেখেছি মিছিলের প্রথম সারিতে। আমি তখন ওকে জিজ্ঞেস করি, কেন তোমরা ক্লাস বন্ধ করে মিছিল করছো ?
শাসন মারা গেছে।
তাতে কী? দলের একজন মারা গেলেই মিছিল মিটিং করে ক্লাস বন্ধ করতে হবে? এ কেমন রাজনীতি!
এটা রাজনীতির ব্যাপার নয়, ভাই। আপনার সামনে এখন যদি কেউ আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে আপনি তার প্রতিবাদ করবেন না!আইনের শাসন চাইবেন না! সেটা আজ নেই, অর্থাৎ প্রশাসন মৃত - আমাদের কাছে।
ওর আকস্মিক প্রশ্নে আমি ঘাবড়ে চুপ হয়ে যাই, কারণ আমার কাছে কোন জবাব ছিল না।
আসলে মিছিল ব্যাপারটা আমি ভালোবাসি না, মানে এতো লোক, চিৎকার, হৈ চৈ।
উমা খুব কাটা কাটা কথা বলছিলো যে , মিছিল নাটক সিনেমা নয়। এটা প্রতিবাদ, ভালো লাগার জন্য প্রতিবাদ করা হয় না। অবশ্য মিছিল আমার ভালো লাগে। আচ্ছা স্যার, আসি।
ঝড়ের বেগে ওখানে থেকে চলে যায় উমা।
সাথী বললো যে ওভাবে না বললেই পারতেন। মেয়েটি ভালো। খুব একটিভ ওয়ার্কার।
তখনই হঠাৎ গুলির শব্দ হয়। সাথী আমাকে টান দেয়, শুয়ে পড়ুন, গুলি চলছে.....
ঘটনাটা যেমন হঠাৎ শুরু হয়েছিলো, তেমনি হঠাৎ থেমে যায়। ক্যাফেটেরিয়ারের সামনে জটলা। সাথী আমার আগে ছুটে যায়, উত্তেজিত হয়ে ফিরে আসে।
ওরা উমাকে গুলি করেছে, উমা স্পট ডেড।
আমি কিছু বুঝে উঠতে পারিনা, ও কি বলছে!
আমরা উমার লাশ নিয়ে মিছিল করবো। ওরা বাধা দেবে, কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করবোই। আমি যাই।
সাথী , দাঁড়াও, আমি যাবো তোমার সাথে।
আপনি!
হ্যাঁ, আমি মিছিলে যাবো।
নিজের কন্ঠের দৃঢ়তায় আমি নিজেই অবাক হই।
প্রতিবাদ বড় ছোঁয়াচে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।