জলপাইগুড়ি থানার অফিস। শুভদীপ চক্রবর্তী এবং ডিটেক্টিভ বিপ্লবী রায় একটি নতুন খুনের মামলার তদন্তে একত্রিত হয়েছেন। সকালবেলা থানার অফিসে শুভদীপ বিপ্লবীকে নিয়ে প্রথমবারের মতো নতুন কেস নিয়ে আলোচনা করছেন।
শুভদীপ: “ডিটেক্টিভ বিপ্লবী, এইবারের ঘটনা বেশ অদ্ভুত। গতরাতে শহরের কেন্দ্রে একজন ধনী ব্যবসায়ী, মধুসূদন সাহা, মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, তিনি বিষ প্রয়োগে মারা গেছেন, তবে ঘরে কোনো জোরপূর্বক ঢোকার চিহ্ন পাওয়া যায়নি।”
বিপ্লবী: “এতটা নিশ্চিত কীভাবে যে বিষ প্রয়োগেই মৃত্যু হয়েছে? ফরেনসিক রিপোর্টে কি কিছু এসেছে?”
শুভদীপ: “ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে, শরীরে কোনো চোট নেই। কিন্তু তার খাবারে মেশানো কোনো বিশেষ রাসায়নিক বিষের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। খুব চালাকির সাথে এই কাজ করা হয়েছে।”
বিপ্লবী (চিন্তিত ভঙ্গিতে): “বেশ চতুর অপরাধী মনে হচ্ছে। তবে তার উদ্দেশ্যটা কী হতে পারে?”
শুভদীপ: “ব্যবসায়িক শত্রুতা হতে পারে, তবে আমরা নিশ্চিত নই। মধুসূদন সাহার স্ত্রী জানিয়েছেন যে তিনি সন্ধ্যায় একা ঘরে ছিলেন এবং কাউকে সঙ্গে পাননি। তবে তাদের বাড়ির একজন কাজের লোক দাবি করছে, তিনি বাইরে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো কফি খেয়েছিলেন।”
বিপ্লবী (হাসতে হাসতে): “অপরাধীরা যা বোঝাতে চায়, সেটা সবসময় সত্যি নয়, শুভদীপ। আমার মনে হয়, আমাদের কাজের লোকটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। সেই কি কফি তৈরি করেছিল?”
শুভদীপ: “হ্যাঁ, ম্যাডাম। আমি তাকেও থানায় ডেকে এনেছি। এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।”
---
কিছুক্ষণের মধ্যে থানার এক ছোট্ট কক্ষে
কাজের লোক সমীরণ বসে আছে। তার চোখে অস্বস্তি স্পষ্ট। শুভদীপ আর বিপ্লবী তাকে সজাগ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিপ্লবী (কঠোরভাবে): “তোমার নাম সমীরণ, তাই তো?”
সমীরণ (শঙ্কিত কণ্ঠে): “হ্যাঁ, ম্যাডাম। আমি কিছু করিনি। আমি শুধুই মধুসূদন বাবুর জন্য কফি বানিয়েছিলাম, তাই বলে খুন করেছি এমনটা ভাববেন না।”
শুভদীপ: “আমরা এমনই ভাবছি, কিন্তু তোমার মুখ থেকে জানতে চাইছি। ওই রাতে তুমি তার খাবারে কিছু মেশানোর জন্য কারও থেকে আদেশ পেয়েছিলে?”
সমীরণ: “না, স্যার! উনি বাড়িতে একাই ছিলেন। আমি শুধু উনার জন্য কফি বানিয়েছিলাম, তারপর বাইরে চলে গিয়েছিলাম।”
বিপ্লবী (কৌতূহল দেখিয়ে): “আর তোমার চোখেমুখে যে আতঙ্ক দেখছি, তার কারণ কী? এমন কিছু কী জানো, যা বলছ না?”
সমীরণ (চুপচাপ কিছুক্ষণ থেকে): “আমি... আমি শুধু এটুকু জানি, উনার স্ত্রী প্রায়ই ওনাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। উনারা প্রায়ই ঝগড়া করতেন।”
---
সমীরণ চলে যাওয়ার পর, শুভদীপ এবং বিপ্লবী নিজেদের মধ্যে কিছু আলোচনা করেন।
শুভদীপ: “সমীরণ হয়ত পুরো ঘটনা বলছে না, কিন্তু তার মুখের কিছু কথায় সন্দেহ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।”
বিপ্লবী: “হ্যাঁ। এবং তুমি খেয়াল করেছো কীভাবে সে বারবার তার স্ত্রী সম্পর্কে উল্লেখ করছে? আমার মনে হচ্ছে, এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্কের গভীরে ঢুকতে হবে।”
শুভদীপ (মুচকি হেসে): “ম্যাডাম, তবে আপনার অনুমান ভুলও হতে পারে। আপনি কি মনে করেন, এবার সরাসরি তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত হবে?”
বিপ্লবী: “অবশ্যই। এবং একটা ব্যাপার মনে রেখো শুভদীপ, অপরাধীরা অনেক সময় কাছের মানুষদের সাহায্য নিয়ে পরিকল্পনা করে। তোমাকে তার স্ত্রীকে এমনভাবে প্রশ্ন করতে হবে যাতে সে সবকিছু সঠিকভাবে প্রকাশ করে।”
---
পরের দিন, ডিটেক্টিভ বিপ্লবী এবং শুভদীপ নিহতের স্ত্রী মানসী দেবীর সাথে কথা বলছেন
মানসী দেবী বেশ শান্ত, তবে তার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ রয়েছে। বিপ্লবী তার মনোযোগী দৃষ্টিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।
বিপ্লবী: “মানসী দেবী, আমরা জানতে পেরেছি যে আপনি প্রায়ই আপনার স্বামী মধুসূদন সাহার সাথে ঝগড়া করতেন। কী নিয়ে আপনারা সবসময় ঝামেলায় পড়তেন?”
মানসী (নিরবতা ভঙ্গ করে): “দেখুন, আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা সত্যিই কিছুটা অশান্ত ছিল। ওনার ব্যবসার জন্য ওনার সময় আমার জন্য প্রায় থাকত না। তবে এর মানে এই নয় যে আমি ওনাকে খুন করব।”
শুভদীপ: “আপনার বিবাহিত জীবনের সমস্যা নিয়ে তো আমরা আগেই শুনেছি। কিন্তু কেউ যদি কোনোভাবে আপনার অনুভূতিগুলোকে ব্যবহার করে খুনের মতো ভয়ানক কাজ ঘটায়?”
মানসী (চকিত ভঙ্গিতে): “আপনারা কি বলতে চাচ্ছেন যে কেউ আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের সুবিধা নিয়ে মধুসূদনের ক্ষতি করেছে? কিন্তু কে সে?”
বিপ্লবী (কৌতূহলীভাবে): “আপনার সন্দেহ হলে কারও উপর পড়ছে না? হয়তো সেই ব্যক্তি আপনার স্বামীর খুব কাছের কেউ, যার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল।”
মানসী (নীরব হয়ে): “আমার মনে একটিমাত্র নাম আসছে, কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছি না।”
শুভদীপ (উৎসাহিত করে): “আমাদের জানালে আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।”
মানসী কিছুক্ষণ নীরব থেকে মুখ খুললেন
মানসী: "আমার স্বামীর খুব কাছের একজন, রণজিৎ ঘোষ। ওরা একসাথে বহু বছর ধরে ব্যবসা করছিল, কিন্তু সম্প্রতি কিছু আর্থিক ব্যাপারে ওদের মধ্যে বিরোধ হচ্ছিল। রণজিৎ প্রায়ই আমার স্বামীকে হুমকি দিত... কখনও কখনও রাগের মাথায় মধুসূদনকে শেষ করে দেওয়ার কথাও বলত।"
বিপ্লবী (চকিত হয়ে): "রণজিৎ ঘোষ! তাহলে হয়ত এই হত্যাকাণ্ড কোনো আর্থিক ষড়যন্ত্রের ফসল হতে পারে। শুভদীপ, রণজিৎকে দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদে আনতে হবে।"
শুভদীপ (সাহসী দৃষ্টিতে): "ঠিক আছে, ম্যাডাম। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু আমাদের আগে কিছু প্রমাণও জোগাড় করতে হবে, যাতে সে সহজে বেরিয়ে যেতে না পারে।"
বিপ্লবী: "ঠিক বলেছো। আচ্ছা মানসী দেবী, রণজিতের গত কিছুদিনের গতিবিধি সম্পর্কে কিছু জানেন? সে কি আপনাদের বাড়িতে আসত?"
মানসী: "হ্যাঁ, বেশ কিছুদিন আগে এসে ও মধুসূদনের সাথে তর্কে জড়িয়েছিল। এরপর থেকে আমি ওর মধ্যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলাম। সেই মুহূর্ত থেকেই আমার ভয় হচ্ছিল কিছু একটা ঘটতে পারে।"
বিপ্লবী (দৃঢ়ভাবে): "ঠিক আছে মানসী দেবী, আপনি আমাদের অনেক সাহায্য করলেন। আমরা রণজিৎকে নজরে রাখব। এই হত্যা একটি নিছক অপরাধ নয়; এর পেছনে আরও গভীর ষড়যন্ত্র আছে। আমরা সত্য বের করব।"
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।