এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  ভ্রমণ   দেখেছি পথে যেতে

  • বেলঘরিয়ায় বিন্দুবাসিনী

    . লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ | ৬৯৫ বার পঠিত
  • এখানে থাকবে আমার সবেমাত্র বেড়িয়ে আসার গল্প।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • . | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:৫০743898
  • এর নাম ভূমিকা। যেটা আজ এই ভ্রমণের গল্প লেখার আগে কেন জানি না, বড্ড দরকারি মনে হচ্ছে। 
    জীবন মানেই ভ্রমণ যেটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, এবং পদে পদে সেই বিশ্বাস আমায় প্রমাণ দিয়ে চলে। ভ্রমণ মানে একটা বিন্দু থেকে অন‍্য স্থানাঙ্কে সরণ। সেই পথটুকু চলবার সময়ে যে সমস্ত মানুষ জনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ পরিচয় আত্মীয়তা হয়, সেগুলোই জীবনের প্রাপ্তি, সেইগুলোই আমার ভ্রমণের পাথেয় হয়ে ওঠে। সেভাবে দেখতে গেলে একটা গোটা ভ্রমণের বিস্তার জন্মক্ষণ থেকে মৃত‍্যুর মুহূর্ত অবধি, এই ধারণায় আমি স্বচ্ছন্দ। মধ‍্যিখানে কিছু কিছু দেশ ঘুরে বেড়ানোর গল্প ঐ মস্ত গোটা ভ্রমণকাহিনির সাবসেট ছাড়া আর কিছুই না।
     
    হঠাৎ করেই মনে পড়ছে সেই শ্রাবণের শেষ বেলায় শেষবারের মতো ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সময়টা, যখন নাড়ির টানকেও প্রায় পেছনে ফেলে রেখে, শুধু এক চিলতে সাহসকে সম্বল করে পাকাপাকি ভাবেই দেশ ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম। সে খুব সহজ কাজ ছিল না। যে দেশের মেয়ে আমি, সেখানে এমন কাজ মেয়েদের করার কথা নয়, তাতে নিন্দে টিন্দের মত ছোটখাট ব‍্যাপার যেমন হয়, তেমনি আরও বড়োসড়ো ক্ষতির সম্মুখীনও হবার ব‍্যবস্থা থাকে। তবে ভয় করলে তো সবসময় চলে না। ভয় আমাদের দেয় খুবই কম, নিয়ে নেয় অনেক বেশি — এইসব ধারণা আমার নিজেরই গড়া। এই ধারণাটা আমায় নিজের স্বাধীনতার জন্য জাস্টিফিকেশন জুগিয়ে এসেছে বরাবর।
    সেইজন‍্যই হয়তো ভয় দেখিয়ে কেউ আমায় বশে আনতে পারেনি। ফলে আমার স্বাধীনতা, যার একটা বড় অংশ ভ্রমণ, আমি ইচ্ছেমতো ব‍্যব্যবহার করতে পেরেছি। এমন কি যখন প্রায় বানপ্রস্থে যাবার সময় দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে, তখনও পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখতে পাই ভ্রমণের সমস্ত গল্পেই চুটিয়ে উপভোগ করেছি জীবন নামক ভ্রমণের প্রত‍্যেকটি পর্ব নিজের শর্তে।
     
    এতটা বললাম এই জন‍্য, যে গত অগস্টে আমরা খুব অল্প সময়ের জন‍্য বেড়াতে গেছলাম রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ত শহরে। তখন প্রবল তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস করছিল ইয়োরোপের অধিকাংশ দেশ। ফলতঃ দিনের বেলায় তেমন বাইরে বের হওয়া যাচ্ছিল না, যেটুকু বাইরে বের হতাম প্রায় সবটুকুই সন্ধেবেলা থেকে মাঝরাত অবধি। দিনের বেলায় ঘরে বসে খাওয়া দাওয়া বিশ্রাম করা এবং খবরটবর দেখা হতো মোবাইল ফোনে। সেই আরজিকর কাণ্ড তখনই ঘটেছিল। ঘটনাটা তখনও মাথার মধ‍্যে ঠিকঠাক রেজিস্টার হচ্ছিল না। সত্যিই তো, রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা, আমার জন্মভূমি তো ঐরকমই। মেয়েদের ধর্ষণ, হত‍্যা, আবার আরও ধর্ষণ, আবারও হত‍্যা, এসব তো সাধারণ ব‍্যাপার। এ নিয়ে এত বাড়াবাড়ি চেঁচামেচি হৈচৈ করে লাভ কি কিছু আছে? জনগণ দেখলাম এবার প্রোটেস্টও করছে। হ‍্যাঁ, কিছু কিছু ধর্ষণ খুনে এরকম মাস প্রোটেস্ট হয়ে থাকে। অন্ততঃ এক দেড় যুগ ধরে এগুলো শুরু হয়েছে এবং চলছে বলে খবর পাই। এবারের প্রতিবাদটা কিন্তু থেমে রইল না কেমন করে। চোদ্দ থেকে পনরই অগস্টের সন্ধিক্ষণে রাত দখলের মিছিল যখন শুরু হয়েছে, সেই সময়টায় সবে রোমানিয়াভ্রমণের শেষে এয়ারপোর্ট থেকে ঘরে ফিরেছি।
    সবটুকুই টিভিতে লাইভ দেখলাম, ভাঙচুরের সীনও বাদ পড়ে নি। 
    পথশ্রমে ক্লান্ত থাকার পরেও ধীরে ধীরে আমার মনে হচ্ছিল, ঐ খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটির জায়গায় আমিও থাকতে পারতাম। আমি পেশায় ডাক্তার নই, তবুও এরকম সম্ভাবনা তো আমার ক্ষেত্রেও হতে পারত। আমি নিজেও একাধিকবার আমার জন্মভূমির দেশে নানাভাবে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। এইসমস্ত শারীরিক লাঞ্ছনার মধ‍্যে  যৌন ব‍্যাপারও ছিল, আরেকটু এগোলে খুন হতে হতে বেঁচে গেছি বারদুয়েক তো বটেই।
    কী লাকি আমি!  খুন হবার কথা ছিল, কিন্তু হলাম না। আমার জন্মভূমিতে কত মেয়ে জন্মানোর আগেই খিন হয়ে যায়, কেউ জন্মানোর পরে, কেউ শৈশবে ধর্ষিত হয়ে মরে, কেউ যৌবনে বা আরেকটু পরে খুন হয়ে যায়, জাস্ট মেয়ে হয়ে বেঁচে থাকার অপরাধে।
    আমি কী প্রচণ্ড লাকি!
    আমার এই লাকি জীবনটা আমি ভরে রাখবো অসংখ্য ভ্রমণে, অসংখ‍্য অভিজ্ঞতায়।
    আজ যেখানে আমার রেপ হয়ে মরে যাবার কথা ছিল। মরবার পরে নামটুকুও অবশিষ্ট থাকত না আমার। তুমি যদি ভয়ের অনুশাসনকে না মানো মেয়ে, তোমাকে মরতে হবে। কিন্তু আমি আমার এই দুষ্প্রাপ‍্য এবং যত্নে বাঁচিয়ে রাখা সাহসী মেয়েজীবনটা ( এবং ভাগ‍্যক্রমে যেহেতু প্রচণ্ড লাকি) আরও অনেক কিছু দেখে নিতে চাই ।
     
    কদিন একটু থমকে ছিলাম বটে, কিন্তু সেপ্টেম্বরেই আমার ঝপ করে ছুটি নিয়ে ফেললাম। আবার বেড়াবো। আরও দেখব জগৎটাকে।
    চালাও পানসি বেলঘরিয়া!
    মাত্র একদিনের মধ্যে টিকিট কাটা বাক্স প‍্যাঁটরা গুছোনো শেষ করে ফেলেছিলাম।
    এবার আসবে সেই গল্প। এগারো বারো দিনের সফর। সেই সফরে প্রায় সবটাই আনপ্ল‍্যান্ড। সেইটেই তো মজা। বাঙালি মেয়ের অ‍্যাডভেঞ্চার।
    হুঁহুঁ বাওয়া, দেখলে হবে? খচ্চা আছে।
  • . | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:৩০743899
  • পর্ব ১
     
    — শোনো, আমরা যেদিন সন্ধেয় এই শহরে ফের ফিরে আসব, আমাদের ট্রেন কিন্তু একবার বদলাতে হবে উত্তরের স্টেশনে। 
    — আমি তো টিকিট দেখে কিচ্ছু পড়তে পারি না। তা সেই উত্তরের স্টেশনটা কতদূর মেইনস্টেশন থেকে?
    — খুব বেশি দূরে নয়, একটা স্টপ ট্রেনে, টিকিটে লিখছে ছমিনিটি।
    — আর ট্রেন বদলানোর জন‍্য কত সময় পাবো?
    — দুমিনিট।
    — দুমিনিট মাত্র? মালপত্র নিয়ে প্ল‍্যাটফর্ম বদলাতে হবে না? পেরে উঠবো?
    — তাহলো চলো, বাসে করে যাই ঐ উত্তরের রেলস্টেশনটা একবার দেখেই আসি।
    — তাই চলো।
     
    এই ওপরের কথোপকথনটা বাবুর সঙ্গে আমার।
    বাবু টিকিট দেখে কিছু পড়তে পারে না, তার মানে এই নয় যে তার চোখ গেছে। তার কারণ ভাষাটা সে জানে না, আমিও সেই ভাষা জানি না, তবে অক্ষরগুলো পড়তে পারি, এই ই যা তফাৎ।
     
    তো সেই উত্তরের স্টেশনে গিয়ে যা দেখলাম, সে এক অভিজ্ঞতা বটে। সেসব পরে আসবে। এটা আসলে একটু টীজার দিলাম আর কি!
     
    হ‍্যাঁ। জুরিখ থেকে বের হবার আগে কী কী করলাম সেটা আগে বলে নিই।
    প্রথমেই গন্তব‍্য ঠিক করা একটা কাজ। অতএব ম‍্যাপ খুলে দেখে নেওয়া শুরু হলো কোথায় যাওয়া যায়। রোমানিয়া থেকে কৃষ্ণসাগরে দিব্যি যাওয়া যেত, গরমের কারণে কিছুই করা হলো না। তা সেপ্টেম্বরের শেষের দিক যেহেতু, গরমের আঁচ একটু পড়ে এসেছে, কৃষ্ণসাগরের দিকেই যাওয়া যাক তবে। তুর্কিয়, রোমানিয়া, ইউক্রেন, রাশিয়া, মলদোভা, বলগারিয়া, গ্রুজিয়া, এইসব দেশ ঘিরে রেখেছে কৃষ্ণসাগরকে।
    তুর্কিয় আগে ভালো করে ঘুরেছি ইস্তাম্বুল এশিয়া ও ইউরোপের দিকটা, সঙ্গে মার্মারে সমুদ্র এবং বসফোরাস প্রণালী যা জুড়েছে মার্মারে সমুদ্রকে কৃষ্ণসাগরের সঙ্গে। রাশিয়ার জন‍্য অন‍্য প্ল‍্যান করব পরে, বড়ো করে। ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে, রোমানিয়া সবে ঘুরে এলাম, বাকি রইল গ্রুজিয়া, মলদোভা এবং বলগারিয়া। প্রথমটায় গেলে, পরে কাস্পিয়ান সাগরের দিকে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাধা সৃষ্টি হতে পারে। আজারবাইজানের ভিসা দেবার সময় দেখে নেয়, ওদের শত্রু দেশ গ্রুজিয়ায় গিয়েছি কি না। গ্রুজিয়া আপাতত বাদ থাকুক, বাকু বেড়িয়ে এসে তারপরে যাওয়া যাবেখন। মলদোভা যাওয়া যেতেই পারে, তবে সঙ্গে করে পাসপোর্ট নিতে হবে। বলগারিয়া সবে শেংগেনে ঢুকেছে রোমানিয়ার সঙ্গে, পাসপোর্ট লাগবে না, ডোমস্টিক ফ্লাইট। বেশ, তাহলে ঐ কথাই রইল — বলগারিয়া।
    ভাষা একটা সমস‍্যা হতে পারে। তবে আমরা দুজন মিলে মঙ্গোলিয়া এফোড় ওফোঁড় করে এসেছি বছর ঘোরে নি বলতে গেলে, বলগারিয়ান ভাষাকে ভয় পাবো? রোমানিয়াতেও দিব্যি চালিয়ে নিয়েছি। অতএব সোফিয়ার রাউন্ড ট্রিপের ফ্লাইট টিকিট কেটে ফেললাম।
    এবার হচ্ছে থাকব কোথায়? হোটেল হোক কি এয়ারবিএনবি, কতদিন কোন শহরে থাকব সেটা না জেনে বুক করা যাচ্ছে না। সোফিয়াতে সমুদ্র নাই। সমূদ্র ঐ দেশের পূর্বদিকে। পূবদিকে ম‍্যাপটা একটু জুম করা যাক। ঐ তো একটা শহর ভালোভাবে ফুটে উঠলো, লম্বা বীচ আছে। নাম ভার্না। তাহলে সোফিয়া থেকে আমরা যাব ভার্না। কীভাবে যাবো? বাস, ট্রেন, ফ্লাইট, তিনটে অপশনের মধ্যে ট্রেন হচ্ছে একদম বেস্ট। হাঁটাচলার সমস‍্যা নেই। মোটামুটি বলছে সাড়ে আট নঘন্টার মতো লাগবে। বাসে একটু কম সময় লাগবে, বাসের ভাড়া কমও হবে, কিন্তু সীটে বসে বসে শরীরের ওপর বড্ড চাপ পড়বে। তাহলে ট্রেনই হোক। রাতের ট্রেনে ফার্স ক্লাস কুপে স্লীপার পছন্দ হলো আমাদের। অনলাইনে বুকিং, দুটো ভাষার অপশন, ইংরিজি এবং বলগারিয়ান। যতবার ইংরিজি করে দিই, একটু পরেই বলগারিয়ান হয়ে যায়। টিকিটের জন‍্য পেমেন্ট করবার পরে স্ক্রীনটা হাওয়া হয়ে গেল। ল্লেহ! টিকিট কই? 
    চাপ নিতে নেই, কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা রাখা যাচ্ছে না। 
    আইডিয়া!
    ইমেইল খুলতেই দেখা গেল জাংক ফোল্ডারে দুটি সিরিলিক অ‍্যালফাবেটে লেখা ইমেইল। ও দুটোই আমাদের ভার্না যাবার টিকিট, দুজনের নাম ছাড়া পুরো টিকিট বলগারিয়ান ভাষার সিরিলিক হরফে।
    এখন বোঝা গেল, কেন বাবু টিকিট পড়তে পারে নি?
     
    ঐ একই পদ্ধতি মেনে ভার্না থেকে সোফিয়া ফেরার টিকিট প্রায় কিনেই ফেলছিলাম। ভাগ‍্যিস কিনিনি!
    ভার্নায় এবং সোফিয়ায় কদিন করে থাকবো সেসব ঠিক করা হলো। আগে থাকার ব‍্যবস্থা হোক, তারপর টিকিট।
    আমরা দিন দুয়েকের বেশি থাকলে হোটেলে উঠতে চাই না। তিনবেলা করে বাইরের খাবার খেলে শরীর খারাপ হতে পারে। এয়ার বিএনবি বুক করা হয়ে গেল, তিনদিন সোফিয়া, চারদিন ভার্না, ফের তিন দিন সোফিয়া। 
    এরপরে আমরা ডিনার করতে গেলাম। দুজনেরই খিদে পেয়েছিল। ভাবলাম খাবার পরে এসে ভার্না টু সোফিয়ার ট্রেনের টিকিটটা কেটে ফেলব। ট্রেনের টিকিট কাটা এত ঝামেলার যে, ... ওদিকে বাবু খাবার বেড়ে দিয়েছে।
    টিভি চালিয়ে খাচ্ছি, গমগম করে সিএনএন চ‍্যানেল চলছে। উরিত্তারা কী সমাপতন! বুলগেরিয়া (ইংরিজিতে ওরকমই ভুল উচ্চারণ, কী আর করা যাবে) দেখাচ্ছে।
    আরিব্বাস! কী একটা গুহায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ওদের প্রতিনিধি দল। বলছে ওখানে গুহামানবেরা ছবি এঁকেছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগে। সেসব ছবিও দেখালো। 
    বাবু ঝপ করে জায়গাটার নাম টুকে রাখল। থুড়ি জায়গা নয়, গুহার নাম। মাগুরা। মাগুরা কেভ। বলছে এটা প্রাচীনতম কেভ যেটাই গুহামানবেরা নানানরকমের স্কেচ করে গেছে।
    কিন্তু জায়গাটা কোনখানে সেসব বলে না।
    বাবু তখনই ঠিক করে ফেলেছে মাগুরা গুহায় সে যাবে। তাহলে কি আমরা ভার্না থেকে সোফিয়েতে ফিরব না? কিন্তু এয়ারবিএনবিতো সবকটা পেমেন্ট হয়ে গেল। ঐ দ‍্যাখো টিংটিং করে মেসেজ ঢুকছে ফোনে, কনফার্মড। সবকটা কনফার্মড। এগুলো এখন ক‍্যানসেল করে দেবো? একটাতে আবার তিনদিনের কম হলে বুকিং নেয় না। 
    কিন্তু মাগুরা জায়গাটা কতদূর?
    খেয়েদেয়ে আঁচিয়ে  ফের মানচিত্রই সম্বল। ওরেবাবা! এ তো দেশের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে, সার্বিয়ার বর্ডারে প্রায়!
    সেখানে নিকটবর্তী শহর কোনটা?
    ভার্না থেকে ট্রেন যাবে সেদিকে? 
    কতঘন্টা লাগবে যেতে? রাতের ট্রেন যদি না থাকে তবে পৌঁছব কখন?
    গুহায় কেমন করে যেতে হয় রেলস্টেশন থেকে? 
    ওখানে হোটেল বুক করতে হবে। গুহায় কটা থেকে কটা ঢুকতে দেয় টুরিস্টদের?
    সব ছক মিলিয়ে তারপরে তো ট্রেনের টিকিট কাটবো।
    আমি একটা কাগজ নিয়ে লিখতে বসি, স্টেপ বাই স্টেপ। পাশে বাবু বসে সব ভেরিফাই করে নিচ্ছে, একে বলে ফোর আই প্রিন্সিপল।
  • . | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩০743900
  • পর্ব ২
     
    এর পরে কেমন করে কী কী টিকিট কোন হোটেল কোন তারিখ, এসব পরে আসবে ক্রমে ক্রমে। 
    তবে সেই বেরোনোর আগে আমি আমার মস্তিষ্কে রিওয়াইন্ড করে দ্রুত মনে করবার চেষ্টা করছিলাম য়ে বলগারিয়া সম্পর্কে আমি কী কী জানি। এক তো জানি বলগারিয়ার প্রসিদ্ধ তামাক, যেটার দুটো ব্র‍্যান্ডের সিগারেট সেই ছাত্রাবস্থায় অপরিহার্য ছিল। রোদোপি এবং তু। সেসব আজকাল আর পাওয়া যায় না বলেই মনে হচ্ছে। আর চিনতাম দুজন মানুষকে। একজনের নাম পিয়োতর। পিয়োতর আমাদের টাইমে বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব সম্ভবত জার্নালিজম পড়ত। শান্ত শিষ্ট ছেলে। কথা কম বললেও যথেস্ট বুদ্ধিমান ছিল সে। যোগাযোগ নেই। এখন সে কী করে, কোথায় থাকে, জানিনা। আর চিনতাম সম্প্রতি যে অফিসে আমি চাকরি করি, সেখানে এক কোলিগ , বয়ান তার নাম। কিন্তু বয়ানও বছর দেড়েক আগে চাকরি ছেড়ে কোথায় চলে গেছে তা জানি না ।
    একটা জিনিস মনে হলো, বলগারিয়া দেশটা যেমন চুপচাপ পূর্ব ইউরোপের মানচিত্রের মধ‍্যে রয়েছে, কোনও যুদ্ধ ঝামেলা মারামারি কনফ্লিক্ট কোনও খবরেই তার দেখা নেই, তেমনি ওদেশের দুজন মানুষ যাদের আমি চিনতাম, তারাও চুপচাপ শান্ত মতন একদম ভিড়ে মিশে গেছে। কোনও তাড়াহড়ো হুটোপাটি এদের মধ্যে আমি দেখিনি। তেমনি ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়নে এরা কবে সদস‍্য হলো, শেষ সারির সদস‍্যের মত শেংগেনও আংশিকভাবে ঢুকে গেছে, স্থলসীমাটুকু এখনও শেংগেন ফ্রি ইকোনমিক জোন এর আওতায় আসে নি, তবে তাতে কোনও তাড়াহুড়ো নেই, হচ্ছে হবে যখন সময় হবে, গোছের ব্যাপার।
    হয়তো বয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে কোনও কোনও ব‍্যাপারে ওকে জিজ্ঞাসা করতে পারতাম। তবে সমস‍্যা নেই, পুরোটাই তো অ‍্যাডভেঞ্চারের ব‍্যাপার।
    জিনিসপত্রের ব‍্যাপারে আমরা মিনিমালিস্ট। ব‍্যাগের ওজন ও আয়তন যত কম হবে ততই মজা ঘুরতে, নিয়মিত কাপড় কাচার অভ্যাস আমাদের আছে, ঘুরতে গেলেও।
    সেদিন ছিল ভোরের ফ্লাইট। দুপুরের মধ‍্যেই আমরা সোফিয়ার পৌঁছে গেছি। ওদের সময় আবার আমাদের চেয়ে একঘন্টা এগিয়ে। সেইজন‍্যই দুপুর হয়ে গেল।
    এয়ারপোর্টে টাকা ভাঙাতে নেই, রেট খুব কম দেয়। তবুও তিরিশ ফ্রাংক ভাঙাতেই হলো, আগামি ৭২ ঘন্টার জন‍্য মেট্রোর টিকিট কাটা হলো দুজনের। ওদের টাকার নাম লেভ। এক ফ্রাংক ভাঙালে দু লেভের একটু কম দিল এয়ারপোর্টে। 
    সোফিয়ার মেট্রোম‍্যাপটার প্রিন্টাউট নিয়ে এসেছিলাম। দেখা যাচ্ছে মোট চারটে লাইন। লাল, নীল, হলদে এবং সবুজ। এয়ারপোর্ট হচ্ছে হলদে লাইনের (M4) একদম শেষ স্টপ। আর আমাদের বাড়ির স্টপ হলদে লাইনের ওমাথার শেষ স্টপ — ওবেলিয়া। 
    কিন্তু ট্রেনে আমাদের চড়তে দিলে তো!
    স্টেশন বিল্ডিং এর সামনেই একজন পালোয়ান চেহারার সিকিউরিটি গার্ড। সে তো বাবুকে দেখেই যেচে আলাপ করে গল্প জুড়ে দিলো।
    এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, আলাপটা সে কোন ভাষায় করছে?
    বলগারিয়ান? উঁহু।
    ইংরিজি? উঁহু।
    কাহলে কি বাংলা? আরে না রে বাবা! 
    সে জার্মানে কথা বলতে জানে। তার ওপর তার নাকি আমাদের দেখেই মনে হয়েছে — এরা ভালো মানুষ।
    বাবু এবং যুবক সিকিউরিটি গার্ড অনেকক্ষণ গল্প করল। আমি সেই সুযোগটা পেয়ে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে একটু সিগারেট খেয়ে এলাম।
    সোফিয়ায় পদার্পন করেই বেশ ভালো লেগে গেল জায়গাটা।
    ট্রেন চলছে তো চলছেই একটার পর একটা স্টেশন পেরিয়ে। মাটির তলায় তো কোনও বাইরের দৃশ‍্য দেখার স্কোপ নেই। আমি চিন্তা করছি, স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাড়িটা খুঁজে পেলেই শান্তি। প্রায় ঘন্টাখানেকের কাছাকাছি হল, পরের স্টপ ওবেলিয়া ঘোষণা হয়ে গেছে, আমি পরিষ্কার সব শব্দ শুনে বুঝতে পারছি, মনটা ভালো হয়ে গেল, এদেশে ভাষার সমস‍্যা হবে না। দুজনে ট্রেন থেকে নামলাম। এই স্টেশন মাটির তলায় না। আমরা নামার পরেই বাকি প‍্যাসেঞ্জারদের নিয়ে ট্রেন সোজা বেরিয়ে চলে গেল। 
    কেসটা কী হলো? এটাই লাস্টস্টপ ছিল না হলুদ লাইনের? তাহলে কি কিছু ভুল হলো আমার? এদিকে স্টেশনের দেয়ালে ঝকঝকে অক্ষরে খেদাই করে লেখা ওবেলিয়া ১।
    ১ লেখা কেন? তবে কি এরপরেও আরও ওবেলিয়া আছে? ২? ৩?
    আমি অল্প ঘাবড়েছি। এবার কোন দিক দিয়ে বের হবো সেটাও জানা দরকার। স্টেশন ফাঁকা। আর দুজন ছোট ছোট মেয়ে, কিশোরী বা যুবতী এদিকে আসছে, তাদেরই প্রশ্ন করলাম ঠিকানা দেখিয়ে, এই এত নম্বর বাড়িটা কোথায় হবে বলুন তো?
    মেয়েদুটি বেশ সপ্রতিভ। স্ট্রেঞ্জার দেখে ভয় পায় না তো বটেই, উল্টে সাহায‍্য করবার জন‍্য সে কী চেষ্টা, যেটুকু ইংরিজি জানে প্রথমে সেটা দিয়েই চালালো, তারপরে আমি রাশিয়ানে বলছি, তারা বলগারিয়ানে বলছে, কিন্তু রাস্তায় নাম ঠিকানায় নেই। শেষে এয়ারবিএনবির হোস্ট কে ফোন করা ছাড়া আর উপায় নেই। কিন্তু আমাদের তো সিমকার্ড ইয়েরোপিয়ান ইউনিয়নের না। সেই মেয়েদের মধ‍্যে বড়োটি আমাকে হটস্পট দিলো, হোয়াটস‍্যাপে কল করা হলো হোস্টকে। 
    আমি মেয়েটিকে বললাম তুমিই কথা বলো, দুজনে একই ভাষায় তাড়াতাড়ি বুঝে যাবে ঠিকানা।
    ওদিকে হোস্ট বলছে, আমি তো বলগারিয়ান জানি না।
    - তবে তুমি কোন ভাষা জানো? আমাকে ঠিকানা ভালো করে দাও নি কেন? এক্ষুনি এখানে এসো, নইলে আমি তোমার নামে ...
    — আমি তো পোল‍্যান্ডে থাকি। আসলে আমি আজারবাইজানের মানুষ।
    — এবার তাহলে রাশিয়ানে কথা বলি?
    — হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ নিশ্চয়ই ।
    — শিগগিরই বাড়ির ডিরেকশনটা বল। রাস্তার নামটা। কুইক!
    — আপনি ফোনটা ঐ মেয়েটিকে দিন, আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।
    তারপরে সে রাশিয়ানেই মেয়েটিকে বোঝালো, মেয়েটিও মোটামুটি বুঝল।
    আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে মেয়েটিরে হাতে পাঁচটা টাকা জোর করে গুঁজে দিই। সে আমাদের মোটামুটি ঠিকানা বুঝিয়ে দেয়।
    মেইন গেটের নাম্বার লক খুলে লিফটে করে করে আমরা টপ ফ্লোরে বাংলা সাততলায় পৌঁছই। হিসেব মতো দরজার পাপোশের নীচে চাবি থাকার কথা।
    চারটে দরজা, চারটে পাপোশ। কোনও পাপোশের নীচেই চাবি নেই। এদিকে আমার প্রচণ্ড হিসি পেয়েছে।
  • . | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:২৫743901
  • মাথা ঠাণ্ডা রাখা এক জিনিস আর হিসি চেপে রাখা আরেক কঠিন কাজ, বিশেষত মাথায় যখন ঢুকছে না যে নিকটতম বাথরুমের দূরত্ব কত।
    তাও চেষ্টা করা যাক। ছেলেটা ওয়াইফাই এক পাসওয়ার্ড দিয়েছিল। ঘরটা যদি এই চারটের যে কোনও একটা হয়, ওয়াইফাই সিগন্যাল পাওয়া যাবে, তারপর পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়াইফাই এ কানেক্ট করে ওকে ফোন করে আবার দাবড়াতে হবে।
    এসেছে! ঐ ওয়াইফাই সিগন্যালটাই এসেছে! কিন্তু না, পাসওয়ার্ড ভুল। আমি ট্রাই করলাম দুবার, বাবুও ট্রাই করলো দুবার। কানেক্ট হলো না।
    আমাদের দুজনেরই একটা বাথরুম খুঁজে পাওয়া দরকার।
    নাহ। নীচে নেমে এলাম। পাশের বাড়িতে ঐ মেয়ে দুটো ঢুকেছিল না? ওদের যদি খুঁজে পাই একবার।
    দরজার বাইরে একটা লোক দাঁড়িয়ে। ফোনে কথা বলছে কারওর সঙ্গে। তাকে ইশারায় ডাকলাম।  ইংরিজি রাশিয়ান যেটা বোঝে, ভাই এই বাড়িতে কি ওয়াইফাই পাওয়া যাবে?
    লোকটা কিছুই বুঝল না। দরজা খুলে পাশের বাড়িটায় ঢুকল, ভেতরে দেখছে মেয়েদুটো দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। 
    বাবু বলল, চলো তো এই বাড়িটার টপ ফ্লোরে। লিফট নিয়ে পৌঁছে গেছি সাততলায়। এখানেও চারটে দরজা। মাত্র একটা দরজার সামনে পাপোশ। পাপোশ উল্টোনো আমার প্রায় অভ‍্যাস হয়ে গেছে। উল্টোতেই দেখি চাবি। চাবি ঘেরাতেই দরজা খুলে গেল। বেশ বড়োসড়ো অ‍্যাপার্টমেন্ট। চমৎকার বাথরুম।
    বাথরুমের কাজ সারার পর আমার মনে খটকা। পাশের বাড়ির মেইনগেটের কোড আর এবাড়ির মেইন গেটের কোড একই? নাকি ভিন্ন? তাহলে এরপরে এখানে ঢুকব কেমন করে?
    দুই ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড কাজ করে কি?
    পাসওয়ার্ড আবারও ভুল। কিন্তু আরও কয়েকটা সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে। বাবু ঠান্ডা মাথায় সেগুলোতেও ঐ একই পাসওয়ার্ড ট্রাই করতে লাগল। কী আশ্চর্য! একটা লেগে গেছে। উই আর কানেক্টেড।
    কিন্তু মেইন গেটের কোডটা ট্রাই করতে হবে। শেষে উল্টোদিকের ফ্ল‍্যাটের দরজায় বেল টিপে গৃহকর্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নীচে গেলাম। তিনি কোনও ভাষাই বোঝেন না। চাবির সঙ্গে একটা আরএফআইডি চিপ ছিল, ওটাই কাজ করল, এবং আশ্চর্যের ব্যাপার এবাড়ির কোডও পাশের বাড়ির সঙ্গে হুবহ এক।
    বেলা সাড়ে তিনটে বাজে। দুপুরে অল্প আলুপরোটা খেয়েছিলাম। এখন ঝপ করে ভাত চাপিয়ে দিলাম। ডিমসেদ্ধ সঙ্গে করে এনেছিলাম ভাগ‍্যিস। ডিমকারি এবং ভাত খেয়ে অল্প রেস্ট নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম সোফিয়া শহরের কেন্দ্রের দিকে। সন্ধে ছটা বেজে গেছে, ইউনিক্রেডিট বুলবাংক বন্ধ হয়ে গেছে, তবে রিসেপশনের সিকিউরিটি গার্ড অত‍্যন্ত ভদ্রলোক, ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন যে সোজা ডানদিকে গিয়ে দ্বিতীয় ট‍্র‍্যাফিক সিগনালের পর ফের ডাকদিকে সোজা চলে গেলেই টাকা এক্সচেঞ্জ করবার দোকান আছে। 
    সেইমতো পৌঁছে আমরা যে দোকান পেলাম সেটার নাম ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন। এরা মার্কামারা ঠগ। একশো ভাঙাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু রেট বলছে এয়ারপোর্টের চেয়েও কম। পঞ্চাশ ভাঙালেই আজ চলে যাবে।
    পরে জেনেছি যে ইউরো জোনে ঢুকতে চাচ্ছে বলে, ওগের স্থানীয় কারেন্সির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। 
    ঐ জায়গাটার নাম এখন মনে পড়ছে না, তবে কিছু রাস্তা জুড়ে কেবলই রেস্টুরেন্ট কাফে বার। গাড়ি চলে না, চওড়া রাস্তা জুড়ে শুধু মানুব হাঁটে। সেখানেই একটা রেস্টুরেন্টে খেলাম চাইনীজ খাবার। ওটাই ডিনার। উঁহু, ভলো না খেতে। এমনিতে রেস্টুরেন্ট দেখতে শুনতে ভাল। তবে খাবারের স্বাদ পোষালো না।
  • | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ২১:১০743903
  • এইত্তো!  চালাও পানসি বেলঘরিয়া।
  • . | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ২২:২৯743904
  • পঁচিশে সেপ্টেম্বর সন্ধেয় যখন বেরিয়েছিলাম টাকা ভাঙাতে এবং রাতের খাবার খেতে, সেই মেত্রো স্চেশনের নাম ছিল সের্দিকা। এর অর্থ ইংরিজি করলে দাঁড়ায় স্টেশন।
    যাত্রী সুরক্ষার জন্য সোফিয়া মেত্রোয় এক দারুণ ব্যবস্থা দেখলাম যেটা রয়েছে এই ছোট্ট ভিডিওতে ।
     
    পঁচিশে সেপ্টেম্বর সোফিয়ায়
  • . | ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৫৭743912
  • খুব বেশি ফোটো বা ভিডিও করা হয় নি, ক্লান্ত থাকার কারনে তো বটেই, সেই সঙ্গে ফোটো/ভিডিও করবার তালে থাকলে মন দিয়ে কেন জানিনা পরিবেশটুকু অনুভব করায় বাধা পড়ে যায়।
    তাই মাঝে মধ্যে একটা দুটো করে ফোটো/ভিডিও গুঁজে দেবো এই লেখার এখানে ওখানে।
    তা হুম যে কথা হচ্ছিলো, সের্দিকা থেকে ফেরার পথে যেটুকু পয়সা বেঁচেছিলো, তাই দিয়ে কাঁচা বাজার করা সম্ভব নয়, তবে খাবার জল তো কিনতেই হবে। ওবেলিয়াতে আমাদের পাড়ার দোকানগুলো ছোটোছোটো ঘুপচি ঘুপচি। ছোটোছোটো মুদিখানার মতো। বেশ রাত অবধিই খোলা থাকে। কয়েকটাতো আবার ননস্টপ খোলা। জল ওখান থেকেই নিতে হবে, এমনকি যদি বেশ রাতের দিকেও জল ফুরিয়ে যায়, তাহলেও চিন্তা নেই, ঝপ করে নীচে নেমে জল কেনা যাবে।
    আমাদের এদিকটায় জল কেনার হুজুগ বলো, কি ফ্যাশন , কি প্রয়োজনীয়তা, কোনওটাই হয় না। আমরা কলের জলই খাই, না ফুটিয়ে, না ফিল্টার করে। কিন্তু বিদেশে বিভুঁইয়ে সব জায়গয় জলের কোয়ালিটি কতটা কেমন হবে সেইটে নিয়ে প্রশ্ন তো থাকবেই, বেড়াতে গিয়ে পেটের অসুখে কাবু হলে বেড়ানোটাই মাটি হয়ে যাবে। অগত্যা।
    ওবেলিয়া মেট্রোস্টেশব থেকে বাড়ি ফেরার পথটুকু আমরা যখন হাঁটছিলাম, তখন সন্ধে গাঢ় হয়ে হয়ে রাতের রূপ নিয়েছে। শরতের আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার না হলেও, আপাতত বৃষ্টির কোনও পূর্বাভাস টের পাওয়া যাচ্ছে না। ঝপ করে তাপমাত্রা বেশ কয়েক ডিগ্রি নেমে গেছে দুপুরের তুলনায়, হাল্কা শীতশীত করলেও উপভোগ্য। এই তল্লাটে সারি সারি প্রকাণ্ড সব ফ্ল্যাটবাড়ি। একেকটা বাড়ি, একেকটা ব্লক। সেই সাবেক সমাজতন্ত্রের আমলে তৈরী বাড়িগুলো এখনও বেশ পোক্তই লাগছে দেখে। আমাদের বাড়িদুটো অবশ্য নতুন আমলে তৈরী তা স্পষ্টই বোঝা যায়, হংসমধ্যে বক যথা বেমানান হাইট (কমের দিকে), বেমানান স্কেলে তৈরী ভুঁইফোঁড় মানিকজোড়।
    বাড়িটা আবছা অন্ধকারে খুঁজে পাবার জন্য একটা ল্যান্ডমার্ক আমি আবিষ্কার করেছি। বাড়ির সামনে সেই যে লম্বা রাস্তাটা, সেখানেই একেবারে দরজার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে একটা রংচটা তোবড়ানো মস্ত লাল রঙের ভ্যান। ঐ লাল ভ্যানটা যেখানে পার্ক করা থাকবে, তার সামনেই হবে আমাদের বাড়ির দরজা। ওবেলিয়াতে যেন এটাই নিয়ম।
    উঁচু ব্লকবাড়িগুলোর সামনে নিয়ম করে চওড়া ফুটপাথের অর্ধেকটা যেমন থাকবে নানান গাছে ভরা, তেমনি থাকতেই হবে প্রতিটি বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে ঐ গাছে ভরা বাগানগুলোর মধ্যে পাকাপাকিভাবে গেঁড়ে বসা টেবিল, বেঞ্চি, চেয়ার। এ সব নিয়মের মধ্যেই পড়ে। কাঠের হোক কি লোহার, ঐ সব টেবিল চেয়ার বেঞ্চি হচ্ছে বিকেলে, সন্ধেয় বা রাতে ফ্ল্যাটবাড়ির মহিলাদের গল্প আড্ডা করবার জায়গা। খুব বেশি কনকনে হাওয়া যদি না ছাড়ে, যদি না সেসব দিন শীতে তুষারে মাখামাখি হয়ে যায়, তবে ঐ জায়গাগুলোতেই বসে আড্ডা, সঙ্গে থাকতে পারে এনামেল করা লোহার কেটলি, যা ভরা থাকবে চায়ে, মেয়েরা আড্ডা দেবে, চা খাবে, টুকটাক ঘরে তৈরী বিস্কূট কি অন্য কোনও খাবারে কুটকুট করে কামড় বসাবে। এমনকি গ্রীষ্ম কি বসন্তের রাতে ওয়াইনও খাওয়া চলতে পারে। ঐ চেয়ার বেঞ্চিগুলো যুগের পর যুগ অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। পুরুষেরাও যে সেসবখানে বসে আড্ডা গুলতানি করে না এমন কোনও মাথার দিব্যি নেই, তবুও অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মেয়েদের আধিক্য থাকে অপেক্ষাকৃত বেশি, ছেলের গ্রুপগুলো একটু আলাদা আলাদা থাকে, তবে সেসব ছেলেরা অন্ততঃ মধ্যবয়স্ক তো হতেই হবে। দুপুরে যখন বাড়িটা খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছিলাম, তখন চোখেই পড়েনি এইসব। এখন ফেরার পথে এক এক করে সব নজরে আসছে। বাবুকে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি এ সমস্ত জিনিসের তাৎপর্য, বাড়ির সম্পূর্ণ বাইরে হয়েও ঐ টেবিল বেঞ্চিগুলো কেন মধ্যবিত্ত জীবনের অপরিহার্য এবং নিজস্ব আসবাব।
     
  • . | ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৩৭743913
  • এ পাড়ায় নিয়ম করে সব আছে। দরজির দোকান, হেয়ার কাটিং সালোন, কম খরচে প্রসাধনের জন্য ছোটো বিউটি পার্লার, যেখানে ম্যানিকিওর পেডিকিওর ফেশিয়াল ইত্যাদির "নট সো হাই কোয়ালিটি" কিন্তু অ্যাফোর্ডেবল রূপচর্চা হচ্ছে, উঁকি মারলে দেখা যায় মাঝবয়সী মেয়েদের ভিড়ই বেশি সেখানে, ফস করে মেয়েদের লিখতে গিয়ে হাউজওয়াইফ লিখে ফেলছিলাম, উঁহু লিখলে ভুল হতো। আমার চেনা অভিজ্ঞতা বলে পশ্চিমে বিয়ের পর যত মেয়ে হাউজওয়াইফ হয়, পূবের ইয়োরোপে সে সংখ্যা নগন্য। অথচ সে নিয়ে বাড়াবাড়ি কি হৈহৈ কিছুই হয় না।
    সবচেয়ে বেশি আনন্দ বা কমফর্ট হচ্ছিল এইটুকু বুঝে যে, এখানে পথ হারানোর চান্স নেই। ছোট্ট ছোট্ট দোকানে, গাছেপালায়, আবছা আলোয় সার দিয়ে প্রাচীন থেকে নবীনতম ডিজাইনের মোটরগাড়ির পার্কিং, হেঁটেই মেট্রোস্টেশন, সব মিলিয়ে সোফিয়াকে আমার বেশ চেনা চেনা লাগছিল।
    ফ্ল্যাটে ফিরে অল্প কিছু খাবারের আয়োজন করি, অনেকটা জায়গা এরা আমাদের দিয়েছে, সেই সঙ্গে অনেকটা প্রিভেসি। তিনটে ঘর থেকেই দরজা রয়েছে ছাদের। নিজস্ব ছাদ। এসে দাঁড়ালে কোনও কোনও দিকে দেখা যায় পাহাড়, দিকচক্রবাল, কোনও দিকে সোফিয়া শহরের বিল্ডিং রাস্তা উঁচু উঁচু আর্কিটেক্চার। এত সুন্দর একটা বেড়ানোর দেশ, এত কাছে, তবু টুরিস্ট এত কম কেন এই দেশে?

    এখানে রইল সেই অখাদ্য খাবারের ছবিটা।

    এই ভিডিওতে সের্দিকা স্টেশনের আস পাশ
  • . | ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৩০743914
  • পর্ব ৩

    পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট চান ইত্যাদি সেরে সোজা বেরিয়ে পড়ি সোফিয়া ইউনিভার্সিটির দিকে।
     
     
     
    যথারীতি পূর্ব ইয়োরোপের সেই চেনা ধাঁচে তৈরী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, যদিও নানান ফ্যাকাল্টি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শহর জুড়ে।
    পের্লোভ্স্কা নদী বয়ে গিয়েছে শহর চিরে তো বটেই ইঊনিভার্সিটির পাশ দিয়েও। তবে লাফানোর কিছু নেই, নদী না বলে এক নালা বললে নালারও অপমান হতে পারে। এ একেবারে সরু একফালি জলধারা, তায় আবার দুইপাড় সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। ব্রিজ টিজ সব মিলে মিশে রাস্তাই, একেবারে নিঃশব্দ, গোপন নদী। তারই এক ফুটের ধারে দেখলাম ব্যাংক। ব্যাংক দেখেই মনে পড়ে গেছে যে টাকা ভাঙাতে হবে। পকেট ফাঁকা। এখন ঠিকঠাক রেট পেলে আপাতত দুশো ভাঙিয়ে নিলেই চলবে। তারপরে ভার্নার দিকে যাবার আগে আরো কিছু তো ভাঙাতেই হবে।
    ব্যাংক  সবে খুলেছে। জনাতিনেক কর্মচারী। বলগারিয়ান কোঅপারেটিভ ব্যাংক। ঢুকতেই বোর্ড টাঙানো, তাতে নানান দেশের কারেন্সীর ক্রয় বিক্রয় এক্সচেঞ্জ  রেট জ্বলজ্বল করছে, কিছু কমিশন নেয়, সেকথাও লিখে রেখেছে। তবে রেট বেশ ভালো। দুশো ভাঙালে কমিশন টমিশন কেটে কুটে চারশো লেভ আরামসে হাতে পেয়ে যাবো।
    অতয়েব ক্যাশিয়ারের জানলায় মুখ দেখালাম।
    - নমস্কার, দুশো সুইসফ্রাংক ভাঙাবো।
    ভদ্রমহিলা অপার বিস্ময়ে যেন আমাদের দুজনকে যুগপৎ দেখতে লাগলেন বলে আমার মনে হলো। তার পরে কেমন যেন মুষড়ে পড়ে অধোবদন হলেন। অন্ততঃ মুখের অভিব্যক্তি দেখে তেমনই মনে হলো। এসব ক্ষেত্রে হুট করে ধৈর্য হারাতে নেই, বেশি হাসিহাসি স্মার্ট লুকও দিতে নেই।
    বাবু ঠিক বুঝতে পারছে না, কেস টা কী। আরে ছাই আমিও কি বুঝতে পারছি নাকি?
    এবার ক্যাশিয়ার জানালেন (আগাগোড়া বলগারিয়ানেই) যে ঐ ব্যাংক কিন্তু কমিশন কাটবে।
    - ঠিক আছে আমরা রাজি। কমিশন কাটবে, সেই ব্যাপারে আমাদের কোনও অসম্মতি নেই।
    এইবারে উনি কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে সেই বোর্ডের প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে বললেন। 
    -হ্যাঁ দেখছি, রাজি।

    এরপরে উনি নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে আমাদের যাবতীয় ডকুমেন্ট চাইলেন। সঙ্গে বলগারিয়াতে আমাদের বাসস্থানের প্রমাণ। বাবু একটু কিন্তু কিন্তু করছিল, কারন আমরা পাসপোর্ট ছাড়াই বলগারিয়া এসেছি, ডকুমেন্ট বলতে সবেধন নীলমনি আইডি কার্ডটুকু। আর কিস্যু নেই।
    আমি দুশো সুইসফ্রাংক এবং কার্ড ঐ কাচের জানলার ওপারে চালান করে দাঁড়িয়ে আছি।
    বাবুর আইডি কার্ডটা ইচ্ছে করেই দেওয়া হয় নি।
    এমনিতেই তার নাম পদবী লিখতে দেড় লাইন জায়গা লাগে, আমার নাম তুলনায় অনেক ছোটো সাইজের।
    ক্যাশিয়ারদিদি কথা কম বলেন, এবং অনেকক্ষণ ধরে আমার আইডি কার্ড খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে শেষে একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস বের করলেন, এবার সেইটে দিয়ে দেখতে লাগলেন।
    কেসটা কী? আমরা দুজনেই ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। তিনি একবার করে কম্পিউটারে কীসব টাইপ করছেন, পুনরায় আমার আইডিকার্ডের ওপর আতসকাঁচ ফেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা গোছের কিছু। অন্ততঃ আমাদের সাইড থেকে তো ওরকমই মনে হচ্ছে। একবার আইডি কার্ডে কোনটা আমার নাম এবং কোনটা পদবী সেটাও জেনে নিলেন আমার থেকে।
    একবার মনে হচ্ছিলো এই দারুণ ঘটনাটা ভিডিও করে ফেলি, কিন্তু সেটা করতে গেলেও রিস্ক থাকে। 
    বাবু আমার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে এত অ্যাডভেঞ্চারপ্রবণ হয়ে উঠছে, যে সে ও এই পনেরো বিশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করাটা আর গায়ে মাখছে না। তাও ভালো, ব্যাংকে আর কোনও কাস্টমার নেই।
    প্রথমতঃ আমাদের দুজনকে দেখে বিস্ময় এবং মুষড়ে পড়া, তারপরেই কমিশনের কথা তুলে কারেন্সী এক্সচেঞ্জ করতে অনীহা, এইসব তো ছিলোই, একগাদা ডকুমেন্ট তিনি চাইলেন, তবে আমি কিছুই দিই নি, ঐ একটা কার্ডেই তিনি মজেছেন। মনে তো হয় না, কোনও টেররিস্টকে খোঁজা চলছে যার নাম টাম আমার নামের কাছকাছি।
    পাক্কা বিশ মিনিট অপেক্ষা করবার পরে আচমকা কড়কড়ে চারটে একশো লেভের নোট আমার হাতে চলে এলো, সঙ্গে কিছু খুচরো কয়েন। সেই সঙ্গে কার্ডটাও ফেরৎ চলে এলো। আর যেটা এলো, সেটাই সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং জিনিস। এটার নাম রসিদ। সিরিলিক অক্ষরে এই রসিদে জ্বলজ্বল করছে আমার নাম ও পদবী।
    এ এক মহামূল্যবান সম্পদ আমার কাছে। এত বছর বিদেশে ছাত্রজীবনে যা পারিনি, সেইটে আজ আমার অজান্তেই সম্ভব হয়ে গেছে। ছাত্রজীবনে সিরিলিক অক্ষরেই আমার নাম পদবী লেখা হতো বটে, তবে তা আমার নামের উচ্চারণকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করত না। আজ করেছে। ইনি যে বানানটা লিখেছেন, সেটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় বানান।
    খুচরো পয়সা আর কী গুনব? আনন্দে আমার প্রায় কান্না পেয়ে যায়। বাবুকে জিনিসটা বোঝানোর চেষ্টা করি, কিন্তু সে কতটা বুঝবে এই হরফ, উচ্চারণ, বানান, আমার জানা নেই।
    কী অদ্ভূত এই জীবন। 
    ক্যাশিয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে আমার নাম অনুবাদ করেছেন সিরিলিক হরফে। তিনি রোমান হরফের সঙ্গে পরিচিতও নন। সেইজন্যই সম্ভবতঃ আমাদেরকে দেখে প্রথমে বিস্ময়, তারপরে মুষড়ে পড়া, অনীহা ইত্যাদি ইত্যাদি...
    আমরা মানুষকে নিয়ে রগড় করতে সদাপ্রস্তুত থাকি, বিশেষ করে যখন একটু বেটার পোজিশনে থাকি, আজ আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হতে যাচ্ছিল, যদি পুরো ঘটনাটার শেষটুকু বাদ দিতাম। শেষটাই আমাকে আরও একবার মনে করিয়ে দিলো, কারোকে আন্ডার এস্টিমেট করতে নেই।

    তবে নামের এত সুন্দর বানান পেয়ে আমি আনন্দে আত্মহারা। তাই নালারূপী পের্লোভ্স্কা নদীর শান বাঁধানো তীরে গিয়ে বসি কিছুক্ষণ। কাল ভার্নার ট্রেন। এখন সোফিয়া মেইনস্টেশন চত্বরটা ভালো করে দেখে আরও ঘোরঘুরি আছে। মাঝে মধ্যে খাওয়া বিশ্রাম ঘুম।
     
     
     
     
     
  • kk | 172.58.***.*** | ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৪৮743915
  • "ফোটো/ভিডিও করবার তালে থাকলে মন দিয়ে কেন জানিনা পরিবেশটুকু অনুভব করায় বাধা পড়ে যায়।"
     
    এইটা খুব সত্যি কথা। জায়গাটাকে ঐ ছোট পর্দাতেই দেখা হয় শুধু। আচ্ছা, একটা ব্যাপার বুঝলাম -- তাহলে পূর্ব ইউরোপীয় কোনো ভাষা না জানা মানুষের এসব দেশে ঘুরতে গেলে খুবই সমস্যা হবে!
  • . | ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ২০:০০743916
  • বাকীটা পড়ো কেকেদা। সব আসবে।
  • | ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ২০:০০743917
  • রাস্তা চেনার জন্য আমারো ভিজ্যুয়াল মার্কার  দরকারি লাগে। সেই যে ছোটবেলায় দোকান পাঠানোর সময় বলে দিত নারায়ন স্টোর্সের পাশের গলিতে ঢুকে সাইকেলের দোক্সনের পরের দোকান থেকে অমুকটা নিয়ে আয় - সেই থেকেই মনে হয় মার্কারগুলো মাথায় তুলে নিতে শিখেছি। এইজন্য সল্টলেক বা চন্ডীগড়ে ঠিকানা খুঁজতে আমার একটু সমস্যা হয়। 
     
    ফোটো/ভিডিও সম্পর্কে আমার মত একযটু আলাদা। 
     
    একেবারে অচেনা একটা জায়গা,  ভাল লাগছে পড়তে। 
  • . | ২০ অক্টোবর ২০২৪ ০৫:১১743938
  • কাল রাতে যেহেতু আমাদের ভার্না যাবার ট্রেন ধরতে হবে, তাই সোফিয়া মেইন স্টেশন অভিমুখে চললাম দুজনে। সবই মেট্রোয়, লাইন পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে। মস্ত স্টেশন। কিন্তু লোকজন কম।
    সামনে বেশ সুন্দর একটা নিরিবিলি চত্বর মত জায়গা, এতটাই নিরিবিলি এবং ছায়াছায়া গলি রয়েছে, যে একটা গলিতে রীতিমতো হিসির দুর্গন্ধ নাকে এসে লাগছে। এমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছিমছাম শহরে মেইন রেল স্টেশনের গা ঘেঁষে হিসির গন্ধওয়ালা এই গলি কেন রয়েছে তার উত্তর পরে পেয়েছিলাম। 
    মোটকথা এখানেও স্টেশনের প্রতিটি তলায় যাবার জন্য সিঁড়ি লিফট যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে এসকালেতর। একেবারে ছকে বাঁধা পূর্ব ইয়োরোপ তথা প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর নিয়মে তৈরি এই স্টেশন। নিশ্চয় আরও অনেকই পুরনো কিন্তু কিছু কিছু জিনিসে বাঁধা ছক। যেমন একখানা মাল জমা রাখার ঘর। এইটেকে এরা বলে গার্দেরোব। মাল প্রতি চব্বিশ ঘন্টার হিসেবে পাঁচ লেভ খরচ পড়ে। জানা রইল। আগামিকাল আমাদের দরকার হতে পারে। স্টেশনের ভেতরে গ্রাউন্ড ফ্লোরে একখান রেলগাড়ির মডেল। প্রমান সাইজের। এই যে নীচে সেই ছোট্ট ভিডিওর লিংক।
    সোফিয়ার ট্রেনচালক
     
  • . | ২০ অক্টোবর ২০২৪ ০৫:৩৬743939
  • গার্গেরোবটা আন্ডারগ্রাউন্ডে। এবং সেই ফ্লোরে অনেকগুলো টিকিট কাউন্টার তো রয়েছেই, আর রয়েছে বিশাল হলঘরে যাত্রীদের বসবার ব্যবস্থা। অধিকাংশই ফাঁকা। একদম সামনে চলে গেলে গলির মত রাস্তার দুপাশে সিঁড়ি এবং লিফট বিভিন্ন রেলট্র‍্যাকে পৌঁছে যাচ্ছে সেই লিফট। মানে অনেকগুলো ট্র‍্যাক। আমাদেরটা কত নম্বর হবে সেটা আগে থেকে জানার ব‍্যাপার নেই।
    যাক, স্টেশনের ব‍্যাপারটা মোটামুটি জানা গেল। একটু ঢুঁ মারলাম গার্দেরোবের দিকে। রাত দশটা অবধি খোলা থাকে লিখেছে। দরজা হাট করে খোলা, দেয়ালগুলোও কাঁচের। মালপত্র সব রাখা রয়েছে দেখা যাচ্ছে। ভেতরে কেউ নেই। ঢুকে দেখলাম একটা মস্ত টেবিলের ওপর কাগজ পত্র খাতা। টেবিলের ওপাশে গার্দেরোবের ক‍্যাশিয়ারের চেয়ার, সামনেও দুটো চেয়ার। খাঁ খাঁ করছে ঘর, গিজগিজ করছে মালপত্র। দরজা দিয়ে বের হয়ে দেখি একটু দূরে একজন বেশ বয়স্ক মানুষ টেলিফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। তাকেই জিজ্ঞাসা করা ছাড়া উপায় নেই। অপেক্ষা। কথা শেষ না হলে প্রশ্ন করা অসভ‍্যতা। তবু একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মানুষটির কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াই। তিনি আমাদের ইশারায় গার্দেরোবের ভেতরে যেতে বললেন। ভেতরে গিয়ে বসলাম দুজনে। একটু পরে কথা শেষ করে তিনি নিজেই এলেন ভেতরে। তিনিই এখানে এখন কর্তব্যরত কর্মচারী ।
    প্রথমে জেনে নিলাম ইংরিজি চলবে কিনা, তাতে বাবুর সুবিধে হয় সবকিছু বুঝতে। না, ইংরিজি চলবে না, বলগারিয়ান এর পাশাপাশি রাশিয়ানটা চলবে। মানুষটি আগের জমানার, সম্ভবত অবসরপ্রাপ্ত, তাই এই নির্জন গার্দেরোবে চাকরি করছেন। 
    কাল হয়ত আমরা কিছু ঘন্টার জন‍্য এখানে দুটো লাগেজ রেখে যাব। ট্রেন যেহেতু রাত সাড়ে দশটা নাগাদ, বিকেলে সন্ধেয় অনেক ঘুরতে পারব। বারবার ঘরে যাবার দরকার হবে না। তবে আগামীকাল অন‍্য একজনের ডিউটি, তিনি মহিলা।
    -তিনি কি ইংরিজি জানেন?
    - নাহ
    - রাশিয়ান?
    - অবশ্যই!
    যাক বাঁচা গেল। আমরা নিশ্চিত হয়ে রেলস্টেশনের কাফেতে গিয়ে পানীয় কিনলাম। গলাটা অল্প ভিজিয়ে নিতে হবে এখন।
  • . | ২০ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:২৮743940
  • এখানে এসে পর্যন্ত বাইরে যেটুকু খাবার খেয়েছি টুকটাক, আমাদের পছন্দ হয় নি। একটু আগেই খেলাম অল্প কিছু, সেই একই রকম লাগে কেমন যেন পিৎসারই মতো কেবল দেখতে আলাদা, একটু আগে পালংশাকের পুর দেওয়া একটা প্যাটিশ মতো খেয়েছি, চলে যায় টাইপের বস্তু। আরও কিছুক্ষণ ঘুরব এখন। ইচ্ছে আছে আজ বাইরে ভালো করে লাঞ্চ করার। সেইসব ভেবেই রুট বেছে নিই সোফিয়া মলের দিকে। মল যেহেতু, কয়েকটা রেস্টুরেন্ট, ফুডকোর্ট, এসব তো থাকবেই।
    হিসেব মতো পৌঁছে গেলাম নির্দিষ্ট মেট্রো স্টেশনে। বেশ দুপুর হয়েছে। মল খুঁজে পেতে অল্প ঘোল খেতে হলো রাস্তা খোঁজার চক্করে। তবে পাওয়া গেছে। অদূরেই দেখা যাচ্ছে সোফিয়া টাওয়ার, ওখানেই সোফিয়া মল, মিনিট তিনেক হাঁটতে হবে।
    একটু জিরিয়ে, দম নিয়ে, তারপরে ঐদিকে হাঁটব ভেবে ফুটপাথের একধারে একটা বসবার জায়গায় দুজনে বসেছি, একটা সিগারেট জাস্ট ধরিয়েছি, কোথা থেকে যেন উদয় হলেন এক মহিলা। মধ্য বয়সী, হয়ত আমার কাছকাছি বয়স, কাঁধে ঝোলা, বোহেমিয়ানা পোশাকে হাবেভাবে। যেচে আলাপ করলেন আমাদের দুজনের সঙ্গেই ভাঙাভাঙা ইংরিজিতে। মহিলার হাতে একটা ব্রাউনপেপারের ঠোঙা, সেটায় ভরা রয়েছে ছোটোছোটো প্যাটিশ। উনি প্যাটিশ খেতে খেতেই আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আলাপচারিতা করছেন। আমরা কোন দেশের মানুষ, কোথা থেকে এসেছি, আর কোথায় কোথায় যাবো, কোন কোন দেশ আমাদের বেড়ানো হয়ে গেছে, বলগারিয়াই কেন বেড়ানোর জন্য বেছে নিলাম, এই সমস্ত নানান প্রশ্ন। এখন কোথায় যাব, তার উত্তরে সোফিয়া মলের দিকে আঙুল তুলে দেখিয় দিলাম আমি। তিনি নিজেও বললেন, এইমাত্র নোটারি অফিস থেকে ফিরছেন, খিদে পেয়েছিলো তাই খাবার খেতে খেতে এখন যাচ্ছেন রাস্তা দিয়ে।
    আসলে আমরা যে ভূখণ্ডে বাস কর, সেসবখানে রাস্তায় কেও কারোর দিকে ফিরেও তাকায় না, যেচে একজন বিদেশির সঙ্গে আলাপ করবার ইচ্ছে বা ফুরসৎই কারও নেই। তার ওপরে বিদেশি দেখে দেখে পোড় খাওয়া পশ্চিম ইয়োরোপ শুধু কর্মব্যস্ততার জন্যই নয়, স্বভাবের কারণেই হয়ত পাত্তা দেয় না অন্য কারোকে। এই মহিলা আবার যেচে আলাপ করতে এসেছে। শত হলেও এটাও তো ইয়োরোপ, অথচ আমি ভুলে যাই যে এটা পূবের দেশ। মনে হয় - মেয়েটা ছিটিয়াল নয়তো?
    ও বাবা, আবার খাবারও অফার করছে ঐ ঠোঙা থেকে তুলে নিতে বলছে প্যাটিশ!
    - না না, আমরা এখন খাবো না, আপনিই খান।
    - কেন খাবেন না? খিদে পায় নি? বেশ দুপুর হয়েছে তো!
    - না, জাস্ট খেয়েই বেরোলাম তো, পেট ভরা।
    নিপাট মিথ্যে বললাম। আমার সিগারেটও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। এবার উঠে পড়লেই ঝামেলা চোকে।
    মেয়েটা কেমন যেন তাকালো আমাদের দিকে। আমাদের চেহারায় কি তবে ফুটে উঠেছে যে আমরা ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত? ও যেন কেমন ধরে ফেলেছে আমি মিথ্যে বলেছি।
    এরপরে আমাদের দিকে কেমন যেন রিকোয়েস্ট করবার স্বরে বলল - আপনাদের কাছে একটা সাহায্য চাইতে পারি?
    এইত্তো! এতক্ষণে বুঝেছি, এত কেন যেচে আলাপ। ভিক্ষে চাইবে। কিন্তু ভিক্ষে দেবার সময় টাকা পয়সা বের করতে গেলে যদি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয়? আমরা তো দৌড়তেও পারি না।
    আমি আমার পাশে রাখা ভ্যানিটি ব্যাগটা শক্ত করে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে চেপে রাখি। মুখে বলি - সাহায্য? না না, মানে আমরা এখনই উঠব, ...
    -আহা, শুনুনই না। সাহায্য বলতে আমি যেটা চাইছি, সেটা আপনারা সহজেই পারবেন।
    আমরা উত্তর দিই না, কিন্তু বাবুর মুখের দিকে চকিতে দেখে নিই, সেও কি সতর্ক হবার কথা ভাবছে আমারই মতো? আমার ব্যাগে এখন সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি লেভ রয়েছে, সকালে টাকা ভাঙানোর পরে টুকটাক ক্গরচ যেটুকু হয়েছে, বাকি সব টাকা বাবুর কাছে, ক্রেডিট কার্ডও।
    সে এবার যেন একটু লাজুক স্বরে বলে, আসলে আমার না একটা হবি আছে।
    - হবি?
    আমরা দুজনেই সমস্বরে বলে উঠেছি।
    - হ্যাঁ, মানে আমি প্রায় সাড়ে ছশোটা পোস্ট কার্ড জমিয়েছি, নানান দেশের মানুষের কাছ থেকে। আপনারা জুরিখে ফিরে আমাকে একটা পোস্ট কার্ড পাঠাবেন? প্লীজ?
    আমরা হাঁ হয়ে গেছলাম কিছুক্ষণের জন্য। এরকমও হয়? কত উল্টোপাল্টা ভেবেছি।
    সে আমাদের ঠিকানা লিখে দিলো। আমার মনের আশঙ্কা তখনও কাটে নি, আমি তখনও ব্যাগ খুলে তাকে একটুকরো কাগজ দিতে পারি নি। ব্যাগ খুলতে ভয় পেয়েছি।
    ওপালচেন্সকা মেট্রো স্টেশনের অনতিদূরে সেই ফাঁকা রাস্তায় একটা সিমেন্টের স্ল্যাবের ওপর আমাদের পাশেই সে বসল। সেই ব্রাউনপেপারের ঠোঙার কোণা ছিঁড়ে লিখে দিলো তার নাম ঠিকানা, সম্পূর্ণ অচেনা, নাম না জানা দুই পরদেশীকে।
    সে চলে যায়। তার একটু পরে উঠি আমরা। হ্যাঁ সত্যিই আমরা দুজনেই তাকে নিয়ে একই রকমের সন্দেহ করেছিলাম।
    বিশ্বাস। কীভাবে যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভুলে গেছি এই শব্দটার অর্থ। মেয়েটি জাস্ট সেটাই মনে করিয়ে দিয়ে চলে গেল।
    শরতের দুপুর আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল এখন। আছে, বিশ্বাস আছে, এখনও আছে অন্ততঃ ভূগোলের এই টুকরোটাতে।
    আমরা হেঁটে যাই সোফিয়া মলের দিকে।
  • স্বাতী রায় | 117.194.***.*** | ২০ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৩২743953
  • বাঃ দারুণ লাগছে পড়তে।
  • . | ২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৩৯743956
  • আমাদের শহরে মল কালচার নেই, সাকুল্যে একটা পুঁচকে সাইজের মল গোছের জিনিস বানিয়েছে, শহরতলিতেও ঐরকম একটা। আর আছে গোটাকতক ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। গাম্বাট সাইজের মলের খোঁজে আমরা এই মানে এই নায়ক নায়িকা তক্কে তক্কে থাকি। কিন্তু সোফিয়া মল আমাদের একাধারে আনন্দিত, হতাশ, দুঃখিত, উচ্ছসিত, সবই করে ফেলল।
    মলে ঢুকতেই দেখা যাচ্ছে কিছু লোক লাইন দিয়েছে একটা কাউন্টারে, রেশনের দোকানের সামনে আগে যেমন লোকে দাঁড়াতো। কী বিক্রি হচ্ছে, দেখার জন্য তাকাতেই আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠি, এটি একটি কারেন্সী এক্সচেঞ্জের কাউন্টার। এক্সচেঞ্জ রেট, ব্যাংকের চেয়েও বেশি। আমি একখুনি দুশো কি পাঁচশো ফ্রাংক ভাঙানোর জন্য বায়না শুরু করি। বাবু একটু ইতস্তত করছিল, কিন্তু আমি স্যাটাস্যাট হিসেব বুঝিয়ে দিলাম। কালকে ট্রেনে চাপার পর, কত্তো ঘোরাঘুরি আছে, বলা যায় না কোন শহরে কেমন কেমন খরচ হবে, সমুদ্র দেখার জন্য ট্যাক্স দিতে হবে, তবে আগামি দিনগুলোয় খরচ নেই নাকি?
    টাকা ভাঙানো হয়ে গেল। এরা কার্ড পরিচয় বাপের খুড়তুতো দিদির নাম ধাম কিছুই জিজ্ঞাসা করে না। এরকম কিউট এক্সচেঞ্জ বুরো আরো বেশি বেশি করে খুলুক। হাল্কা করে উইন্ডো শপিং হলো, তার পরে খাবারের দোকান হপিং, মানে গান্ডে পিন্ডে খাওয়া নয়, তবে গুছিয়ে টেস্টি টেস্টি খাওয়া। শেষে আরেকটা দোকানে বসে ভ্যানিলা ক্যারামেল আরও কত কি দেওয়া সব কফি। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, আমার নিজের দেশে যেমনটি কফি মেলে, তার সমক্ক্ষ কফি আর কোথাও পাই না।
    বিকেল হয়ে এসেছে, ঘরে গিয়ে ঝপাঝপ হিসেব, এবং টুরপ্ল্যান (হ্যাঁ, মানে আমি তো স্ট্রীট স্মার্ট, কিসুই প্ল্যান করিনি, বাবু সেসব জানেও না, দিব্যি নির্ভর করে রয়েছে চোখবুজে) এবং আরও সাংঘাতিক যেটা, সেই নিয়ে একটু ভাবনা চিন্তা করব। কাল রাতের ট্রেন। চিন্তা হচ্ছে যে ভার্না নাহয় ঘোরা হবে, কিন্তু তারপর? খুব তো বড়ো মুখ করে লোকজনকে বলে বেড়াচ্ছি যে মাগুরা গুহায় গুহামানবদের আর্ট গ্যালারি দেখতে যাচ্ছি, কিন্তু মাগুরার একজ্যাক্ট লোকেশানই আমার জানা নেই। কিন্তু আমি কনফিডেন্ট, কিছু না কিছু একটা পথ বের হবেই।
    সামনেই একটা জম্পেশ বিউটি সালোন। পুরো ফাইভ্স্টার সেটাপ। দেখেই সেই রোমানিয়ার ফেশিয়াল মনে পড়ে গেল। বাবুও চাপ দিতে লাগল, সালোনের রিসেপশনের মেয়েটিও ইংরিজি বলছে, মানে আর পালানোর পথ নেই, দামও রোমানিয়ার মতই, একটু বেশি হতে পারে। রাজি হয়ে গেলাম। আমায় তক্ষুনি ধরে বেঁধে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছিলো প্রায়। কিন্তু আমি এবার একটু কন্ট্রোলে নিলাম সিচুয়েশন। একদম লাস্টে যখন আমরা সোফিয়াতে ফের ফিরে আসব, তখন ফেশিয়াল করব। সেইমতো টাইম বুক করে, আরও একটু উইন্ডো শপিম সেরে পা বাড়িয়েছি বাড়ির দিকে।
    বাড়ি ফেরার টাইমে মনে হলো পাড়ার সালোন থেকে হেয়ার কাটিং টা করে নিলে কেমন হয়? জুরিখের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ দাম নিচ্ছে পাড়ার দোকানে, তবে তখন না, আগামীকাল দুপুরের দিকের টাইম স্লট বুক করে ঘরে ফিরে দুজনের শান্তি। কয়েকঘন্টা টানা বিশ্রাম করে, চাইলে ঘুমিয়ে নিয়ে সন্ধেবেলা চা বিস্কুট খেয়ে বের হবো আজ রাতের সোফিয়া দেখতে।
    কয়েকটা জায়গার কথা জেনে রেখেছি, যেসবখানে রাতের দিকে রেস্টুরেন্টগুলো বড়ই মনোরম।
  • . | ২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৪৮743957
  •    
     
     
    মানিকজোড়ে অনেক ঘোরার পরে খেয়াল হলো ফোটো একটু তোলা হোক। বেশ রাতের দিকেই ঘরে ফেরার আগে মৌজ করে মার্টিনি নিয়ে বসা গেল রাস্তার ওপরে একটা রেস্টুরেন্টে।
     
     
     
  • . | ২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৪৪743959
  • মুখোমুখি বসে মার্টিনি পানের পরে আর বেশিক্ষণ বসে থাকা যাচ্ছিলো না, যদিও তখনও মনে হচ্ছে, দ্য নাইট ইস স্টিল ইয়াং, কিন্তু মেট্রো বাবাজীবন যদি বেশিক্ষণ না চলে, তাহলে ট্যাক্সি ডাকাডাকির ব্যাপার আছে। বেশি আধুনিক তো নয় এরা, এখনও মানুষ মানুষ ব্যাপারটা আছে, সব কিছুতেই অ্যাপ ব্যবহারের অভ্যাস রপ্ত করে ফেলেনি, হয়ত হাত দেখালে এই বুড়োবুড়ির জন্য ট্যাক্সি দাঁড়িয়েও পড়তে পারে। তবুও সেই রাতে আরেক জিনিস আবিস্কার করে ফেললাম, ঝিম ঝিম করা মাথায়।
    প্রথম দিন মনে আছে নিশ্চয়, যে লাস্ট স্টপ ওবেলিয়াতে আমরা নেমে যেতেই ট্রেন সমস্ত যাত্রী নিয়ে কোথায় যেন উধাও হয়েছিল?
    সেই রহস্য বুদ্ধির গোড়ায় হাল্কা করে মার্টিনি দেবার পরেই উন্মোচিত হলো।
    ঐটে হলদে লাইন M4 এর জন্য লাস্ট স্টপ হলেও, নীল লাইন এর জন্য প্রথম অথবা লাস্ট স্টপও বটে। অর্থাৎ, ঐ পার থেকে মেট্রোয় চড়লে কাল যখন আমরা রেলস্টেশনে যাব, তখন লাইন বদলটদলের গল্পই নেই, দূরত্বও মেরেকেটে গোটা সাত আট স্টপ।
    ঘরে ঢুকতেই ওয়াইফাইয়ের কানেকশন পাচ্ছি, অমনি টুংটাং মেসেজ ঢুকছে ফোনে।
    বর্তমান হোস্ট জানতে চাচ্ছেন কখন আমাদের ট্রেন আগামীকাল।
    আর মেসেজ করা পোষায় না। কল করে জানালাম, রাতের ট্রেন।
    ওদের হয়ত আরও অন্য কোনও পার্টি বুক করে রেখেছে এই অ্যাপার্টমেন্ট।
    কিন্তু না। আমার হোস্ট বলল, চিন্তা নেই, আপনারা আরামসে ধীরে সুস্থে যখন খুশি বের হবেন। কোনও তাড়া নেই।
    - আর ভাই, ইয়ে ঐ চাবিটা কার হাতে দিতে হবে?
    -কারও হাতে নয়, ঐ পাপোষের তলায় রেখে চলে যাবেন।

    যাব্বাবা! এরা নিয়ম করে পাপোষের তলাতেই চাবি রাখে! আবার পাশাপাশি দুটো বাড়িতে ঢুকবার জন্য পাসকোডও এক! ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ডও ঐ কীরকম যেন একটা গেস করে করে ঢুকে পড়া যাচ্ছে। এরা শেংগেন ফ্রী ইকোনমিক জোনে ঢুকেছে তো বটে, টিকতে পারবে তো? মানে আমি এই বাড়ির দরজা থেকে শুরু করে সমস্ত রহস্য জেনে ফেলেছি, যে কেউ যখন খুশি এখানে ঢুকে পড়তে পারে।
    ও হ্যাঁ, আমাদের পরবর্তী হোস্ট ভার্না থেকে মেসেজ করেছেন। সেখানে আমি ইচ্ছে করেই সমুদ্র সৈকতের নিকটে অপেক্ষাকৃত বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট বুক করেছি, যার থেকে একটা দিন আমাদের থাকা হবে না, লাস্ট মোমেন্টের সেই মাগুরা যাবার ঝোঁকে পড়ে।
    ভার্নার হোস্টের মেসেজ দেখে আমি আর তেমন আশ্চর্য হলাম না। এখানেও বাড়িতে ঢুকবার চাবি রাখা থাকবে একটা খোলা লেটারবক্সের ভেতরে পুরোন কিছু ম্যাগাজিন, শুক্স্তো পাতা, গাছের শুকনো ডালের তলায়। একেবারে ফোটো সহকারে এক্সপ্লেইন করা।
    সেসব ছবি আমি এই লেখার সঙ্গে জুড়ে দিতেই পারি, তবে সে বড্ড সিকিওরিটির প্রশ্ন হয়ে যাবে।
    আমি বাবুকে বললাম, এরা এরকম চাবি জিনিসটা বাচ্চাদের মতো, কিংবা ডিটেকটিভ নভেলের মতো করে লুকিয়ে রাখে কেন বলতে পারো?
    দুরকম গেস আপাতত করা যাচ্ছে। এক, আর লোকজন পাঠিয়ে কে অত গেস্টের কাছে চাবি আদান প্রদান করে। আর নয়ত, দুই, এরা জাতেই মারাত্মক অ্যাড্ভেঞ্চারাস।
    পরে, অনেক পরে অবশ্য তিন নম্বর পয়েন্টটা মাথায় খেলেছিলো। সেটা পরেই লিখব।
    মোটকথা চাবি অণ্বেষণের সেই গোটা কতক ভিডিও এবং বাড়ির লোকেশন (এরাও রাস্তার নাম দেয় না ঠিকানায়) সবকিছুর স্ক্রীনশট নিয়ে, আমরা অনেক গভীর রাতে ঘুমোতে চলে গেলাম।
    পরদিন দেরি করে উঠবো, বিকেলের দিকে বের হবো, জিনিসপত্র গার্দেরোবে রেখে ঘুরব বেশ খানিক। সারাটা দিন বাইরেই চলবে খাওয়া দাওয়া। 
  • . | ২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৫১743960
  • শুক্স্তো না!
    শুকনো পাতা।
  • . | ২২ অক্টোবর ২০২৪ ০২:০২743964
  • পর্ব ৪
    দেরি করে ঘুম থেকে উঠবো ভাবলেও ঘুম ভেঙেছে ভোরেই। বিশাল ছাদটায় গিয়ে দাঁড়ালে আর ঘরে যেতে ইচ্ছেই করে না। আশেপাশের বাড়িগুলোকে দেখিয়ে আমি বাবুকে বুঝিয়ে দিই কেমন করে এই বাড়িগুলো তৈরি হয়। সব কারখানায় তৈরি। সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিংএর হিসেব বিশাল স্কেলে ছকে রাখা থাকত সেকালে। এই বাড়িগুলো সব নতলা নয় ষোলোতলার ছকে। সেইমত ভিত তৈরি হতো। জগদ্দল মেশিন এসে বিশাল ফাঁকা জমিতে পিলার গেঁথে তৈরি করে ফেলত ভিত। তারপরে জগন্নাথ ট্রাকে করে আসত কারখায় তৈরি হয়ে আসা ছাঁচে ঢালাই করা কংক্রিটের দেয়াল। তাতে দরজা জানলা বসানোর জন‍্য সাইজে মাপা ফাঁকা ফাঁকা গর্ত। ট্রাক থেকে মাল নামাবে ক্রেন এবং ঝপাঝপ অন‍্য মেশিন সেই দেয়ালগুলো খাপে খাপে বসিয়ে জুড়ে ঢালাই করে দেবে দেয়াল সিঁড়ি ছাদ। নিমেষে তৈরি হতে থাকবে তলার পর তলা। মাসখানেকও লাগবে না, তৈরি হয়ে যাবে একটা আস্ত পাড়া। 
    দেখবে সব বাড়ির নীচের তলায় একটা ছোট দরজা রয়েছে। ঐটে জঞ্জালের দরজা। ওপর থেকে মস্ত পাইপ নেমে এসেছে ঐখানে। সব তলায় একটা করং অমন দরজাওলা একটা ছোট্ট ঘর মত থাকে, সেই ঘরের ভেতর দিয়ে নেমে গেছে পাইপটা। একেক তলার লোকেরা ঐ ঘরের দরজা খুলে পাইপের গর্তে ফেলে দিত জঞ্জাল। পরে গাড়ি এসে একতলায় ঐ জঞ্জাল তুলে নিয়ে যেত। 
    বাইরে থেকে হয়ত রংচটা হয়ে গেছে বাড়িগুলো, কিন্তু ভেরতগুলো মারাত্মক পোক্ত। দেখছ না, ঘরে ঘরে এসি লাগানো, সবার নিজস্ব ডিশ অ‍্যানটেনা। বাইরের দুনিয়া তখন যতই রটিয়ে বেড়াক না কেন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছিল পোক্ত। দেশগুলোর ইনফ্রাস্ট্রাকচার পোক্ত করবার প্রধান শর্ত ছিল সমগ্র দেশের প্রতিটি কোণায় কোণায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ এর সরবরাহ এবং অবশ‍্যই লোকোমোটিভ — মানে রেলপথ এবং পর্যাপ্ত রেলগাড়ির ব‍্যবস্থা। মানুষের পরিবহনের চেয়েও বেশি দরকারি ছিল এটা মাল পরিবহনের জন‍্য। বাকি সব এর পরে। মেট্রো টেট্রো অনেক পরের কথা। 
    সত‍্যি কথা বলতে কি এই দেশগুলো সম্পর্কে আমরা কম তো জানিই, আর যেটুকু জানি তার সিংহভাগই পশ্চিমের প্রোপাগান্ডা। আহা আহা দেখো ওরা কত গরীব। ওদের নাইকি জিনস নেই, ওদের ঘরে হালফ‍্যাশানের টিভি নেই, চটকদার ফ‍্যাশনেবল জুতো নেই, ওরা কত দুঃখী।
    অথচ আমরা যাদেরই দেখি প্রায় সকলেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে, নিজস্ব প্রোফেশন আছে, নিখরচায় উচ্চশিক্ষা আছে, এখনও তাই, শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থান সমস্তই দেশের মানুষের জন‍্য ছিল। এত পরিমাণ উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠী পশ্চিমে নেই। এটা আমরা জানি। আমরা দুটো সমাজেই দীর্ঘ সময় থেকে এসব জেনেছি। মেয়েরা এসব দিকে অনেক বেশি কর্মক্ষম।
    মেয়েদের ব‍্যাপারটা মুখে বললে হালকা শোনায়। ক্রমে আসবে আরও ঘটনা সেসব তখনও জানি না।
    দুপুরে ঘরদোর গুছিয়ে খেয়েদেয়ে ভালো করে শ‍্যাম্পু করে চললাম নীচে ভেজা চুলেই পাড়ার সালোন থেকে চুল ছেঁটে আসতে। বাবু জিরোক একটু। বিকেলে ঢুঁ মারতে হবে সোফিয়া উত্তর স্টেশনে। সেই স্টেশন, যেটার কথা দিয়ে, যে টীজার দিয়ে শুরু করেছিলাম গোড়ার পর্ব।
  • এত পরিমাণ উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠী পশ্চিমে নেই | 165.225.***.*** | ২২ অক্টোবর ২০২৪ ০৩:৪৬743967
  • এইটে অন্য টই বা আটের জন্যে চমত্কার টপিক। 
     
    কিন্তু এই ভ্রমণটই ঘেঁটে নয়! 
  • . | ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:০৪744004
  • পাড়ার সালোন ছোটোখাট। ব্লকবাড়ির একতলার একটা অ‍্যাপার্টমেন্টের সামনের অংশটুকুতে একখানা লিভিংরুম ও করিডোর নিয়ে এর বিস্তার। দোকানের মালিক এক কাপ কফি তৈরি করে নিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন, মালকিন তখন অন‍্য একজনের হাতে নেল ডিজাইনের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। অচিরেই ঝপাঝপ করে আমার চুল কাটা হয়ে গেল। ইঞ্চি তিনেক মত দৈর্ঘ্য কমিয়ে ফেললাম চুলের। 
    ফের দৌড়োই ঘরের দিকে। বৈকালিক চা কফি স্ন‍্যাক্সের পালা কোনোমতে সেরে আমরা রওনা দিই জিনিসপত্র সঙ্গে করে সোফিয়া মেইন স্টেশন অভিমুখে। প্রথমেই স্টেশনের গার্দেরোবে মালপত্র নামিয়ে দিয়ে ঝাড়া হাত পা হয়ে একটু ঘুরে এলাম কিছুটা পথ পায়ে হেঁটেই। পাশেই রয়েছে বিশাল বাসস্টেশন। দূরপাল্লার নানান বাস ছাড়ছে সেখান থেকেই। এথেন্স, দুবরোভনিক, বুখারেস্ত, ইত‍্যাদি ইত্যাদি... মানে আশেপাশের সব দেশেই বাসে করে যাওয়া যায়। 
    এবার টুক করে সোফিয়া সেভের, মানে উত্তরের স্টেশনে আমাদের যাওয়াটা জরুরি। ট্রামে উঠে পড়লাম। ঐ ট্রামের শেষ স্টপ সোফিয়া সেভের। সেভের শব্দের অর্থ উত্তর/নর্থ।
    আমরা যেদিন সোফিয়াতে ফিরব, কোনদিন কখন ফিরব সে সব যদিও জানি না, তবে যেখান থেকে ফিরব, সেই রেলগাড়ি সরাসরি সোফিয়া মেইল স্টেশনে আমাদের নিয়ে আসবে না, এটুকু বুঝে গেছি, ঐখানে একটা চেঞ্জ আছে, মাত্র দু মিনিটের। সেইজন্যই স্টেশনটা আগেভাগে দেখে রাখাটা আমার কাছে জরুরি।
    ট্রাম একটু পরেই প্রায় শহর পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বেশ খানিকক্ষণ চলল। তার পরেই টার্মিনাস। রাস্তা পেরিয়ে দেখি ফাঁকা মত একটা জায়গায় পুরোনো দিনের ছোট্ট বাড়ি ঘেঁষে চুপচাপ স্টেশনটা যেন লুকিয়ে রয়েছে, পুরোপুরি অনাড়ম্বর। খোলা আকাশের নীচে প্রায় নির্জনই বলা চলে। সারি সারি গোটা কতক লাইন। এবার জনাকতক লোক দেখতে পেলাম একটু দূরে নীচু প্ল‍্যাটফর্মের ধারে পা ঝুলিয়ে বসে গল্প করছে, কোনো তাড়াহুড়ো নেই। একটা রেলগাড়ি একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল, তার সর্বাঙ্গে গ্রাফিতি করে এমন হাল হয়েছে যে কোনটা দরজা আর কোনটা জানলা কিচ্ছু বুঝবার উপায় নেই। দুজন মহিলা এসে আমাদের পাশের বেঞ্চিতে বসলেন। মন দিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছেন। দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে ট্রেন ধরতে এসেছেন, নাকি আইসক্রিম খাবার জন‍্যেই এই বিকেলে ফাঁকা স্টেশনের বেঞ্চি বেছে নিয়েছেন। ঐরকম দেখে আমারও আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করতে লাগলো। উঠে বাইরে গিয়ে দেখি গাছপালার মধ‍্যে কেমন যেন লুকিয়ে রয়েছে একটা কিয়স্ক। সেই কিয়স্কে ঢুকে দেখি সে এক প্রায়ান্ধকার জায়গা যেখানে থরে থরে সাজানো আছে নানান রকমের মদ, সফট ড্রিংকস, সিগারেট, আইসক্রিম । দুটো স‍্যানডুইচ আইসক্রিম কিনে ফিরে এলাম স্টেশনের ভেতরে গাছতলার বেঞ্চিতে। বাবু দেখলাম বেশ উপভোগ করছে এই পরিবেশ। এরই মধ‍্যে কোত্থেকে জানি লোকজন এসে জড়ো হচ্ছে, সম্ভবত ট্রেন আসবে। সবাই লাইনের ওপর দিয়েই হেঁটে পার হচ্ছে। অন‍্য ট্রেন এলো। তার সারাগায়েও গ্রাফিতি। যাত্রীরা নামল উঠলো, গার্ড গেলেন ট্রেনের কাছে সিগন্যাল দিতে আমাদের সামনে দিয়ে, যাবার আগে আবার রসিকতা করে কাকে যেন বললেন — ফর্ন্টে যাচ্ছি।
    আমি ছোটো ছোটো এই মুহূর্ত গুলো ভিডিও করার চেষ্টা করেছি ফোনে।
  • . | ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:০৯744005
  • Sofia Sever
  • . | ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:১১744006
  • ফর্ন্টে     ফ্রন্টে
  • . | ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:২০744007
  • এইটে আরেকটা 
    Sofia North -София Север
  • . | ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৫744035
  • সন্ধে দেরি করে হয়, সেপ্টেম্বর যেহেতু, যেহেতু এখনও গ্রীষ্ম তেমন করে শেষ হয়ে যায়নি। আমরা ফের ট্রামে চেপে বসলাম। আজ রাত আমাদের কাটবে ট্রেনে। অনেক ঘোরাঘুরি করে, দুচোখ ভরে সোফিয়াকে যতটা সম্ভব দেখে নেওয়া যায়। সাড়ে নটা নাগাদ ফের মেইন স্টেশনে এসেছি, লাগেজ বের করে নিয়েছি গার্দেরোব থেকে। তারপর ট্রেনের জন‍্য অপেক্ষা।
    রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ট্রেন। কত নম্বর ট্র‍্যাক আমরা জানি না। টিকিট কাউন্টার সব খোলা, সেসবের সামনেই অনেক বসবার চেয়ার। আমরা অপেক্ষা করছি। ঘুমে আমার দুচোখের পাতা খুলে রাখা যাচ্ছে না। বাবু একবার ইনফরমেশন কাউন্টারে গিয়ে জানতে চাচ্ছিল যে কত নম্বরে ট্রেনটা আসবে, টিকিট হাতে করেই নিয়ে গেছল, কিন্তু বাবুকে দেখেই কাউন্টারের মেয়েটি পালিয়ে গেল। এই এক মুশকিল হয়েছে। আমরা কাছাকাছি গেলেই পালিয়ে যাচ্ছে। আবার একটু পরে ফিরে আসছে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বুলগেরিয়ান ছাড়া আর কোনও ভাষা জানে না বলেই এরকম লুকোচুরি খেলছে। আসলে বিদেশি টুরিস্টরা কেও এদেশে ট্রেনে চড়ে না সেই ধারণা ক্রমে পোক্ত হলো। 
    শেষে বোর্ডে ট্র‍্যাক নম্বর দেখা গেল। বাবুকে বললাম একটু কফি এনে দিতে নইলে আমি ধপাস করে পড়ে যাবো। 
    কফি খেয়ে ট্রেনের কাছে যাওয়া। প্রথম শ্রেণীর স্লীপার কোচের দরজা বন্ধ। বাকি সমস্ত কোচের দরজা খোলা, যাত্রীরা সব উঠে পড়ছে ট্রেনে, শেষের দিকে আমাদের সেই বন্ধ কোচ খুলল। ভেতরে অন্ধকার। ভেতরে ঢুকে প্রথম কম্পার্টমেন্ট হচ্ছে গার্ডের। ইনিই টিকিট চেকার। টিকিট দেখলেন না, নাম বলতেই টুক টুক করে দুটো টিকমার্ট দিলেন একটা লিস্টে। আমরা দুজনেই এই কোচের মোট প‍্যাসেঞ্জার। পাসের কম্পার্টমেন্ট আমাদের। আলোর সুইচ খুঁজে না পেলেও জানলার বাইরে থেকে যে যেটুকু আলো আসছিল, সে এক এলাহি ব‍্যবস্থা। চওড়া বিছানা। পরিস্কার চাদর বালিশ কম্বল থেকে শুরু করে বসবার জন‍্য বেঞ্চি, আয়না, জলের কল, সিঙ্ক, চমৎকার একটা মই, জিনিসপত্র রাখার জন‍্য প্রচুর জায়গা, মোট কথা দারুণ ব‍্যাপার। 
    বিছানা গুছিয়ে আমরা শুয়ে পড়বার একটু পরেই ঘুমিয়ে কাদা। তবে মাঝে মাঝেই ট্রেন নানান স্টপে থামছিল সেটা টের পেয়েছি।
    করিডোরের শেষে ছিল প্রকাণ্ড বাথরুম। হুইলচেয়ার নিয়েও সেখানে যাওয়া যায়, এবং ঝকঝকে পরিষ্কার।
    সকাল হতেই আমরা পৌঁছে গেছি একদম শেষ স্টেশনে - ভার্না।
    ট্রেন থেকে নেমেই স্টেশনে দাঁড়িয়ে আমি গন্ধ পেলাম একটা। এই গন্ধটা আমি আগেও অনেকবার পেয়েছি। আমার দুচোখ যদি বেঁধে দেওয়া হয়, দুকান বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবুও ঐ গন্ধ আমি পাব। বাবু ঐ গন্ধ জানে না। আমার চেনা কেউ সম্ভবত জানে না ঐ গন্ধ। ওটা সমুদ্রের গন্ধ। সমুদ্র আমার খুব কাছে সেটা বুঝতে পারছি। অথচ তাকে দেখা যাচ্ছে না।
  • . | ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৭744036
  • Varna ভার্না
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন