এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আমার এ পথ তোমার পথের থেকে – গেছে বেঁকে

    ashoke mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ২১৯ বার পঠিত
  • শুরুটা খুব চমৎকার হয়েছিল। অনেক দিন পরে সারা রাজ্য জুড়ে একটা আন্দোলন সত্যিকারের অর্থে গণ আন্দোলন হয়ে উঠেছিল। ১৪ আগস্টের রাত দখল কর্মসূচি একটা অসাধারণ শুভ সূচনা করেছিল এই দিকে। অরাজনৈতিক ঘোষণা করে দলীয় প্রভাব মুক্ত মঞ্চ গঠন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে – এই ঘোষণায় সেদিন খুব তৃপ্তি এবং আনন্দ পেয়েছিলাম। সেই আন্দোলনেরই অংশ হিসাবে সমান্তরালে শুরু হয়েছিল ডাক্তারদের আন্দোলন। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন। আরও ভরসা পেয়েছিলাম, আরও সদর্থক কিছু ঘটতে যাচ্ছে ভেবে।
     
    আজকে আমি আর সেই অনুভব খুঁজে পাচ্ছি না আন্দোলনে। জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি আংশিক তুলে নেবার পর আবার যেভাবে অনশন করতে বসে গেলেন তাতে আমি অন্তত কোনো সংগ্রাম দেখতে পাচ্ছি না। দেখছি হতাশা ক্লিষ্ট কিছু সংগ্রামী যুবকের পথ হারিয়ে একটা নিরুপায় উপায়ের সন্ধানে বসে যাওয়া আর সমাজের একটা সংবেদনশীল অংশ থেকে সহানুভূতি কুড়িয়ে কোনো মতে আন্দোলন নামক নৌকাটাকে গুণ টেনে চালিয়ে নিতে চেষ্টা করা। উপরের অনুচ্ছেদে যা কিছু লিখেছি, সেগুলো অতীতকালের বয়ানে নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যত কালের বয়ানেই বয়ন করার কথা ছিল। কিন্তু পারছি না!
     
    আমি কখনই আবেগে ভেসে যেতে পারি না। তথ্যের চাকা লাগিয়ে যুক্তির স্টিয়ারিং দিয়ে আবেগকে চালাতে চেষ্টা করি। ১৪ আগস্টের আন্দোলনের পর যখন সহমন পোর্টালে লিখেছিলাম (লিঙ্ক: https://sahomon.com/welcome/singlepost/in-the-school-of-reclaim-the-night-become-a-student-?fbclid=IwY2xjawF4p2pleHRuA2FlbQIxMAABHfehwuoukawm_fXsX8ghmmskTm15QNn88nsdCRxw0mySzhDJS3EWotAcrA_aem_CvARnXNFqgypvxv5WfJL6Q) তখনও আবেগের রাশ তথ্য ও যুক্তির হাতে শক্ত করেই ধরা ছিল।
     
    তার কিছু দিন পর থেকেই দেখলাম, এই আন্দোলন সার্বিক ক্ষেত্রে তার দিশা হারাচ্ছে। একটা গান “আর কবে” এমন ভাবে ন্যায়বিচারের দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজ্য জুড়ে মাতিয়ে চলল যেখানে বিচার ব্যবস্থা এবং বিচার প্রক্রিয়ার উপরে যেন চূড়ান্ত অনাস্থা। ভাবখানা যেন – আজকেই কেন অপরাধীকে ধরা হচ্ছে না? অপরাধী কারা আমরা তো জানিই, সিবিআই কেন তাদের ধরছে না? এরকম পরিস্থিতিই গণ হিস্টিরিয়ারা আকারে মিডিয়া ট্রায়াল মব ট্রায়াল এনকাউন্টারের সপক্ষে গণমানস তৈরি করে রাখে, আইনি বিচারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেও সরল মনে ধ্বংস করে ফেলতে আগ্রহ বোধ করতে থাকে। সেই পরিস্থিতি কারা সৃষ্টি করতে চায় সেই শ্রেণিজিজ্ঞাসা দ্রুত শূন্যে মিলিয়ে যেতে থাকে।
     
    সমস্যা হচ্ছে, রাত দখলের কর্মসূচি সত্য অর্থেই অদল অরাজনৈতিক হলেও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পেছনে প্রথম থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের উপস্থিতি ছিল এবং তাতে দোষের কিছুই ছিল না। অন্তত আমার চোখে। একটা শক্তিশালী সরকারি প্রশাসনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করার ক্ষেত্রে বামপন্থী নেতৃবৃন্দ সামনে না থেকেও দিশা দেখালে এবং পরোক্ষ নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হলে তাতে আন্দোলনের লাভ বই ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।
     
    তবে তার জন্য দুটো শর্ত পূরণ করতে হবে অত্যন্ত আবশ্যিকভাবে:
     
    ১। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্যকে বড় করে না দেখে একটা ন্যূনতম বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে চলতে সাহায্য করা;
     
    ২। তথ্য এবং যুক্তির ভিত্তিতে দাবি সূত্রায়িত করে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রাজ্ঞতার সাথে নির্ধারণ করা।
     
    প্রথম শর্তে না হলেও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এই পশ্চাদ নেতৃত্ব মনে হচ্ছে ব্যর্থ।
     
    কেন এই সন্দেহ দেখা যাক।
     
    আরজি করের নির্যাতিতার বিরুদ্ধে করা ঘৃণ্য অপরাধের শাস্তি চেয়ে যখন একটা গণ আন্দোলন গড়ে উঠল সেটা ছিল খুব স্বাভাবিক একটা প্রতিক্রিয়া। সেই আন্দোলনকে সাধারণ ভাবে সমাজে ঘটা যে কোনো ধর্ষণের বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে একটা গণ সচেতনতা গড়ে তোলার পক্ষে কাজে লাগানোর মতো একটা অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এই আন্দোলনের ধাক্কাতেই যখন একে একে নানা রকম তথ্য উঠে এল, যার মধ্যে দেখা গেল স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালকে কেন্দ্র করে একটা বেশ বড়সড় র‍্যাকেট গড়ে উঠেছে এবং দাপিয়ে কাজ করছে, তখন তার বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবিতে জোরদার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার মতো বাস্তব অবস্থা তৈরি হয়েছিল।
    কিন্তু পেছনকার রাজনৈতিক নেতারা চাইলেন এই আন্দোলনে আরও কিছু এমন মশলা যোগ করতে যাতে জন প্রতিক্রিয়া আরও তীব্রতর হয়। তার পেছনে যে তথ্য নেই, অভিযোগগুলো যে সত্য নয় – জেনেও।  
     
    ১। অপরাধের জায়গায় নানা রকম প্রমাণ লোপাট হয়েছে এবং/অথবা লোপাটের চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে অপরাধীদের সহজে সনাক্ত করা না যায়; 
     
    ২। ময়না তদন্ত ঠিক মতো করা হয়নি, তাড়াহুড়ো করে কোনো রকমে নিয়ম রক্ষা করে সেরে ফেলা হয়েছে; 
     
    ৩। তার পরই নির্যাতিটার লাশ পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশ এবং শাসক দলের তত্ত্বাবধানে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে অত্যন্ত তাড়াতাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 
     
    এই তিনটি থিসিসের উপর গোটা আরজি কর ন্যায়বিচারের একটি স্বর আন্দোলন দাঁড়িয়ে গেল। রাজনৈতিক মহল থেকে এই কথাগুলি এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে যে শাসক দলের নানা অপকীর্তির জ্ঞানের সুবাদে জনমনে তা সহজেই জায়গা করে নিয়েছে, বিশ্বাস উৎপাদন করেছে।  স্বীকার করতে বাধা নেই, সেই ঠেলায় আমিও শুরুর দিকে এই তিনটি থিসিসেই বিশ্বাস করেছি, বিভিন্ন জায়গায় জমায়েতে ভাগ নিয়েছি, এবং যেখানে সুযোগ এসেছে বলেছিও।
     
    ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ দুপুর থেকে এই প্রচারে আমার সন্দেহ জন্মায়। সেদিন ভোর ৫টায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সাত জায়গায় সিবিআই এবং ইডি এক সঙ্গে হানা দেয় এবং কুখ্যাত সন্দীপ ঘোষের একাধিক সাগরেদকে গ্রেপ্তার করে, বেশ কিছু জরুরি কাগজপত্রও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এবং লক্ষণীয়, এই প্রথম কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি একটা অ্যাকশন নিল, যেখানে তারা ঢাকঢোল টিভি চ্যানেল মিডিয়া হামবাগদের সঙ্গে নিয়ে যায়নি। চুপচাপ গেছে, চুপিসারে কাজ সেরে চলে এসেছে। ফিরে এসেও তা নিয়েও কোনো প্রেস সম্মেলন করে জয়ঢাক পেটায়নি। যেটা আমরা শিক্ষা দপ্তরের দুর্নীতির তদন্তের সময় দেখেছি।
     
    এই ঘটনায় একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যায়। রাজ্য পুলিশ, রাজ্য প্রশাসন এবং রাজ্যের শাসক দল সক্রিয় সহায়তা না করলে এই অভিযান করা সম্ভবই হত না, সফল হওয়া তো দূরের কথা। ভিডিও দেখে ছবির মুখ চিহ্নিত করে তাদের চিনে নেওয়া, ঠিকানা সংগ্রহ করা এবং নির্দিষ্ট দিনে কাগজপত্র সমেত তাদের বাড়িতে পেয়ে যাওয়া সম্ভব হত না। এরা যে দীর্ঘ দিন ধরে শাসক দলের আশ্রয় ও প্রশ্রয় প্রাপ্ত নিশ্চিন্ত ক্যাডার তা নিশ্চয়ই কাউকে বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। ফলে একটা ইসারাতেই এরা সাবধান হয়ে যেত এবং ঘর ছেড়ে পালাতে পারত।
     
    সেদিন এটা বোঝা গেল, অন্তত আমি বুঝেছিলাম, সন্দীপ ঘোষকে বরখাস্ত না করে উচ্চপদে স্থানান্তরিত করাটাও ছিল সিবিআই তথা রাজ্য প্রশাসনের একটা বুদ্ধিমান চাল। এর ফলেও তার সঙ্গীসাথীরা নিশ্চিন্ত ছিল, তাদের গায়ে এখনই হাত পড়বে না। তারা এখনও নিরাপদ। ঘোষকে যে অবিলম্বে গ্রেপ্তার না করে ষোল দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারও উদ্দেশ্য ছিল, পুলিশি কায়দায় অজস্র কথার ফাঁকে কিছু না কিছু তথ্য বের করে নেওয়া। তাকে প্রথমেই গ্রেপ্তার করলে সেই সুযোগ থাকত না। সে বলতে পারত, আমি যা বলার উকিলের মাধ্যমে আদালতে বলব।
     
    তখন থেকেই আমি শিরদাঁড়া শিল্পবাহকদের প্রচারকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করি।
     
    তারপর সেকটর ফাইভের জমায়েতে যেভাবে চার দিক থেকে সাহায্যের বন্যা আসতে শুরু করল, সেটাও ছিল সন্দেহ উদ্রেকের আর একটা কারণ। আলো পাখা টয়লেট খাবারদাবার – এত সব জিনিস এত দিন ধরে কারা পাঠাচ্ছে? দুচারটে ঠেলাওয়ালা রিকশাওয়ালার নামের পাশাপাশিই হঠাৎ একদিন টেকনো গ্লোবালের নামও শোনা গেল। সন্দেহ, গভীর সন্দেহ। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সরকারি হাসপাতালগুলিকে ধ্বংস করার আয়োজন দীর্ঘকাল ধরেই চলছে। সেখানে সরকারও আছে, প্রাইভেট হাসপাতাল লবিও আছে। তা, সেখান থেকেই এই আয়োজন নয়ত? 
     
    যাদের আমলে ই এম বাইপাস একদিন কর্পোরেট হাসপাতাল অ্যাভিনিউ হয়েছিল, যারা নিরাময় পলিক্লিনিককে আমরিতে পরিবর্তিত হতে ঔদার্য দেখিয়েছিল, এই আন্দোলনের পেছনে তাদের রাজনৈতিক চালের মধ্যে এই সবও পড়ে কিনা ভাবতে শুরু করতে বাধ্য হলাম।
     
    আর এক দিক থেকে আরও একটা সন্দেহ দানা বাঁধছিল।
     
    এর আগে যেটা কোনো দিন দেখা যায়নি, এই প্রথম দেখলাম, পশ্চিম বাংলার একটা গণ আন্দোলন আরজি কর ছেড়ে আর কোনো দিকে তাকাচ্ছে না। হরিয়ানা রাজস্থান রাজ্যগুলিতে পরিযায়ী বাঙালি মুসলমানের উপর গোরক্ষকদের আক্রমণ ও হত্যার ঘটনায় তারা সাড়া দিচ্ছে না। মধ্য প্রদেশের উজ্জয়িনীতে অত ভয়ানক একটা ঘটনা – দিনে দুপুরে একটা রাস্তার উপর তরুণীকে ধর্ষণ করার সময় লোক জড়ো হয়ে সেই দৃশ্য দেখছে আর ভিডিও তুলছে – এ তাদের চোখে পড়ছে না। দুচার জায়গার অবস্থানের কর্মসূচিতে এই সব ঘটনাকে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানালাম। খুব অল্প জায়গাতেই সদর্থক সাড়া পেলাম। বেশির ভাগ জায়গার লোকজন আমাকে জানালেন, এখন আমরা শুধু রাজ্যের ঘটনা নিয়ে মাথা ঘামাব। অন্য রাজ্যের ব্যাপারে সেই সব রাজ্যের সচেতন লোকজন আন্দোলন করুক। আমরা এখন “আমরা বাঙালি”।
     
    এই সমস্ত ঘটনাগুলি নিয়ে এত বড় মাপের একটা আন্দোলনের মঞ্চগুলিতে কোনো প্রচার না হলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কাদের সুবিধা হয়,তা নিশ্চয়ই কাউকে বলে দিতে হবে না। আন্দোলনের বিভিন্ন ফোরামে এমন সব কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে -- যেগুলো কঠোরভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদী অ্যাজেন্ডা। একটা জনপ্রিয় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এগুলোকে আরও অনুশীলনে নিয়ে এলে ২০২৫ সালে কাদের কর্মসূচির সঙ্গে মিলেমিশে যাবে সবাইকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি। 
     
    ইতিমধ্যে সিবিআইয়ের চার্জশিট আদালতে জমা পড়ে গেছে। তার খবর বহু কাগজপত্রেই বেরিয়ে গিয়েছে। চার্জশিটের মূল কপির হদিশ এখনও না পেলেও যতটা আমি বুঝেছি, উপরে উল্লিখিত তিনটি থিসিসই ছিল একটা শক্তিশালী রাজনৈতিক লবির কারখানায় তৈরি এবং সম্পূর্ণ তথ্যসম্পর্কহীন। এখন সিবিআই বিশদে যা বলেছে, তা পড়ে দেখলে চলমান আন্দোলনের ন্যায্যতা ভীষণভাবে মার খায়। মিথ্যার উপর দাঁড়ালে যা হয়। এখন দেখা গেল, আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মতোই ময়না তদন্ত হয়েছে, সেখানে তাদের দাবি অনুযায়ীই তিন জনের টিমে দুজন মহিলা সার্জেন ছিলেন, পাঁচ জন জুনিয়র ডাক্তার (তাঁরা কেউই টিএমসি সমর্থক ছিলেন না) এবং তিলোত্তমার মা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ময়না তদন্তের ভিডিও দেখে রিপোর্ট পরীক্ষা করার জন্য সিবিআই দিল্লির এআইআইএমএস থেকে ডাক্তারদের একটা টিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তারা সমস্ত দেখেশুনে বলেছেন, তাদের আপত্তি করার মতো কিছু সেখানে নেই। আর সমস্ত পক্ষের কাছে সন্তোষজনক ময়না তদন্ত হয়ে থাকলে লাশ পুড়িয়ে দেবার বিরুদ্ধে কিছুই বলার থাকে না। প্রমাণ লোপাটের কথা সিবিআই প্রথমে বললেও পরবর্তীকালে তারা তার কোনো প্রমাণ পায়নি। সুপ্রিম কোর্টও, আগে তাদের যাই বক্তব্য এবং সন্দেহ থাক, এখন সন্তুষ্ট।
     
    এই অবস্থায় চলমান মুদ্দাগুলিকে সামনে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হলে তার “স্বার্থে” বলতে হবে – চতুর্দিকে সেটিং হয়ে আছে, "সিবিআই কোনো ভগবান নয়", অথবা আমাদের মতো সন্দিগ্ধদের উদ্দেশে "জিভ লম্বা করে চটি চাটুন", ইত্যাদি। এছাড়া গত্যন্তর কিছু নেই।
     
    বিকল্প কি কিছু নেই?
     
    আছে।
     
    জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বুদ্ধিমান এবং সত্যনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলে এখন তাদের পরামর্শ দেওয়া উচিত: পুরনো চলমান মুদ্দাগুলির ভিত্তিতে এই আন্দোলন বন্ধ করে, প-ব সহ সারা ভারতে রেপ সংস্কৃতি, গোরক্ষকদের উপদ্রব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি, বেকারি – ইত্যাদির বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও প্রচারে নেমে পড়তে হবে। পশ্চিম বাংলার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে যে বিশাল মাফিয়া কারবার চলছে, সেই র‍্যাকেট ভাঙার কর্মসূচিতে লেগে পড়তে হবে।
     
    আর সতর্ক হলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, সেই আন্দোলন এখনই সাফল্যের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক মতো চালাতে পারলে আগামী পাঁচ দশ বছর অন্তত এই সরকারি কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে সেরকম সিন্ডিকেট কেউ সহজে গড়ে তুলতে পারবে না।
     
    যাঁরা অনশনে বসেছেন, তাঁরা আমার সন্তান তুল্য। তাঁদের উদ্দেশে সামান্য সমালোচনা করতেও আমার হাত কাঁপে। আমি শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আজ বার বার যাঁর নাম উঠে আসছে, স্বাধীনতা আন্দোলনে সেই বৃদ্ধের অনশন মঞ্চগুলি কখনই Do or Die হত না। শুধু Do-তেই সীমাবদ্ধ থাকত। ব্রিটিশ শাসক, গণ মাধ্যম, দেশের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মিলে লক্ষ্য রাখতেন যাতে or Die কখনও বাস্তব সম্ভাবনায় পর্যবসিত না হয়। Do or Die অনশন একজনই করেছিলেন – বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাস। যাঁর আত্মাহুতিকে সেই বৃদ্ধ সম্মান জানিয়েছিলেন diabolical suicide নামাঙ্কিত করে।
     
    আপাতত এইটকু।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন