এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বিপ্লব নাকি গনঅভ্যুত্থান? নাকি অন্যকিছু?

    লতিফুর রহমান প্রামানিক লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯৯ বার পঠিত
  • বিপ্লব নাকি গনঅভ্যুত্থান?
    নাকি অন্যকিছু?

    বর্তমান সিইসির একটা পত্রিকার কলামের জন্য লেখার তাগিদ অনুভব করলাম।  প্রায় চুপসে যাওয়া একটা বিষয় নিয়ে তিনি নতুন করে আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানের অন্তবর্তীকালীন সরকারের বৈধতা নিয়ে রাস্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে সুপ্রিম কোর্ট তার বৈধতা দিয়েছেন বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায়। এবং সংবিধানের আলোকে রাস্ট্রপতি তা চাইতেই পারে পরিস্থিতি বিবেচনায়। ইতিহাসের দিকে তাকালে একটা জিনিস ই বারবার চোখে পড়বে তা হলো প্রতিটি বিপ্লব  বা অভ্যুত্থান যখন হয় তখন যে সরকার থাকে তারাই সংবিধান কে নিজেদের সুবিধার জন্য রক্ষাকবজ হিসেবে বা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। এক কথায় বলতে গেলে সরকারের বিরুদ্ধে দাড়ালেই আপনাকে সংবিধানের আলোকে দোষী বানানো যেতে পারে। প্রত্যেক বিপ্লবী বা অভ্যুত্থানকারী সরকারের আইনে বা সংবিধানে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধী। কিন্তু এই অপরাধ বিবেচনায় নিলে দুনিয়ায় কোন বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের জন্ম হইতো না।

    বিগত সরকারের আশির্বাদপুস্ট সিইসি পড়ে আছেন মহা বিপদে। নির্বাচনের পুর্বে বা পরে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়াও নির্বাচন বৈধ বলে যে সাফাই গেয়ে তুস্ট করেছিল সরকারকে। সেই সরকারের লজ্জাজনক পরিনতি তার কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে দিয়েছে ইতোমধ্যে।  অবৈধ নির্বাচনের প্রধান সহযোগী হিসেবে তার জন্য যে কারাগার অপেক্ষা করছে সেটা তিনি দিনে রাতে হাড়েমজ্জায় টের পাচ্ছেন। সম্প্রতি তার লেখায় আমরা বুঝতে পারছি ভালো ভাবেই। তার লেখায় ফুটে ওঠেছে করুন অসহায়ত্ব

    সংসদ অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংবিধান স্থগিত না করেই যেভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম চলছে, তাতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন কমিশন ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়বে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এমন প্রেক্ষাপটে ‘বিপ্লবের উদ্দেশ্যসমূহকে এগিয়ে নিতে’ অসামরিক ফরমান জারি করে সংবিধান পুরোপুরি অথবা আংশিক স্থগিত করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি একটি দৈনিক সংবাদপত্রে ‘সংস্কার-বিপ্লব ও ফরমান: সরকার ও সংবিধান’ শিরোনামে লেখা একটি কলামে তিনি এ আহ্বান জানান। ওই কলাম লেখার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, আলোচনার জন্য কাউকে তিনি পাচ্ছেন না। তাই নির্বাচন কমিশন যে ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়েছে, সেটা পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন বলে মনে করছেন। তিনি জানেন বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত কারাগারে রয়েছেন রাস্ট্রপতি আর সিইসি। যে কোন মুহূর্তে তাদের উপর নাজিল হতে পারে বিপদ। আরও বলেছেন,
    অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে ভেঙে দিতে হয়েছে। সফল বিপ্লবের (বাস্তবানুগ) গ্রামারে এটি অবশ্যই সিদ্ধ। সংবিধান যদি বহাল থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদের বিধানমতে তৎপরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। যদি না করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে ৭খ অনুচ্ছেদের বিধানমতে কমিশনারগণ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ করে থাকবেন। সংবিধানকে পুরোপুরি অক্ষুণ্ন রেখে বিপ্লবকে তথা বিপ্লবের উদ্দেশ্যসমূহকে এগিয়ে নেওয়া ও বাস্তবায়ন করা যায় না।’

    সংবাদপত্রে তুলে ধরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর দেশের চরম এক ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের মতামত নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ পড়িয়েছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের মতো রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে সিইসির এমন বক্তব্য মোটেও সমীচীন হয়নি।’
    সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘সিইসি সংবিধান স্থগিত করতে বলেছেন এবং ফরমান জারি করতে বলেছেন; কিন্তু সংবিধানে এ দুটির কোনোটিরই বিধান নেই। তাহলে কীভাবে তিনি এমন বক্তব্য দিলেন। তার এসব বক্তব্য সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে। তার এই বক্তব্য আদতে অন্তসার শুন্য। সংবিধানে অন্তবত্তীকালীন সরকার বলতে আপাতত কিছু নেই। আর সংবিধানে তো বলাই আছে জনগণের অনির্বাচিত কোন ব্যক্তি দেশ শাসন করলেই তা রাষ্ট্রদ্রোহীতা যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।  সম্ভবত সেই ভয়েই রয়েছে সিইসি। কারণ তা তিনি ব্যাখ্যাও করেছেন রীতিমতো।

    কিন্তু প্রশ্ন হলো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের সময়ে পূর্ববর্তী বা বর্তমান সংবিধান কি কার্যকর থাকে? পুর্বেই বলেছি কোন সরকারকে হটানোর অপরাধ মানেই হলো রাষ্ট্রদ্রোহিতা। আর রাষ্ট্রদ্রোহীদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আইনের বা সংবিধানের উপর আস্থা হীনতা মানেই হলো বিপ্লব। সিইসি এই ছাত্র জনতার অন্তবর্তী কালীন সরকারকে বিপ্লবী সরকার হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে বিভিন্ন জনের আলোচনায় বিভিন্নভাবে সরকারের বর্তমান স্বরূপ নিয়ে আমরা নানা রকম বক্তব্য শুনতে পাচ্ছি বা ব্যাখ্যা পাচ্ছি আদতে এই সরকারকে একটি বিপ্লবী সরকার বলা যায় নাকি গণঅভ্যুত্থানের সরকার। এই আলোচনা হয়তো দীর্ঘদিন থাকবে। কারণ ইতিহাস কখনো মুছে যায় না সময়ের সাথে সাথে অনেক ঘটনা ঘটে গেলেও আজকের ইতিহাস নিয়ে ঘষামাজা চলবে বহুদিন।

    উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্য মতে, একটি বিপ্লব হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে একটি মৌলিক সামাজিক পরিবর্তন যা তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ে ঘটে যখন জনগণ চলমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে জেগে উঠে। এরিস্টটল দুই ধরনের রাজনৈতিক বিপ্লবের বর্ণনা দিয়েছেন:
    এক সংবিধান থেকে অন্য সংবিধানে পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন
    একটি বিরাজমান সংবিধানের সংস্কার।

    অধিকাংশ সময়, "বিপ্লব" শব্দটি সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহে একটি পরিবর্তন সূচিত করা বোঝায়। ডেভিসের মতে বিপ্লব হচ্ছে
    ভ্লাদিমির লেনিন, অক্টোবর বিপ্লবএর নেতাহিংসার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত শাসকশ্রেণিকে হিংসার মাধ্যমে উৎখাত করে জনসাধারণের অধিকাংশের সমর্থনপুষ্ট কোনো শ্রেণির রাষ্ট্রক্ষমতা দখল।
    এবং অন্য অর্থে ক্রেন ব্রিনটনের মতে,
    প্রতিষ্ঠিত সরকারকে বিধিবহির্ভূতভাবে সশস্ত্র উপায়ে পরিবর্তন করাই হলো বিপ্লব।

    এক্ষেত্রে এটা বাছাই করা খুবই দুঃসাধ্য যে, হাল আমলের এই আন্দোলন বা গণবিস্ফোরণ কে আমরা বিপ্লব বলবো। কারণ বিপ্লবের প্রধান অস্ত্র হলো সশস্ত্র সাজ সজ্জায় বা রণে অংশগ্রহণ। যা এই আন্দোলনে আমরা সাধারণ ছাত্র জনতাকে সেভাবে পাইনি। বরঞ্চ সরকারের পুলিশ বিডিআর আনসার ও সেনাবাহিনীর অস্ত্র আর বুলেটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিরীহ মানুষকে ছাত্রজনকে বুক পেতে দেখেছি।  যা বিপ্লবের চরিত্রের মধ্যে থাকে না। মূলত বিপ্লব বলতে আমাদের দুজনকে মানলে আমরা একজনকে মারবো অনেকটা প্রতিহিংসা বা  ঘাত প্রতিঘাতের মত।  তবে হ্যাঁ কেউ হয়তো যুক্তির খাটিয়ে বলতে পারেন যে, তাহলে হাজারো পুলিশ আহত আর ৪২ জন পুলিশ মারা গেলো কিভাবে? এর সহজ উত্তর হলো এটা ছিলো অতি নিরস্ত্র মানুষের আত্মরক্ষার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এটাকে বিপ্লবের অযুহাত দেয়ার সুযোগ নেই।

    বিপ্লবী সরকার অস্ত্র হাতে নিয়ে সরকারের সব দপ্তর কব্জা করে, সরকারের লোকজনকে হত্যা করবে নয়তো বন্দী করবে। যা আমরা দেখতে পাইনি। এর কারণ ও রয়েছে অনেক। সরকারের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা সংস্থা হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।  বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হঠাৎ করে সরকারের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধ চরণ করা, দেশের জনগণের চোখের ভাষা বুঝতে পারা কাল হয়ে যায় আওয়ামী লীগের জন্য। আমরা যদি মৃদু অভিযোগের সুরে বলি তাহলে বলতে হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিচে নামিয়ে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে ক্যু করেছে বা বিদ্রোহ করেছে। আজ না হলেও কখনো আওয়ামী লীগ মাথা তুলে দাড়াতে পারলে সেই আংগুল যাবে আজকের এই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।

    ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি সময়ে অনভিজ্ঞ অস্ত্র চালনায় পারদর্শী মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ যুদ্ধে সুফল পাবে না ভেবেই গেরিলা যুদ্ধের প্রয়োজন বোধ করে যুদ্ধ করে। যার ফলস্বরূপ শত্রুকে ভালভাবে ঘায়েল করতে সক্ষম হন। যা ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। যা অনেক টা বিপ্লবী চরিত্রের মতো ফুটে। ২০২৪ সালের এই সংগ্রাম সশস্ত্র কখনো ছিলো না বলা যায় শুধু মাত্র বাশের লাঠি আর প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার পালিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার মতো ঘটনা দুনিয়ার ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা।  যা কোন ভাবেই বিপ্লবী যুদ্ধের তকমায় আসেনা। কিন্তু তাহলে কি এটা গণঅভ্যুত্থান? উইকিপিডিয়ায় গণঅভ্যুত্থান বিষয়ে আলোচনা অতি সামান্য। ১৯৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থান ছাড়া আর কোন দেশের এই প্রকার আন্দোলনকে গনঅভ্যুত্থান হিসাবে ধরা হয় না।

    গণঅভ্যুত্থান দিবস হলো বাংলাদেশে ২৪ জানুয়ারি উদযাপিত একটি জাতীয় দিবস। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে স্বায়ত্ত্বশাসনের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এই দিবসটি উদ্‌যাপন করা হয়।

    ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি আন্দোলন দমনে ঢাকায় পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে নবকুমার ইন্সটিটিউশনের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও রিকশাচালক রুস্তম আলী নিহত হন। এই হত্যার পর আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে।

    পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ১৯৬৯ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সংঘটিত হয়৷ ইতিহাসে এটি গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত৷ এটি বিপ্লবাত্মক রূপ পরিগ্রহ করে৷ সকল গণতান্ত্রিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও মানুষ যার যার অবস্থান থেকে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়৷ এবার আমরা ২০২৪ এর ছাত্র জনতার আন্দোলনের উপর দৃষ্টিপাত করি। যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সূচনা। সেই একই ধরনের কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্ররা ফুসে ওঠে হাছিনার বিরুদ্ধে। কোটা বৈষম্য একমাত্র প্রধান কারণ কখনো ছিলো না, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের গনতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া, খুন, গুম, হামলা মামলায় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশ চুম্বি দাম নিয়ে অসন্তোষ দিনে দিনে বারুদের মতো জ্বলে ওঠে মানুষের মনে। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বিপ্লব বলতে ফরাসি বিপ্লবের কথাই বলতে হবে।

    শুধু তাই নয় যুগে যুগে দেশে দেশে অসংখ্য বিপ্লব বিশ্ব দেখেছে।

    ফরাসি বিপ্লব একটি বড় সামাজিক অভ্যুত্থানের সময়কাল যা 1787 সালে শুরু হয়েছিল এবং 1799 সালে শেষ হয়েছিল। এটি শাসকদের এবং তাদের শাসিতদের মধ্যে সম্পর্ককে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রকৃতিকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছিল। এটি বিপ্লবী এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির মধ্যে পেছন পেছন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলে।

    ফরাসি বিপ্লব, বিপ্লবী আন্দোলন যা 1787 থেকে 1799 সালের মধ্যে ফ্রান্সকে কাঁপিয়েছিল এবং 1789 সালে সেখানে তার প্রথম ক্লাইমেক্সে পৌঁছেছিল - তাই প্রচলিত শব্দ "1789 সালের বিপ্লব" , ফ্রান্সের প্রাচীন শাসনের সমাপ্তি নির্দেশ করে এবং সেই ঘটনাটিকে পরবর্তী সময়ের থেকে আলাদা করার জন্যও কাজ করে। 1830 এবং 1848 সালের ফরাসি বিপ্লব ।
    কি কারণ থাকতে পারে বিপ্লবের? এই নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলেছে, আজও তার কারণ নিয়ে চলছে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষন।

    যদিও বিপ্লবের সঠিক কারণগুলি নিয়ে পণ্ডিতদের বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে, তবে নিম্নলিখিত কারণগুলি সাধারণত যুক্ত করা হয়: (1) বুর্জোয়ারা রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং সম্মানের পদ থেকে তাদের বর্জনে অসন্তুষ্ট ছিল; (2) কৃষকরা তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে তীব্রভাবে সচেতন ছিল এবং অনাক্রম্যবাদী ও ভারসাম্যপূর্ণ সামন্ততন্ত্রকে সমর্থন করতে ইচ্ছুক ছিল; (3) দর্শনগুলি অন্য যে কোনও জায়গার চেয়ে ফ্রান্সে বেশি ব্যাপকভাবে পঠিত হয়েছিল; (4) আমেরিকান বিপ্লবে ফরাসিদের অংশগ্রহণ সরকারকে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল ; (5) ফ্রান্স ছিল ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, এবং 1788 সালে দেশের বেশিরভাগ অংশে ফসলের ব্যর্থতা, দীর্ঘ সময়ের অর্থনৈতিক অসুবিধার শীর্ষে এসে, বিদ্যমান অস্থিরতাকে আরও জটিল করে তুলেছিল ; এবং (6) ফরাসি রাজতন্ত্র , যাকে আর ঐশ্বরিকভাবে নির্ধারিত হিসাবে দেখা যায় না , তার উপর চাপানো রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অক্ষম ছিল।
    এবার বাংলাদেশের সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর আলোকপাত করি। ফরাসি বিপ্লবের কারণের সাথে আমাদের দেশের ঘটনা প্রবাহের খুব তাত্ত্বিক  মিল না থাকলেও এর অন্ত নিহিত কারণ হিসেবে সরকারের সাথে সাধারণ জনগণের বৈষম্যর পাল্লা দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। কিন্তু এর প্রতিবাদী হিসেবে মানুষ সেভাবে দাড়াতে পারেনি গত পনের বছর। কেন দাড়াতে পারেনি তার ও অজস্র ব্যাখ্যা রয়েছে। নিউ এজ এর সম্পাদক অনেক পুর্বে একটি টক শো তে বলেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী মতের উপর যেভাবে দমন পীড়ন চালাচ্ছে তাতে হয়তো আমরা ভবিষ্যতে বি এন পি ক্ষমতায় এলে সেই সরকার প্রথম দিন থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বি ডি আর কে ব্যবহার করবে। তার এই বক্তব্য সেই সময়ে অনেক অর্থপূর্ণ ছিলো। নির্বিচারে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ এর উপর গুলি চালানোর নিত্যকার চালচিত্র হয়ে উঠে। আমজনতা তাদের দাবী আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে গুলির মুখোমুখি হতে হবে এমন বিপ্লব কেন কল্পনা করবে। সম্প্রতি আন্দোলনে কিন্তু সেটাই বাংলাদেশ দেখতে পেল। হাজারো লাশের বিনিময়ে হাছিনা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।  এভাবেই দিনের পর দিন মানুষের হৃদয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আওয়ামী লীগের সরকার।  এটা হলো মানুষের মনের ভিতর গন অসন্তোষ যার বিস্ফোরণ ঘটে ২০২৪ এ। এই আন্দোলন বিফল হলে বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন ভাবে লিখতে হতো। আর আমার এই লেখা ও কোন পত্রিকায় স্থান পেত না। গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র ভীষণ রকমের ফুটে ওঠে এবারের আন্দোলনে। আর যদি বিপ্লব বলি তাহলে বিপ্লবী আবু সাঈদ এর বুক পেতে মৃত্যু নিমন্ত্রণ করা। আবু সাঈদ হলো বিপ্লবের নায়ক। যার ফলে হাজারো বিপ্লবী রাস্তায় নেমে আসে গুলি খেয়ে আনন্দে মৃত্যুর জন্য। বিপ্লবীদের বড় ভয় স্বৈরশাসকের জন্য।  হাসিমুখে মরতে চাওয়া মানুষের মুখোমুখি দাড়ালে শাসকের বন্দুকের নল ভয় পায় চিরকাল। আমরা যদি এই আন্দোলনকে মুক্তি কামী মানুষের স্বপ্ন বলি তবুও কম বলা যায় না, আওয়ামী লীগের অতি পথভ্রম, দুর্নীতিবাজ কিছু নেতা কর্মি আর হৃদয়হীন পাষান রক্তপিপাসু কিছু মানুষ ছাড়া ২০২৪ এই নতুন বাংলাদেশের যুদ্ধে আপামর বাঙালির চাওয়া ছিলো আওয়ামী লীগের পতন। হোক তা গণঅভ্যুত্থান, হোক তা বিপ্লব, হোক না কেন মুক্তির সংগ্রাম। সবকিছুর মুলেই ছিলো বিগত পনের বছরের হিসাব নিকাশের পালা।

    লেখক ঃ লতিফুর রহমান প্রামাণিক।
    লেখক। আইনজীবী।
    ১/৯/২৪
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন