এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নিশীথ রাতের যাত্রী 

    নিশুতি লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ আগস্ট ২০২৪ | ১৫৭ বার পঠিত
  • নিশিডাকের কথা খুব ছোটবেলা শুনেছি। আমাদের দেশের বাড়ির গ্রামের এক মেয়েকে পূর্ণিমা পক্ষের রাতে ঘরে বন্ধ করে রাখতো -- নইলে জ্যোৎস্নাধোয়া রাতে সে নাকি মাঝেমধ্যেই পেছনের গড়খাইয়ের পশে গিয়ে বসে থাকতো। আমার ভাবনার রসদ এ ঘটনা জুগিয়েছে বহুদিন। রাত্রি কি মায়া জানে?

    জানে হয়তো। নইলে অমন ভাবে ডাকা যায় ? যে রূপ থাকলে, যে রহস্য থাকলে, যে কুহকবিদ্যা জানলে, মানুষ কে ঘরছাড়া করা যায় -- রাত্রির তো তা সবই আছে। এ কথা বুঝেছি অনেক পরে যদিও -- ছোটবেলায় তৈরী রাত্রির প্রতি ভয় কাটার পর।

    অবগুন্ঠনের আড়ালে যে মুখ, যাকে সহজে বোঝা যায়না, বেশি বুঝতেও ভয় করে, তারই প্রতি মানুষের অদম্য আকর্ষণ। ভয় মানুষ কে করে অন্দরমুখী -- আকর্ষণ হাতছানি দেয় বাইরে -- শুরু হয় ঘর বাহিরের খেলা। এই ডাকে সাড়া যে দিয়েছে, সেই পেয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দরের সান্নিদ্ধ -- তমসাময়ীর মায়াস্পর্শ।

    তার ঘরে টেকা দায়। এই রূপ যে বড্ডো নেশা ধরায়। সেই নেশার টানে কখনো ছুটে গেছি পাহাড়ের চূড়ায় -- ছায়াপথের আলো করেছে মুগ্ধ। কখনো অন্ধকার সৈকতে বসে গুনছি সবুজাভ ঢেউ -- আবার চাঁদের আলোয় নৌকোর মৃদু দুলুনির মাদকতা। এ রাত্রি সুন্দর। যে রাত্রি ভয়ঙ্কর, তার সান্নিধ্য পেয়েছি কম। একেবারেই পায়নি, এমনটাও না। তবে রাত্রির রূপ দেখার আকর্ষণ কমেনি এতটুকু -- বেড়িয়েছি আবার, হয়েছি নিশীথ রাতের যাত্রী।

    ১.

    "সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলামের স্রোতখানি বাঁকা"

    শুধু এ ঝিলাম না -- রাপ্তি। নেপালের অন্ধকার রয়েল চিৎওয়ান ফরেস্টেবসে কজনায় কবিতা গানে সন্ধ্যাকে আহবান করছি। বর্ষা শেষের একরাশ জল নিয়ে রাপ্তি নিঃশব্দে বয়ে চলেছে। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা বেরোবো থারোদের এক গ্রামের উদ্দেশ্যে --ওখানে হবে তাদের নাচ গান আর আমাদের নেপাল সফর শেষের বনফায়ার। দূরে একটি হাতির দল দিনান্তের স্নান সারছে।

    ওদের গ্রামে যখন পোঁছলাম, তখন ও কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ উঠতে দেরিয়া আছে। আকাশে একটু আধটু মেঘ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গ্রামের মধ্যবর্তি এক খোলা জায়গায় বসার আয়োজন -- মধ্যিখানের জায়গাটা খালি রেখে চারিদিকে খাটিয়া পাতা। আমাদের সফর সঙ্গী ছিল গ্রিসের এক দম্পতি। সবাই বসতে শুরু করতে থারোদের নাচ শুরু হলো। প্রথমে মাদলের সাথে মন্দ্রিম গতিতে নাচ -- তারপর সেই নাচের টেম্পো বাড়ছে।

    সকলের শরীর তখন নিজেদের অজান্তেই দুলছে মাদলের তালে। সেই অন্ধকার রাতে ভেজা মাটির গন্ধ আর মাদলের ডাক যেন রক্তে নেশা ধরিয়েছিল যেই পা বলছে উঠি উঠি, অমনি শুরু হলো আগুন খেলা। লম্বা লাঠির দু প্রান্তে আগুন লাগিয়ে ছয় সাতজন ছেলে সেগুলিকে বনবন করে ঘোরাচ্ছে আর নিজেরাও তারা বোনফারের চারিদিকে বোন বোন করে ঘুরছে -- উপস্থিত সবার চোখে তারই প্রতিবিম্ব, সবাই মোহাচ্ছন্ন। দেশ কালের গন্ডি পেরিয়ে মানুষের আদিম তালে আস্তে আস্তে প্রায় সবাই তাতে যোগ দিলো।

    এই যে থারোরা, এদের কথিত ইতিহাস ভারী অদ্ভুত। তখন রাজপুতানার পশ্চিম থেকে ক্রমাগত আক্রমণ আসছে -- সঠিক সময়ের কথা তাদের জানা নেই। কোনো কোনো উপরাজ্যের রাজা মেনে নিচ্ছে যোগ শাসন আবার কেউ মাথা উঁচু করে প্রতিরোধ করছে। এরকম সময় খবর আসে রাজপুতদের এক বড় গোষ্ঠীর হারের বা মৃত্যুর কথা। খবর শুনেই অন্দরমহলে ওঠে কান্নার রোল। কিন্তু সম্মুখে বিপদ। তাই রাতের অন্ধকারেই রাজপুতানার রমণীরা তাদের পুরুষ ভৃত্যদের সঙ্গে নিয়ে পালতে শুরু করেন -- পূর্বের দিকে। বেশিরভাগ সময়ে রাতের অন্ধকারে চলে তাদের যাত্রা -- দিনে থাকে ধরা পড়ার ভয়। চলতে চলতে তারা এসে থামে উত্তর প্রদেশ ও নেপালের বিভিন্ন জায়গায়।

    বলা হয় থর মরুভূমি থেকে তারা আসে বলে তাদের নাম হয় থারো, আবার কারুর মতে চলতে চলতে হটাৎ থেমে যায় -- হিন্দি তে যাকে বলে "ঠেহের জানা" -- সেই খান থেকে নাম হয় থারো। কালক্রমে ভৃত্যদের সাথেই বিয়ে করে রাজবংশের মেয়েরা। চাষবাস করেই দিন কাটায় প্রায় সবাই।

    যাইহোক এই কারণে আজ অব্দি থারো জাতিদের সব মেয়েদেরই তারা রাজবংশীয় বলে বিচার করে -- তাই যন্ত্র সামগ্রী মহিলাদের চরণ ছুঁয়েই শুরু হয় প্রত্যেক বছর। তাদের সমাজে সব মেয়েরাই রানী আর সব পুরুষ তাদের ভৃত্য।

    ২.

    রাজগীরে তখন গ্রীস্ম আসন্ন। দুপুর বেলা রোদের তাপ এতটাই বেড়ে গেছে যে, বেলা এগারোটা বাজলেই দোকান সব বন্ধ হয়ে যায়। তাই সেদিন বিকেলের দক্ষিনা বাতাস বইতেই বেরোলাম। গন্তব্য গৃদ্ধকূট। ভগবান বুদ্ধ তার কিছু শিষ্যকে নিয়ে এই গৃদ্ধকূট এই ছিলেন -- বৌদ্ধ ধর্মের বেশ কিছু সূত্রের রচনা হয় এখানেই।

    চৈনিক পরিব্রাজক হুইন স্যাং ও ভগবান বুদ্ধের অনুসরণে এখানে এসেছেন। গৃদ্ধকূটের ওপরে যখন পৌছালাম তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। গ্রীষ্মের সূর্যাস্ত তো এমনিতেই সুন্দর হয় -- সেদিন যেন পশ্চিম আকাশে আগুন ধরেছে।অদূরে জাপান সরকারের তৈরী শান্তি স্তূপটি দেখা যাচ্ছে। নীচে রাজগীর শহর আর বেণুবন উপত্যকা তখন সন্ধ্যার আয়োজনে ব্যস্ত।

    পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবলাম -- এখানে, ঠিক এখানেই কি ২৭০০ বছর আগে বুদ্ধ দঁড়িয়েছিলেন? এমনই কোন সূর্যাস্তের আলো মিলিয়ে গেছিলো তার সৌম্য চোখের সামনে? সত্যি বলতে কোন শিহরণ জাগেনি এ কথা ভেবে। ২৭০০ বছর বড্ডো দূরে। কিন্তু ভাবনা থেকে ভাবনা গড়ায়। পাখিদের ঘরে ফেরা দেখতে দেখতে তাই মনে পড়লো ৬০০ এডি তে হিইয়ান স্যাং ভারতে এসেছিলেন বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব বুঝবেন বলে। চীন এ বৌদ্ধ ধর্ম পৌঁছালেও, তা অনেক সরল, অনেক বিকৃত। তাই ভারতীয় মনোন দিয়ে বৌদ্ধধর্ম বোঝার জন্য তিনি তাকলামাকান মরুভূমি পেরিয়ে, গান্ধার হয়ে ভারতে এসেছিলেন পন্ডিত শীলভদ্রের কাছে শিক্ষা নেবেন বলে।

    হিউয়েন স্যাং এর এই যাত্রা আমার কাছে পৃথিবীর এক শ্রেষ্ঠতম যাত্রা -- কষ্টকর তো বটেই। নালন্দায় থাকাকালীন তিনি নাকি এই গৃদ্ধকুটেও এসেছিলেন বুদ্ধদেবের অনুসরণে। ঠিক এখানেই তিনিও হয়তো দঁড়িয়েছিলেন, ভেবেছিলেন বুদ্ধের কথা সূর্যাস্তের আলোয়।

    এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎখেয়াল হলো অন্ধকার নেমেছে অনেক্ষন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কিসের যেন একটা গন্ধ নাকে এলো। যেদিকে এতক্ষন তাকিয়েছিলাম, তার উল্টো দিকে তাকিয়ে দেখম.. পাহাড়ের গায়ে এক জায়গায় ছোট ছোট আগুন ধরেছে। হাওয়ার জোর ভালো হওয়ায়, দ্রুত সেটা বাড়ছে। দাবানল। একদল লোক ছুটে নামছে -- আমাকেও তারা বললো নীচে নেমে আস্তে তাড়াতাড়ি।

    এদিকটায় ঝোপঝাড় কম তাই আমার দিকে আগুন আসার সম্ভাবনা কম, তবুও তাড়াতাড়ি নামতে নামতে আগুনের আঁচ পাচ্ছিলাম। ছোট ছোট কিছু খরগোশ বা বেজি এদিক ওদিক ছুটছে আমাদের সাথেই। পাখিদের ও কিচিরমিচির বেড়ে গেছে তাড়াতাড়ি নেমে যখন হোটেল পৌঁছোই তখন দূর থেকে বুঝলাম আগুনের রেশটা অনেক দূর ছড়িয়েছে। সোনালী মালার মতো এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড় জড়িয়ে আছে।

    সেই আগুন সারারাত জ্বলেছিল -- পরেরদিন সকালেও। মোহাবিষ্ট হয়ে আমি জানালা দিয়ে তার দিকে তাকিয়েছিলাম প্রায় সারারাতই। মনে পড়লো। শাক্যমুনির পদ্ম সূত্রে লেখা ছিল --

    “When they whole heartedly want to see Buddha….
    I appear at the Holy Eagle Peak
    …when the living witness the end of an eon
    When everything is consumed in a great fire
    This land of mine remains safe and tranquil
    Always filled with human and heavenly beings”
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন