এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রাত দখলের রাজনীতি  : সাংস্কৃতিক রাজনীতির  প্রথম পাঠ

    Sandipan Majumder লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ আগস্ট ২০২৪ | ১৪৩ বার পঠিত
  • কালকের গনজাগরণ অনেক কিছু প্রমাণ করে দিয়েছে। যাঁরা বলছিলেন, এসব Performative Politics' করে আদপে কি কিছু হয় তাদেরকেও নতুন করে ভাবাবে এই আন্দোলনের  বিশালতা, তার স্বতঃস্ফূর্ততা।

    এই আন্দোলন সাংস্কৃতিক রাজনীতির পথে হাঁটার একটা সার্থক সূত্রপাত  ঘটালো। এটা এমন এক রাজনীতি, যেখানে প্রতি মুহূর্তে আত্নসমালোচনার আয়নাটা সাইডব্যাগে রেখেই মিছিলে হাঁটতে হয়। হ্যাঁ, বলতে কোনো দ্বিধা নেই, যাঁরা পুরুষতান্ত্রিক  নানা মতাদর্শকে অন্তর্গত সংস্কারের সঙ্গে বহন করেন, গতকালের মিছিলে যাঁরা হেঁটেছেন, তাঁদের মধ্যে এরকম পুরুষরা তো বটেই, মেয়েরাও অনেকেই ছিলেন। মানুষ প্রধানত আন্ন্দোলনে এসেছেন নিরাপত্তাবোধের একটা তীব্র অভাব থেকে, বিশেষ করে মেয়েরা এবং তাঁদের অভিভাবকেরা। কিন্তু যে সংস্কৃতি এই নিরাপত্তাহীনতাকে সম্ভব করে তুলেছে,তার ব্যবচ্ছেদ একরাতে করা সম্ভব নয়। কারণ আমরা নিজেরাও অনেকেই কমবেশি সেই আগ্রাসী পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির বাহক। সেটা জানেন বলেই অভিষেক ব্যানার্জী বলতে পেরেছিলেন, অপরাধীকে সাতদিনের মধ্যে বিচার করে এনকাউন্টার করে দেওয়ার  কথা। আমি নিশ্চিত যে কাল যাঁরা মিছিলে ছিলেন, তার মধ্যে অনেক নারীপুরুষই এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হবেন। অথচ প্রায় বিনা বিচারে গুলি করে মেরে ফেলার পদ্ধতিও যে একটি আগ্রাসী পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতিকেই বোঝায় সেকথা তাঁরা বোঝেন নি। কারণ এই এনকাউন্টার সংস্কৃতি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে, রাষ্ট্রকে যখনতখন মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা জোগায়।

    আগামীদিনে বহু বিতর্কে, আলোচনায়, পঠনে, লিখনে, আমরা যারা গতকালের  আন্দোলনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থক — আমাদেরও লিঙ্গসাম্যের পাঠ নিতে হবে। এর মধ্যে অনেক ধর্মীয়  বিষয় থাকতে পারে। মুশকিল  হল, ধর্মীয় বিষয়  থাকলে  অসহিষ্ণু  হয়ে পড়ি আমরা খুব সহজেই। কুমারী পূজা প্রগতিবিরোধী রিচ্যুয়াল কিনা, হিজাব সত্যিই ব্যক্তিগত চয়েজ কিনা, ধর্মে নারীর স্থান সত্যিই তার মানবীসত্তার বিকাশের পৃষ্ঠপোষক  কিনা এসব নিয়ে ভাবতেই  হবে। নারীর নিরাপত্তার নামে তাকে চার দেয়ালের গণ্ডিতে বেঁধে ফেলার সংস্কৃতি, তার পরিসরকে ছোট করে দেওয়ার সংস্কৃতি – এসবকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে কালকের রাত দখলের আন্দোলন। তার ভাবার্থকে বুঝে ওঠা কিন্তু গত রাতেই শেষ হয়ে যায় নি। সে কাজ চলতেই থাকবে।

    দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর থেকে বড় রাজনৈতিক আন্দোলন আর কী হতে পারে যেখানে সংস্কৃতিটাকেই পাল্টানোর ডাক দেওয়া হয়। স্বপ্ন দেখা যেতে পারে, সেই সুত্রেই আমরা আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারি।

    মার্কসবাদ সর্বশক্তিমান বলার দরকার নেই। কিন্তু অর্থনৈতিক শ্রেণীবিভাগজনিত মেয়েদের সমস্যার চেহারাগুলি যেভাবে আলাদা হয় সেটা নিয়ে আলাদা করে জানতে, ইস্যুগুলিকে সামনে আনতে অসুবিধা নেই তো কোনো। দলিত বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েদের সমস্যার বাড়তি মাত্রাগুলো জানতে এবং সংগ্রামের এজেন্ডায় ইনক্লুড করতে তো আপত্তি নেই কোনো। কীভাবে মানুষকে শরীরসর্বস্ব ভোগ্যবস্তু করে তোলে বাজারব্যবস্থা সেই আলোচনা করতে গেলে প্রসাধন ইণ্ডাষ্ট্রি, জুয়েলারি ইণ্ডাস্ট্রি সবকিছুই আলোচনায় আসতে পারে। দেখবেন এই আলোচনা  করতে গেলেও মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রবক্তারা বিরোধিতা করবেন ব্যক্তিস্বাধীনতার ওজর দেখিয়ে। এটাও তো রাজনীতি ! নারীমুক্তির লক্ষ্যে সংস্কৃতির যে ঘাট থেকেই যাত্রা শুরু করুন না কেন মাঝদরিয়ায় পিতৃতন্ত্র আর বাজার অর্থনীতির সংরক্ষিত এলাকায় চাষ করা কুমীরদের মুখব্যাদান আপনাকে টপকাতেই হবে।

    সংস্কৃতি হল ইতিহাসের অধ:ক্ষেপ — এক নৃতাত্ত্বিক  বলেছিলেন। কালকের রাত চলমান রাজনৈতিক বিক্রিয়ায় নতুন উপাদান জুগিয়েছে। দেখা যাক কী অধ:ক্ষেপ সে তৈরি করতে পারে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন