এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • তোমরা আমায় ভোট দাও...

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ জুন ২০২৪ | ১৬৯ বার পঠিত
  • "তোমরা আমায় ভোট দাও
    আমি তোমাদের পরিযায়ী শ্রমিক বানাব।"
     
    উড়িষ্যার খুব ছোট্ট শহর অঙ্গুল। খুব বেশি হলে ১৫ কিলোমিটার শহরটার চারদিকের পরিধি। গত দেড় বছর ধরে আমার এই শহরে প্রতি মাসে বা দুই মাসে একবার আসতেই হয়, অফিসের কাজে। এই শহরের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন খনি ও স্টিল বা অন্যান্য প্ল্যান্ট। পুরো ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা। উড়িষ্যার অঙ্গুল ছাড়াও আমায় সম্বলপুর, বালাসোর, ভুবনেশ্বর, কটক ইত্যাদি শহরগুলোতেও যাতায়াত করতে হয়। শুধু শহরগুলোই নয়, শহর লাগোয়া ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে গ্রামগুলোও আমার যাওয়ার জায়গা। কার্যসূত্রে শহর গ্রাম মিলিয়ে অনেক মানুষের সঙ্গে আমায় প্রতিদিন কথা বলতে হয়। আমার চিরকালের বদভ্যাস বশতঃ কাজের বাইরে গিয়ে রাজ্যের রাজনীতি, সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ইত্যাদি নানান বিষয়ে কথা বলি। যারফলে মানুষের মুখ থেকে সরাসরি আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির ছবি দেখতে পাই। এভাবেই টের পেয়েছিলাম, পঁচিশ বছরের নবীন পট্টনায়ক সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পচে যাওয়ার দুর্গন্ধ। উপর থেকে খুব সুন্দর সাজানো গোছানো নীল সাদা রং করা। ভিতরে সবই ঝুরঝুরে।
     
    বাড়ি ফেরার সময় অঙ্গুল স্টেশনে পৌঁছে দেখি, থিকথিকে ভিড়। সবই অল্প বয়েসী ছেলেদের ভিড় টিকিট কাটার জন্য। তারা সকলেই বাঙালি। এই বাংলার ছেলেরা। প্রত্যন্ত গ্রাম বা মফঃস্বলের মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক কিংবা হয়ত গ্রাজুয়েটও হবে। প্রত্যেকে বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরবে বলে টিকিট কাটতে লাইন দিয়েছে। জেনারেল কামরার সস্তার টিকিট। জেনারেল কামরায় যাঁরা চড়েননি, তাঁদের কোনো ধারণা হবেনা কি অমানুষিক কষ্টের সফর। গুঁতোগুঁতি গাদাগাদি করে এর ঘাড়ে পা আর ওর কোলে মাথা রেখে কোনরকমে পথটুকু পার করা। অঙ্গুলের মত একটি ছোট্ট শহরেও বাংলার ছেলেরা গিয়ে রাজমিস্ত্রির মজদুরি করছে। কেউ কেউ ফেরিওয়ালার ব্যবসাও করে। নতুবা ছোটখাটো রেস্তোরাঁ বা ধাবাতে লেবারের কাজ। যে উড়িষ্যা থেকে অগুনতি লোক চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে ওই কাজগুলো করতে বাংলায় আসতো। সেই কাজগুলো করতে আজ বাংলার ছেলেরা উড়িষ্যায় ভিড় জমিয়েছে। ভাল বাংলায় পরিযায়ী শ্রমিক। 
     
    দেশ স্বাধীনের পর উড়িষ্যায় কাজ বলতে তেমন কিছু ছিলনা। বিজু পট্টনায়ক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ধীরে ধীরে হাল ফিরতে শুরু করে। তারপর তাঁর পুত্র নবীন পট্টনায়কের সিংহাসন পঁচিশ বছর পর কদিন হল বেদখল হল। পিতা পুত্রের জমানায় অনেক কিছুই হয়েছে, যা আগে ছিল না। যেমন সত্যিকারের কিছু উন্নয়ন হয়েছে। ঠিক তেমনি সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চোর ছ্যাঁচররা বাসা বেঁধেছে। উচ্চশিক্ষিত নবীন পট্টনায়ক নাকি ছিলেন শুধুমাত্র কাঠের পুতুল মাত্র। সরকারি যাবতীয় কাজকর্ম সবই মন্ত্রী সান্ত্রীরা চালাতো। আর বেদম পুকুর চুরি করতো। তবে এই রাজ্যের মত পুকুর কে জাল ফেলে তুলে নিয়ে যেত কিনা এখনও জানতে পারিনি। যেটা উপলব্ধি করেছি, বুঝেছি পট্টনায়ক পিতা পুত্রের জমানায় উড়িষ্যাবাসীকে আজ আর পরিযায়ী শ্রমিক হতে হয়না। বরং পাশের যে রাজ্যে তাদের বাপ ঠাকুরদারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাঁধে করে জল বেচত। কিংবা হালুইকর বামুনের কাজ করত। লোকের বাড়িতে পরিচারক বৃত্তি করত। সেই রাজ্যের মানুষরা এখন উড়িষ্যায় এসে তাদেরই বাপ ঠাকুরদার ছেড়ে আসা কাজগুলো করছে। করতে বাধ্য হচ্ছে। সুদীর্ঘ ৩৪ আর ১৩ বছরের সুশাসনে আমাদের সোনার বাংলা ছারখার হয়ে টিনের বাংলায় পরিণত হয়েছে। এখানে আগে রবীন্দ্রনাথ, সুভাষ চন্দ্র, সত্যজিৎ, বিবেকানন্দ প্রমুখ গড়া হত। এখন এখানে আইপিএস, আইএস, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী এসব গড়া হয়না। এখন শুধুই পরিযায়ী শ্রমিক গড়া হয়। এখানে সরকারের কুশীলবরা শিক্ষা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তছনছ করে হাডুডু খেলে। সরকারি চাকরি বিক্রি করে সরকারেরই নেতা মন্ত্রীরা। তাদের বাঁচাতে রাস্তায় নামে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
     
    উড়িষ্যার মানুষের সাথে কথা বলে যা বুঝেছি, না পাওয়ার দুঃখ ওদেরও অনেক আছে। পঁচিশ বছর ধরে চলা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই আজকের সরকার বদলানো। বিজেপির ক্ষমতা দখল। তবুও ওরা কেউই নবীনজীকে অসম্মান করতে রাজি নয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানুষ হিসেবে ছিলেন একনম্বর। আজ পর্যন্ত রাজনীতির ময়দানে দাঁড়িয়ে চরম শত্রুর বিরুদ্ধেও কুকথা উচ্চারণ করেননি। হেরে গিয়ে হাসি মুখে হার স্বীকার করে নিয়েছেন। নাহ্ এখানকার কারোর মত কথায় কথায় ধর্নায় বসেও পড়ে সিন ক্রিয়েট করেননি। 
     
    বাংলার ছেলেগুলোকে দেখে সত্যিই অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। ২০২৪ সালেও তীব্র বেকারত্বের জ্বালায় যুবকদের এই অবস্থা। তারা কুলি, কামিন, জোগাড়ে, হকার হয়ে গেছে। কারোর কারোর ভাগ্যে হয়ত সেটুকুও জোটেনা। ভোট আসে ভোট যায়। মনে পড়ে যায় ক্ষমতায় আসার আগে কেউ একজন প্রকাশ্যে বলেছিল,
    "ওরা কাজ করতে জানে না। নাহলে বাংলার গ্রামকে গ্রাম উজাড় করে সব ছেলেপুলেদের ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে পাঠায়! আমরা এলে দেখিয়ে দেব। কিভাবে ঐসব ছেলেদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে হয়, দেখিয়ে দেব কিভাবে কাজ তৈরি করতে হয়।" 
     
    পরবর্তীকালে শিক্ষিত বা অশিক্ষিত বেকারদের অবশ্যই দিশা দেখানো হয়েছিল, চপ ও ঘুগনি শিল্পের মাধ্যমে।
     
    ____________
    ©রজত দাস
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন