এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বিবাহ বিচ্ছেদ। গল্প।

    SANKAR HALDER লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ মে ২০২৪ | ২৪২ বার পঠিত
  • বিবাহ বিচ্ছেদ

    লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা।
     
    ◆ রানাঘাট শহরের কোলাহল মুক্ত এক নিরিবিলি পরিবেশে চূর্ণী নদীর তীরে মনোরম পরিবেশ তৈরি বিনোদিনী পার্কের বৃক্ষের ছায়া তলে ঘাসের উপর একজন যুবতী বসে ভাবে, অনীশ এখনো আসছে না কেন! কোন বিপদ হয়নি তো?
     
    ◆ একজন যুবক কালো রঙের একটি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেলতে দুলতে যুবতীর পিছনে এসে বলে :- ঊর্বশী; দেরি করে আসার জন্য দুঃখিত, ব্যক্তিগত মালিকের কোম্পানির চাকরি তো-নিজের ইচ্ছামত আসা যায় না। কয়েকদিন ধরেই অফিসে ভীষণ কাজের চাপ চলছে।
     
     ◆ অনীশের হাত ধরে পাশে বসিয়ে উর্বশী বলে :- তোমার সাথে দেখা করার জন্য দত্তপুলিয়া থেকে রানাঘাট কলেজে ভর্তি হওয়া কিন্তু বাবু কাজের অজুহাতে এক ঘন্টা দেরি করে আসলেন।
     
    ◆ অনীশ বলে :- কয়েক বছর ধরে স্টেশনে পার্কে প্রেম করলাম কিন্তু এবার ভাবছি, কয়েক মাসের মধ্যে তোমার বিএ ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গেলে কিন্তু একদম বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়বো। 
     
    ◆ দুজনে টয় ট্রেনে চেপে ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির অপূর্ব সুন্দর্য উপভোগ করতে করতে অনীশের হাত ধরে ঊর্বশী বলে :- তোমাকে একান্তভাবে আরো কাছে পেতে চাই। 
     
    ◆ বড়বাজার থেকে চূর্ণী নদীর তারের ব্রিজের উপর দিয়ে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া কচুরিপানা ভর্তি চূর্ণী নদী কে দেখে অনীশ আফসোস করে বলে :- একদিন আমাদের রূপ যৌবন অহংকার বিনষ্ট হয়ে চূর্ণী নদীর মত হবে।
     
    ◆ ঊর্বশীর দুই দাদা বৌদি বিয়েতে রাজি না থাকার কারণে বিএ পাস করার এক মাস পর কোর্টের মাধ্যমে অনীশ ও উর্বশী রেজিস্ট্রি বিবাহ করে। সমাজের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে অনীশ তার বগুলা গ্রামের বাড়িতে বিধবা মা ও নববধূকে নিয়ে নতুন সংসার শুরু করে।
     
    ◆ মধ্যবিত্ত পরিবার হিসেবে ঊর্বশী সংসারে খুশি ছিল। ধীরে ধীরে তার দাদা বৌদির বাড়িতে যাতায়াত শুরু করে। ২০২০ সালে ভয়াবহ করোনা ভাইরাসে সারা পৃথিবী কেঁপে ওঠে আর অনীশ সহ হাজার হাজার মানুষের চাকরি হারাতে হয়। ঘর বন্দী হয়ে জমানো টাকা পয়সায় বসে বসে খাওয়া দাওয়া করতে করতে এক সময় শেষ হয়ে যায়। অভাব অনটনের তাড়নায় দিন দিন স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার মধ্যে ফাটল ধরতে থাকে। এক বছর করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকার পর করোনা ভাইরাসের থেকেও মারাত্মক ভাবে ঊর্বশী একদিন সংসারে বিস্ফোরণ ঘটায়। যা অনীশের সহ্য করা কঠিন হয়ে ওঠে।
     
    ◆ অনীশ বাজার থেকে খালি ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী ঊর্বশী কে বলে :- কোন ভাবেই টাকা-পয়সা জোগাড় করতে পারিনি আবার কোন দোকানদার আমাকে বাকিতে জিনিসপত্র দেবে না। সরকারের বিনামূল্যে দেওয়া খাদ্য সামগ্রী এখন আমাদের একমাত্র ভরসা।
     
    ◆ ঊর্বশী চিৎকার করে বলে :- ঐ রেশনের চাল আমি খেতে পারব না। রেশনের চাল আমার বাবার বাড়িতে হাঁস-মুরগি ছাগল খায়। ঘরে কোন চাল ডাল নেই কিন্তু আজ চাল ডাল সবজি না আনলে পিণ্ড রান্না করে দিতে পারব না।
     
    ◆ অনীশের মা ছুটে এসে বৌমার উদ্দেশ্যে বলে, মা; তুমি এ কেমন কথা বলছো। অনীশ কাজের চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু করোনার ভয়ে কাজ তো কেউ দিচ্ছে না। তোমাকে এক বেলা খেতে দিয়ে আমরা তো তিন বেলা খাচ্ছি না।
     
    ◆ ঊর্বশী চিৎকার করে বলে :- আপনি চুপ থাকুন। সংসার কিভাবে চলছে তা কখনো বোঝার চেষ্টা করেছেন? আপনার অপদার্থ ছেলেকে বিয়ে করায় আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাদা-বৌদি ঠিকই বলেছিল কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। বউ কে খেতে দিতে পারবে না, তাহলে বিয়ে করার কি দরকার ছিল?
     
    ◆ অনীশ বলে :- তুমি কিন্তু তোমার অধিকারের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছো। তোমার ইচ্ছা না থাকলে কিন্তু জোর করে আমি তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসিনি।
     
    ◆ ঊর্বশী চিৎকার করে বলে :- কি করবে মারবে? মারো মারো মারো বলে অনিশের হাত নিয়ে নিজের গালে মারতে থাকে।
     
    ◆ অনীশ চিৎকার করে উঠে ঊর্বশীকে সরিয়ে দিতে গিয়ে ঊর্বশী পড়ে যায় আর শাশুড়ি দ্রুত গতিতে ছুটে এসে বৌমার হাত ধরে উঠানোর চেষ্টা করে।
     
    ◆ শাশুড়ি কে ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে উর্বশী বলে :- আমাকে মেরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হলো কিন্তু তোমার সংসার আর করব না। তারপর শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার ছেলেকে একটি থালা আর ছেঁড়া জামা কাপড় পরিয়ে দেন, ভিক্ষা করে নিয়ে এসে বউকে খাওয়াবে। এই সংসারে এক বেলা ঠিকমত খাওয়া জোটে না আর শখ আহ্লাদ তো অনেক দূরের কথা। বিয়ের আগে তো বলেছিল রাজরানী করে রাখব। খেতে খেতে আমার গায়ের গয়না গুলো পর্যন্ত বিক্রি করে খেয়ে ফেলেছে তারা আবার বড় গলায় কথা বলে।
     
    ◆ অনীশ তার স্ত্রীকে শাসন করার জন্য দ্রুত ছুটে এসে গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে :- আমাকে ভিখারি বলছে, প্রত্যেক মানুষই বর্তমানে পরিস্থিতির শিকার হয়ে রয়েছে। 
     
    ◆ অনীশের মা তার ছেলের গালে চড় মারতে মারতে বলে :- তোর এত সাহস বৌমার গায়ে হাত তুললি, তোর মত অপদার্থ ছেলে আমার দরকার নেই। বলে বৌমার কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দিতে থাকে।
     
    ◆ ঊর্বশী কান্না করতে করতে শাশুড়ি কে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত বেগে ছুটে ঘরের মধ্যে গিয়ে একটি ব্যাগ নিয়ে দ্রুত বেগে ছুটতে থাকে।
     
    ◆ অনীশ তার স্ত্রীর পথ অবরোধ করে বলে :- আমার এই দুর্দিন চিরকাল থাকবে না, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে ভীষণভাবে ভালোবাসি কিন্তু রাগের মাথায় উত্তেজিত হয়ে চড় মেরেছি।
     
    ◆ ঊর্বশী কারোর কোন কথা গ্রাহ্য না করে দ্রুত বেগে হাঁটতে শুরু করে। অনীশ পিছন থেকে চিৎকার করে বলে, ঊর্বশী তুমি ফিরে এসো, ঊর্বশী তুমি ফিরে এসো, ঊর্বশী তুমি ফিরে এসো বলতে বলতে দ্রুত বেগে হাঁটতে থাকে। অনীশের মা বলে, বৌমা তুমি যেওনা, বৌমা তুমি যেওনা । বাসস্ট্যান্ডে থাকা দত্তপুলিয়া গামী চলন্ত বাসে ঊর্বশী দ্রুত বেগে উঠে পড়ে, অনীশের সামনে দিয়ে বাস চলতে শুরু করে।
     
    ◆ অনীশ পিছন থেকে চিৎকার করে আবার বলে, ঊর্বশী তুমি ফিরে এসো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। ঊর্বশী তুমি ফিরে এসো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। ঊর্বশী তুমি ফিরে এসো।
     
    ◆ ঊর্বশী তার দত্তপুলিয়া গ্রামে দুই দাদার সংসারে উপস্থিত হয়ে বাবার পাশে বসে দাদা বৌদির উপস্থিতিতে বলে :- আমি আর অনীশের সংসারে ফিরে যাবে না।
     
    ◆ বড় বৌদি সুনন্দা তার ননদ কে আদর করে বলে :- আমাদের কোন কথা না শুনে ভালবেসে বিয়ে করলি কিন্তু জানতাম একদিন ঐ দারিদ্র্যের সংসারে থেকে বিদায় নিতে হবে। একমুঠো ভাত খেতে তাও দিতে পারে না। 
     
    ◆ ছোট বৌদি তপতি বলে :- আমার কাকাতো ভাইকে বিয়ে করলে কিন্তু আজকের এই দুর্দিন দেখতে হতো না। শরীরে ময়লা ধরেছে কতকাল সাবান ব্যবহার করিস না। আমার ভাইকে বিয়ে করলে রাজরানী হয়ে সবার উপরে ছড়ি ঘুরিয়ে লাখ লাখ টাকা তোর পায়ের কাছে পড়ে থাকতো।
     
    ◆ বড় বৌদি সুনন্দা বলে :- তোকে আবার ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দেবো, চিন্তা একদম করবি না।
     
    ◆ ছোট বৌদি তপতি বলে :- আমার ভাই তো ঊর্বশীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, এখনো বিয়ে করেননি। বিদেশ থেকে বাড়ি এসেছে, আমি বললে না করতে পারবে না। 
     
    ◆ বড়দা অনিক বলে :- তাহলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।  
     
    ◆ ছোটদা আবির বলে :- বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করতে হবে। আর সেই টাকায় ধুমধাম করে তোকে বিয়ে দেবো।
     
    ◆ বড় বৌদি সুনন্দা বলে :- বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে ঊর্বশী রাজি আছে তো।
     
    ◆ ঊর্বশী বলে :- আমি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চাই।
     
    ◆ উর্বশীর অসুস্থ বাবা বিছানায় উঠে বসে তার মেয়ের হাত ধরে বলে :- দাদা বৌদির কথা শুনে বিবাহ বিচ্ছেদ করিস না। সংসারে দারিদ্রতা আসতে পারে কিন্তু তার জন্য স্বামীকে ত্যাগ করা অন্যায়।
     
    ◆ বড় ছেলে অনিক বলে :- বাবা; আপনি চুপ করে থাকুন। আমাদের বোনের ভালো-মন্দ আমরা বুঝবো।
     
     ◆ ছোট বৌমা তপতি বলে :- বাবা; আপনি তো এখন জড় পদার্থে হয়ে গিয়েছেন, আর আমাদের দয়ার উপর আপনার চলতে হয়। আগ বাড়িয়ে কোন কথা বলবেন না।
     
    ◆ বড় বৌমা সুনন্দা বলে :- বাবা ; ননদের আমরা সবাই ভালোই চাই, তার জন্যই বিবাহ বিচ্ছেদ করে অন্য জায়গায় আবার বিয়ে দেবো।
     
    ◆ ঊর্বশী তার বড় বৌদি কে বলে :- আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে, ওই বাড়িতে তো ঠিকমত পেট ভরে খেতে পারি না।
     
    ◆ উর্বশীর বড় বৌদি বলে :- আজ খাসির মাংস রান্না করেছি পেট ভরে ভাত খাবি। 
     
    ◆ উর্বশীর ছোট বৌদি বলে :- আরে আমার ঘরে খাবি, আজ ইলিশ মাছ আর ওল চিংড়ি রান্না করেছি। 
     
    উর্বশীর বাবা মনে মনে ভাবে :- মেয়েটাকে নিয়ে নিশ্চয়ই কোন খেলা খেলতে চলেছে। ঊর্বশীর সর্বনাশ করেই ছাড়বে। আমি তো এখন দুই বৌমার ঘরের ভাগের শশুর। আমার কপালে ডাল ভাত আলু ভাজা।
     
    ◆ অনীশ পরের দিন তার শশুর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ঊর্বশী ঊর্বশী বলে ডাকতে থাকে।
     
    ◆ ঊর্বশী ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে :-
    এখানে কি করতে এসেছে?
     
    ◆ অনীশ বলে :- তোমাকে নিতে এসেছি, তুমি আমার সাথে বাড়িতে ফিরে চলো। মা তোমার জন্য ভীষণ ভাবে চিন্তিত।
     
    ◆ ঊর্বশীর দুই বৌদি উঠানে উপস্থিত হয়ে বলে :- আমার ননদ তোমার সংসার করবে না আর বিবাহ বিচ্ছেদের কাগজপত্র শীঘ্রই পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
     
    ◆ অনীশ তার স্ত্রী হাত ধরে বলে :- আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমাকে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বলতে পারো না।
     
    ◆ ঊর্বশীর বড় বৌদি অনীশের কাছে থেকে তার ননদকে ছিনিয়ে নিয়ে বলে :- ভদ্রভাবে এখান থেকে না গেলে কিন্তু মেরে ধরে বের করে দেবে। আমার ননদের গায়ে হাত তোলা বধু নির্যাতন মামলা করব। মা ছেলেকে জেলের ঘানি টানতে হবে।
     
    ◆ অনীশ দ্রুত বেগে ছুটে ঊর্বশীকে জড়িয়ে ধরে বলে :- তুমি আমার দাম্পত্য সঙ্গী, আমি জোর করে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো-কে তোমাকে যেতে দেবে না,তা দেখে নেবো।
     
    ◆ সেই মুহূর্তে ঊর্বশীর দুই দাদা উপস্থিত হয়ে অনীশ কে তাদের বোনের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে মারধর করতে করতে বলে :- তোদের দারিদ্র পরিবারে আমার বোন আর যাবে না। বোনকে নতুন করে বিয়ে দিয়ে লন্ডনে পাঠিয়ে দেবো।
     
    ◆ অনীশ ইছামতি নদীর তীরে কিছু সময় বসে ভাবতে থাকে। প্রদীপ হালদারের পরামর্শে দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণা বিশ্বাসের সাথে দেখা করে তাদের দাম্পত্য জীবনের ঘটনা জানায়। প্রধান সবকিছু শোনার পর বলে, আজ বৃহস্পতিবার কিন্তু রবিবারের দিন দুপুর বারোটার সময় আপনার শ্বশুর বাড়িতে উভয় পক্ষের আলোচনা সভা বসানো হবে।
     
    ◆ পাকা বাড়ির উঠানে কয়েকটি চেয়ার পেতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভার সঞ্চালক বাবুল সাধুখাঁ বলে, অনীশ ও ঊর্বশী দাম্পত্য জীবনের এমনকি ঘটনা ঘটলো যে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হবে। উক্ত বিষয়ে উভয় পক্ষের থেকে আলোচনা শোনা হবে।
     
    ◆ মেম্বার আনন্দ সাহা বলেন :- অনীশ তোমার বক্তব্য শুরু করো।
     
    ◆ অনীশ বলে :- করোনা ভাইরাসের কারণে আমার চাকরি চলে যায় আর দারিদ্রতা ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকে। দারিদ্রতার কারণে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া দিতে পারিনি, এই দারিদ্রতা নিয়ে মাঝে মধ্যে ঝগড়া অশান্তি হয়েছে। ঊর্বশী তার দাদা বৌদি প্রচারণায় বিচ্ছেদের কথা ভাবছে কিন্তু আমি কখনোই বিবাহ দিচ্ছে করতে চাই না। আমি ঊর্বশীকে ভীষণভাবে ভালোবাসি।
     
    ◆ ঊর্বশীর বড়দা বলে :- আমার বোনের উপর ভীষণভাবে মারধর সহ অত্যাচার নির্যাতন করেছে।
    তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বোন ঊর্বশী পালিয়ে আমাদের বাড়ি চলে এসেছে। ঊর্বশী চাই তার স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হোক।
     
    ◆ অনীশ বলে :- এইসব মিথ্যে কথা, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি ঊর্বশীকে কখনোই মারধর করিনি। ঊর্বশী তুমি তো সত্যি কথাটা বলো।
     
    ◆ ঊর্বশীর বড় বৌদি বলে :- শুধু কি তাই! অনীশ মদ পান করে ঘরে এসে ঊর্বশীর উপর অমানবিক অত্যাচার করে। কথায় বলে, অভাবে স্বভাব নষ্ট- জুয়া লটারি খেলা করে। তারপর ঊর্বশীর বাম হাতের কাপড় সরিয়ে কনুই নিচের দিকে থাকা কাটা দাগ সবাই কে দেখিয়ে আবার বলে, দেখুন দেখুন কিভাবে ঊর্বশীর উপর অত্যাচার করেছে।
     
    ◆ মেম্বার আনন্দ সাহা বলেন :- যাকে কেন্দ্র করে আজকের আলোচনা সভা ডাকা হয়েছে, সেই ঊর্বশী কে বলার জন্য বলছি। 
     
    ◆ দুই বৌদির মাঝে থাকা ঊর্বশী কে দুদিক থেকে ইশারায় খোঁচা দিয়ে বলে, অনীশকে দোষী সাব্যস্ত করার উপযুক্ত সময় এসেছে কিন্তু আর চুপচাপ থাকলে হবে না।
     
    ◆ ঊর্বশী একবার অনীশের দিকে করুণভাবে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলে :- দাদা বৌদি যা বলেছে তা সত্য, অনীশ আমার উপর ভীষণ ভাবে অত্যাচার করেছে তার জন্যই-আমি বিবাহ-বিচ্ছেদ করতে চাই।
     
    ◆ অনীশ বলে :- না না সব মিথ্যা কথা, আমি কখনোই ঊর্বশীর উপর অত্যাচার করিনি, আর মদ্যপান ও জুয়া খেলা করি না। ঊর্বশী শেষ পর্যন্ত তুমিও মিথ্যা কথা বলে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করলে, এই ভালবাসার প্রতিদান। 
     
    ◆ ঊর্বশীর বাবা তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন :- জামাইয়ের নামে এরকম বদনাম না দিলেও হয়তো ভালো হতো। ঊর্বশী তাদের দাদা বৌদির কথা শুনে অনীশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
     
    ◆ ঊর্বশীর বড়দা তার বাবাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে :- বোন ঊর্বশীর উপর হওয়া অত্যাচারের চিহ্নগুলো তো আর আপনাকে দেখাতে পারবে না। মা বেঁচে থাকলে হয়তো চিহ্ন গুলো দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠতো। এই বিষয়ে আপনার নাক গলাতে হবে না।
     
    ◆ পঞ্চায়েত প্রধান কৃষ্ণা বিশ্বাস বলেন :- সাক্ষী প্রমাণ সহ স্বয়ং অত্যাচারিত হওয়া উর্বশী যখন বলছে, তখন অনীশ কে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।
     
    ◆ বাবলু সাধুখাঁ বলে :- তাহলে বিবাহ-বিচ্ছেদের দিকেই এগিয়ে যাওয়া যাক। উর্বশীর অভিভাবকদের দাবি দাওয়া কি আছে?
     
    ◆ ঊর্বশীর ছোটদা বলে :- মীমাংসিত বিবাহ বিচ্ছেদ হলে মাত্র দশ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে কোর্টে গিয়ে অনীশের নামে বধূ নির্যাতন মামলা করা হবে।
     
    ◆ অনীশ বলে :- আমার কোন কাজকর্ম নেই বর্তমানে এক টাকা দেওয়ার কোন ক্ষমতা নেই। 
     
    ◆ উর্বশী বলে :- অত্যাচার করার সময় মনে ছিল না, আমার ১০ লাখ টাকায় চাই।
     
    ◆ দীর্ঘ সময় আলোচনার পর অঞ্চল প্রধান কৃষ্ণা বিশ্বাস বলেন :- অনীশ; তুমি টাকা কোথায় পাবে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়, যদি মীমাংসা করার ইচ্ছা থাকে তাহলে আগামী ১০ দিন পর চার লাখ টাকা নিয়ে মেম্বার আনন্দ সাহার বাড়িতে উপস্থিত হবে। 
     
    ◆ অনীশ বলে :- আমাকে কয়েক মাস সময় দিতে হবে আর উকিল ধরে কোর্টের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হবে। পঞ্চায়েতের বিচার ব্যবস্থা আদালতে কোন মূল্য নেই।
     
    ◆ ঊর্বশীর বড়দা বলে :- কোট কাচারি মামলা করার কোন দরকার নেই, পঞ্চায়েতের রায় অনুসারে কাজ হোক।
     
    ◆ আবার কিছুক্ষণ জল্পনা-কল্পনা করার পর মেম্বার আনন্দ সাহা বলেন :- কোর্টের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হবে। দুই পক্ষের একই উকিল ধরলে কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। বিচার সভা আজকের মত এখানেই শেষ করা হলো। 
     
    ◆ অনীশ বাড়িতে আসার পর মা ঘটনা শোনার পর বলে :- চার লাখ টাকা কোথায় পাবি।
     
    ◆ অনীশ বলে :- মা; বউয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষের ভিটেবাড়ি বিক্রি করে তার ঋণ শোধ করতে হবে। 
     
    ◆ অনীশের মা তার স্বামীর উদ্দেশ্য করে বলে :- তোমার বংশধরদের রেখে যাওয়া ধন সম্পত্তি আমি রক্ষা করতে পারলাম না। এখন ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাব কোথায় থাকবো।
     
    ◆ অনীশ বলে :- মা; বিরাট পৃথিবীর মাঝে কোথাও না কোথাও, আমাদের থাকার জায়গা হয়ে যাবে। আমি দিনমজুর কাজ করে তোমার থাকা খাওয়া সহ সব রকম ব্যবস্থা করব। 
     
    ◆ অনীশের এক বন্ধুর পরামর্শে একজন উচ্চপদস্থ নেতার মাধ্যমে এলাকার বিধায়ক সমীর পোদ্দার মহাশয় কাছে উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত ঘটনা জানিয়ে বলে :- আমার ভিটেবাড়ি আপনার কাছে বিক্রি করতে চাই।
     
    ◆ বিধায়ক সমীর পোদ্দার বলেন :- তোমার ভিটেবাড়ি ন্যায্য টাকা দেওয়া হবে কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যে যদি আমার সম্পূর্ণ টাকা বিনা সুদে শোধ করতে পারো, তাহলে তোমার ভিটেবাড়ি ফেরত দিয়ে দেবে। এলাকার বিধায়ক হিসাবে পাঁচ জনের সামনে প্রতিজ্ঞা করছি। মানুষের বিপদে তাদের পাশে থেকে সাহায্য করা আমার কাজ।
     
    ◆ অনীশ হাত জোড় করে বলে :- বিধায়ক মহাশয়; বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা যতদিন না মীমাংসা হচ্ছে, ততদিন আপনার ওই বাড়িতে আমাদের বসবাস করতে দিতে হবে।
     
    ◆ বিধায়ক সমীর পোদ্দার তার কয়েকজন কাছের মানুষের সাথে পরামর্শ করে বলেন :- বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা মীমাংসা হতে মাস ছয়েক লাগবে ততদিন ঐ বাড়িতে বসবাস করে।
     
    ◆ ঊর্বশী ও অনীশের বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর ঊর্বশীর হাতে ৪ লাখ টাকা চলে আসে। বিছানায় বসে টাকাগুলো হাতে নিয়ে বিবেকের দংশনে জর্জরিত হয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনের স্মৃতিগুলো স্মরণ করতে থাকে।
     
    ◆ ঊর্বশীর দুই দাদা ও দুই বৌদি ঘরে ঢুকে তার বড়দা ঊর্বশীর হাত থেকে টাকাগুলো নিয়ে বলে :- এতগুলো টাকা হাতে নিয়ে কি ভাবছিস! তারপর টাকাগুলো চারজনের মধ্যে ভাগ করতে থাকে।
     
    ◆ ঊর্বশী বলে :- আমার টাকাগুলো তোমরা ভাগ করে নিলে। 
     
    ◆ বড় বৌদি সুনন্দা বলে :- এক জায়গায় রাখলে যদি চুরি হয়ে যায় তাহলে সব টাকায় চলে যাব। সেই জন্য সবার কাছেই টাকা রেখে দিলাম। 
     
    ◆ ঊর্বশীর ছোটদা বলে :- ঊর্বশী ভীষণভাবে চিন্তিত ওকে নিরিবিলি থাকতে দাও, আর সবাই যার যার ঘরে চলে যাও। 
     
    ◆ ঊর্বশী ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়ে ভাবে :- অকারণে স্বামীর সাথে ঝগড়া করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘাঁটানো ঠিক হয়নি।
    দাদা বৌদি অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে অনুভব করছি, স্বামীর থেকে আপন কেউ হয় না। যত ঝগড়া অশান্তি হোক না কেন! একজন আরেকজনের পরিপূরক। বড় বৌদির ছোট ভাই ধনঞ্জয় আমাকে ধর্ষণ করলো কিন্তু সব দোষ আমার ঘাড়ে দিয়ে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বৌদি মিলে নতুনভাবে অত্যাচার শুরু করল। বাবার তৈরি পাকা ঘরে আমার থাকার জায়গা নেই। বাড়ির পরিত্যক্ত একটি ঘরে আমার থাকার জায়গা আর বিবাহ বিচ্ছেদের পর আমি বাড়ি কাজের মহিলা। সবার জন্য বিভিন্ন পদে পদে রান্না করি কিন্তু পেট ভরে দুমুঠো ভাত খেতে দেয় না।  
     
    ◆ বড় বৌদি সুনন্দা উত্তেজিত হয়ে ঊর্বশীর থাকা ঘরে ঢুকে বলে :- মহারানী এখনো ঘুমাচ্ছেন, রাতের রান্না তোর মরা মা এসে করে দিয়ে যাবে। ঢং দেখে আর বাঁচিয়ে, বিবাহ বিচ্ছেদেরই মহিলা আবার শাখা সিঁদুর পড়ে সতী সাবিত্রী সেজেছে। ঘরে পুরুষ ঢোকালে হাজার হাজার টাকা আয় রোজগার হবে আবার যৌবন জ্বালা মিটে যাবে। বেশ্য মাগি আমার সরল সোজা ভাই কে তোর রূপের ফাঁদে জড়িয়ে বদনাম করলি। তোর ভাগ্য ভালো এখনো ঝেটিয়ে বিদায় করিনি।
     
    ◆ দীর্ঘ কয়েক বছর পর ঊর্বশী কৃষ্ণনগর শহরের ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে চলার সময় একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি তার সামনে এসে বলে :- মা; আমি ক্ষুধার্ত আমাকে কিছু খেতে দেবে।
     
    ◆ বাবা বলে জড়িয়ে ধরে ঊর্বশী বলে :- তোমার এই অবস্থা কেন? 
     
    ◆ উর্বশীর বাবা তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে :- তুই নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ৬ মাস পর আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
     
    ◆ ঊর্বশী বলে :- বাবা; দাদা বৌদি তাড়িয়ে দিলোও কিন্তু আমি তো তোমার মেয়ে। আমার সাথে চলো, এখন থেকে দুজনে একসাথে থাকবো। বাবা; আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে কখনোই ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেবো না।
     
    ◆ ভাড়া বাড়িতে আসার পর উর্বশীর বাবা খাওয়া দাওয়া করে সুস্থ হয়ে বলে :- বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে কোথায় ছিলি।
     
    ◆ আড়ংঘাটা বাসিন্দা মদন বিশ্বাসের সাথে ফেসবুকে প্রথম পরিচয় ঘটে তারপর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও কলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দাদা বৌদির অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে মদনের সাথে পালিয়ে নবদ্বীপ গঙ্গার ধারে একটি পাড়ায় ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু হয়। এক বছর সংসার করার পর মদনের গোপন অভিসন্ধি বুঝতে পারি। প্রতিদিন নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে বাড়িতে মদ পান করতে শুরু করে। মদন মদ পান করে তার বন্ধুদের সাথে শয্যাশায়ী হওয়ার জন্য বলে কিন্তু আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মারধর করতে থাকে। এক রাতে মদনকে মারধর করে আমি পালিয়ে গঙ্গার ধারে আত্মহত্যা করার জন্য উপস্থিত হয়। গঙ্গায় ঝাঁপ দিতে যাবো, এমন সময় দায়িত্বশীল কর্তব্যরত একজন পুলিশ আমাকে বাঁচায়। সেই রাতে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। পুলিশ বিমল বাবু আমার কাছে সবকিছু শোনার পর মদন কে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। 
     
    ◆ এরপর বিমল বাবু দিদি করুণাময়ী ভট্টাচার্য কৃষ্ণনগর জেলা আদালতের একজন উকিল। বি এ পাস জেনে তার অফিসে আমাকে কাজ দেয়। পরবর্তীতে আমার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তার সহকর্মী হিসাবে রাখেন। বিমল বাবুর কাকা শশাঙ্ক বাবু একজন বড় পুলিশ অফিসার। তার সহযোগিতায় আট মাস আগে প্রশাসনের একজন মহিলা পুলিশ কর্মী হিসাবে নিয়োগ পায়। বর্তমান নদীয়া জেলার পলাশীপাড়া থানার অধীনে কর্মে আছি। আচ্ছা বাবা অনিশের কোন খবর জানো।
     
    ◆ উর্বশীর বাবা বলেন :- শুনেছি, সাত বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদের চার লাখ টাকা মেটানোর জন্য ভিটেবাড়ি বিক্রি করে বিবাহ বিচ্ছেদের পর গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছে। অনীশের মতো ছেলে দ্বিতীয়টি পাওয়া যায় না।
     
    ◆ ঊর্বশী বলে :- বাবা; দাদা বৌদির কথা শুনে নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে নিয়ে এসেছি। অভিভাবকহীন হয়ে বেঁচে থাকার জন্য সমাজের বুকে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। পদে পদে বিপদ তা আমার জীবনে অনুভব করেছি। 
     
    ◆ কয়েক মাস পর ঊর্বশী ছুটিতে বাড়ির বারান্দায় 
    চেয়ারে বসে দৈনিক খবরের কাগজ পড়তে শুরু করে। কাজের মাসি চা বিস্কুট টেবিলের উপর রেখে তার কাজে চলে যায়। চায়ের চুমুক দিয়ে খবরের কাগজের এক জায়গায় চোখ আটকে যায়। কয়েকবার ঘটনা পড়ার পর বাবা বাবা বলে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। 
     
    ◆ ঊর্বশীর বাবা দ্রুত বেগে ছুটে এসে বলেন :- কি হয়েছে মা? চিৎকার করছিস। 
     
    ◆ ঊর্বশী খবরের কাগজ দেখিয়ে বলে :- জমি বাড়ি সংক্রান্ত ঝামেলায় ছোট দাদা, বড়দা কে শাবল দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলেছে। পুলিশ দাদা বৌদিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেছে। 
     
    ◆ ঊর্বশীর বাবা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন :- উভয়ের পাপের সাজা পেয়েছে। তোর টাকা পয়সা নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়েছে আবার আমার দিয়ে জোর করে জমি বাড়ি লিখে নিয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমি এরকম অপদার্থ ছেলে বৌমার মুখ দেখতে চাই না।
     
    ◆ ঊর্বশী বলে :- তবুও তোমার সন্তান, একবার দেখা করে তোমার কর্তব্য করে। মোবাইল হাতে নিয়ে ধানতলা থানায় কল করে কথা বলতে শুরু করে।
     
    ◆ নদীয়া জেলার কল্যাণী অনেক ব্যস্ততম শহর, পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় মহাশয় কল্যাণীকে আধুনিক শহরের রূপান্তরিত করেন। ঊর্বশী ব্যস্ততম রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ তার চোখে পড়ে একটি বাচ্চা মেয়ে দ্রুত রাস্তা পার হচ্ছে আর পিছন দিক থেকে একটি প্রাইভেট গাড়ি ছুটে আসছে। ঊর্বশী দৌড়াতে দৌড়াতে বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে রাস্তার অপর পাশে গড়াগড়ি দিতে থাকে। হঠাৎ করে চলন্ত গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে পড়ে আর যানজটের সৃষ্টি হয়। পথচারী লোকজন ছুটে আসে। ঊর্বশীর শরীরে আঘাত লাগলো মেয়েটি অক্ষত আছে। মেয়েটির মা দ্রুত বেগে ছুটে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে।
     
    ◆ মেয়েটির মা ঊর্বশীকে প্রশংসা করে বলে :- আমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছে, আপনার দেহ থেকে রক্ত ঝরছে চলুন ডাক্তারখানায় নিয়ে যায়। 
     
    ◆ ডাক্তার-খানা থেকে বেরোনোর পর মেয়েটির মা বলে :- পাশেই আমাদের বাড়ি চলুন একটু বেরিয়ে যাবেন। ঊর্বশী আলাপ পরিচয়ের মাধ্যমে জানতে পারে উদ্ধারকারী মেয়েটির মায়ের নাম ইন্দিরা। 
     
    ◆ ঊর্বশী কে সোফায় বসতে দিয়ে, কিছু সময় পর ইন্দিরা জলখাবার নিয়ে ফিরে আসে। ইন্দিরার স্বামী মেয়ের দুর্ঘটনার কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে বাড়িতে এসে দরজা খুলে ঊর্বশী কে দেখেই থমকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। 
     
    ◆ মেয়েটি দ্রুত বেগে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে :- বাবা; এই মাসি আমাকে বাঁচিয়েছে।
     
    ◆ ইন্দিরা তার স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে বলে :- তুমি একদম চুপচাপ হয়ে গেলে কিন্তু তোমার কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে! 
     
    ◆ ঊর্বশীর উদ্দেশ্য করে অনীশ বলে :- দশ বছর পর আবার কোন মতলব নিয়ে এই বাড়িতে ঢুকেছে। আমি তোমার মুখ দেখতে চাই না। আমার সর্বস্বান্ত করে তবুও তোমার আশা মেটেনি।
     
    ◆ ইন্দিরা তার স্বামীর উদ্দেশ্য করে বলে :- তুমি এই ভদ্রমহিলাকে চেনো। 
     
    ◆ অনীশ রাগান্বিত হয়ে বলে :- আমার সর্বনাশকারীকে কখনোই ভুলতে পারি। ঊর্বশী এক সময় আমার স্ত্রী ছিল কিন্তু আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সমাজের বুকে দোষী সাব্যস্ত করে। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করে চার লাখ টাকা আমার কাছ থেকে নিয়েছে, আমার চৌদ্দ পুরুষের ভিটে বিক্রি করে সর্বস্বান্ত যাযাবর হয়েছিলাম। সুখের মুখ দেখেছি তাই খোঁজখবর নিয়ে আবার সর্বনাশ করার জন্য উদ্ধার কর্তা সেজে বাড়িতে এসেছে।
     
    ◆ ঊর্বশী চোখের জল ঝরিয়ে বলে :- আমার অপরাধের সাজা আমি বহুদিন ধরে পেয়েছি। আমার অপরাধ তুমি ক্ষমা করে দাও। দাদা বৌদি প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তোমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম কিন্তু একটি টাকাও ভোগ করতে পারেনি। দুই দাদা বৌদি সব টাকা জোর করে কেড়ে নিয়ে কিন্তু আমাকে বাড়ির কাজের মেয়ে বানিয়েছিল। নারীর জীবনে স্বামী ব্যতীত অন্য কোথাও সুখ নেই তা আমি পদে পদে উপলব্ধি করেছি। 
     
    ◆ হঠাৎ করে খোলা দরজা দিয়ে কয়েকজন পুলিশ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে, অনীশ ও ইন্দিরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে থাকে। অনীশ পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আমার বাড়িতে।
     
    ◆ একজন পুলিশ উর্বশীকে সম্মান জানিয়ে বলে :- 
    ম্যাডাম; আপনার দুর্ঘটনা ঘটেছে তা থানায় ফোন তো করে জানাবেন। তারপর অনীশের দিকে তাকিয়ে বলে, এই ম্যাডাম কে কল্যাণী থানায় কর্তব্যরত অফিসার পদে আজ যোগদান করার কথা ছিল। টহলরত পুলিশের মাধ্যমে খোঁজ নিতে নিতে এই বাড়িতে উপস্থিত হয়েছি।

    ◆ ইন্দিরা ব্যস্ত হয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে :- আপনারা বসুন, চা জল খাবারের ব্যবস্থা করি। এই ম্যাডাম আজ আমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছে।

    ◆ পুলিশ কর্মীগণ বেরিয়ে যেতে অনীশ বলে :- তাহলে তুমি পুলিশের চাকরি কর। 

    ◆ ইন্দিরা বলে :- দিদি; তাহলে দ্বিতীয় সংসারে ছেলে মেয়ে কয়জন। 

    ◆ ঊর্বশী বলে :- আমার দ্বিতীয় সংসার বলে কিছু নেই, বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও অনীশ কে আমার স্বামী বলে জানি। চাকরির ক্ষেত্রেও স্বামী অনীশ নাম ব্যবহার করেছি, তার জন্যই আজও শাঁখা সিঁদুর ব্যবহার করে চলেছি। বোন ইন্দিরা; আমি তোমার সংসার ভাঙার জন্য আসিনি। বলে দ্রুত বেগে উঠে দরজা পেরিয়ে উঠানে রাখা পুলিশ গাড়িতে উঠে বসে।

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ◆ রচনাকাল :- ৮ মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
    ◆ স্থান :- কমলেশ চক্রবর্তী বাড়ি মুড়াগাছা, বগুলা, নদীয়া।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন