এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হঠাৎ সুনামি

    Rashmita Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৪৩ বার পঠিত
  • বাইরের ঝড়বৃষ্টির থেকেও সহস্রগুণ দামাল এই হঠাৎ সুনামি। অস্ফুটে গলা থেকে কোনোমতে স্বর বার করতে পারল তিয়াসা। রা... রা... তুল...

    ততক্ষণে কাকভিজে হয়ে কোনোমতে ঘরের বাইরে অবস্হিত এই গুদামঘরটির জানলার স্ক্রুগলো তার সাথে আনা যন্ত্রের সাহায্যে সন্তর্পণে খোলার কাজটা অর্ধেকেরও বেশি শেষ করে এনেছে। অবশেষে জানলার পাল্লাটা খুলে সে উন্মাদের ন্যায়ে ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে নিল তার জীবনের একমাত্র জীয়নকাঠি... প্রাণভোমরাকে। না আজ আর কোনো ভুল সে করবে না। তিয়াসা কে আজ সে এখান থেকে বার করে সাথে নিয়ে যাবেই। তারপর যা হওয়ার হোক কোনোকিছুর পরোয়া সে করে না। দামাল ঝড়বৃষ্টির এই দস্যি রাতে রাতুলের দুইবাহুর ভিতরে কোমল কুসুমের মতো ঢুকে গিয়ে যেন নতুন করে বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পেল তিয়াসা। কেটে গেল হৃদয় তোলপাড় করা কিছু বোবা মূহুর্ত। হঠাৎ রাতুলের ভিতরে কে যেন বলে উঠল... "আর দেরী করা ঠিক নয়। এক্ষুনি পালাতে হবে। "

    বিদ্যুৎ ঝলকানির আলোয় সে দেখতে পেল, ঘরের এককোণে দেওয়ালে একটা চাবি ঝুলছে। এদিকে তিয়াসার হাতে পায়ে শিকল। দুয়ে দুয়ে চার করে নিয়ে রাতুল চাবিটাকে হস্তগত করল। তারপর শিকলের মুখ খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পেল শিকলের দুমুখ আটকানো একটি বড় তালা ঝুলছে। সে তাড়াতাড়ি করে চাবি দিয়ে তালাটা খুলে নিল। তারপর তিয়াসাকে আশ্বস্ত করল। তাকে কোনোরকম শব্দ করতে নিষেধ করল সে। তারপর তিয়াসার হাত ধরে তাকে জানলার বাইরে বার করে দিয়ে অতি সন্তর্পণে নিজে বার হয়ে এল জানলা দিয়ে। ব্যস। এবার একটু সাবধানতা অবলম্বন করে এই বাড়ির চত্বরটা পার হয়ে গেলেই জীবনের দিগন্তে শুধুই রামধনু । কিন্তু হায়!সেই রামধনুর হাতে মৃত্যুর পরোয়ানা ধরিয়ে সামনে হঠাৎ এসে দাঁড়ালেন অচিন্ত্যবাবু স্বয়ং। রাতুল আর তিয়াসা দুজনই স্তব্ধ। কারোর মুখেই কথাটি সরল না। দুজনের হাত তখনো কিন্তু একইসাথে মুষ্টিবদ্ধ। নীরবতা ভাঙলেন অচিন্ত্যবাবু নিজে। তিনি বললেন, "রাতুল... আজ আমি তোমার কাছে স্বীকার করছি আমি অপরাধী। তোমার বাবার সর্বনাশ আর সর্বস্বান্ত হওয়ার মূল কারণ আমি। আমি তোমার কাছ থেকে পালানোর জন্যই এতদূরে এসেছি দেশ ছেড়ে। আমি ভেবেছিলাম এতেই আমার সন্তানের মঙ্গল। কিন্তু আজ যখন প্রতিমূহুর্তে দেখি আমার স্ত্রী নিজের সন্তানসম আরেক মেয়ের উপরে কি অমানুষিক নির্যাতনটাই করছে। ওর এটা বোঝার ক্ষমতা নেই যে এই এতবড় পাপের থেকে ও নিজে তো বটেই... আমাদের নিজেদের সন্তানও মুক্তি পাবে না। টাকা পয়সা দিয়ে ওকে মুড়িয়ে দিলেও কোনো না কোনোভাবে এই পাপের মাশুল দিতে গিয়ে ছারখার হবে ওও। তাই আজ আর আমার কোনো ভয় নেই। তুমি আমায় যা শাস্তি দেবার দিতে পারো। শুধু এটুকু অনুরোধ... আমার যে একটা ছোট মেয়ে আছে সেটা একটু দেখো। আমি আজ তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম বাবা...

    মুখে অল্প হাসি এনে রাতুল বলল, "আসল কালপ্রিট আপনি তো নন.. আপনি তো আমার সৎ নিষ্ঠাবান বাবার শত্রুদের বেতনভুক কর্মচারী ছিলেন মাত্র। আপনি যদি এই কাজ না করতেন তাহলে এই কাজ তারা অন্য কাউকে দিয়ে করাতো। আমি তো তাদের কোনো খোঁজ আজ পর্যন্ত পাইনি আর কোনোদিন পাবও না। লোক ঠকানোটা আসলেই আপনার রক্তে নেই। যদি থাকত তাহলে আপনার সই করা সেই কাগজগু‌লো আজ পর্যন্ত আমার কাছে রয়ে যেত না। ওরা আপনাকে তাদের দাবার ঘুঁটি বানিয়ে কেটে পড়েছে আর আপনি অনুতাপে আমার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বাঁচছেন!ওই সময়টায় তো আপনি এইটাও জানতেন না যে যাকে ঠকাচ্ছেন তারও একটি শিশু সন্তান আছে। কাগজগু‌লো আজ আমার হাতে আছে বটে কিন্তু ওগুলো নিয়ে আমি সমস্ত দায় আপনার একার ওপরে চাপাতে পারব বড়জোর। আসল রাঘব বোয়ালদের শাস্তি দিতে পারব কি? আপনিই বলুন...

    দীর্ঘশ্বাস ফেলে অচিন্ত্যবাবু বললেন, "কথাগুলো তো তুমি ঠিকই বলেছ। তবে কি জানো বাবা... অন্যায় তো আমি করেছি। আজ তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। আজ তুমি যদি চাও আমায় শাস্তি দিতে পারো। আর না হলে আজ তুমি আমার কাছে যা চাও আমি আমার সাধ্যমতো তাই দিতে চাই তোমায়। "
    ---"ক্ষতিপূরণ আমি আপনার কাছে অবশ্যই চাইব। তবে টাকাপয়সা নয়। আপনার শাস্তিও আমার কাম্য নয়। আমার শুধু আপনার এই ভাগ্নীটিকে চাই। দেবেন? "
    কাতর কন্ঠে বলল রাতুল।
    নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। এ তো অতি আনন্দের কথা। আমি আজ এখনই তিয়াসার হাত তোমার হাতে তুলে দিলাম। রাতুলের হাতখানি ধরে সেটি চিৎ করে ধরে তার ওপরে তিনি রাখলেন তিয়াসার উপুড় করা হাত।
    সুখে থাকো তোমরা। আমার আশীর্বাদ সব সময় তোমাদের সাথে থাকবে। সব সময় আমাকে তোমাদের পাশে পাবে। ওকে তোমার সাথে করে নিয়ে যাও। সময়ে অসময়ে কখনো ভুলে যেও না কেমন!
    সম্মতির হাসি হাসল রাতুল। তিয়াসার মুখেও রামধনু যেন দ্বিগুণ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
    আকাশ এখন শান্ত। রাতুল আর তিয়াসার হৃদয়জোড়া তোলপাড় করা সুনামিও কেটে গিয়ে এখন সেখানকার আকাশ সেজে উঠেছে সাতটি রঙএর উজ্জ্বল রোশনাইএ। দিগন্তজোড়া নতুন করে বাঁচার উদযাপনের সুরগুলি আাবার যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ফাঁকা রাস্তার নিস্তব্ধতা রাতুল আর তিয়াসার কলকল হাসিকথায় যেন রূপকথার কলম ধরেছে। তারা এখন ব্যস্ত টেডিবিয়ার খেলনা আর আচারের বোতলগুলি রাখার জায়গা নিয়ে মতবিবাদে...

    সমাপ্ত

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন