এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আকুতি 

    Rashmita Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২০৫ বার পঠিত
  • পর্ব ৩

    সারাবাড়ি এখন লোকে লোকারণ্য। সারাদিন বিভিন্ন মানুষের শোকপ্রকাশ আর কান্নাকাটির পর্ব শেষ হওয়ার পর দাদুর দেহ সৎকার সেরে তাতান বিমর্ষ মুখ নিয়ে বিছানায় তার পরিশ্রান্ত দেহ এলিয়ে দিল। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো একটা কথা মনে আসতেই সে হঠাৎ শোয়া থেকে এক ঝটকায় লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর দাদুর শুন্য ঘরখানার দিকে দ্রুতবেগে ধাবমান হল। দাদু বেঁচে থাকতে তো সে ঘরখানায় তিনি নিজে ছাড়া দ্বিতীয় মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এখন তো আর সেসবের বালাই নেই। দাদু মৃত্যুর আগেই যে পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে সম্পত্তির সমান ভাগ বাঁটোয়ারা করে দিয়ে উইল করে দিয়ে গেছেন সেটা দাদুর মৃত্যুর পরেই তাঁর উকিল মারফৎ সে খবর পেয়ে সবাই এখন মোটামুটিভাবে আশ্বস্ত। অতএব দাদুর সৎকার করে ফেরার সাথে সাথেই সকলের মাথা থেকেই দাদুর সাথে সম্পর্কিত সমস্তরকমের চিন্তাভাবনাও একলহমায় অপ্রাস‌ঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কাজেই তাঁর ব্যবহৃত ঘরখানা নিয়ে এখন আলাদা করে আর কারোরই কোনো মাথাব্যথা নেই। সে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে থেকে শেকল তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন সে ঘরে যে ইচ্ছে ঢুকতে পারে কোনো বাধা নেই। আর তাতানের মন বলছে দাদুর মৃত্যুর সাথে সাথেই দাদু সম্পর্কিত রহস্যের কিনারা হওয়ার সম্ভবনা এখনো নিঃশেষ হয়ে যায়নি। সে ঘরে খুঁজে দেখলে এখনো কোনো চিহ্ন বা সূত্র হয়তো মিলে যাওয়া সম্ভব হলেও হতে পারে যার মাধ্যমে একটা লক্ষে পৌছাতে পারবে তাতান। সে মোবাইলের টর্চটা জ্বেলে দাদুর ঘরের সামনে পৌছে বাইরের শিকলটা খুলে দিল। দিনের বেলায় এই ঘরই একেবারে লোকে লোকারণ্য ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘরের কোনো জিনিস যে এদিক ওদিক হয়নি সে বিষয়ে নিশ্চিত তাতান। আস্তে করে আলোটা জ্বেলে নিয়ে চারপাশটা ভালো করে দেখে নিল তাতান আর ভাবতে থাকল, কিভাবে কোথা থেকে শুরু করবে। হঠাৎ বিছানার পাশের দেওয়াল ঘেষা ক্যানভাসটার দিকে নজর পড়তেই বেশ চমকে উঠল তাতান। যেদিন সে দাদুকে ক্যানভাসটা এনে দিয়েছিল তার পর দুই তিন দিন মতো স অল্পবিস্তর উঁকিঝুঁকি দিয়ে অল্পের উপর যেটুকু দেখার সু্যোগ হয়েছিল তাতে সে দেখেছিল দাদু একমনে ক্যানভাসের গায়ে ফুটিয়ে তুলছেন এক লাস্যময়ী নারীর প্রতিকৃতি। সে নারীর দুচোখে সুপ্ত আকুতির প্রচ্ছন্ন আগুন ছাইচাপা হয়ে কয়লার মতো প্রতিনিয়ত জ্বলেপুড়ে যেন খাক হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। এতখানি জীবন্ত সে মায়াবী মুখের চাপা অথচ দৃপ্ত চাহনি, যে সেই ছবি দেখলে মনে হবে বহুযুগের ওপার থেকে জ্বালাময়ী আকুতি নিয়ে ক্যানভাস ফুঁড়ে যেন এক্ষুণি তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে এই আগুন নারী। মুখ আঁকা শেষ করে যখন দাদু তার শরীরের নীচের অংশ এবং চারপাশের দৃশ্য আঁকায় মনোনিবেশ করেছিলেন সেই সময়েই তাতান খুব বিশ্রীভাবে ধরা পড়ে যায় দাদুর কাছে। এরপর থেকেই সে ঘরের দরজা তো বটেই, তার ফাঁকফোকর পর্যন্ত সবার জন্য সপাটে বন্ধ হয়ে যায়। আর তারপর থেকেই দাদুর মধ্যে জেগে উঠতে শুরু করে বিশবর্ষীয় উদ্দাম যৌবন। দাদুর ভগ্ন দুচোখে বয়সের ভার ও যাবতীয় ক্ষীণতা আর রোগক্লিষ্টতা ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হতে থাকে। দামাল গতিতে সেই দুচোখে জেগে ওঠে এক নাম না জানা তুফান। দাদুর এই পরিবর্তনের সাথে ক্যানভাসের এই প্রতিকৃতির পরিপূর্ণতা যে আসলেই একে অপরের পরিপূরক ছিল তা এখন বুঝে নিতে একটুও অসুবিধা হয় না তাতানের। কিন্তু অঙ্কে যে একটা বড় ধরণের গোলমাল রয়েছে। ক্যানভাসে আজ সে দেখতে পাচ্ছে কল্লোলিনী পাহাড়ী ঝরণা, প্রকৃতির সবুজ সৌন্দর্য বড় সুন্দরভাবে উন্মোচিত হয়েছে। শুধু সেই পাহাড়ী ঝরনার কোলে স্নানরতা সেই কুহকিনী নারীর প্রতিকৃতির জায়গাটা একেবারে ফাঁকা। সাদা। এটা কেন হল!ক্যানভাস জুড়ে থাকা প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাজোসাজো উৎসবের মধ্যমণিকেই এভাবে উধাও করে দেওয়া হল কেন!এত ধৈর্য্য আর যত্ন দিয়ে লালিত এই অনির্বাচনীয় সৃষ্টিকর্মটিকে কেন মুছে দিলেন দাদু!রহস্য আরো ঘনীভূত হতে থাকল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন