জীবনে একেকটি ক্ষণ কখনো কখনো আসে যখন সময় থমকে দাঁড়ায় ন যযৌ ন তস্থৌ, শুধু আপনি, প্রকৃতি, আর সময়। গতকাল, বিকেল পাঁচটা, নিউজিল্যাণ্ড আওতেয়ারোয়ার সময় অনুযায়ী বিকেল পাঁচটা ।
প্রশান্ত মহাসাগর, কাছাকাছি তটভূমি থেকে অন্তত পনের কিলোমিটার সমুদ্রপথে আমরা এসেছি।
প্রশান্ত মহাসাগর এখানে অন্তত তিন হাজার মিটারের মতন গভীর।
আমরা নৌকোয় ভাসছি।
আকাশে মেঘ, আলো কমে আসছে, চারপাশে ঘন কৃষ্ণবর্ণ জলে কোন শব্দ নেই।
ঢেউ উঠছে, নামছে।
তার তালে তাল মিলিয়ে আমাদের ক্ষুদ্র তরণীটি উঠছে, নামছে।
আমরা জনা ষাটেক মানুষ তরণীটির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অপেক্ষা করছি কখন তিনি দেখা দেবেন।
কারো মুখে টুঁ শব্দটি নেই।
এক বিচিত্র প্রতীক্ষা।
আমাদের নৌকোয় একপাশ দিয়ে একটি সাউদার্ন albatross তার তিন মিটার ব্যাপী ডানা দুপাশে প্রসারিত করে উড়ে গেল।
এমন সময় বহুদূরে দেখা গেল যেন গভীর সমুদ্রে ভাসমান একটি দীর্ঘকায় কাঠের ভেলার একপ্রান্ত থেকে উত্সারিত জলের ফোয়ারা!
নৌকো ধাবিত হল সেইদিকে।
দিকচক্রবালে সমুদ্র আর আকাশ মিশে গেছে, তটরেখা দেখা যায় না, দূর দিগন্তে Kaikōura ranger এর অতি ধূসর আবছায়া, আমাদের চোখ তখন নিবদ্ধ বিশাল একটি তিমি মাছের শরীরের সামনের দিক থেকে থেকে নিঁসৃত বারিধারার সমষ্টিতে ফোয়ারার দিকে, দেখতে হলে দূর থেকে, পিছন থেকে দেখাই দস্তুর, কাছাকাছি তাঁর পাখনার আর শরীরের ঝাপটে এ তরণী এবং আমাদের সলিল সমাধি অনিবার্য।
এমন সময়ে স্কিপারের ঘোষণা, চোখ রাখুন, এইবারে তিনি লেজ উপরে উঠিয়ে সমুদ্রের গভীরে ডুব দেবেন।
চোখের পলকে তিরিশ সেকেণ্ড। দুপাশে পেখম মেলা হাতের মতন লেজের পাখনা মেলে তিনি সমুদ্রের গভীরে ডুব দিলেন।
সে এক অপার্থিব অভীজ্ঞতা।