নুন ভাত এবং প্রজাপতি এবং একটি চড়ুইভাতি/ বনভোজনের রূপকথা ২০১৬ থেকে মানিকতলা খালপাড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোর কিশোরীদের নিয়ে একটা পাঠশালা চালাই। ২০ জন নিয়ে শুরু করে আজ ২৩১ জন।
বহুদিন ধরে ভাষা ও চেতনা পাঠশালার বাচ্চাদের আব্দার: ঘুরতে নিয়ে চলো।
কোথায় কীভাবে যাওয়া যায়?
এতো ছোট আছে দলে!
শেষে ঠিক হল চড়ুইভাতি।
কিন্তু কোথায়? এবং কীভাবে? এ
কটা ছোট পার্ক দেখলাম। কাছাকাছি। মানিকতলার। পরিকল্পনা ছিল সমিতির বিশ বছর পার হয়ে একুশ চলছে। যাঁরা আমাদের সঙ্গে এত বছর আছেন, তাঁদের বলি। একসঙ্গে খাওয়া আড্ডা গান কবিতা। বললাম অনেককে। সমর নাগদা। সমরদা শিল্পপতি শুধু নয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষ। নানা বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা। দারুণ কথা বলেন। শুনে বললেন, কোথায় করবে? বললাম, মানিকতলার কাছে একটা পার্কে। বললেন, আরে চলো আমার বাগানে। বলেই মেনু ঠিক করতে শুরু করে দিলেন। মেনু শুনে আমার তো মাথায় হাত। এতো লুচি তরকারি বোঁদে অঢেল চা, সরু চালের ভাত, মটরশুঁটি মুগ্ধ ডাল, মাছের কালিয়া, খাসির মাংস, দই, নলেন গুড়ের রসগোল্লা এবং মাইক থাকবে । গানের আসর। কবিতার ভিয়েন। খাদ্য তালিকা শুনে আমার মাথায় হাত।
সমর দা প্রাজ্ঞ মানুষ। না তাকিয়েই বললেন, তোমরা আমার অতিথি।
যা বলেছিলাম, সংখ্যা গেল তাঁকে ছাপিয়ে।
আবার চিন্তা। বাগানে পৌঁছাতেই অভ্যর্থনা সমর দা র বাগানের ২৪ বছরের সঙ্গী ম্যানেজার গৌতমদা রায়ের। আমাদের দেখে বললেন, ভাববেন না, স্যার সব সময় ২৫ জনের আয়োজন বাড়তি করে রাখেন।
এত সুন্দর বাগান আমি বা আমরা কেউ কল্পনাও করিনি।
আমার শরীর ছিল বেশ খারাপ। পৈটিক সমস্যা। একবার রাস্তা থেকে ফিরেও গেছি।
কিন্তু বাগান সমাদর ও আয়োজন অভ্যর্থনায় রোগ পথ হারালো। তিনশো গোলাপ। কহুতরি আম। কেয়া গাছের শিল্পিত ভাস্কর্য। 'কৃষ্ণকান্তের উইল' চলচ্চিত্রের রোহিণী স্বস্তিকা ডুবে ছিল যে বাঁধানো পুকুরে তার পাশে পাহারা বসাতে হল কচি কাঁচাদের ঠেকাতে। বাংলাদেশের
রাজশাহী থেকে আসা চিহ্ন পত্রিকার মাসিক দেখি পুকুরে রাখা শেখান শালতি/ নৌকায় উঠে আর নামতে পারে না। মৃদু বকুনি শুনে বলে, আমি নদীর দ্যাশের মানুষ না!
শখ নয় সাধক বাউল বিবেক খ্যাপার সঙ্গে দার্শনিক আলোচনায় অবাক করে দিলেন সমরদা। চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে-- চার চক্রের কথা এল। এল শুক্র রজ পুরীষ ভক্ষণের কথা। বিবেকানন্দর সাধনা প্রসঙ্গ। ভবা পাগলার শিষ্যা সাধিকা তুলসী সমরদা র কথার পিঠে গুনগুনিয়ে উঠলেন। গুনগুন জোরালো হল, শ্যামলী বাউলানির একতারায়। আমাদের দাদা বৌদি প্রবীর ও সুব্রতা ঘোষ রায় এর কবিতার আমি ঘোর ভক্ত। তাঁরাও যোগ দিলেন আলোচনায়। বাউল গানের পরে পড়া হল কবিতা। সমরদাকে #মন_উড়ালের_মেয়ে দিতেই তিনি পড়তে শুরু করলেন, আবৃত্তি করে। ভরাট গলা। যদিও জ্বর আর ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। জ্বর নিয়েই এসেছিলেন।
ঘুরিয়ে দেখালেন বাগান।
তাঁর মাঝে প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব #তীর্থঙ্কর চন্দ ৫১ শিশু কিশোর কিশোরীদের নিয়ে শুরু করে দিয়েছেন নাটকের খেলা। সেখানে এল একটি সংলাপ: এই পটলা।
#এই_পটলা ঘুরতে লাগল মুখে মুখে ।
পাঠশালার বড়দি মেজদি সেজদি এবং স্যার যথাক্রমে ব্যস্ত ছিল ত্রিশ বিঘার সহস্র ফুল ফলের বাগানে বাচ্চাদের ওড়াউড়ি থামাতে।
তীর্থঙ্করদা বশ মানালেন তাঁদের।
বিধাননগর সরকারি কলেজের ছাত্র সঞ্জু এসেছিলেন বন্ধুদের নিয়ে, উদয়নের ভাষা ও চেতনা সাথীরা ছিল, ছিলেন তপন কাইত, বিজ্ঞান আন্দোলন কর্মী শশাঙ্ক দাস বৈরাগ্য।
দুপুরে খাওয়া।
তদারকি করলেন সমরদা । অসুস্থ শরীরেই। একজন বাচ্চা শুধু ভাত নিয়ে বসে আছে।
সমরদা বললেন, কিছু নাও। খাবে কী দিয়ে?
সে বলল, রোজ যা দিয়ে খাই।
--কী দিয়ে খাও?
--নুন দিয়ে।
জল এসে গেল চোখে।
সমরদা মাছ মাংস দই মিষ্টি দিয়ে খাওয়ালেন তাঁকে।
আরেকজন ডাল নেবে না কিছুতেই।
ডাল তো বাড়িতে কোন দিন খায় না।
বাচ্চাদের একটুও ফেরার ইচ্ছে নেই বিকেলে।
এমন জীবন তাঁদের জীবন প্রথম।
একজন বললেন, আসছে বছর আবার হবে তো।
হবে।
সমরদা সকালে বললেন, সামনের বছর দুশো বাচ্চা নিয়ে এসো।
পৃথিবী আজো প্রজাপতির ছোঁয়া পায় এইসব সমরদা র জন্য।
বি. দ্র. -- এটা প্রথম চড়ুইভাতি।। ২০১৮-র স্মৃতি
পুনশ্চ: এবার ১১ ফেব্রুয়ারি।
আমাদের প্রতিবারের কর্মসূচি
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রবিবার শীতের সপ্তমতম #চড়ুইভাতি।।
নিউ টাউনের কাছে রাজারহাট বিষ্ণুপুরে সমর নাগের সৌজন্যে তাঁর বাগান বাড়িতে।।
ভাষা ও চেতনা সমিতি পাঠশালার শিশু ও কিশোর কিশোরী সঙ্গে অভিভাবক অভিভাবিকা ও শুভার্থী।
তাঁদের ও বয়স্কদের ক্রীড়াঅনুষ্ঠান।
গান নাচ কবিতা আড্ডা। সাঙ্গীতিক কেদারা ( মিউজিক্যাল চেয়ার)
খাওয়া: গরমাগরম ফুলকো লুচি, ধনে পাতা টমেটো কালোজিরে আলুর রসস্থ ছক্কা,
বোঁদে,
লাল চা।
দুপুরে:সোনা মুগের ডাল, ছ্যাঁচড়া, মাছের কালিয়া, কষা কষা খাসির মাংস, রাজারহাটের মনপাগল দই ও নলেন গুড়ের রসগোল্লা।
খেলা: সাঙ্গীতিক কেদারা (মিউজিক্যাল চেয়ার), চু কিৎ কিৎ, লুডো, দাবা, চাইনিজ চেকার এবং নাটক।।
কবিতাপাঠ গান নাচ।।
ভাষা ও চেতনা পাঠশালা
ভাষা ও চেতনা সমিতি
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।