এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কে জানে ক'ঘণ্টা পাবে রে জীবনটা!

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ | ৩৫৫ বার পঠিত
  • করোনা আবহের আগেও কি জানতেন, "আপনার জীবন ক'ঘণ্টার?" কোনোকালেই মানুষ জানতে পারে না তার আয়ু বা জীবনকাল কতটুকু? দু চারঘন্টা বাদে কি ঘটে যেতে পারে তার আন্দাজই করতে পারি না... তো পরেরদিন কি হবে? দেখবেন বহু মানুষ আছেন, আগামী বিশ বছর বাদে বুড়ো বয়েসে কিভাবে তিনি বাঁচবেন? তার পরিকল্পনা করে, আজকে মাথা খুঁড়ে চলেছেন। আমি এমন বহু মানুষকে জানি যাঁরা জীবনে কখনও সমুদ্র পাহাড় এসব কিস্যু দেখেন নি। প্রকৃতি সুন্দর এটা বোঝবার মত মন তাঁদের অবশ্যই আছে। কাছেপিঠে স্বল্প খরচে ঘুরে বেড়িয়ে আসার সামর্থ্য যে একেবারে নেই, তাও কিন্তু নয়। কিন্তু ওঁরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। তাই আগামীর কথা ভেবে আজকের দিনগুলো ক্রমাগত দিনগত পাপক্ষয় করেই কাটিয়ে চলেছেন। এমন মানুষও অনেক পাবেন, এসির ইলেকট্রিক বিল দেবার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সিলিং ফ্যানের হাওয়ায় সারা রাত জেগে ভোরবেলায় ঘুমান। কারণ ভোরবেলায় প্রকৃতি দেবী বিনেপয়সায় একটু ঠান্ডা বিতরণ করেন। এঁরা স্বপ্ন দেখলেও আধ কাঁচা দেখেন। পাকা স্বপ্নে যদি খরচ হয়ে যায়, সেই ভেবে। 

    আমার আপনার জীবনের কোনো গ্যারান্টি আছে? কোনোকালেই তা ছিল না। আজও নেই। করোনা এসে তো পথ আরো সুগম করে দিয়েছে। তিলতিল করে যা জমিয়ে ছিলেন সেটা হড় হড় করে টেনে নেবে বলে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো দোকান খুলে রেখেছে। আপনার 'ভয়'ই বেসরকারি হাসপাতালের মূলধন। আপনার কষ্টার্জিত টাকা কিভাবে ওদের উদরস্থ করতে হয় সেই বিদ্যে ওদের খুব ভাল জানা আছে। কিছু বছর হল মেডিক্লেম নামক এক বীমা দপদপিয়ে ব্যবসা করছে। কারণ একটাই। আপনার মরে যাওয়ার কিংবা রোগগ্রস্ত হওয়ার ভয়। সেই ভয়কে কেন্দ্র করে বীমা কোম্পানিগুলো মুঠো মুঠো টাকা আপনার থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। আদ্যন্ত একটি প্রফিট মেকিং সংস্থা হল যাবতীয় বীমা কোম্পানিগুলো। সরকারি জীবনবীমা নিগমের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ জানলে মাথা ঘুরে যাবে। সেগুলো কার পয়সায় হয়েছে? সব আমার আপনার থেকে নেওয়া... 

    আত্মা চেয়েছিল একটু খাসির ঝোল। অজুহাত দেখিয়ে আনেননি। গিন্নি বলেছিল, "চলো না এবার পুরীতে গিয়ে চারটে দিন কাটিয়ে আসি।" খরচের ভয়ে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। সেই তিলতিল করে বাঁচানো সম্পদ এক সপ্তাহের মধ্যে নার্সিং হোমের মালিকের ঝোলায় চলে গেল। আপনার মনে স্বান্তনার জন্ম হল, যাক না খেয়ে না দেয়ে টাকা কটা গুছিয়ে রেখেছিলুম বলে আজ করোনার কবল থেকে ফিরিয়ে আনতে পারলুম। এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় কত খরচ আর কিভাবে মানুষকে লুটছে... সেটা নিয়ে অনেক শব্দ খরচ করা যায়। শুধু এইটুকুই বলতে চাই, আপনার জীবন ঈশ্বরের দান। কেউ চাইলেই তা শেষ হবার নয়। এক উনি চাইলে, আপনি ঘরে বসেও অক্কা পাবেন। উনি না চাইলে চলন্ত রেলের নিচ থেকে উঠে বসবেন। কত টাকা আপনি গচ্ছিত রাখতে পেরেছেন? একজন মধ্যবিত্ত পরিবারে ক্লায় ক্লেশে দু পাঁচ লক্ষ টাকা হয়ত পারে। কিন্তু ভেবে দেখুন আজকের দুর্মূল্যের বাজারে অনেক কষ্ট সহ্য করে, শখের মুখে আগুন জ্বেলে যে টাকা কটা রেখেছিলেন। সেটা বেরিয়ে যেতে পাঁচ মিনিট লাগবে না। জীবন বড় বিচিত্র। আপনার টাকা থাকলে, বৃদ্ধ বয়েসে অবশ্যই কিছুটা হলেও মূল্য পাবেন। কিন্তু সেই টাকা রোগে পড়ে বেরিয়ে গেলে? আপনি নিঃস্ব। এক কপর্দকও মূল্য রইল না। মানুষ ভাবে এক। আর ঘটে এক। 

    এরকমটি তো অনেকেই শুনেছেন বা জেনেছেন, অমুক মানুষটি সারাটা জীবন কষ্টার্জিত অর্থ বৃদ্ধ বয়েসের জন্যে সঞ্চয় করে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ঈশ্বরের অসীম কৃপায় বৃদ্ধ-ই হলেন না। বৃদ্ধ বয়েসের দুঃখ কষ্ট ঈশ্বর তাঁকে পেতেই দিলেন না। বৃদ্ধ হওয়ার আগেই তিনি পরপারে চলে গেলেন। তাঁর সেই কষ্টার্জিত ধন, যা তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ভোগ করেননি। কারণ তিনি চাইতেন, যৌবন যাহোক তাহোক করে কেটে যাবে। আসল যুদ্ধ শুরু তো বৃদ্ধ বয়সে। তাই বৃদ্ধ বয়সে যেন পর মুখাপেক্ষী তাঁকে না থাকতে হয় । শরীরের জোর যখন জিরো, তখনও যেন হিরো হয়েই দিনযাপন করে যেতে পারেন। কিন্তু ওই উপরে বসে থাকা সকলের মালিক কি চাইছেন! আমরা কেউই তা জানিনা। সে কারণে আপনার সঞ্চিত অর্থ আপনার বৃদ্ধ বয়সে কাজে আসবেই এমন নিশ্চয়তা কিন্তু কেউ কোথাও দিতে পারবে না। আবার এমন মানুষকেও আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, যাঁর সারা জীবনে সঞ্চয় বলতে কিচ্ছু ছিল না। আগেকার যুগে ছোটবেলায় চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন। তারপর যা রোজগার করেছেন তা-ই খরচ করে গেছেন। দুই পুত্র সন্তানকে সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ করেছেন। আর স্বজন পরিজনের দুঃখ দুর্দশার কথা কানে শুনলেই নিজের সাধ্যানুযায়ী সেই সমস্যা নিরসন করার চেষ্টা করেছেন। মনেপ্রাণে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ছিলেন। তাই চাকরি থেকে অবসর নেবার সময়ে জানতে পারি ওঁর ভাঁড়ে মা ভবানী। ব্যক্তিগতভাবে মানুষটির অর্থনৈতিক হাল জেনে সেই সময়ে খুব কাতর হয়ে পড়েছিলাম। কারণ বিপদাপদ সকলের জীবনে আসতে পারে। তার নিজস্ব সাপোর্ট সিস্টেম প্রত্যেকেরই থাকা উচিত। অথচ এই মানুষটি সেসবের কোনো ধারই ধারেননি। বলতে গেলে ঝুলিতে যৎসামান্য কিছু খুচরো আনা আধুলি সম্বল করে তিনি তাঁর অবসর যাত্রা শুরু করলেন। ২০০২ সালে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। ২০১৭ সালে মাত্র একমাসের বার্ধক্যজনিত রোগের কারণে বিন্দাস পরলোক ধামে গমন করলেন। কাউকে একটুও না ভুগিয়ে, এবং নিজেও দীর্ঘকাল রোগশয্যায় না ভুগে। যতদিন বেঁচে ছিলেন সুন্দর জীবন অতিবাহিত করে গিয়েছিলেন। দুই এক বছর অন্তর ছোটখাট ট্যুরে বেড়াতেও গেছেন। খেতে ও খাওয়াতে ভালবাসতেন বলে শেষের একমাস আগে পর্য্যন্ত ভাল ভাল খাওয়াদাওয়ার প্ল্যানিং ও তা রান্না করতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে ভাল ভাবে বাঁচতে তাঁর কিন্তু অগাধ পয়সার প্রয়োজন ছিল না। তাঁর যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু ঈশ্বর তাঁকে জুগিয়ে যেতেন।

    আদতে আমরা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের হাতে বন্দী। সে আপনি মানুন আর না মানুন। উনি আপনার জন্য যা ভেবে রেখেছেন, তার বাইরে আপনি শত চেষ্টা করলেও ঘটবে না। কপর্দকহীন হয়েও কেউ রাজার হালে নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করে যেতে পারেন। আবার কোনো কোটিপতি, অবস্থার ফেরে অভিশপ্ত দিনযাপন করে শেষ হতে পারেন। তাই একটি ছোট্ট আবেদন, কারোর ভাল না করতে পারুন। কারোর কোনো ক্ষতি হোক এমনটা মনের মধ্যে চিন্তাতেও আনবেন না। বাকিটুকু তাঁর হাতে ছেড়ে দিন। 

    কে জানে ক'ঘন্টা ! পাবে রে জীবনটা ! যেটুকু চোখে পড়ে 
    মনে ধরে নিয়ে যা... 

    অর্থই অনর্থম। আনন্দম।
    ____________________
    ©রজত দাস 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 2406:7400:63:9ef1::***:*** | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:৪৮526829
  • জেনে ভালো লাগল যে একজন মনেপ্রাণে বামপন্থিকে ঈশ্বর সমস্ত কিছু জুগিয়ে যেতেন।
    একটি চমৎকার হাহাকারবাদি লেখা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন