এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চট্টগ্রাম ভ্রমণ

    Santosh Kumar Pal লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ নভেম্বর ২০২৩ | ৩৯৬ বার পঠিত
  • চট্টগ্রামের পথে পথে (শেষাংশ)

    বাংলাদেশ বা চট্টগ্রাম গেলে কক্সবাজারে একবার না গেলে হয়! আমরা এপার বাংলার ঘটিবাটিরা কক্সবাজারের সঙ্গে পরিচিত অন্যভাবে এবং অনেক আগে থেকেই। আকাশবাণীর সেই সংবাদ পাঠক দেবদুলাল বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়কে মনে পড়ে? শেষ পাতে সেই আবহাওয়ার খবর: "বঙ্গোপসাগরে উত্থিত ঘূর্ণিঝড় এখন সুন্দরবন অতিক্রম করে কক্সবাজারের দিকে..."  স্বার্থপরের মতো ভাবতাম, যাক, আমাদের তো ফাঁড়া কাটলো! এ প্রসঙ্গে পিটার সিঙ্গার ও চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের কথা তোলা খুব একটা অবান্তর হবে না। স্থানিক দূরত্ব মোরাল কনসার্নের ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করার কথা নয়। ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনে প্রসূনদের বাড়িঘর উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া, আর কক্সবাজারের রাশেদের বাড়ি-ঘর ধূলিস‍্যাৎ হয়ে যাওয়া--এই দুটি ঘটনায় নৈতিক অনুভব আলাদা হবে কেন? অথচ আমরা ৯৯% মানুষ এভাবেই ভাবি। এপার বাংলার চন্দ্রবিন্দু ব‍্যাণ্ডের খ‍্যাতনামা গীতিকার ও গায়ক চন্দ্রিল একজন সুবক্তাও বটেন। উনি একটি টক শো বলছিলেন, আমরা সাধারণ মানুষেরা যদি কাছে-দূরে, সামনে- পিছনের সব দুর্ঘটনাতে সমানভাবে দুঃখিত হই, সত্যিসত্যিই কান্নাকাটি শুরু করে দিই, তাহলে তো জগত অচল হয়ে যায়! কাছের যে কয়েকজনকে বাঁচাতে পারতাম তাও কি তখন করে উঠৈ পারবো? হক কথা! (অবশ্য পিটার সিঙ্গার যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, ইউ এন ও-র লজিস্টিকসকে মাথায় রেখে কথা বলছেন, যে প্রসঙ্গে "ওয়ান মোরাল কমিউনিটি"-র কথা বলছেন সেখানে বিষয়টি অবশ্যই একটু আলাদা।) যাই হোক, এটুকু বোধ হয় বলা যায়, একেবারে একান্ত সমানুভূতি-হীন অসংবেদনশীল হয়ে থাকা কোন ক্ষেত্রেই কাম‍্য নয়। মনুষ‍্য প্রজাতির সদস্য হিসেবে, অন্তত চক্ষুলজ্জার খাতিরে, ঐ কঠিন অবস্থায় বলা যায় না: এমন তো কতই হয়! আমাকে বোর করো না!  

    যাই হোক, শিবের গীত ছেড়ে এবার প্রসঙ্গে আসি। ১৬ অক্টোবর কনফারেন্সের সমাপ্তিলগ্নে মান্নান স‍্যারকে যখন আমার আর তপনের মনোবাঞ্ছার কথা জানাই তখনই তিনি ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, কক্সবাজারের দিকে বাড়ি এমন কে আছো? এক ছাত্র রাশেদ জানায় তাঁর বাড়ি ওদিকেই। ব‍্যস! উনি রাশেদকে বলে দিলেন, স‍্যারদের যাওয়া ও ঘোরার সব ব‍্যবস্থা করো! স‍্যার তো বলেই খালাস! রাশেদর পরের দিনই (যেদিন আমরা যাব ভাবছি) ইন্টারন‍্যাল পরীক্ষা ভাইভা। কিন্তু বলেছি না, বাঙালদের আতিথেয়তায় খামতি থাকে না! রাশেদ সুন্দর একটা ব‍্যবস্থা করল, স‍্যার, কাল সকালে আপনাদের জিলা পরিষদের রেস্টরুম থেকে নিয়ে ঠিক বাসে তুলে দেবো। আর কক্সবাজারে আমার বন্ধু আপনারা যেমন চাইবেন ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবে! যেমন কথা তেমন কাজ! সকালে স্বাধীন ট্রাভেলস একটি এয়ার কণ্ডিশন বাসে তুলে দিল, সিটপিছু ৬০০ টাকা, ননস্টপ। ১৫২ কিলোমিটার রাস্তা পেরুতে ৪ ঘণ্টার সময় নিলো।  রাস্তা খুব খারাপ নয়, অবশ্য দু' লেনের। তবে নন-স্টপ বললেও মাঝে মধ্যে দু'চার জন ওঠানামা করেছে বৈকি। বাস যখন কক্সবাজারের কলাতলীতে নামিয়ে দিল তখনই ফোনে যোগাযোগ হয়ে গেল রাশেদর বন্ধুর সঙ্গে। প্রথমমেই সামনের মেইন বীচে নিয়ে গেল আমাদের। বীচের এ দিকটার নাম বোধ হয় লাবণী সৈকত।

    কয়েকটি কথা আগেই বলে নেওয়া যাক।কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার সদর দপ্তরও।এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালিময় সৈকত, দৈর্ঘ‍্যে যা ১২০ কি.মি.। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন। অদূর ভবিষ্যতে যারা কক্সবাজার ভ্রমনে যাবেন তাদের জন্য সুখবর: চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অবধি রেললাইন স্থাপনের প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে। আশা করা যাচ্ছে এ বছর সংসদীয় নির্বাচনের আগেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

    আমরা সমুদ্র সৈকতে ২০/২২ কিলোমিটার দর্শন করেছি, কিছুটা হেঁটে, আর অনেকটা অটোতে। প্রাণ খুলে না, স্নান করেছি ভয়ে ভয়ে! পৈ পৈ করে উনি বলে দিয়েছেন, একদম জলে নামবে না! যদি নামো, একদম কাছাকাছি! কিন্তু সমুদ্রের ঢেউ যে আমাকে টানে! অজয়-তীরবর্তী গ্রামের ছেলে বলে জলকে ততটা ভয় পাই না যতটা ওনাকে পাই! (আসলে যার খাই, যার পড়ি তাকে তো মানতেই হয়, তাই না!) বড় ঢেউ সামনে এলে আমি ঠিক কাটিয়ে উঠতে পারি। তবে একটা ঢেউ এর তাল গুনতে কালক্ষেপ করায় কানে একটু জল ঢুকেই যায়।  (অদৃশ্য) ওনার ভয়ে  তাড়াতাড়ি উঠে এসে তপনের পাশে ভাড়া করা শেডের তলায় বসি। ডীন আর্টস তপনের আবার অনলাইনে প্রোজেক্ট ফেলো সিলেকশনের ইন্টারভিউ চলছে সী বীচে বসেই! আমি বসে বসে ঢেউ গুনছি,পর্যটকের বালুকাবেলায় ঝিনুক খোঁজা দেখছি। ঢেউ এর পর ঢেউ এর আঘাত সহ‍্য করে স্নান করেই যাচ্ছে কত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর।  ঘণ্টাখানেক এখানে কাটিয়ে রাস্তার হোটেলে একটু মাছ-ভাত খেয়ে নিয়েই আমরা সি এন জি ভাড়া করে আট-দশ কিমি দূরে গিয়ে সমুদ্র উপকূলে প্রাকৃতিক রিরাট বিরাট সাজানো পাথর সারি দেখতে গেছি। তারই উলটো দিকে  উঁচু সুদৃশ্য পাহাড়ী উপত্যকা। এ এক সুন্দর মেলবন্ধন।

    শুনলাম এখানে এক বড়ো মাপের, প্রায় ৪০ লাখ, বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী আছে। তাদের গ্রামগুলিতে হস্তশিল্প দেখার মতো। তাদের জীবন যাপন দেখতে ইচ্ছে করে, বুঝতে ইচ্ছে করে। কিন্তু শুধু সাধ করলেই তো হবে না, একটু সময় দিতে হবে তো!  এখানে আছে আদ‍্যামেদা খ‍্যায়াং নামে মনাস্ট্রি, বড় পবিত্র স্থান এটি বৌদ্ধদের কাছে। না, যাওয়া হয় নি মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরেও। আবার, টেকনাফ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সৈকতের একটি অংশ। শুনলাম, জাহাজযোগে দুই- আড়াই ঘন্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফ হতে সেন্ট মার্টিনে পৌঁছানো যায়। মায়ানমারের অতি সন্নিকটে এই দ্বীপে একদিন থেকে থাকতে পারলে কতই না ভালো হতো! এখানে আছে হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গবেষণা ও শিক্ষণ, পর্যটন ও বিনোদন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। না, একদিনের ট‍্যুরে এসব কিছু হওয়ার নয়। অন্তত দুটি রাত্রি এখানে আর এক রাত্রি সেন্ট মার্টিনের হোটেলে থাকলে তবেই সম্ভব। দেখি, কক্সসাহেব যদি আবার কখনও টানে!

    নতুন জায়গা, তাই বেশি দেরি না করে চারটে নাগাদ ফিরতি বাসে উঠে পড়লাম। লাইন দিয়ে অনেকগুলি চট্টগ্রাম-গমনেচ্ছু বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে পর পর। সাধারণত আমরা ভাবি, সামনের দিকে থাকা বাসই তো আগে যাবে। আবার দুশো দুশো চারশো টাকা কম লাগছে দেখে, রোদে আর অন্য বাস খোঁজাখুঁজি না করে সৌদিয়া ট্রাভেলস এই নন-এসি বাসে চেপে বসলাম। কণ্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলে বলেন,হাঁ, আটটার মধ্যেই চট্টগ্রাম পৌঁছে যাবে! কিন্তু বাসের অস্বাভাবিক শ্লথগতি দেখে প্রথম থেকেই একটা অস্বস্তি, হালকা উদ্বেগ।  ১৫ কিমি রাস্তা পেরুতে যখন সোয়া একঘন্টা লাগিয়ে দিল তখন নিজেদেরকে প্রতারিত মনে হচ্ছিল। দু'পা এগিয়ে হঠাৎ একবারে স্টার্ট বন্ধ করে উনি দাঁড়িয়ে পড়লেন এক সুদৃশ্য মসজিদের সামনে। ড্রাইভার বাদে কণ্ডাক্টর সহ প্রায় অর্ধেক যাত্রী বাস থেকে নেমে সামনের অজুখানায় শুদ্ধ হয়ে মসজিদে নামাজে যোগ দিলেন। এবার একবারে নেমেই পড়লাম আমি আর তপন, যদিও একে একে। বাসের সামনে দাঁড়িয়ে দেখি, ছোট্ট করে লেখাই আছে "নামাজের বিরতি সহ"। এবারে দেড় ঘন্টায় পনেরো কিমির অঙ্কটা মিললো। কিছু করার নেই, যস্মিন দেশে যদাচার:। আমাদের ভয় হচ্ছে, রাত নয়টা-দশটা পেরিয়ে গেলে বাসস্টাণ্ড কর্ণফুলি ব্রিজ থেকে জিলা পরিষদের বাসায় কীভাবে পৌঁছাব! যদি সি এন জি অটো না পাই! যাই হোক, সাড়ে ন'টায় নামালো ব্রিজে, যে ঘটনাটা ঘটার কথা ছিল পৌনে আট থেকে আটটার মধ্যে। রাশেদ ভাইয়ের কথার মানে তখন ঠেকে শিখলাম। ও বলেছিলো, স‍্যার, এই স্বাধীন ট্রাভেলসের বাসে ফিরবেন কিন্তু!

    আমাদের কথা উপসংহারের পথে। শেষ করার আগে দুটি কথা। এক, ইলিশ। আমাদের এদিকে অধিকাংশই ভাবেন বাংলাদেশ মানেই ইলিশ। ছাত্র ছাত্রীরা কেবলই জানতে চান, ইলিশ খেয়েছি কি না! কিন্তু এখানে এসে মনে হ'ল,  বিশেষ হোটেল-রেস্টুরেন্টে না গেলে এত মহার্ঘ‍্য আইটেম  চাইলেই পাওয়া যাবে না যখন তখন। আবার সিজিনের প্রশ্ন আছে, এখন ইলিশের সিজিন নয় বোধ হয়। চট্টগ্রামের জিলা পরিষদের আশপাশে খুঁজেছি, কক্সবাজারে খুঁজেছি (অবশ্য রাস্তার ধারে সাধারণ হোটেলে) পাই নি। আমার মনে হল, যেখানে কম পয়সায় মাংস পাওয়া যায়, এতো রেস্তো খরচ করে ইলিশ খাওয়ার শৌখিনতা দেখানো এখানকার সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

    দ্বিতীয় কথাটি আমার রোহিঙ্গা শরণর্থীদের নিয়ে। কক্সবাজারে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে রাশেদের বন্ধু আমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলল, পার্শ ও ব‍্যাগের একটু খেয়াল রাখবেন! অনাহার-অর্ধাহারক্লিষ্ট রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। ওদের ক‍্যাম্প ৪০ কিলোমিটারের মধ্যেই। আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কাউকেই কিছু খুইয়ে কখনও দেশছাড়া হতে হয় নি। কিন্তু আমার একাধিক সহকর্মী বন্ধুদের পরিবারকে পদ্মা পেরিয়ে এপার বাংলায় একাধিক শরণার্থী শিবিরে বহুদিন কাটাতে হয়েছে। তাদের কারোর কারোর গভীর গোপন ব‍্যথার খবর আমি রাখি। কী অভিমান, ক্ষোভ ময়মনসিংহের দাদার! আবার এই অষ্টমীর সন্ধ্যায় এক সহকর্মী, যার দাদুরা সাভারের 'স্টাম্পম‍্যান' ছিলেন, আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়লেন আমার বাংলাদেশ ভ্রমণের প্রসঙ্গ উঠতেই! কারোর করোর রক্তক্ষরণ যে এখনো বন্ধ হয় নি! অনেকেই বলবেন, এসব নিয়েই তো দেশভাগ, হিন্দুরা ভারতে চলে যাবে! নির্মম হলেও ইতিহাস তো আমরা খণ্ডাতে পারি না! যেভাবে বলা হয়, ব‍্যাপারটি তত সহজ নয়। বিপরীতে, এখনো বাংলাদেশই থাকেন, পুরুষানুক্রমে পদ্মা পারের নাগরিক এরকম দু'টি পরিবারে সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তারা পশ্চিম বাংলায় থাকার মতো ব‍্যবস্থা করে ফেলেছে। কিন্তু কলকাতায় আসে, মাসখানেক থেকে আবার চট্টগ্রামে ফিরে যায়। নতুন জায়গায় কোথায় কী করবে বুঝতে পারে না। আসলে বড় মাপের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা ছাড়া ভিন্ন দেশে সার্থক জীবন যাপন করা কি আদৌ সম্ভব? বাংলাদেশ উদ্বাস্তু তৈরি (ক্ষমা করবেন এই শব্দটি ব‍্যবহার করার জন‍্য) করেছে অগণিত। তারা এখন কেমন শরণার্থীদের সেবা করছে তা বোঝার জন্যই রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ।

    উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৬,৫৫,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ মুহূর্তে কক্সবাজারে সব মিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলিতে সাম্প্রতিক জনসংখ্যার উপচে পড়া ভিড় তার পরিকাঠামোয় সাংঘাতিক চাপ সৃষ্টি করেছে।  শরণার্থীদের পরিষেবা, শিক্ষা, খাদ্য, পরিষ্কার পানীয় জল এবং নূ্ন‍্যতম  স্যানিটেশনের অভাব সৃষ্টি হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রোগ সংক্রমণে তারা এখনো একবারে অসহায়, প্রায় অর্থহীন পশ্বোপম জীবনযাপন করছে।  ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশন, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, এবং সামাজিক সুরক্ষা সহ বিভিন্ন খাতে আর্থিক সহায়তায় প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছে। তবে ১ মার্চ ২০১৯ এ বাংলাদেশ ঘোষণা করেছে যে তারা আর নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গ্রহণ করবে না!

    আমার তেমন কিছু আর বলার নেই। আমার  প্রশ্নঃ শুধু ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ, বা দেশপরিচালনা কি কখনও মানুষের ইহজাগতিক দু:খকষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারে? (পরাজাগতিক মুক্তির কথা অনেক বলেন। কিন্তু আমার কাছে যুক্তিগ্রাহ‍্য তথ্যপ্রমাণ কিছু নেই যার ভিত্তিতে কিছু বলতে পারি!) আবার শুনি, ধর্ম মানুষকে কাছে টানে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা বা গাজা-সমস্যায় এমন বৈপরীত্য কেন? 

    যাই হোক, অনেক দু:খ বেদনা ক্ষোভ সত্ত্বেও ক্ষণকাল পরেই আমার মানব সত্তা, আমার বাঙালি সত্তা গভীর গহীনে গুনগুন করে উঠে:

    গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা।
    ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা-
    মেঘনা-যমুনা।
    একই আকাশ, একই বাতাস-
    এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস।
    দোয়েল-কোয়েল পাখির ঠোঁটে-
    দোয়েল-কোয়েল পাখির ঠোঁটে একই মূর্ছনা।
    একই মূর্ছনা।
    ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা-
    মেঘনা-যমুনা।
    গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা।

    এপার-ওপার কোনপারে জানিনা
    ও আমি সব খানেতে আছি।
    গাঙের জলে ভাসিয়ে ডেঙা
    ও আমি পদ্মাতে হই মাঝি।
    এপার-ওপার কোনপারে জানিনা-
    শঙ্খচিলের ভাসিয়ে ডানা
    ও আমি দুই নদীতেই নাচি।
    এপার-ওপার কোনপারে জানিনা-

    একই আশা ভালবাসা
    কান্নাহাসির একই ভাষা
    দুঃখসুখের বুকের মাঝে-
    দুঃখসুখের বুকের মাঝে, একই যন্ত্রণা।
    একই যন্ত্রণা।
    ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা-
    মেঘনা-যমুনা।
    গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা।
    গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা। (ভূপেন হাজারিকা)

    (সমাপ্ত)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন