এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   সমাজ

  • "কারার ওই লৌহ কপাট" বিকৃতি প্রসঙ্গে : কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশনের পার্সপেক্টিভ থেকে

    Sumit Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সমাজ | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ৭৭১ বার পঠিত
  • বিংশ শতকের শেষের দিকে কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশন থিওরির বিকাশ ঘটে। এই কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশন দ্বারা যা বোঝায় তা হচ্ছে এক কালচারের দ্বারা আরেক কালচারের কোন উপাদানকে গ্রহণ করা। কিন্তু এই উপাদানের গ্রহণ প্রায়ই ঘটে সেই উপাদানের অরিজিনাল অর্থ ও কন্টেক্স্ট না বুঝেই ও তাতে সম্মান না দেখিয়েই। অনেকেই এই কনসেপ্টটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। এদের মধ্যে ইউএস এর আইন নিয়ে কাজ করা একাডেমিক সুজন স্ক্যাফিডি অন্যতম, যিনি তার Who Owns Culture? গ্রন্থে বলছেন, যখন কোন সংস্কৃতির লোক অন্য সংস্কৃতির কোন উপাদানকে এপ্রোপ্রিয়েট বা গ্রহণ করতে যায়, তখন সেই কালচারাল প্র্যাকটিসের ট্রিভিয়ালাইজেশন বা নগন্যায়ন হতে পারে, তখন সেই উপাদানের অর্থ হারিয়ে যেতে পারে, স্টেরিওটাইপের জন্ম দিতে পারে, সিস্টেমিক ইনইকুয়ালিটিজের জন্ম দিতে পারে।

    আর যদি অন্য কালচারের কোন উপাদান আর্টিস্টিক কিছু হয়, তাহলে তো আরো বড় বিপত্তি। শিল্প-সংস্কৃতির ব্যাপারটার সাথে প্রায়শই ডোমিনেন্ট কালচার, মাইনোরিটি কালচারের বিষয় সামনে চলে আসে, বিশেষ করে এই পুঁজিবাদের যুগে। কোন কালচারের শিল্প বাজারে বেশি বিকোয়, বেশি মানুষের কাছে যাচ্ছে তার ভিত্তিতে ডোমিনেন্ট কালচার, মাইনোরিটি কালচার গঠিত হয়। দেখা যায়, ডোমিনেন্ট কালচার বরাবরই নিজেদের সমৃদ্ধির জন্য মাইনোরিটি কালচারগুলো থেকে বিভিন্ন উপাদান ধার করে থাকে, সেই উপাদান সম্পর্কে যথার্থ বোঝাপড়া ছাড়াই। আর এর ফলে মাইনোরিটি কালচারের মিসরিপ্রেজেন্টেশন তৈরি হয়, আসল অর্থ ও কনটেক্সট সামনে আসেনা, আর স্টেরিওটাইপ ছড়িয়ে পড়ে। এ আর রহমানের দ্বারা নজরুলের "কারার ঐ লৌহ কপাট" এর সুর পরিবর্তনও এরকমই একটি কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশন।
    উপরে কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশন সম্পর্কে যে কথাগুলো বলা হলো তা ভাল করে বোঝানোর জন্য আমি তিনজনের তত্ত্বকে নিয়ে আসব যা কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশনকে বুঝবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ - (১) এডওয়ার্ড সাঈদ, (২) বেল হুক, ও (৩) গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। সংক্ষেপে এই প্রসঙ্গে তাদের আলোচনাগুলো একটু নিয়ে আসছি।

    (১) এডওয়ার্ড সাঈদ তার ওরিয়েন্টালিজম গ্রন্থে দেখাচ্ছেন কিভাবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিগুলো ঐতিহাসিকভাবে প্রাচ্যের সংস্কৃতিকে মিসরিপ্রেজেন্ট করেছে, যার ফলে প্রায়শই স্টেরিওটাইপ ও কালচারাল মিসরিপ্রেজেন্টেশনের সৃষ্টি হয়। সাঈদ সরাসরি কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশনে ফোকাস করেননি, কিন্তু কিভাবে এর মাধ্যমে মাইনোরিটি কালচারগুলো মিসইন্টারপ্রিটেড ও মিসরিপ্রেজেন্টেড হচ্ছে তা নিয়ে দেখিয়েছেন। তিনি বলছেন পাশ্চাত্য সবসময় প্রাচ্যের একটা বিকৃত ইমেইজ তৈরি করেছে, আর এই ইমেইজই প্রাচ্যকে মৌলিকভাবে ভিন্ন, নিচু ও "আদার" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে বিদ্যমান ছিল জেনারালাইজেশন ও স্টেরিওটাইপ যা প্রাচ্যের সংস্কৃতিকে একই সাথে সরলীকৃত করেছে, সেই সাথে করেছে এক্সটাইজড, একরকম এক্সোটিক এক্সোটিক ভাইব প্রদানের মাধ্যমে। ফুকোর পাওয়ার ও নলেজের তত্ত্ব নিয়ে সাঈদ দেখিয়েছেন কিভাবে পাশ্চাত্যের স্কলার ও ইন্টেলেকচুয়ালরা প্রাচ্য সম্পর্কে একটি বডি অফ নলেজ তৈরি করেছে যা নিরপেক্ষ নয় এবং গভীরভাবে পাওয়ার এক্সারসাইজের সাথে সম্পর্কিত। এই নলেজ প্রোডাকশন বা জ্ঞান উৎপাদন করা হয় কলোনিয়াল শাসন জাস্টিফাই করতে, এবং একরকম কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশন তৈরি করতে যার দ্বারা কিভাবে সেই কালচারকে প্রকাশ করা হবে ও বোঝা যাবে তাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে উদাহরণ হিসেবে সাঈদ দেখিয়েছেন, কিভাবে পাশ্চাত্য প্রাচ্যের শিল্প ও সাহিত্যকে পিস্ অফ রোমানস্, এক্সোটিক কিছু, হান্টিং ল্যান্ডস্কেইপ, অঢেল সম্পদের অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে, যেমন গুস্তাভ ফ্লবার্ট তার উপন্যাসে ইজিপশিয়ান কোর্টেসানদেরকে তুলে ধরেছেন। সাঈদ দেখাচ্ছেন কিভাবে ওরিয়েন্টাল স্টাডি এর ফিল্ডে পাশ্চাত্যের একাডেমিকরা প্রাচ্যের সংস্কৃতিকে এমন একটি পার্সপেক্টিভ থেকে দেখেছেন যেখানে প্রাচ্যকে অসভ্য ও ব্যাকওয়ার্ড হিসেবে দেখা হয়, তার মতে এই স্টাডি প্রাচ্যকে বোঝার স্টাডি নয়, বরং প্রাচ্যকে নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য করার স্টাডি। যাই হোক, সাঈদ বলছেন, এভাবে প্রাচ্যকে সরলীকৃত ও এক্সোটিক করার মাধ্যমে পাশ্চাত্য এর রিপ্রেজেন্টেশন প্রাচ্যের জটিলতা, ডাইভার্সিটি কেড়ে নেয়; কালচারের মিস্রিপ্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রাচ্যের সংস্কৃতিগুলোর আইডিন্টিটিকে প্রভাবিত করে, এই কালচারগুলোকে সরলীকৃত ও এক্সোটিক স্টেরিওটাইপের লেন্সে দেখতে বাধ্য করে। প্রাচ্যের ফ্যাশন, সংগীত, আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রেই পাশ্চাত্যের দ্বারা এপ্রোপ্রিয়েশনের সময় এই ব্যাপারটা দেখা যায়।

    (২) এই বিষয়ে আরও বলেছেন নারীবাদী তাত্ত্বিক বেল হুক। তার ফোকাসের জায়গাগুলোর মধ্যে যেটা আনতে চাই তা হলো এই কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশনের সাথে কমোডিফিকেশনের বা পন্যায়নের জায়গাটা। একটি ক্যাপিটালিস্ট ফ্রেমওয়ার্কে যখন কোন সংস্কৃতিকে কমোডিফাই বা পণ্যায়ন করা হয় তখন কালচারের এপ্রোপ্রিয়েশন ঘটে, যার ফলে এগুলোতে যে অরিজিনাল মিনিং ও কনটেক্সট থাকে তাকে ছেটে ফেলা হয়, এগুলোকে প্রফিটের জন্য ব্যবহার করা হয়, যেখানে যে কালচার থেকে উপাদানের এপ্রোপ্রিয়েশন হলো সেই কালচার লাভবান হয়না। বেল হুক আফ্রিকান আমেরিকান বা ইউএস এর কৃষ্ণাঙ্গদের মিউজিক ও ফ্যাশন দিয়ে এর উদাহরণ টানলেন, দেখালেন কিভাবে আফ্রিকান আমেরিকান মিউজিক ও ফ্যাশন কিভাবে আমেরিকান মেইনস্ট্রিম কালচারে (যা মূলত শ্বেতাঙ্গ সংস্কৃতি) অঙ্গীভূত হয়েছে, যেমন হিপ হপ মিউজিক ও ক্লথিং স্টাইল, কিন্তু এটা করতে গিয়ে এই হিপ হপ মিউজিক ও ক্লথিং স্টাইলের বিকাশে যে সংগ্রাম জড়িত ছিল, যে অভিজ্ঞতা ছিল তাদের সেটার কানেকশন হারিয়ে গেছে। সেই সাথে তিনি বলছেন মেইনস্ট্রিম পপ কালচারে কৃষ্ঞাঙ্গ নারীদেরকে যেভাবে দেখানো হয় তার কথা, প্রায়শই কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের আচার আচরণ নিয়ে স্টেরিওটাইপ করা হচ্ছে, আর এর মাধ্যমে এই কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের অভিজ্ঞতাসমূহের মধ্যে যে জটিলতা রয়েছে তার বোঝাপড়ায় অভাব দেখা যাচ্ছে। হুক বলছেন, এরকম চলতে থাকলে এক কালচার আরেক কালচার থেকে উপাদানই গ্রহণ করবে নিজেদের পুঁজিবাদী প্রফিটের স্বার্থে, কিন্তু কালচারের প্রতি রেস্পেক্ট বা সম্মানের জায়গাটা থাকবে না।

    (৩) এই জায়গায় গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক আনছেন সাবঅল্টার্ন এর কনসেপ্ট। তিনি দেখাচ্ছেন কিভাবে ডোমিনেন্ট কালচার মাৰ্জনালাইজড কালচার বা সাবল্টার্নকে সাইলেন্স বা মিসরিপ্রেজেন্ট করে। এখানে যে মার্জিনালাইজড গ্ৰুপ হেজেমোনিক পাওয়ার স্ট্রাকচারের বাইরে অবস্থান করে তাই সাবঅল্টার্ন। তিনিও বলছেন কোন ডোমিনেন্ট কালচার মার্জিনালাইজড কালচারকে রিপ্রেজেন্ট করতে গেলে প্রায়শই মিসরিপ্রেজেন্ট ও সিমপ্লিফাই করে। তিনি আরো আগ বাড়িয়ে বলছেন, এটি কেবল তাদের মিসরিপ্রেজেন্ট ও সিমপ্লিফাইই করে না, সেই সাথে এদেরকে নীরব বা সাইলেন্স করে দেয়, কেননা এদের নিজস্ব ন্যারেটিভ ও পার্সপেক্টিভই ওভারশ্যাডোড বা ইগনোরড হয়। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রসঙ্গ আনেন, সতীদাহের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই প্রথাকে ব্রিটিশরা বর্বর বলে দাগিয়ে নিজেদেরকে সেভিয়র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ও এটা করতে গিয়ে ভারতীয় নারীর জটিল সামিজিক ও সাংস্কৃতিক গতিশীলতাকে ইগনোর করে ও ভারতীয় নারীদের ভয়েসকে ইগনোর করে।

    যাই হোক, এই কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশন থিওরির বিরুদ্ধেও মত আছে। অনেকে শিল্পীর স্বাধীনতার কথা বলতে পারেন। বলতে পারেন শিল্পী যেকোন সংস্কৃতি থেকেই কালচারাল এলিমেন্টকে এপপরিয়েট করার ক্ষেত্রে স্বাধীন। শিল্পীর আর্টিস্টিক ফ্রিডম থাকে, শিল্পী ইনোভেশন স্বাধীন থাকে, তাই শিল্পী কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশনের মধ্য দিয়ে যেতে পারেন। এখানে মিসরিপ্রেজেন্টেশন হচ্ছে, সিমপ্লিফাই হচ্ছে বলে শিল্পীর স্বাধীনতাকে হরণ করা, তার ইনোভেশন বাধা দেয়া উচিৎ না। ইমানুয়েল কান্টের "আর্ট ফর আর্টস সেইক" বা শিল্পের জন্যই শিল্প - ধারণাটি থেকে এই ধারণার বিকাশ, যা ট্রেডিশনাল ও কালচারাল কনস্ট্রেইন্টসমূহের ঊর্ধ্বে গিয়ে শিল্পীর আর্টিস্টিক এক্সপ্রেশন ও ইনোভেশনকে রাখার পক্ষপাতী। কিন্তু এর বিরুদ্ধেও আর্গুমেন্ট আছে যা এখানে নিয়ে আসা জরুরি। সবসময়ই আর্টিস্টিক ফ্রিডমের একটা লিমিট থাকে।

    ক্রিটিকাল থিওরিস্ট থিওডোর আডর্নো ও ম্যাক্স হরখেইমের তাদের ডায়ালেক্টিক অফ এনলাইটেনমেন্ট গ্রন্থে বলছেন, আর্টিস্টিক এক্সপ্রেশনকে সবসময় কালচারাল কন্টেক্স্ট ও কালচারাল হিস্ট্রিকে সম্মান করা উচিত। তারা কালচার ইন্ডাস্ট্রির কথা বলছেন, যেখানে ক্যাপিটালিস্ট সমাজে কালচারাল গুড বা সাংস্কৃতিক পণ্য ইন্ডাস্ট্রিয়ালি উৎপাদিত হয়, এবং ম্যানিপুলেশন ও কন্ট্রোল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এভাবে সংস্কৃতির মাস প্রোডাকশন ও কমোডিফিকেশন কালচারাল এক্সপ্রেশনকে স্ট্যান্ডার্ডাইজ ও ট্রিভিয়ালাইজ করে। এরকম সমাজে সত্যিকারের আর্টিস্টিক ফ্রিডম কম্প্রোমাইজড হয়। এখানে আর্টিস্টিকক্রিয়েশন গুলো আর্টিস্টের অথেন্টিক এক্সপ্রেশন বা কালচারাল ইন্টিগ্রিটির প্রতি সম্মান নয় বরং মার্কেটের ডিমান্ড দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে ডোমিনেন্ট কালচারের শিল্পী একটি ঘুটি মাত্র হয় যা মার্কেট দ্বারা চালিত হয়, আর এখন থেকে বলা যায়, মার্কেটের কাছে মাইনোরিটি কালচার, মার্জিনালাইজড কালচার এক্সপ্লয়েটেড হবে ডোমিনেন্ট কালচারের দ্বারা যা মার্কেট দখল করে আছে। আডর্নো ও হরখেইমের বলছেন, ফিল্ম ও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ডাইজড কালচারাল প্রোডাক্ট তৈরি করে, এবং এমনভাবে তৈরি করে যা ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে অডিয়েন্স এর মধ্যে আপিল তৈরি করে। এভাবে আর্ট এর ইউনিক ও চ্যালেঞ্জিং এস্পেক্টটা লঘু হয়ে যায়, আর এই উৎপাদিত মিউজিক ও ফিল্ম সহ বিভিন্ন আর্টকে স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত করা হয়। তারা একে কালচারাল আধিপত্যের একটি আকার হিসেবে দেখেছেন যা শিল্পের মধ্যকার সামাজিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করার সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে। সেই সাথে তারা আর্টের কমোডিফিকেশনের ফলে এর ইন্ডিভিজুয়ালিটি ও অথেন্টিসিটি হারাবার কথা বলেন। তারা বলেন যে শিল্প মার্কেট ডিমান্ড এর প্রতি কনফর্ম করে তা প্রায়ই ক্রিটিকালি এংগেজ করা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক জটিলতাকে রিফ্লেক্ট করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তারা বলছেন, কালচার ইন্ডাস্ট্রির বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে কালচারাল হোমোজেনাইজেশন ঘটে, এটি সব কালচারাল ডাইভার্সিটিকে মিটিয়ে দিয়ে সব একই রকম করে ফেলতে চায়, আর বৈচিত্র্যময় কালচারাল ন্যারেটিভ ও হিস্ট্রিকে ইগনোর করতে চায়। সব মিলে এরা দেখান যে, বিদ্যমান কালচারাল ইন্ডাস্ট্রির কারণে শিল্পীর কখনোই স্বাধীনতা থাকেনা, সব কিছু মার্কেট দ্বারা চালিত হয়, আর এখানে ডোমিনেন্ট কালচার এর হোমোজেনাইজেশন ও স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন ঘটে ও মাইনর কালচারের ডাইভার্সিটি ধ্বংস করার প্রবণতা কাজ করে।

    অনেকে কালচারাল এক্সচেঞ্জ, কালচারাল ফিউশন, গ্লোবালাইজেশনের কথা টেনে বলেন এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে এরকমটা হওয়া স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, আর এরকমটা হবেই। রোনাল্ড রবার্টসন ও উলফ হ্যানারজ যেমন আলোচনা করছেন, কিভাবে গ্লোবালাইজেশনের দ্বারা বিভিন্ন কালচারের মধ্যে মিক্সিং ঘটে (এক দেশে একাধিক এথনিসিটি থাকলে তো আরো বেশি হয়), আর এভাবে কিভাবে নতুন ও ইনোভেটিভ আর্টিস্টিক এক্সপ্রেশনের জন্ম হয়। অনেকের মতে, এ আর রহমানের কাজকেও সেভাবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে। এই প্রক্রিয়াটি তো রিস্কের ঊর্ধ্বে না। গ্লোবালাইজেশন যেমন কালচারাল ফিউশন হবে, তেমনি কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশন ও হোমোজেনাইজেশনের কনসার্নও আসবে। ইতিমধ্যে এডওয়ার্ড সাঈদ, বেল হুক, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের আলোচনা টেনে এনে বলেছি কিভাবে ডোমিনেন্ট কালচার মাইনোরিটি কালচারকে ওভারশ্যাডো করতে পারে, মিসরিপ্রেজেন্ট করতে পারে, নজরুল সংগীতটির মাইনিং ও কন্টেক্স্টকে লঘু করতে পারে, মিসরিপ্রেজেন্ট করতে পারে, আর এই চর্চা বাঙ্গালি সংস্কৃতির ক্ষতিও করতে পারে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • আ খোঁ | 2402:3a80:1981:9c66:178:5634:1232:***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:০৪741320
  • আ খোঁ  | 2402:3a80:1981:9c66:178:5634:1232:***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:০৫741321
  • জরুরি লেখা। ধন্যবাদ।
  • Sumit Roy | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৩০741332
  • @আ খোঁ  

    আপনাকেও পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
  • Ranjan Roy | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৫২741486
  • জরুরী লেখা।

    যখন কোলকাতার বিভিন্ন মঞ্চে বা মাধ্যমে কিছু লোকসংগীত, যেমন --- "লালপাহাড়ির দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা", অথবা "সর্দার বলে লিব পিঠের চাম, হে যদুরাম, ফাঁকি দিয়া আনাইলি আসাম" শুনি, তখন এই মাটি থেকে শিকড় ছিঁড়ে শহুরে রুচি এবং বাজারের জন্যে পণ্যায়ণের কথাই মনে হয়।

    এ আর রহমান দুই দশক আগে অভিষেক বচ্চন অভিনীত "দিল্লি-৬" সিনেমায় ছত্তিশগড়ি জনপ্রিয় লোকগীতি 'শাস গারি দেবে, ননদ চুটকি লেবে, দেবর সমঝা দেবে" গানটি ব্যবহার করেছেন ওইভাবেই, এবং কোন ঋণস্বীকার করেন নি। মূল গায়ক এবং রচয়িতা কোন স্বীকৃতি বা সম্মান পায়নি।

    এখানে অবশ্য নজরুলের পরিবারের কল্যাণী কাজী রহমানকে চুক্তির মাধ্যমে সিনেমায় সুর পরিবর্তন করার স্বাধীনতা দিয়েছেন।
  • Prabhas Sen | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৩১741487
  • প্রয়োজনীয় লেখা, কিন্তু বড় বেশি ইংরেজি শব্দ কন্টকিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন