এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কী ছাপি কেন ছাপি 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ অক্টোবর ২০২৩ | ৬৪৬ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৬ জন)
  • গুরুচণ্ডা৯ একটি প্রকাশনাও। আমরা ছাপি চটি বই, সস্তা ও পুষ্টিকর। প্রায় প্রতিটি বইয়ের মাথায় চটির ছাপও থাকে। কেন থাকে? চটি  বলতে আমরা কী বুঝি? এবং সর্বোপরি কেন ছাপি? স্রেফ আরেকটা প্রকাশনা হব বলে? না ছেপে কি  চটি হয়না? এই ব্যাপারটা নিয়ে বোধহয় বছর ছয়েক আগে আমি এই লেখাটা লিখি। নাম ছিল 'কী ছাপি কেন ছাপি'। তারপর স্বহস্তে প্রিন্ট এবং ভাঁজ করে চারপাতার বইয়ের আকারে বইমেলায় ছাড়ি। লেখাও ছিল, 'একটি তন্বী চটি বা এক ধরণের লিফলেট - লেখক কর্তৃক স্বহস্তে লিখিত, অক্ষরবিন্যস্ত, প্রকাশিত, মুদ্রিত ও বিতরিত।' দাম কত ছিল বা আদৌ ছিল কিনা মনে নেই। সেটা হুহা উড়ে যাওয়ায় পরে আরও হাজার-দুই কপি ছাপা হয়, সেও উড়ে যায়। জয় গোস্বামী কোনো ভাবে এক কপি পেয়ে এর থেকে ক'লাইন উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন, তাঁর গুরুচণ্ডা৯ বিষয়ক এক লেখায়। কিন্তু তাতেও খুব বেশি লোকের কাছে পৌঁছয়নি। কুড়ি-পঁচিশ কোটি বাঙালির কাছে দু-হাজার কপি কী আর। তাই নেটেও তুলে দিলাম। লাভ করার জন্য তো এসব ছাপা নয়, ফলে এখানেই পড়ে নিতে পারেন। অবশ্য, ধৈর্য্য থাকলে, কারণ মোটের উপর মিনিট-পাঁচেকের পাঠ্য। না থাকলে কাটিয়ে দিন। আর, একান্ত পড়েই যদি ফেলেন, অবশ্যই মতামত দিন। কারণ এটা তো পুস্তক-তালিকা নয়, একটা আন্দোলনের ইশতেহার। প্রসঙ্গত, লেখালিখিটাও, ব্যক্তিগতভাবে, আমার দিক থেকে স্রেফ 'এমনি লিখি' নয়, সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আছে। সে পরে কখনও তোলা যাবে। আপাতত 'কী ছাপি কেন ছাপি'ই রইল নিচে। 
    ----------------------------------
    কী ছাপি কেন ছাপি

    ১৪৩৯। জোহানেস গুটেনবার্গ নামে জার্মানির এক কামার আবিষ্কার করলেন মুদ্রণযন্ত্র। আবিষ্কার কথাটা হয়তো ঠিক নয়, কারণ কাগজ তার আগেই পাওয়া যেত। বই কি জিনিস তাও জানা ছিল। এমনকি ছাপার যন্ত্রও ছিল তার আগে। নতুন 'আবিষ্কার'টিও  আজকের  টেকনোলজির দিক থেকে এমন কিছু হাতিঘোড়া জিনিস ছিলনা। তবে এই অদ্ভুত যন্ত্র  একটা নতুন জিনিস করেছিল, বইকে ঝপাঝপ ছেপে সস্তায় সাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে যা হয়েছিল, তার নাম বিপ্লব। ১৫১৭ থেকে ২০ সালের মধ্যে মার্টিন লুথারের লেখা একটি নরম পুস্তিকা  ছাপা হয়ে সারা জার্মানিতে ছড়িয়ে গেল । পৌঁছে গেল অন্যান্য দেশেও। নাড়িয়ে দিল চার্চ আর রোমান সাম্রাজ্য নামক সর্বশক্তিমান দুই প্রতিষ্ঠানকে। পরবর্তীতে ৯৫ থিসিস নামে পরিচিত সেই পুস্তিকাটিই সম্ভবত বিশ্বের প্রথম চটি বই।  চটির বিশ্ববিপ্লবের সেই সূচনা।

    ১৮৪৮। ইউরোপ জুড়ে বিপ্লবের আঁচ। গরম হাওয়া। ফ্রান্স কাঁপছে জনজমায়েতে। রাজতন্ত্র উৎপাটিত। কিন্তু বিক্ষোভ চলছেই। জুন মাসে গণবিদ্রোহ হবে প্যারিসে। ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসবেন নতুন রিপাবলিকের রাষ্ট্রপতি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ঠিক চারবছর পরে তিনিই অবশ্য গোটা দেশের একচ্ছত্র সম্রাট হয়ে বসবেন। ক্রমশ তৈরি হবে প্যারি কমিউনের ভিত্তিভূমি। আর এই ডামাডোলের বাজারে, ১৮৪৮ এর ফেব্রুয়ারিতেই জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হবে একটি চটি বই। বিপ্লবের ইশতেহার। সস্তা কাগজের বাঁধাইহীন সেই চটি নানা ভাষায় অনুদিত হয়ে আগুনের মতো ছড়িয়ে যাবে পৃথিবীময়। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ইশতেহারটি প্রমাণ করবে, জোরালো কনটেন্ট নিজের প্রচার নিজেই করতে পরে। মোটাসোটা ঠোঙা লাগে মূলত মিডিওকার বা পচা বাদামভাজার। "শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই, কিন্তু জয় করার জন্য আছে সারা দুনিয়া" জাতীয় পংক্তিগুলির শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে থাকতে কোনো ঠোঙা প্রয়োজন হয়না। বলাবাহুল্য, বইটির নাম কমিউনিস্ট ইশতেহার।

    ১৮৫৭। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত বিজয় করে একটু জিরোচ্ছে। রাজা রামমোহন রায় মারা গেছেন কিছুদিন আগে। প্রায় একই সময়ে ডিরোজিও। কিন্তু তাঁর দামাল শিষ্যরা তখনও কলকাতা কাঁপাচ্ছেন। অন্যদিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একাই একটি বিপ্লব। তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও বিধবা বিবাহ আইন পাশ করিয়ে ফেলেছেন বছর খানেক আগে। আর তারও আগে, বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন সংস্কৃত প্রেস। এই প্রেস থেকেই  প্রকাশিত হয়েছে ধ্যাবড়া হরফে ছাপা বাংলার সফলতম চটি বই, যার নাম বর্ণপরিচয়। চটি বই এর ইতিহাসের এই মাইলস্টোনের ধারেকাছে আর কেউ থাকতে পারবেনা মনে হচ্ছিল, কিন্তু এসব হতে না হতেই ১৮৫৭।   ব্যারাকপুরে মঙ্গল পান্ডের ফাঁসি হল মার্চ মাসে। আর মে মাসে দিল্লি থেকে সামান্য দূরে মীরাটের সেনা ছাউনিতে শুরু হয়ে গেল মহাবিদ্রোহ। এক সেনা ছাউনি থেকে অন্য ছাউনিতে ছড়িয়ে গেল  বিদ্রোহের তত্ত্ব এবং আহ্বান। না, হোঁতকা মোটা ছাপা বই না, এমনকি তন্বী সরু কায়দার লিফলেট বেয়েও না। খবর ছড়িয়ে গেল স্রেফ  হাতে গড়া ঢাউস রুটির মাধ্যমে।  ঠোঙা তো নয়ই, মোড়কও না, বার্তা তেমন হলে নিজেই নিজেকে ছড়িয়ে দেয়।

    ১৯৩০-৩৫। চটি বইয়ের সামনে নতজানু হয়ে, ১৯৩৫ সালে পেঙ্গুইন প্রকাশ করল তার প্রথম নরম মলাটের বই, নাম দিল পেপারব্যাক। গাদা গাদা ছাপা শুরু হল, তুমুল প্রচার সহ। কিন্তু তার বছর পাঁচেক আগে ইউরোপীয় বিপ্লবের ধাত্রীভূমি সোভিয়েত রাশিয়ায় ঘটে গেছে এক অদ্ভুত কান্ড, যা জনসমক্ষে আসবে অনেক পরে। 'প্রগতিশীল' শিল্প নিয়ে স্লোগানবাজি চরমে ওঠার পর, ১৯৩০ এর মার্চ মাসে সোভিয়েত সেন্সরশিপে বিরক্ত লেখক মিখাইল বুলগাকভ সরকারকে চিঠি লেখেন, যেন তাঁকে দেশ ছেড়ে যাবার অনুমতি দেওয়া হয়, আর না দিলে মস্কো থিয়েটারে অন্তত স্টেজসহায়কের একটা কাজ যেন দেওয়া হয়। হেনস্থার চোটে এপ্রিল মাসে আত্মহত্যা করেন কবি মায়কভস্কি। ঠিক তার চারদিন পরে স্তালিন বুলগাকভকে ফোন করে বলেন, আমরা কি আপনাকে এতই বিরক্ত করেছি, যে দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান? বুলগাকভ বলেন, দেশ চিরতরে ছেড়ে যাওয়া মানে একজন লেখকের কাছে মৃত্যুসমান।  অত্ঃপর তাঁকে স্টেজ ডিরেক্টরের সহকারী নিযুক্ত করা হয়। সেন্সরশিপ কিন্তু বন্ধ হয়না। ফলে শুরু হয়ে যায় রাশিয়ান এবং পূর্ব ইউরোপিয়ান সাহিত্যের আরেক অধ্যায়, পরে যার নাম দেওয়া হবে সামিজ্যাট। সোজা বাংলায় এর মানে হল, নিজের লেখা নিজে লিখুন, নিজে ছাপুন, নিজে সাইক্লো করে বিলি করুন, আর ধরা পড়লে নিজে জেল খাটুন। এই পদ্ধতিতেই ছড়াতে থাকে অজস্র লেখা, 'মাস্টার এবং মার্গারিটা' বা 'ক্ষমতাহীনের ক্ষমতা' তো দেশকালের সীমানা ডিঙিয়ে চিরস্মরণীয়। উল্টো দিকে পুঁজি এবং বিজ্ঞাপনের আকর পেঙ্গুইন ১৯৩৫ সালে কী পেপারব্যাক ছেপেছিল? উইকি ছাড়া কেউ জানেনা।

    ১৯৬০। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী বদলে গেল। একদিকে সস্তা কাগজে ছাপা 'নিউ-ইয়র্কার' পত্রিকা বার করল হিরোশিমা-নাগাসাকির বীভৎসতার প্রতিবেদন, যে খবর আমেরিকার আমজনতার জানা ছিলনা। ১৯৫৭ তে সোভিয়েত স্পুৎনিক গেল আকাশে। আর ১৯৬০ দশক থেকেই ঝুঁকি না নিয়ে আমেরিকান দূতাবাসরা দামী মার্কিনী ঠোঙা বিক্রি শুরু করল দেশে-দেশে, সর্বত্র। মার্কিন স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দূতাবাসগুলো ছাড়তে শুরু করল চকচকে 'স্প্যান' পত্রিকা। হলিউড তৈরি করল বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্য। প্লেবয় আর পেন্টহাউসের ঝকঝকে কাগজের রোমহীন নগ্নিকারা যাবতীয় বাধাবিঘ্ন পার করে চেতনার সমস্ত মহাদেশে লাফ মেরে পড়ল। এ অবশ্যই শুধু দুটো-চারটে ঝকঝকে ছবির গল্প না, পুরো প্যাকেজিং, পুরো ফর্মটাই পশ্চিমী 'স্বাধীনতা' এবং 'প্রাচুর্য'কে তুলে ধরার । যার একদিকে মিল্টন ফ্রিডম্যান এবং 'শিকাগো বয়েজ' দের স্বাধীনতার তাত্ত্বিক প্রকল্প, অন্যদিকে তার পপুলার প্যাকেজিং। ফর্মটা এখানে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। চিত্রটা পরিষ্কার। একদিকে সোভিয়েত আর পূর্ব ইউরোপে মুদির দোকানে লাইন পড়ছে, স্বাধীনতার কন্ঠরোধ হচ্ছে, আর ঠিক তার উল্টোদিকে পশ্চিমের ঝকঝকে শরীরের প্রাচুর্য, এই বৈপরীত্যটাই এখানে প্যাকেজিং এর লক্ষ্য। পরপর বিপরীত দুটো শট যেন, ফিল্মের টেকনিকে যাকে মন্তাজ বলা হয়।

    অবশ্যই বাস্তব ঠিক এই প্যাকেজিং মোতাবেক চলেনি। বাস্তব এই ছিল, যে, সোভিয়েত যেমন তখন ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে, আমেরিকাও কিন্তু কাঁপছে। সিভিল রাইটস, মেয়েদের আন্দোলন, ভিয়েতনাম। একটার পর একটা। পরপর খুন হয়ে যাচ্ছেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, ববি কেনেডি। কিন্তু ঠোঙার ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করছিল সম্পূর্ণ অন্য জগৎ। প্লেবয় আর স্প্যানের দুনিয়ায় এসব আলোড়নের ছায়ামাত্র ছিলনা। তারা তৈরি করছিল পলিটিকাল কারেক্টনেসের নিজস্ব ও নিরাপ্দ বয়ান। কালোদের আন্দোলনে 'ব্ল্যাক প্যান্থার'দের মধ্যে প্রোভোকেটররা ঢুকছিল। ১৯৭০ এর দশকে প্লেবয় কয়েন করল 'এমসিপি' নামক একটি অ্যাক্রোনিম, নারীমুক্তির নামে যাকে দুনিয়া জুড়ে বিক্রি করা হল। এই সেই প্যাকেজিং, যা তৃতীয় বিশ্ব দেখেছে, দেখবে, দীর্ঘদিন ধরে। এই প্যাকেজিং এর আরও একটি বিপুল শক্তিশালী শাখা হলিউড বিশ্ববিজয় করবে, কিন্তু দেখানে সারা জীবনের জন্য প্রবেশ নিষেধ হয়ে যাবে বিশ্ববন্দিত ছবি সিটিজেন কেন এর পরিচালক অরসন ওয়েলসের। আর এসবের মধ্যেই ফরাসি দেশে হয়ে যাবে এক কেলোর কীর্তি। হলিউড আর মার্কিনী প্যাকেজিং এ বিরক্ত, ক্রুদ্ধ হয়ে ঠোঙার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন, একদল তাজা তরুণ। গোল্লায় যাক মার্কেটিং, গোল্লায় যাক ঠোঙার ইন্ডাস্ট্রি, স্টার সিস্টেম, এই তাঁদের বক্তব্য। "আমি কী লিখছি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ", বলবেন তাঁরা, "সস্তার ঝর্ণাকলমে, নাকি পার্কার, ঝকঝকে কাগজে নাকি সস্তা নিউজপ্রিন্টে, সেটা একেবারে গুরুত্বহীন"। এই দর্শনানুযায়ী ছেঁটে ফেলা হবে ফিল্ম বানানোর খরচা। হেলিকপ্টার বা ক্রেন তো নয়ই, এমনকি ট্রলির বদলেও হাতে ধরে ব্যবহার করা হবে ক্যামেরা। কারণ, প্যাকেজ এখানে একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ না, হাত কেঁপে গেল কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ না, কী দেখাচ্ছি, সেটাই আসল। এই পুরো ব্যাপারটাকে এককথায় বলা হবে, "ক্যামেরা-কলম", যেখানে কলম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যামেরাকে, সে কলম দামী কিনা তাতে কিছু যায় আসেনা, লেখা হলেই হল। এই ঘরানা কাঁপিয়ে দিয়েছিল ফিল্মি দুনিয়াকে, যে ঘরানার অন্তত একজনের নাম আমরা সবাই জানি। জাঁ লুক গোদার। তিনি ফরাসি দেশের মানুষ। তাঁর প্রথম চটি সিনেমা সর্বসমক্ষে আসে ১৯৬০ সালে। ছবিটির নাম 'শ্বাসরুদ্ধ'।

    ২০১৭। গুরুচণ্ডা৯ চলতে শুরু করল ২০০৪ সালে। প্রথম চটি বই বেরোলো ২০১০ এ।  বিজ্ঞাপনের কারবার নেই। নিজেদের লেখা, ছবি, ভিডিও, হাতে গড়া রুটির মতো, সামিজ্যাটের সাইক্লোর মতো ছড়িয়ে রাখি ইতিউতি জালে (ওয়েব আর কী)। যে খুশি খুঁটে খান। তাতে খুব যে মারকাটারি বিশ্ববিজয় হয়ে গেছে তা নয়। কিছু বইয়ের হাজারখানেক কপি এক বইমেলায় শেষ হয়, কিছু বইয়ের হয়না। প্রথম চটি বইগুলোর কারো কারো চার-পাঁচটা সংস্করণ হয়েছে, কারো দুটো। ওয়েবে কতজন পড়েন, সঠিক ভাবে মাপা মুশকিল। গ্রুপে কিছু হাজার, সাইটে কিছু। কুড়ি কোটি বাঙালির কাছে এসবই  খুব বেশি কিছু না। তবে এই কদিনে, কততম যেন কলকাতা বইমেলার প্রাক্কালে সস্তায় পুষ্টিকর চটি বইয়ের ব্যাপারটা বিলক্ষণ বুঝেছি। বিজ্ঞাপনী নেটওয়ার্ক নয়, মডেল সুন্দরীদের মার্জারচলন নয়, ঠোঙা নয়, মোড়ক নয়, লেখা তেড়ে সাইক্লো করুন, সুযোগ পেলে একটু হেঁকে নিন, ব্যস। লেখায় দম থাকলে চুপচাপ ছড়িয়ে যাবে। ইহাই চটির ম্যাজিক। ঐতিহ্যমন্ডিত চটি সিরিজ জিন্দাবাদ। জ্জয়গ্গুরু। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • upal mukhopadhyay | ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:১৯524510
  • চ্যাপ বুকের একটা ব্যাপার ছিল না ঘেঁটে দেয়ার ক্রনোলজিতে? ওটা  বাদ কেন? অবশ্য  তাতেও  ইস্তেহারটা পূর্ণাঙ্গ। একটা ব্যাপার বলার, হিন্দুস্থানে কিন্তু এপোক্রিফাল লেখার দীর্ঘ এক ফার্সি ঘরানা আছে। উর্দু ভাষাটাকেই, বিশেষ তার ছাল ছাড়ানো ব্যঙ্গ রীতির থাপ্পড়ে অনেকটা এগিয়ে  দেন জাটেল্লি। ললিত ফার্সি জবানে হিন্দিভি খিস্তি  মিশিয়ে। আর একটা বই আছে মসির উল উমারা তাতে প্রচুর অপক্রিফাল টেক্সট সংকলি।
  • upal mukhopadhyay | ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:২০524511
  • সংকলিত 
  • বিপ্লব রহমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১০:০৭524734

  • "লেখায় দম থাকলে চুপচাপ ছড়িয়ে যাবে।" 
     
    যাবেই তো! তবে শুরুতে চটি সিরিজ এপারে বাংলাদেশে বিপণন ও বিক্রির জন্য পাইদি কম করেছেন! সেকি হয়রানির চূড়ান্ত!

    তখন মেসেঞ্জার/হোয়াটসঅ্যাপ ছিলো না, পাইদি প্রবাসী ছিলেন, ওভারসিজ কলে কথা বলতেন, না হয় ইমেইলে, পাশাপাশি ছিলো হট্টগোলের গুরুচাণ্ডালী ফেসবুক গ্রুপ, যেন ফেকিদের আস্ফালনের চারণভূমি (কীযেএক্টাঅবস্থা!?)... 


    যদি ভুল বলে না থাকি, ২০১০-১১ র দিকে গুরুচণ্ডালী  কাগজ ও চটি শুধু সৌজন্য সংখ্যা বিলির জন্যই জনে জনে একে তাকে অনুরোধ করতে হয়েছে,  তাও প্রাপক কেউ পেয়েছেন, কেউ পাননি, সে সব বইপত্রের হিসাব পর্যন্ত নেই! 


    আবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ চটি এপার-ওপার প্রকাশক ও এজেন্টকে দিয়েও কাজ হয়নি, একই ব্যাপার, কেউ পেশাদারিত্বর পরিচয় দেননি, অনেক বইপত্র ও বিক্রির টাকার হদিস মেলেনি। 

    রীতিমতো অনুসন্ধান করে শাহবাগে বইয়ের শো রুমের এক দোকানীর (প্রকাশক নন, নিছকই অল্প শিক্ষিত কর্মচারী) সন্ধান পেয়েছিলাম, যিনি নিয়মিত কলকাতা যাতায়াত করে ওপার থেকে তাদের শো রুমের জন্য বইপত্র আনেন, অথচ বিক্রির জন্য গুরু চটি বয়ে নিয়ে আসতে তার ভীষণ কষ্ট! 
     
    কয়েক দফা তিনি নাকি সেসব কলকাতা থেকে এপারে পাঠিয়েছেন কুরিয়ারে(!), আর এপারে প্রাপককে তা গ্রহণ করতে হবে বিপুল সংখ্যক গাঁটের কড়ি খরচ করে!? 
     
    সংগত কারণেই অনেকেই সেসব পার্সেল গ্রহণ করেননি, সেগুলো সব সময় গুরু দফতরে ফেরতও হয়তো যায়নি, খোয়া গিয়েছে। 

    অনেক পরে বন্ধুবরেষু প্রকাশক, ছোটগল্প লেখক ষড়শৈর্য তার প্রকাশন "উজান" থেকে গুরুচণ্ডালীর সব প্রকাশনা এপারে বিপণন ও বিক্রির দায়িত্ব নেন, মহামারির আগে ২০২০ সালের মুখে। তিনি সরাসরি গুরুচাণ্ডালী পর্ষদের সংগে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঢাকা এজেন্ট হিসেবে বহাল হন। 
     
    অবশ্য চণ্ডালকে দূতায়ালীতে খুব বেশি শ্রম দিতে হয়নি, কারণ ষড় আগে থেকে নিজ উদ্যোগ গুরুর কিছু চটি কলকাতা বইমেলা থেকে এনে এপারে বিক্রি করেছেন৷ সৈকত, ঈপ্সিতা, সুমেরু, শমীক, মলয় ইত্যাদি কয়েকজনের নামও গড় গড় বলে গেলেন, পরিচয় না থাকলেও তাদের বইপত্র তার পড়া। 
     
     "উজান" থেকে যে কেউ বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনে গুরু প্রকাশনাসহ সব বই কিনতে পারেন, ঢাকার কাঁটাবনে তাদের শো রুম থেকে অফলাইনে তো বটেই। 

    এ নিয়ে একদা গুরুতেই লিখেছিলাম 
    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=16995


    চট্টগ্রামের পুরনো প্রকাশন "বাতিঘর" চট্টগ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে একই সময় ঢাকার বাংলা মটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভবনে দ্বিতীয় শোরুম খোলে। তাদেরও বইবিক্রির একটি বড় অংশ কলকাতার প্রকাশনা। 

    করোনাক্রন্তির পর এক আড্ডায় এর পরিচালক দীপংকর দাকে গুরুচাণ্ডালী প্রকাশনা সম্পর্কে বলতে উজ্জ্বল হলো তার মুখ। জানালেন, ওপারের বেড়াতে গিয়ে সেখানের দৈনিকে তিনি এ সম্পর্কে প্রথম জানেন, পরে সেখানের লেখক বন্ধু মহলে জেনেছেন চটি সিরিজ সম্পর্কে। 
     
    পরে তিনিই খবর পাঠান, গুরুচাণ্ডালীর বেশকিছু বইপত্র তারা ঢাকা শো-রুমে বিক্রি শুরু করেছেন, ঢাউস প্রকাশনাও আছে! স্বজনপ্রীতি করে প্রতিভা সরকারের বই নিয়ে জিজ্ঞাসা করে জবাব পেলাম, অবশ্যই! :) 


    আর এখন ভাবতে ভালো লাগছে, ছোট্ট টেক্সট বা কলেই বিশ্বে যে কোনো প্রান্তে মিলবে গুরু প্রকাশনা। খোদ গুরুর সাইটেই জ্বল জ্বল করছে এর বিজ্ঞপ্তি: 

    "পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে গুরুচণ্ডা৯র বই পেতে চাইলে ফোন অথবা হোয়াটসঅ্যাপ করুনঃ +৯১ ৯৩৩০৩ ০৮০৪৩ অথবা +৯১ ৮৭৭৭৬ ৪২২৩৪ নাম্বারে।" 


    জ্জয় গুরু (পড়ুন, যুক্ত 'গ', অভ্রে আসছে না)!! 
     
  • বিপ্লব রহমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১০:১১524735
  • *ষড়ৈশ্বর্য মুহাম্মদ = হবে, টাইপো 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন