এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • র‌্যাগিং ট্যাগিং 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ আগস্ট ২০২৩ | ১০১১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • র‌্যাগিং নিয়ে গুচ্ছের লেখা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রজন্মের ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছেলেপুলেরা কিছুই লিখছেনা। এইসব তুশ্চু জিনিস নিয়ে কী লিখব আর, এইরকম হাবভাব। তাই আমিই লিখি। সব ধামাচাপা থাকবেই বা কেন।

    এটা নব্বইয়ের একদম গোড়ার কথা। তৎকালীন বিই কলেজের গপ্পো। সেটা তখন বেশ নামী কলেজ ছিল। এবং ১০০% বাধ্যতামূলক আবাসিক। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া আর কিছু পড়ানো হত না। নতুন ছেলেদের বলা হত মুর্গি। তাদের গোঁফ-দাড়ি ইত্যাদি-প্রভৃতি কেটে ফেলতে হত। যাতে দেখলেই মুর্গি চেনা যায়। র‌্যাগিং পিরিয়ড বলে একটা ব্যাপার ছিল। লিখিত-পড়িত না হোক, সর্বজনবিদিত। দু-সপ্তাহ না তিন-সপ্তাহ ভুলে গেছি। সেটা শেষ হলে হত জিএফ। অর্থাৎ কিনা গ্র‌্যান্ড ফিস্ট। সেখানে প্রথম বর্ষ হবার কলঙ্ক মোচন হত। তার আগে অবধি মুর্গি।

    এই দু-তিন সপ্তাহে কী হত? যা হত, তা ফেবুতে বিশদে লিখলে ব্যান করে দিতে পারে। তাই সংক্ষেপে বলা যাক, ওই সময়টা কলেজে র‌্যাগিং এর মুক্তাঞ্চল ছিল। নেহাৎই মরে যাবে, বা গুরুতর শারীরিক আঘাত হবে, এ ছাড়া মোটের উপর সব জিনিসই চলত। গুরুতর মানে, পুলিশি অর্থে গুরুতর না, কেউ ঠ্যাঙের ব্যথায় হাঁটতে পারছেনা, এটাও যথেষ্ট গুরুতর। আর মানসিক আঘাতকে হিসেবেই আনা হতনা। বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা থেকে ন্যাংটো করে হাঁটনো অবধি সবই চলত। জিনিসটা শুরু হত সাত-সকালে। ভজ-গৌরাঙ্গ জাতীয় কী একটা গান উইং এ ঘুরে ঘুরে গাইতে হত। সাধারণভাবে বিবস্ত্র হয়ে। তারপর কলেজ যাত্রা। যত্রতত্র "মুর্গি হাত তুলে যা" দৈববাণী হত, এবং দুই হাত তুলে হাঁটতে হত। দুপুরে খাবার সময় ফেরা। তখন একটু রেলগাড়ি জাতীয় 'মজা'। অর্থাৎ কিনা টেবিলের তলা দিয়ে ঢুকে-ঢুকে গোটা ডাইনিং রুম চক্কর দিতে হবে। সবাইকেই দিতে হত, বা রোজই হত, তা নয়, যার যেমন কপাল। তারপর আবার ক্লাস। চারটে নাগাদ শেষ। হস্টেলে একটু দেরি করে ফিরলেও হত, কিন্তু বেশি দেরি করে ফেরা যাবেনা। কারণ 'অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি' আসবে সন্ধ্যেবেলায়। কেউ নিখোঁজ থাকলে হুলুস্থুলু পড়ে যাবে। তারা চলে যাবার পর, প্রকৃত অর্থেই মুক্তাঞ্চল। একে অপরকে বাপ-মা তুলে খিস্তি কর, উইকেটের উপর বস, লকারের মাথায় উপরে উঠে ঝাঁপ মেরে জি ক্যালকুলেট কর, এইসব 'নিরীহ' জিনিস থেকে শুরু করে ন্যাংটো হয়ে নাচ, হাঁটু দিয়ে হাঁট, সবই চলত। নাঃ, মারধোর হত না, ওটাকে বলা হত "ফিজিকাল র‌্যাগিং"। ওই মাত্রায় যে  যাওয়া উচিত নয়, এই নিয়ে মোটামুটি ঐকমত্য ছিল। আর ছিল যৌন পাঠক্রম। সেটা ওই খিস্তি দিয়ে শুরু হয়ে, একজন আরেকজনের উপর উঠে ডেমো দেওয়া অবধি। সত্যিকারের যৌনতায় কাউকে বাধ্য করা হতনা। 

    এবং আবারও, সবার সবকিছু একসঙ্গে হত তা নয়, যার যেমন কপাল। রক্ষা করার মতো সিনিয়ার থাকলে, কিছুই প্রায় হয়নি এমন ছেলেও পাওয়া যাবে। বা কেউ খুব কাহিল হয়ে পড়লেও অবশ্যই ছাড় ছিল। এই জিনিস মোটামুটি ঘুমিয়ে পড়ার আগে অবধি চলত। মানে ১০টা-১১টা। পরদিন আবার ভজগৌরাঙ্গ দিয়ে শুরু।
    এর বিশদ লেখা অসম্ভব। কত কিছুই বাদ পড়ে গেল। তালিকার বন্ধুরা যদি মুখ খুলবে ঠিক করে, বলতেই পারে। তো যাহোক, এই চলত পুরো পিরিয়ডটা। জিএফ, অর্থাৎ কিনা শাপমুক্তির আগের দিন একটা বিশেষ জিনিস হত, যার নাম পাতিপরীক্ষা। এর কোনো নির্দিষ্ট ফরম্যাট ছিলনা। তবে মোটের উপর একটা লেখা পরীক্ষা হত। যাতে টীকা-টিপ্পনি-রচনা এইসব থাকত। "বৌদির সাথে একলা ছাতে" কিংবা "কামানো *দে ঘামানো *ড়া" এই জাতীয়। বানিয়ে লিখলামনা, এই দুটো সত্যিই মনে আছে। আর ছিল ভাইভা। সেটারও নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাট ছিলনা। পাছা এবং যৌনাঙ্গ এই দুইয়ের ছাপ্পা দিতে হত, এটা ছিল সবচেয়ে সাধারণ একটা প্রথা।

    এই অবধি পড়েই যাঁরা আঁতকে উঠছেন, তাঁরা, আমি গ্যারান্টি দিতে পারি, কিছুই বোঝেননি। একে তো বহু জিনিস লেখা গেলনা, তার উপর কিছু বাদও গেল। কিন্তু তার পরেও, পুরো পরিবেশ-পরিস্থিতিটাকে ধরা গেলনা আদৌ। কখনও ফিকশন লিখলে সেটার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আপাতত এইটুকুই বলি, যে, এই কদিনের অভিজ্ঞতা একটা মানুষকে পুরো ঘেঁটে অন্যরকম করে দিতে পারে। জিনিসটা, বাইরে থেকে দেখলে, তারই একটা পরীক্ষাগার মনে হবে। যেখানে একটা ট্রেনিং চলছে। এই ট্রেনিংটা দুটো জিনিস করত। এক, বাইরের আঘাতে অচঞ্চল থাকতে শেখাত অনেক দূর। দুই, বিনা বাধায় কর্তৃপক্ষের সামনে মাথা নোয়াতে এবং নিচের লোকেদের কীটপতঙ্গ ভাবতে শেখাত। অর্থাৎ, পুরোদস্তুর যুদ্ধ এবং সামাজিক হায়ারার্কির শিক্ষানবিশী। এতে আঁতকে ওঠার কিছুই নেই। এই ট্রেনিংটা হিংসা ছাড়া হয়না। এবং পুরুষদের কাছে একেবারেই নতুন কিছু না। ওটা একদম কম বয়স থেকে ঠেঙিয়ে, খিস্তি করে, "মারো নয়তো মরো" বলে-বলে তৈরি করে দেওয়া হয়। পুরুষ বলছি, কারণ এটা সম্পূর্ণ লিঙ্গভিত্তিক একটা প্রকল্প। মেয়েদের বেড়ে ওঠার পদ্ধতিটা সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে এই হিংসাটা থাকেনা।    

    কথা হল, এই জিনিসটা করত কারা? গোটা কলেজ? যাঁদের খুব অস্বস্তি হচ্ছে, তাঁদের একটু স্বস্তি দিই। আমার অভিজ্ঞতায়, সেটাই অবশ্যই শেষ কথা নয়, জিনিসটা আদপেই "আমাকেও র‌্যাগ করেছে, অতএব আমিও করব" এইরকম মানসিকতা থেকে আসেনা। জিনিসটা মূলত চালাত এমন একটা গোষ্ঠী, যারা কলেজে খুব একটা এমনিতে পাত্তা পেতনা। এমনকি ফার্সট ইয়াররাও একটু ডানা গজালে আর পাত্তা দেবেনা। এটাই ছিল তাদের পাত্তা পাবার জায়গা। বাকি বিস্তৃত জনসমষ্টিতে র‌্যাগিং আদৌ জনপ্রিয় কিছু ছিলনা। হ্যাঁ, কেউ বাধা-টাধা দিতনা। হলে, বস্তুত বিশেষ কিছু মনেও করতনা। কারণ, ওটা সে নিজে পেরিয়ে এসেছে। "ধুর ওইটুকুতে আর কী হবে", ইংরিজিতে যাকে নর্মালাইজেশন বলে। "নইলে লেবার চালাবে কীকরে" এই জাতীয় থিয়োরিও শোনা যেত।

    রাজনৈতিকভাবে কোনো সংগঠনই র‌্যাগিং এনডোর্স করতনা। বিই কলেজে তখন ছাত্রপরিষদের রাজত্ব ছিল। র‌্যাগাররাও বেশিরভাগই তাদের সমর্থক ছিল। কিন্তু নেতাদের কখনও করতে দেখিনি। হ্যাঁ, সস্নেহ প্রশ্রয় ছিল। এসএফআই ছিল বিরোধীপক্ষ। তাদের নেতারা র‌্যাগিং বিরোধীই ছিল। কিন্তু সক্রিয় কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। আমরা পিএসএ বলে একটা সংগঠন খুলেছিলাম, আমার প্রথম বর্ষের মাঝামাঝি। আমরাও খুব কিছু করে উল্টে দিয়েছি এমন না। তবে নিজেদের জোরের এলাকাগুলোতে র‌্যাগিং করতে দিইনি। দু-একটা হস্টেলে। বাকিগুলোতে কিছু থামানো যায়নি। আমাদের থার্ড ইয়ারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, প্রথম বর্ষকে আলাদা রাখা হবে। বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ একসময় র‌্যাগিং নিজেরাই আটকে দেওয়া যাবে পুরোটা, বিশ্বাস করতাম। 

    আলাদা হস্টেল হয়ে যাবার পর, বিই কলেজে হিংসা ধাপে-ধাপে অন্য মাত্রায় পৌঁছয়, শুনেছি। কিন্তু র‌্যাগিং আর হতনা, যতদূর জানতাম। বিই কলেজে বোধহয় সত্যিই হয়না আর। আমার ধারণা ছিল, ব্যাপারটা সামগ্রিকভাবেই উঠে গেছে, বা যাচ্ছে, আস্তে আস্তে। সেটা ভুল, দেখাই যাচ্ছে। কারণ, একদিকে তো ট্রেনিং এর পদ্ধতিটা সামাজিক ভাবে এখনও পূর্ণ মাত্রায় চালু। সেই পদ্ধতিটা হঠাৎ কলেজ ক্যাম্পাসে এসে উঠে যাবে ভাবার কোনো মানে নেই। বিশেষ করে, যে সমাজে পুলিশ ঠ্যাঙাবে, উকিল পয়সা-মারবে, মাস্টার টিউশনি-করবে, ডাক্তার গলা-কাটবে, এগুলো অভ্যস্ততা, ইঞ্জিনিয়ার খোড়ো হবে, র‌্যাগিং করবে, সেটাও। সেকালে যাদেরকে পাতি-পরীক্ষা নিতে দেখেছি, আমি মোটামুটি নিশ্চিত, তারাও কার্যকরী যৌন জীবন যাপন করে, সন্তানের চাঁদমুখে চুমু খায়। সমাজের উচ্চাসন আলো করেই বসে আছে। এরা অতি অবশ্যই অধঃস্তনদের কাঁদিয়ে ছেড়ে দিতে পারে, নির্দ্বিধায় ঘুষ-টুষ নিতে পারে, বসের পা-টিপে দিতে পারে এবং প্রয়োজনে র‌্যাগিং-বিরোধী সামাজিক বক্তব্যও রাখতেই পারে, দরকার হলে। ওটাও তো সামাজিক ট্রেনিং এর অংশ। ফলে সব হঠাৎ বদলে যাবে কেন?

    আর নতুনতর যে "প্রগতিশীল" অংশ, তাদের বুলি বদলেছে। আগে বলা হত সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা, এখন একজনকে দেখলাম যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেছে টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি। এসব স্রেফ বুলি। বাংলা বুলি। তার ভিতর দিয়ে ইংরিজি যে বুলিবাজি, সেটা আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। বিশেষত সোসাল মিডিয়া জমানায়। অচেনা লোককে নির্দ্বিধায় তুই-তোকারি খিস্তি-খামারি করা, কেচ্ছাচর্চাকে বাকস্বাধীনতা বলে গৌরবান্বিত করা, এবং খাপ-পঞ্চায়েত বসিয়ে সেটার উপর একটা "প্রগতিশীল" ছাপ্পা মেরে দেওয়া - এ তো এ যুগের ইন থিং। এই যে ছেলেটির মৃত্যু নিয়ে এত কথা, দেখবেন, তার উপরেও একটা ট্যাগ পড়ে গেছে "যৌন পরিচয় নিয়ে" অমুক-তমুক। এই ট্যাগগুলো এখন ফ্যাশান। এই তথাকথিত সংবেদনশীলতার আড়ালে আদতে বাড়ছে হিংস্রতা। সর্বক্ষণ বুলি করে বেড়ানো লোক ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের মসীহা, এ তো চোখে দেখা জিনিস। খামোখা সব বদলাবেই বা কেন হঠাৎ করে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • π | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১০:৪৪522353
  • পড়ে শিউরেই উঠতে হয়। যাদবপুরে ছেলেদের হোস্টেলেও হত নিশ্চয় এরকমই, বন্ধুদের সঙ্গে এসব আলোচনা হয়নি বলে আইডিয়া ছিল না, কী মাত্রায় হয়।
     
  • π | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১০:৪৭522354
  • কাল সায়নের লেখাটা পড়ে এই পদে পদে 'পুরুষত্ব' প্রমাণের চেষ্টা পড়ে চমকে গেছিলাম, আজ মামুর লেখা পড়ে আরো!  এর পিছনে কী মনস্তত্ত্ব কাজ করে ভাবছিলাম,তো তার মধ্যেই এটা পড়লাম!! 
    'I AM REALLY SORRY!!! 

    আমরা পারিনি। আমি পারিনি। এই গিল্ট আমাকে কালকে থেকে তাড়া করে চলেছে। আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। 

    আমরা কয়েকজন মিলে ২০১৭-তে যখন JU Queer Collective শুরু করেছিলাম, আমরা এই স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলাম যে আর কিছু না হয় ক্যাম্পাসের কুইয়ার স্টুডেন্ট-দের জন্য অন্তত একটা সেফ স্পেস তৈরি করতে পারব। আমরা পারি নি। আমি পারিনি। 

    I AM REALLY VERY VERY SORRY!!! 

    এই গিল্ট থেকে আমি কিছুতেই বেরোতে পারছি না। আমি জানি না কাকে SORRY বলছি, কিন্তু আমার খুব নিরুপায় লাগছে। নিজেকে একটা ফেলিয়োর মনে হচ্ছে। আমি ক্ষমা চাইছিও না। 

    যারা একদিন বলত, এসব করে কি হবে, যাদবপুর তো খুব কিউয়ার ফ্রেন্ডলি স্পেস। এখানে নাকি সবাই যে যার পছন্দ মত জামা কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়, তাদের মুখ আজকে বন্ধ। বেশ ভালোই লাগল, যখন দেখলাম যারা একদিন জি.বি. -তে নানান নারীবিদ্বেষী এবং সংখ্যালঘু- বিদ্বেষী কথা বার্তা বলে আমাদের পাশ কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে, তারা আজকাল বিশাল মিছিল টিছিল করছে। শুধু তাই নয়, কালকে এও শুনতে পাবেন যে এই মৃত্যু অস্বাভাবিক ছিল, কোনো রাগিঙ নাকি হয়নি। সেই রাস্তাও তৈরি করা হয়ে গেছে, সচক্ষে দেখতে পেলাম। 

    অবাক হলাম না। আজকাল আর কিছুতেই অবাক হই না। অনেকের মুখে এটাও শোনা গেছে, 'কি এমন করেছে রে যে ঝাঁপ দিতে হলো, আরেকটু নিতে পারল না।' না, এটা সত্যি যে যারা এই অত্যাচার করেছে তাদের কারোর মধ্যে এতটুকুও এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়নি, যে ব্যাস আর করব না, অনেক হয়েছে। এটা কেউ ভাবেই নি। আসলে কেউ ভাবেনি। এরা যৌন নির্যাতন করে করে এমন অভ্যস্ত হয়ে গেছে, যে ব্যাপারটা ওদের কাছে খুবই স্বাভাবিক। খুবই। এটাও শুনতে পেলাম, যে অন্যান্য বাচ্চাদের এটা বলে শাসানো হচ্ছে, 'তোরা মুখ খুললে, তোদেরও এই একই হাল হবে।' 

    ভালোই তো। এত কাল চলে এসেছে। হোস্টেলের পরম্পরা। এগিয়ে না নিয়ে গেলে কি আর ইজ্জত থাকবে? থাকবে না। বেঁচে থাকুক শ্রেণী শাসন। বেঁচে থাক যৌন নিপীড়ন। বেঁচে থাকুক ধর্ষণ। সবই তো পরম্পরা। এগিয়ে না নিয়ে গেলে চলবে কি করে?

    আমি ঘুমাতে পারিনি দু দিন এই ভেবে যে আমরা কি তাহলে ব্যর্থ হয়ে গেলাম? আমাদের কোনো প্রভাবই কি রইল না। এত খাটলাম। এত চেষ্টা করলাম। কিছুই করতে পারলাম না। আমি কান্না থামাতে পাচ্ছিলাম না সারা রাত। আমি যাদবপুর মেন হোস্টেল থেকে দু মিনিটের দূরত্বে থাকি। ঠিক দু মিনিট। আমি কি করে জানতে পারলাম না। এই গিল্ট থেকে আমি কিছুতেই বেরোতে পারছি না। 

    যাদবপুরে বালের পলিটিক্স হয়। যাদবপুর কুইয়ার রাজনীতির জন্য আগেও রেডি ছিল না। এখনও রেডি নেই। শুধু দু চারটে রিসার্চ পেপার বার করে কোনো লাভ নেই। আমরা কি কি ফেস করেছি, তার যদি একটা লিস্ট বানাতে শুরু করি, গোটা বই তৈরি হয়ে যাবে।  

    যাদবপুরে আজকে একজন ছাত্রকে রাগিঙ করে খুন করা হয়েছে শুধু তাই নয়। যাদবপুরে একজন কুইয়ার মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। ল্যংটো করে মেরে ফেলা হয়েছে। যাদবপুরে আজকে একজন কুইয়ার ব্যক্তিকে যৌন নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। এবং সেটা কেউ আটকায়নি। কেউ না। 

    আমি ক্ষমা চাইছি। যাদবপুরের তরফ থেকে নয়। আমি ক্ষমা চাইছি JU Queer Collective -এর তরফ থেকে। আমাদের ব্যর্থতার জন্য। 

    I AM SORRY SWAPNADEEP! WE FAILED YOU! 

    JADAVPUR IS NOT READY FOR QUEER STUDENTS 
    যদি কখনো রেডি হয়, খবর দেব। 

    #ragging #JadavpurUniversity #জুস্তিচেফরশ্বাপ্নাদেএপ'
  • দীমু | 182.69.***.*** | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১১:২১522355
  • পুরোদস্তুর যুদ্ধ এবং সামাজিক হায়ারার্কির শিক্ষানবিশী, ট্রেনিং এর পদ্ধতিটা সামাজিক ভাবে এখনও পূর্ণ মাত্রায় চালু, নর্মালাইজেশন এই বিশ্লেষণগুলোর সঙ্গে একেবারে একমত। ৱ্যাগিংয়ের সঙ্গে ফ্রেশার্স ইভেন্ট, ফেস্ট, ক্যাম্পাস স্টুডেন্ট পলিটিক্স এইসবের প্রত্যক্ষ যোগ আছে। 
     
    এই প্রথা কবে থেকে চালু হয়েছিল সে বিষয়ে সমাজতত্ত্বের কেউ গবেষণা করেছেন কিনা জানিনা। আশির দশকে কিছু কলেজে হঠাৎ একদিন সকালে উঠে কেউ এই জিনিসটা শুরু করলেও ছাইচাপা আগুনের মত জিনিসটা তলায় তলায় এত দ্রুত ভারতের সমস্ত কলেজে ছড়িয়ে পড়ত না। গণপিটুনি ইত্যাদির মতোই সমাজ এই জিনিসটাকেও গোপনে এনডোর্স করেছে। জেলের সঙ্গে হয়ত কোথাও গিয়ে হোস্টেলের তুলনাও চলতে পারে। 
     
    আগে ল্যাপটপ, মোবাইল ছিল না। হোস্টেলে অবসর কাটানোর উপায় ছিল না। তারপর ক্যাম্পাসে মেয়েদের সংখ্যা কম থাকায় ফ্রাস্ট্রেশন। টাইমপাস হিসেবেই ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল বলে মনে হয়।  বেশিরভাগ সময় স্নাতক স্তরের লুজার ছেলেদের কাছে চরকার অভাব থাকে, তারা ক্যাম্পাসে কলার তুলে ঘোঁট পাকিয়ে ঘুরতে চায় এবং আরো জুনিয়রদের নিজেদের দলে টেনে আনার জন্য এসব করে। মাস্টার্স লেভেলে ৱ্যাগিংয়ের কথা শোনা যায় না। কারণ ততদিনে সবাই নিজের চরকায় তেল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
     
    আগের থেকে এখন অনেক অফিশিয়াল রিপোর্টিং চ্যানেল আছে। ফেবু লাইভও করতে পারে কেউ চেষ্টা করলে। করে না, একটা কারণ বাড়ি থেকে দূরে প্রতিকূল একটা জলহাওয়াতে সবাই একটা দল পাকিয়ে থাকতে চায়, তাতে কলেজ ফেস্টে মাতামাতি, নেশা করা, নিজেরা সিনিয়র হলে পরের বছর দলবেঁধে ৱ্যাগিংয়ের রিলে রেসের বাটন হাতে তুলে নেওয়ায় অনেক সুবিধা। গোষ্ঠীতন্ত্র তো হোমো স্যাপিয়েন্সদের বেসিক চরিত্র।
  • UD | 2402:3a80:1985:47d4:378:5634:1232:***:*** | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১১:৩৭522356
  • দুটো জিনিস চোখে  পড়লো  I 
    ইউজিসি  গাইড লাইন  থাকা  সত্বেও  কেন  ফার্স্ট  ইয়ার  স্টুডেন্ট  দের  আলাদা থাকার  ব্যবস্থা  করেনি  কতৃপক্ষ ?
    দুই, প্রাক্তনীরা  কিভাবে হোস্টেল এ থাকতে  পারছে ?
     
  • :|: | 174.25.***.*** | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১২:০৪522357
  • এগারোটা সাঁইত্রিশের দ্বিতীয় প্রশ্নটা সাংবাদিকরা বোধহয় ডিন অফ স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ারকে করেছিলেন। আবাপানুযায়ী উনি সেটা ভিসি রেজিস্ট্রারকে জিগাতে উপদেশ করেন। 
    আর প্রথম প্রশ্নটার উত্তরের সঙ্গে এই সমস্যার যোগ নাই। ছেলেটি প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট হিসাবে হোস্টেলে থাকেনি। আবাপানুযায়ী একটি সেকেন্ড ইয়ারের ছেলের গেস্ট/রুমমেট হিসেবে ছিলো।  
  • কালনিমে | 103.244.***.*** | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১২:৪১522358
  • বি ই কলেজের অভিজ্ঞতা থেকে, লেখার সঙ্গে সহমত - তবে আমাদের সময় ফার্স্ট ইয়ার আলাদা হস্টেল ছিল। 
     
    আমিও দেখলাম - এক জায়গায় আঠেরো বছর বয়সে মানুষকে বড় হয়ে যেতে হয় বলাতে আমাকেও toxic masculinity শুনতে হল - কিন্তু এটা জাস্ট politics - পুরুষ মহিলা কেউ বাদ যায় না।
     
    যেটা চাপা পড়ে যাচ্ছে সেটা তীব্র homophobia - সেটা নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার।
  • দীপ | 2402:3a80:196f:87d3:878:5634:1232:***:*** | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৯522359
  • যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যু একদিকে যেমন আমাদের কাছে মর্মান্তিক, অন্যদিকে তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেলের ভেতরে ধারবাহিকভাবে চলতে থাকা র‍্যাগিং পরম্পরার হিংস্রতম চেহারা ফুটিয়ে তুলেছে স্বপ্নদীপের মৃত্যু। সামাজিকতা শেখানোর নাম করেই হোক, কিংবা বন্ধুত্ব করার ভুয়ো যুক্তি দেখিয়েই হোক, কোনভাবেই র‍্যাগিং করা কিংবা তাকে সমর্থন করার চেষ্টা আসলে একইরকম ঘৃণ্য। 
     
    বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হিসেবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি: 
     
    ★ দোষীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে। 
    ★ ইউ. জি. প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য ক্যাম্পাসের ভিতর আলাদা হোস্টেল নির্মাণ করতে হবে। 
    ★ মেইন হোস্টেলের র‍্যাগিং এর পরম্পরা বন্ধ করতে, কেবল মৌখিক ও লোক দেখানো নয়, সত্যি সত্যি কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। 
    ★ পাস আউট ছাত্রদের হোস্টেলে থাকার রীতি বন্ধ করতে হবে। 
     
    ১. অরুন্ধতী ‌ ভট্টাচার্য
    ২. সৈকত ব্যানার্জী
    ৩. শুভময় মুখার্জী
    ৪. অরুণাভ মিত্র
    ৫. অমিত অধিকারী 
    ৬. বীথিকা সাহানা
    ৭. তৃষা মুখার্জী
    ৮. মহর্ষি সরকার
    ৯. ঈশিতা মণ্ডল
    ১০. জিশান হাবিব
    ১১. সুতপা গিরি
    ১২. তুহিন ভট্টাচার্য 
    ১৩. লতিফ হোসেন
    ১৪. স্মিতা দত্ত
    ১৫. অনীশ চ্যাটার্জী
    ১৬. মান্ডবী ভট্টাচার্য্য 
    ১৭. গার্গী রায় 
    ১৮. সমর্পিতা সান্যাল
    ১৯. উত্তীয় বসু
    ২০. পৃথা দাস
    ২১. অর্পিতা পাল সরকার
    ২২. দেবত্রী ঘোষ
    ২৩. বিদিশা রুদ্র
    ২৪. রিনি বিশ্বাস
    ২৫. সাহানা দত্ত
    ২৬. অনুজা চট্টোপাধ্যায় 
    ২৭. মৌসুমী ভক্ত
    ২৮. সুদীপ্তা সরকার। 
    প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীবৃন্দ
    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
     
     
  • দীপ | 2402:3a80:196f:87d3:878:5634:1232:***:*** | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১৪:০১522360
  • অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ সর্বত্র প্রসারিত হোক।
  • দীপ | 2401:4900:1229:b2cd:1d4f:f681:6e3e:***:*** | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১৬:২৬522363
  • আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী ছিলাম। হস্টেলে থাকতাম। হস্টেলে আর্টসের মেয়ে বেশি থাকত এবং আমি তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধপন্থী ছিলাম । বিভিন্ন সময়ে আমাকে বিভিন্ন ভাবে টারগেট করত । যদিও তাতে আমার একটি কেশ-ও ছেঁড়া যেত না । তবুও মাঝে মধ্যে শক্তি পরীক্ষার লিট্মাস টেস্ট করতে আমাকেই বেছে নিত।
    ফাইনাল ইয়ারে পড়ি তখন । এক রাতে তারা দাবি করল যে বাথরুমে ব্লাড দেখা গেছে বলে সবার প্রাইভেট পার্টসে প্যান্টের উপর দিয়ে হাত দিয়ে দেখবে কে কে স্যানিটারি ন্যাপকিন পরে আছে । যারা ওখানে উপস্থিত ছিল , তারা মাত্র কয়েকজন । এমন নয় যে সবাই তাতে অংশ নিয়েছিল। 
    হাতে পলিথিন বেঁধে একজন এগিয়ে এসে সবাইকে চেক করছিল । আমি স্বাভাবিক ভাবেই অ্যালাউ করি নি বলে আমাকে তারা তাদের খাপ পঞ্চায়েতে দোষী স্যবস্ত করেছিল এবং বাথরুম পরিস্কার করার শাস্তি ধার্য করেছিল ।
    আমাকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে জানে , তারা বুঝতেই পারছে এই নিদানে আমার কিচ্ছুটি এসে যায় না । আমি তাদের কথা শুনি নি ।হস্টেল সুপারকে জানানো হয়েছিল, তিনি আবার এই সংখ্যাগুরুদের উপরে কথা বলার ক্ষ্মতা রাখতেন না; ডিপার্ট্মেন্টে জানিয়েছিলাম , বেশিরভাগ পুরুষ শিক্ষক আনকমফ্ররটেবল ফিল করেছিলেন । একজন ম্যাডাম বলেছিলেন , “ একটা সাঁওতাল মেয়েকে ওরা ঘরে ঢুকতে দিত না । তুমি তো ঘরে থাকার জায়গা পাচ্ছো ।“
    যাই হোক , আমি ছাদ থেকে ঝাঁপ দিই নি , কারণ আমি জানতাম এই মানুষের মতন দেখতে প্রাণীগুলো-ই পরে মিডিয়াতে বাইট দেবে আর ক্রোকোডাইল টিয়ারসের বন্যা হবে । 
    ©Puja S. Hira
  • দীপ | 2401:4900:1229:b2cd:1d4f:f681:6e3e:***:*** | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১৬:৩১522364
  • স্বপ্নদীপের হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে...
     
    আরেকজনের অভিজ্ঞতা।
     
    ১৯৯৭ এর জুলাই মাস, স্থান বেনিয়ান হল হস্টেল, কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়। আমি তখন ইংরেজী সাহিত্যের স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সাহিত্য যে খুব ভাল লাগত, তা একেবারেই নয়। বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করা সত্বেও এক মহা পণ্ডিত দাদার বুদ্ধিতে কাল্যানীতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তে শুরু করি। সেই পন্ডিত দাদা আমার থেকে বছর তিনেকের বড় ছিল আর আমার স্কুলেই পড়ত। আমার মামা বাড়ি ছিল কাল্যানীতে আর ওই দাদাও তখন কাল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত । আমাকে সেই অর্থে গাইড করার কেউ ছিলনা। আমাকে বোঝাল বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে কোন লাভ নেই। রসায়ন নিয়ে পড়তে গিয়ে তা সে ভালো মত টের পাচ্ছে ; তার থেকে ইংরেজী নিয়ে পড়লে, স্কুলে চাকরী নিশ্চিত। ওই দাদা এস. এফ. আই এর এক মস্ত বড় নেতা ছিল। আমিও ভাবলাম ভালই হল, হস্টেল পেতে আর অসুবিধা হাবে না, ওর হস্টেলে গিয়েই উঠব। ও থাকত পি. জি. থ্রি হস্টেলে। আমি ওকে ছাড়া আর কাউকে চিনতামও না। 
     
    তখন হস্টেলগুলিতে অমানবিক মানসিক অত্যাচার চলত র‍্যাগিং এর নামে। আর র‍্যাগিং এর জন্য কুখ্যাত ছিল বেনিয়ান হল, কারণ আর কিছুই নয়, বেনিয়ান হল ছিল কাল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে বড় হস্টেল। একশ কুড়িটা রুম, দুটো উইং- নর্থ উইং আর সাউথ উইং। হস্টেলে থাকার প্রধান শর্তই হল, প্রত্যেক বোর্ডারের ঘরে ঘরে গিয়ে পরিচয় করা।যতক্ষণ সেই পরিচয় পর্ব শেষ হয় ততোক্ষণ নিস্তার নেই। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেই দাদা আমাকে বেনিয়ান হল হস্টেলেই ব্যবস্থা করে দেয়। আমি খুব দ্বিধা দ্বন্দ নিয়ে ওই হস্টেলে গিয়ে উঠলাম। আমার রুমমেট ছিল রাজীব ব্যানার্জী, জুয়োলজির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। যাহোক পরিচয় পর্ব কোন মতে কাটিয়েতো উঠেছিলাম কিন্তু ভাল মতো বুঝতে পারছিলাম ইংরেজি সাহিত্য আমার জন্য নয়। তাই পড়াশুনায় মন বসলো না, সারা দিন কেবল খেলে বেড়াতাম। 
     
    হস্টেলে এই ধরণের ছেলেদেরই কদর বেশি।সকলে আমাকে ভালবাসত। তাই তিন বছরের স্নাতক পড়া শেষ করলেই বেনিয়ান হলের প্রিফেক্ট আর তার পর হস্টেল হল’ডের জেনারেল সেক্রেটারীও নর্বাচিত হই। আমাদের হস্টেল একটু স্বতন্ত্র ছিল। তখন বামফ্রন্ট মধ্য গগনে থাকলেও , সেই সময় একমাত্র বেনিয়ান হল হস্টেলে এস. এফ. আই এর সেই রকম নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আমি যখন হস্টেলের দ্বায়িত্বে তখন এত বড় হস্টেল থেকেও এস. এফ. আই এর কোন নেতা ছিল না। পার্টির ওপর মহল পর্যন্ত এ নিয়ে চিন্তায় ছিল। যেখানে সব হস্টেল থেকে দলে দলে এস. এফ. আই , ছাত্রদের পার্টির বিভিন্ন মিটিং মিছিলে নিয়ে যেতে পারতো, আমাদের হস্টেলে তা হত না। আর আমিও ক্লাস বাদ দিয়ে জোর করে ছাত্রদের মিটিং মিছিলে নিয়ে যাওয়ার একদমই পক্ষপাতি ছিলাম না। আমাদের হস্টেলে পৃথক কোন রাজনৈতিক দলের প্রভাব ছিল না এবং তার কোন সুযোগও ছিলনা। ছাত্র ইউনিয়ান ইলেকশানে যদি অন্য কেউ নমিনেশান তুলতো তবে তার ওপর অবর্ননীয় অত্যাচার নেমে আসত। হস্টেলে যারা থাকতো তাদের তো কোন সাহসই ছিলনা। যারা ডে স্কলার ছিল তাদের মধ্যে কেউ যদি নামিনেশন তুলতো তাহলে তার কপালে জুটতো মার। জামা প্যান্ট ছিঁড়ে গলা ধাক্কা দিতে দিতে ট্রেনে তুলে দিত সি পি এমের গুন্ডারা। এস. এফ. আই এর নেতাদের আস্ফালন ছিল অকল্পনিয়। 
     
    অনেক দিন থেকেই আমাদের হস্টেলকে উচিত শিক্ষা দেবার ছক কষা চলছিল। কিন্তু এস. এফ. আই পেরে উঠছিল না হস্টেল বড় হওয়ার জন্য আর আমাদের ইউনিটির জন্য। আমাদের মধ্যে হস্টেল সেন্টিমেন্ট ছিল খুব গভীর। এই সময় ১৯৯৫ সালে হস্টেলে আসল একটি ছেলে। নাম বিশ্বজৎ , সোশিওলজি , প্রথম বর্ষ। মাথায় মস্ত বড় টাক আর ইয়া বড় গোঁফ। আমরা একটু অবাকই হয়েছিলাম এত বড় বয়সে প্রথম বর্ষে পড়তে আসায়। কেউ কেউ বলেছিল বাংলাদেশের ছেলে কিন্তু কথায় কোন বাংলাদেশী টান ছিলনা। ও সক্রিয়ভাবে এস. এফ. আই করতো। ওর হস্টেলে ডাক নাম ছিল টেঁকো বিশু। আমি যখন বেনিয়ান হলের প্রিফেক্ট তখন ওর সেকেন্ড ইয়ার। ও থাকতো হস্টেলের সাউথ উইং এর দোতালায়। দিন দিন ওর দৌরাত্ম্য বাড়তে লাগলো। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। ওর র‍্যাগিং ছিল মারাত্মক। ওর জন্য এম এ প্রথম বর্ষের ছাত্ররা পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে হস্টেল ছেড়ে চলে যেত। ভাল ভাবে সুতর্ক করলেও কর্ণপাত করত না। ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করছিলাম যে কিছু দিন অন্তর অন্তর সাউথ উইং এর দোতালায় পিকনিক হচ্ছে। বক্স বাজছে আর খাসীর মাংসের গন্ধে সমগ্র হস্টেল ম-ম করছে । আমদের মাসে একবারই গ্র্যান্ড ফিস্ট হত। ফ্লোরে ফ্লোরে ফিস্ট হওয়ার কোন রেওয়াজ ছিলনা। আমরা সবাই আবাক হয়ে যেতাম। তারপর খবর পেলাম যে হস্টেলের মাঠে যে ছাগল চড়ে বেড়াত তার থেকে ধরে এনে বিশু বাথরুমে কেটে ফেলতো। মাংস খাওয়ার লোভ দেখিয়ে আর নূতনদের ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ করিয়ে রাখত। ছাগল কেটে ফেলার পর, মাথা, চামড়া, নাড়িভুড়ি পুরানো ব্যাগে করে ট্রেনের কামরায় প্রথম বর্ষের কোন ছাত্রকে দিয়ে রেখে আসতো। এরকম ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছিল। আমি যখন জানতে পারলাম, হস্টেলের প্রিফেক্ট হিসেবে একটু কড়া করেই সতর্ক করলাম ওকে। বলেছিলাম, ‘ পার্টি কর আর যাই কর হস্টেল থেকে বের করে দেব’।
     
    এরপর কিছুদিন সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে হস্টেলে একটি ঘটনা ঘটল। স্ট্যটিস্টিক্স এর একজন দাদার রুমে ওর সহপাঠী প্রায়ই আসতো। মহিলা গেষ্ট আসলে, রুমের দরজা খোলা রাখারই নিয়ম ছিল। ওই দাদা থাকত হস্টেলের সাউথ উইং এর দোতালায়্ ।এই বিষয়ে ওই ফ্লোরের অনেকের ঈর্ষা ছিল, কারণ আর কিছুই নয় অনেকের অনেক চেষ্টাতেও যখন প্রেম হয়নি তখন তাদের মধ্যে অনেকেই হয়ে উঠেছিল তীব্র প্রেম বিরোধী। বিশু ছিল তাদের লিডার। ওর কথা ছিল , ‘ আমদের সব গেল শুকিয়ে, আর তুমি থাকবে রসে বসে ! দেখাচ্ছি মজা।‘ ক্রমে ও আর কয়জনকে নিয়ে দাবি জানাতে লাগলো যে- কাউকেই মহিলা গেষ্টকে নিজের রুমে নিয়ে যাওয়ার আনুমতি দেওয়া যাবে না। এবিষয়ে পুরো হস্টেল দুটো শিবিরে ভাগ হয়ে গেল। জেনারেল বডির মিটিং ডাকা হল। তুমুল হইচই। যাদের প্রেমিকা আছে তারা এই দাবীর বিরোধী, আর যাদের প্রেমের সম্ভবনা আছে তারাও বিরোধী। অনেকের মা, দিদিরা বাড়ী থেকে দেখা করতে আসতেন, তারাও এর বিরোধী ছিল। কিন্তু জি বি তে সিদ্ধান্ত হল মহিলা গেষ্ট আসলে রুমে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
     
    হষ্টেলে প্রথম ঐক্যে ফাটল ধরল। আর সি পি এম পার্টি যেন এর অপেক্ষাতেই ছিল। সবার অলক্ষ্যে বিশু একটা লিষ্ট তৈরী করল। গোপনে তাদের সবাইকে ছাত্র ইউনিয়ান অফিসে যেতে বলা হল। আমি প্রিফেক্ট, অথচ আমি কিছু জানতে পারলাম না। পরে শুনেছি ওই মিটিং -এ অনেক তাঁবর তাঁবর নেতা এসে ভাষণ দিয়ে ছিল। বড় কিছু যে হতে চলেছে তার একটা আভাস দেওয়া হয়েছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে এও তাদেরকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে পার্টির সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করলে ফল ভুগতে হবে। সবাইকে বলে দেওয়া হল এ বিষয়ে টুশব্দটি না করতে। 
    ঠিক তার পর দিনের ঘটনা। আমাদের ডিনার দশটার মধ্যে হয়ে যেত।সামনেই পরীক্ষা ছিল তাই রাতের খাবার হয়ে গেলে বাইরে আড্ডা না দিয়ে আনেকেই ঘরেই চলে গিয়েছিল। আমিও আমার ঘরেই ছিলাম। ডাইনিং এ খেতে গিয়ে সবাইকে একটু অস্বাভাবিক রকম চুপচাপই দেখেছিলাম। বিশুদের দলের কয়েকজন কানে কানে ফিস ফিস করছিল, কিন্তু ঘ্রূনাক্ষরে বুঝতে পারিনি কিছুক্ষ্ণের মধ্যে কি ঘটতে চলেছে ! হটাৎ বাইরে খুব শোরগোল শুরু হল। কিছুক্ষ্ণের মধ্যেই তা আর্তনাদে পরিনত হল। একশর বেশি ছেলে বাঁশ, লোহার রড নিয়ে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে আক্রমণ করছে।আর উদ্বাস্তু কলনির ছেলারা এসেছিল পার্টির নির্দেশে।পুরো হস্টেল ওরা ঘিরে ফেলেছিল। মুখে অশ্লীল গালাগাল আর সঙ্গে দুমাদুম দরজায় লাথি। চারিদিকের থেকে কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ আর বাঁচাও , বাঁচাও চিৎকার । আমি সাউথ উইং এর টপ ফ্লোর অর্থাৎ তিন তলায় থকতাম। আমি কি করবো না বুঝতে পেরে ছাদে চলে গেলাম। ছাদ থেকে দেখতে পেলাম কি বীভৎস দৃশ্য। এক এক করে সিনিয়ার ছেলেদের ধরে মারতে মারতে বাইরে বের করে আনছে। প্রথমে গ্রাউন্ড ফ্লোর তার পর ফার্স্ট ফ্লোর। মার খাচ্ছিল বিশেষ করে তারাই যারা গোপন মিটিং এ ডাক পায়নি। যখন ছাদ থেকে শুনলাম বিশু আর ওর দলবল চিৎকার করে আমাকে খোঁজ করছে, আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ছাদের মধ্যে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে দৌড়াচ্ছি আর ওদের কন্ঠস্বর ক্রমে গাড় হচ্ছে। ছাদের উপর বড় জলের ট্যাঙ্ক ছিল। তার তলা ছিল অন্ধকার আর বড় বড় শ্যাওলা আর ছত্রাকে ভর্তি। ট্যাঙ্ক থেকে সবসময় জল চুইয়ে পরে পরে যায়গাটা ছিল একদম স্যাঁতসেঁতে । ছাদ থেকে ট্যাঙ্কের উচ্চতা এক হাতের মত। আমি প্রাণ ভয়ে ট্যাঙ্কের তলায় শুয়ে পরে ঘষটাতে ঘষটাতে গিয়ে ঢুকলাম। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এল বিশুর দলবল। ওরা খুঁজে চলেছে সমানে। এরই মধ্যে বিশু ট্যাঙ্কের তলায় লোহার একটা রড দিয়ে খোঁচাতে লাগল। নিকষ অন্ধকার, ট্যাঙ্কের তলায় কিছু দেখবার অবকাশ নেই। কিন্তু বিশু সমানে খুঁচিয়ে চললো। যেন ওর দৃঢ় বিশ্বাস ট্যাঙ্কের তলায় কেউ না কেউ আছে। আর আমি মুখ চেপে একদম ছাদের বাউন্ডারি ওয়ালের দিকে ঠেসে যেতে লাগলাম। হাতের রড ছোট ছিল তাই আমার কাছে পোঁছাচ্ছিল না । বার বার অকথ্য গালাগাল দিয়ে বলছিলো , ‘বেরিয়ে আয় না হলে প্রাণে মেরে দেব’। ওর মাথায় যেন খুন চেপে গিয়েছিল। এবার গালাগাল দিতে দিতে এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা লম্বা বাঁশ নিয়ে এসে আবার খোঁচাতে লাগল। এবার আর রক্ষা নেই। বাঁশের গুঁতো গায়ে লাগতেই ওর অনুমান সঠিক হয়ে গেল। এবার ও বেপরোয়া ভাবে পৈশাচিক উল্লাসের সঙ্গে খোঁচাতে লাগল। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, ‘ আমি রাজেশ, আমার খুব লাগছে, আমি বেরিয়ে আসছি, আমি বেরিয়ে আসছি।‘ এবার বিশু বাঘের মতো গর্জন করতে লাগলো। কোন মতে আমি যেই মাথা বের করেছি বিশু টিউবলাইটের লোহার ফ্রেম দিয়ে আমার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করতে লাগলো। আমার চোখে ছিল একটা মোটা সেলুলয়েডের ফ্রেম আর আমি দুহাত দিয়ে মাথাটাকে রক্ষা করে চলেছি। লম্বা বাঁশ দিয়ে তো মারা যায় না, তাই নিমেষে বিশু বাঁশ ফেলে লোহার ফ্রেম তুলেনিয়েছিল। আমার দু হাত ক্ষতবিক্ষত, মাথা ফেটে গিয়েছে। সব কমরেডরা তখন আমাকে শাসাচ্ছে। তারই মধ্যে শান্তনু বলে আমার ইংরেজী বিভাগেরই এক ভাই যে পাশের হষ্টেলে থকতো, একটা আস্ত থান ইট দিয়ে আমার বা-গালের ঠিক ওপরে সজোরে মারলো। আর সঙ্গে সঙ্গেই মুখ ফুলে বাদিকের চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। আমি রেহাই পেলাম মারের হাত থেকে। সব ছাদ থেকে এক এক করে নেমে গেল। সব শেষে নামল বিশু। আর নামার সময় কানের কাছে চাঁপা গর্জন করে বলে গেল, ‘ কিরে শালা আমাকে না বলেছিলি তুই হষ্টেল থেকে বের করে দিবি। দেখ কেমন লাগে’। 
     
    যে ছেলে একা একটা পাঠা কেটে ফেলতে পারে নিজে হাতে, তার থেকে এই রকম নিশংসতা একটূও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম শান্তনুর আচরণে। যে ছেলে ডিপার্টমেন্টে দেখা হলেই দাদা দাদা বলে, চশমা পরা শান্ত গোছের দেখতে, সে যে আমাকে ইট দিয়ে এই ভাবে মুখে মারবে, আমি কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি। আমি আস্তে আস্তে ছাদ থেকে তিনতলায় নেমে এলাম। চোখের সামনেই দেখলাম হস্টেলের সবচাইতে লম্বা আর শান্ত ছেলে সৌমিন্দ্র দাকে ওই লোহার বাটাম দিয়ে বিশু এমন মাথায় মারলো যে একটা সারে ছয় ফুটের ছেলে ঠিক একটা কলা গাছের গোড়ায় দা দিয়ে কোপ দিলে যে ভাবে পরে যায়, ঠিক সে ভাবে পরে গেল। ও কিছুক্ষণের জন্য সেন্সলেস হয়ে গেল। 
     
    এবার নামলো সি পি এমের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিম। আমাদের সবাইকে কর্ডোন করে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হল। জিয়া দা বলে এস এফ আই- এর এক সিনিয়ার দাদা স্কলার হষ্টেল থেকে এসেছিল বেশ কয়েকজন কে নিয়ে পুরো ব্যাপারটাকে সামাল দিতে। খুব ভাল ভাবে সামালও দিলো। একজন ছেলেও পুলিশের কাছে গেল না। ডাক্তার কোন ঝামেলা করলো না। আমার হাতে কপালে স্টিচ পড়ল। আর অনেকেরই পড়ল। সেই রাতে একটা উপলব্ধি হল যে সংগঠিত আক্রমণকে প্রতিহত করা সহজ নয়। প্রাণের বান্ধবরাও পাশে দাঁড়ায় না। পর দিন এক এক করে যারা মার খেয়েছিল সবাই একসঙ্গে হস্টেল ছেড়ে দিল। প্রায় পয়ত্রিশ জন। পর দিন সকালে আমার শহরের সেই মহা পন্ডিত দাদা, যার ভরসায় আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম, হাতে একটা হরলিক্স নিয়ে সান্তনা দিতে এসেছিল। আমি বলেছিলাম আমার মামার ছেলেরা আছে, আমি পুলিশে যাব। আমি বিশুর শাস্তি চাই। ও আমাকে বোঝাল এসব করে কোন লাভ নেই কারণ বিশু একা না , ওর সঙ্গে পুরো পার্টি আছে। আমি যেন এসব না করে ভাল করে এম- এর পরীক্ষা দিই। আর যাবার সময় বলেগিয়েছিল, ‘ জলে থেকে কুমীরের সঙ্গে লডাই করে কি লাভ?’  
     
    পরীক্ষা অবশ্য আর দেওয়া হয়নি। দুই তিন দিন হস্টেলে ছিলাম, আতঙ্কে ঘুমাতে পারিনি। সহপাঠীরাও এড়িয়ে চলতে আরম্ভ করল। বেনিয়ান হস্টেল পার্টির কন্ট্রোলে এলো সম্পূর্ণ ভবে আর বিশুর গুরুত্ব বেড়ে গেল এস এফ আই- এ। কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হলাম। আমি ছাড়া সবাই এম এ পরীক্ষা দিল। আর আমি বনগাঁ ফিরে গেলাম।
     
    আমাদের যে কি দোষ ছিল তা আমরা কেউ এত দিনেও বুঝতে পারিনি। না আমরা সি পি এম এর বিরুদ্ধ পার্টি করেছিলাম না আমরা ওদের বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা কেবল আমাদের মতো থাকতে চেয়েছিলাম, দলের দাসত্ব করতে চাইনি। তার জন্য এত বড় শাস্তি। তখন না ছিল ফোন ,না ছিল এত নিউজ চ্যানেল। এই হাড় হিম করা সন্ত্রাস বাইরের কেউ জানতেও পারেনি। ২৭ বছর কেটে গিয়েছে, বিশু সি পি এম থেকে তৃণমূলে গিয়েছিল। এবার হয়তো আবার বিজেপি তেও আসবে। আমি হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিলাম, কিন্তু হাজার হাজার ছাত্র আছে যাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। 
     
    রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে, মানবতার প্রতি বিন্দু মাত্র শ্রদ্ধা থাকলে কোন রাজনৈতিক দল কি এই রকম অমানবিক সন্ত্রাসকে অনুমোদন করতে পারে? আপনারাই বিচার করবেন। আমি যা কিছু লিখেছি সব প্রমান আছে।একটি বর্ণও অতিরঞ্জিত নয়। অনেকের নামই নিতে পারি, নিলাম না। তারা অনেকেই এখন কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছে। এত বছর পরে কাউকে বিড়ম্বনায় ফেলা আমার অভিপ্রায় নয়। যাদবপুরের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপের হত্যায় ২৭ বছরের পুরনো স্মৃতি আবার দগদগে হয়ে উঠল। র‍্যাগিং এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন হয়েছিল। আমাদেরও হস্টেল সুপার ছিল, যেমন ঠিক আজ যাদবপুরে আছে। আমাদের সুরক্ষা দিতে তিনি ব্যার্থ ছিলেন, যাদবপুরের সুপারও ব্যার্থ হলেন আর একটা প্রাণ চলে গেল। আমার একটাই প্রশ্ন যে "জুটা" সব ব্যাপারেই অতি সক্রিয়, তারা কি জানে না হস্টেলে কি হয় ? যাদবপুরে অনেক ছাত্রছাত্রী, বিশেষ করে আর্টসের, যে গাঁজাতে আসক্ত হয়ে জীবন নষ্ট করে ফেলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে, তা কি শিক্ষকদের অজানা?
     
     শিক্ষকরা সব সময় ছাত্রদের রোল মডেল। তাদের দেখেই ছাত্রছাত্রীরা যাদবপুরে বামপন্থী ভাবধারায় আসে। তাহলে এখন তাঁরা দায় নেবেন না কেন ? ছাত্র শিক্ষক নিবিড় সম্পর্ক মানে কখনোই পুত্রসম ছাত্রের থেকে সিগারেট চেয়ে খাওয়া নয়। আর অনেক বিষয় আছে তার উল্লেখ নাই বা করলাম। করলে অনেকেই বলতে পারে - কাক হয়ে কাকের মাংস খাচ্ছি।
  • উফফফফ | 2405:8100:8000:5ca1::83:***:*** | ১২ আগস্ট ২০২৩ ১৭:২৪522365
  • এ ছাগলচোদাটা সেই ঘ্যাপঘ্যাপ কপি মেরেই যাবে। আজীব উদগান্ডু। নিজে এক লাইন লিখবে তারপর সমানে কপিপেস্ট যেন ওরই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে আর কেউ ফেবু দেখে না। নিজের নামটা টঙে দেখার লোভে শালা এমন সিরিয়াস কন্ডিশানেও স্প্যাম করে চলেছে। প্রবৃত্তি দেখে ঘেন্না লাগে।
  • দীপ | 42.***.*** | ১৪ আগস্ট ২০২৩ ২২:০৪522477
  • আরেকজনের অভিজ্ঞতা।
     
     
    র‍্যাগিং - স্বপ্নদ্বীপ, আমি ও যাদবপুর ইউনিভার্সিটি 
    নবকুমার হালদার 

    বাংলা অভিধান ঘাটতে ঘাটতে র‍্যাগিং শব্দের এই অর্থগুলো খুঁজে পেলাম - অত্যধিক হৈ-হুল্লাড় করা, জালাতন করা, তিরস্কার করা, রসিকতার নামে অত্যাচার করা। র‍্যাগিং শব্দটা খুব পরিচিত কিন্তু অভিধানিক অর্থগুলো হয়তো অনেকেই জানেননা। র‍্যাগিং শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয় Professional life থেকে সমাজের সর্বক্ষেত্রে এটা প্রচলিত। 

    আমি Jadavpur University Engineering স্টুডেন্ট এবং আমি হোস্টেলে থাকতাম। সময়টা 1998। আমার প্রথম Kolkata আসা। Yes, গর্ব করি আমি Jadavpur University স্টুডেন্ট। আমার মতো গরিব একজন below average student এর কাছে এটা স্বপ্ন ছিল। বড়জামাইবাবু আমাদের বাড়ির অন্য সবার মতো আমাকে প্রথমদিন হোস্টেলে ছেড়ে আসেন। ভীষণ Excited ছিলাম নতুন জীবন শুরু করতে চলেছি কিন্তু মনখারাপ ছিল বাড়ি এবং পুরোনো বন্ধুদের ছেড়ে আসতে হয়েছিল। সত্যি বলছি এর আগে র‍্যাগিং শব্দ এবং র‍্যাগিং কি আমি জানতাম না। Recently আমি একটা MNC-তে as a GM join করেছি। Professional life এও র‍্যাগিং আছে তবে একটু অন্যরকম। এখানেও নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে কিন্তু কোথাও একটা System bindings আছে যার জন্য এটা প্রকট নয়। স্বপ্নদ্বীপ এর ঘটনাটার কিছুদিন আগেই আমি ভেবেছিলাম র‍্যাগিং নিয়ে কিছু লিখবো কিন্তু সময় পাইনি। হটাৎ করে news টা দেখে সত্যি খুব মর্মাহত। 

    আমার হোস্টেলের প্রথমদিন। কাওকে চিনিনা। হটাৎ উপর থেকে চিৎকার শুনতে পেলাম যে “নতুন মুরগি এসেছে!” কেও চিৎকার করে বলছে “ওই মুরগি, এদিকে আয়।” গেলাম। দেখি একজন দাদা খালি গায়ে, শুধু underwear পরে cigarette খাচ্ছে, চোখমুখ লাল হয়ে আছে। পরে বুঝেছি ওটা cigarette ছিলোনা, ওটা গাঁজা ছিল। আমাকে জিগেস করলে “কোন dept.?” আমি কিছু answer করতে পারিনি কারণ আমি বুঝতেই পারছিলাম না questione টা কি ! Department টাকে short form এ dept. বলা হয়, পরে বুঝেছি। শুরু হয়ে গেলো আমার র‍্যাগিং। অকথ্য গালিগালাজ, মারধর। মনে হচ্ছিলো আমি বোধহয় ভুল করে অন্য কোথাও ঢুকে পড়েছি। বুঝতে পারছিলাম না আমার অন্যায়টা কি ! আমি ওনাকে “আপনি”বলেছিলাম, তারজন্যও মার খেলাম। র‍্যাগিং নাকি সিনিয়রকে রেস্পেক্ট করার জন্য করা হয়, আমি তো জানি “আপনি” শব্দটা আমরা কাওকে সম্মান জানিয়ে ব্যবহার করি। তাহলে আমি মার খেলাম কেন? জানিনা ! দাদা বললো তেল দিয়ে বডি-ম্যাসাজ করে দিতে। তখন দুপুরবেলা। Lunch-break  এ হোষ্টেলে এসেছি। বললাম ক্লাস এ যেতে হবে এখন, ফিরে এসে করে দেব। আবার চড়, গালিগালাজ। বাধ্যহয়ে শুরু করলাম ম্যাসাজ। শুরুহলো পরিচয় পর্ব। নাম, ধাম, বাড়ি। বাড়িতে কে কে আছে। দিদি আছে কি না। দিদির বয়স কত ! দিদির বিয়ে হয়েছে কি না ! এগুলো normal। কিন্তু এরপরের প্রশ্নগুলো নোংরা। বলতে চাইনা কিন্তু আজকে বলবো কারণ তাহলেই বুঝতে পারবেন কতটা মানসিক যন্ত্রনা হলে স্বপ্নদ্বীপ-রা মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরে। তবুও পুরোটা বলতে পারবো না কারণ ওই শব্দগুলো বলা যায়না। শুধু এতটুকু বলছি জিজ্ঞেস করা হয় “দিদির শরীরের কোন কোন অংশ আমি দেখেছি, দিদির শরীরের কোন কোন অংশ আমার শরীর ছুঁয়ে গেছে, দিদির সাথে Sex করেছি কি না, ভেজা শরীরে দিদিকে দেখেছি কি না ইত্যাদি।” ছিঃ!! তোমাকে এগুলো বলতে হবে, শুধু হ্যাঁ বা না বললে চলবে না তোমাকে description দিতে হবে আর দাদারা এটাই enjoy করে! আর যদি বলো girlfriend আছে তাহলে প্রশ্নগুলো দিদির প্রশ্নের কয়েকগুন বেশি নোংরা হয়। girlfriend এর সারা শরীরের বর্ণনা দিতে হবে আর সেটা থেকে দাদারা sex enjoy করে। বলা যায় দূর থেকে Rape করা হয়। ছিঃ ছিঃ!! বাবা-মা কে গালি দেওয়া, বাড়ির সবাইকে গালি দেওয়া এগুলো খুব normal। কেও কেও এগুলো সহ্য করতে পারেনা আর তখন সে স্বপ্নদ্বীপ হয়ে যায়। দেশের অন্যতম সেরা Jadavpur University!

    আমি এতক্ষন র‍্যাগিং এর One percent ও বলিনি। যে রকম ভাবে physical torture করা হয়, you can’t imagine! খেলার নাম করে নতুনদের লড়িয়ে দেওয়া হয় অন্ধকার ঘরে, কারো মাথা ফাটে, কারো হাত, কারো পা ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোতো থাকে। কাওকে Complaint করা তো দূরে থাক, কারো সাথে শেয়ার করা যেতনা। 

    স্বপ্নদ্বীপ এর মতো একইরকম অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল। স্বপ্নদ্বীপ আজ নেই কিন্তু আমি বেঁচে আছি। আমিও স্বপ্নদ্বীপ হয়ে যেতাম সেদিন। সেদিন দুপুরবেলা, আগেরদিন রাতে আমাকে ভীষণরকম mental & physical torture করা হয়েছে। দাদাদের কিছু demand আমি সেদিন মানতে পারিনি। আমাকে physically এমন নোংরা কিছু করতে বলা হয়েছিল, আমি করতে পারিনি। জ্বলন্ত Bulb-এ আমাকে kiss করতে বাধ্য করেছিল। সেই দিনটার কথা ভাবলে আমি এখনো আঁতকে উঠি। আমার ঠোঁট ফুলে কলাগাছ হয়েছিল। কিচ্ছু খেতে পারছিলাম না। সেই থেকে আজও আমার ঠোঁট টা ঝুলে আছে। সেদিন আমি Class পর্যন্ত যেতে পারিনি। Room এই ছিলাম। 1st year student দের room lock করার permission ছিলোনা। হটাৎ দুজন দাদা বললে, “অনেক rest করেছিস, কাল রাতে তুই আমাদের কথা শুনিসনি, হিসেবটা করার আছে, চল আমাদের সাথে।” আমি যে না করবো সেরকম mental or physical strength আমার ছিলোনা। চললাম ওদের সাথে। আমাকে ওরা নিয়ে গেলো ছাঁদে। আমাকে একদম ছাঁদের কিনারে নিয়ে এসে বলে, ওখান থেকে ঝাঁপ দিতে। কাল রাতের Punishment। আগেরদিন রাতে এতটাই torture করা হয়েছিল আমার আর বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছে ছিলোনা। আমার চোখ বেঁধে কার্নিশের উপরে তুলে দেওয়া হয় আর আমি, জীবনের সব আশা ছেড়ে ঝাঁপ মারি। কিরকম পরিস্থিতি হলে মানুষ এটা করতে পারে, সেটা বোধহয় আমার আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি সেদিন স্বপ্নদ্বীপ হতে হতে বেঁচে গেছিলাম। আসলে সেদিন ওরা আমাকে চোখ বেঁধে Water tank এর কার্নিশে তুলে দিয়ে ঝাঁপ দিতে বলেছিলো, আমি কিন্তু জানতাম যে আমি ছাঁদ থেকে ঝাঁপ দিচ্ছি। মৃত্যুকে accept করে নিয়েই আমি সেদিন ঝাঁপ দিয়েছিলাম। একমুহূর্তেও ভাবিনি আমি বেঁচে থাকবো। স্বপ্নদ্বীপের সঙ্গে কোথাও কি সবকিছু মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে না !!??

    আমরা গ্রাম থেকে শহরে আসি কিছু স্বপ্ন নিয়ে। আমার স্বপ্নের সঙ্গে আরো হাজারটা স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে। শুধু স্বপ্নদ্বীপের স্বপ্নের মৃত্যু হলোনা, মৃত্যু হলো ওর মা-বাবা সহ আরো অনেক প্রিয়জনের স্বপ্ন। 

    সিনিয়রদের কি করে respect করতে হবে সেটা আমরা আমাদের বাড়ি থেকেই শিখে আসি, আর নিজেকে আরো ভালো করে গড়ে তোলার জন্যই তো Jadavpur University-তে স্বপ্নদ্বীপ,আমি,আমরা আসি। 

    আমাদেরকে সিনিয়রদের respect করতে শেখানোর দায়িত্ব তোমাকে কে দিয়েছে, সৌরভ? উত্তর চাই !!

    আর যাদের উপরে ভরসা করে আমরা Jadavpur University-তে আসি সেই Management Committee, Professor দের কি কোনো responsibility নেই? সর্বোপরি গভর্মেন্ট এবং প্রশাসন কি করছেন? এখনো ঘুমিয়ে আছেন ? কুম্ভকর্ণের ঘুম আর কবে ভাঙবে ? 

    আজ আমার মেয়ের Class Eight। Jadavpur University র মতো college এ পড়ার স্বপ্ন দেখে। আমি জানি ও একদিন ওর স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছে যাবে কিন্তু তারপর? আমি কি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবো? এই প্রশ্নটা আমার মতো হাজার মা-বাবার।

    #JadavpurUniversity
    #GovtOfWestBengal
    #govtofindia
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন