এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চক্রব্যূহ:

    Amlan Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ২৮৮ বার পঠিত
  • চক্রব্যূহ:
    অম্লান সরকার

    (১)

    এডমন্ড চিক বরাইক। ডুয়ার্সের এক চা বাগানে কাজ করা কুলির ছেলে। জাতে মদেশিয়া। ব্রিটিশ রাজত্বে এক সময় এদের পূর্বপুরুষদের ইংরেজরা বিহারের ছোট নাগপুর অঞ্চল থেকে কিছুটা ভুলিয়ে ভালিয়ে, লোভ দেখিয়ে, কিছুটা জোর জবরদস্তি করে ডুয়ার্স অঞ্চলে নতুন নতুন তৈরি হতে থাকা চা বাগান গুলিতে চা শ্রমিকের কাজ করার জন্য নিয়ে আসে। তাদেরই উত্তর পুরুষ এডমন্ড। মাঝারি উচ্চতার এডো বংশগত ভাবে ভাস্করের হাতে কালো পাথরে খোঁদা ভাস্কর্যের মত আকর্ষক চেহারা নিয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রজাতির জন্য বেশ একটা কাম্য পাত্র। মেয়েরা তাকে পছন্দ করতো।

    চা বাগানের নাম বাশুরী, বাশুরী চা বাগান। কাছেই মাইল তিনেক দূরত্বে পাতাগুড়ী গ্রাম। সেখানে খ্রিস্টান মিশনারি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি ভাল হাই স্কুল আছে। এডো সেই স্কুলেই পড়াশোনা করেছে দশ ক্লাস পর্যন্ত।
    স্কুলে বছরে একবার একটি করে বার্ষিক ক্রীড়া উৎসব পালন করা হতো। স্কুলের পরিভাষায় যাকে স্পোর্টস বলা হয়। এডো এই বার্ষিক ক্রীড়া উৎসবের অনেক গুলো স্পর্ধাতেই অংশগ্রহণ করতো, ১০০, ৪০০, ৮০০ মিটার দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, এবং বেশীর ভাগ স্পর্ধাতেই প্রথম স্থান অধিকার করতো। চা বাগান থেকে স্কুল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ ট্রাক বা ট্রাক্টরের ব্যবস্থা রাখতো। সেখানে বাগানের বাবু শ্রেণী অর্থাৎ যারা বাগানে করণিক বা কারিগরি কাজকর্ম গুলো দেখাশোনা করে তাদের ছেলে মেয়েরা এবং কুলি কামিনদের ছেলে মেয়েরা একসঙ্গেই এই ট্রাক বা ট্রাক্টরে চেপে স্কুলে আসা যাওয়া করতো।

    এথলেটিক চেহারার এডোর খেলাধুলায় দক্ষতা প্রশ্নাতীত ছিল। স্কুলে নিয়মিত এক ক্লাসের সঙ্গে অন্য ক্লাসের ফুটবল প্রতিযোগিতা হতো। সেখানে এডোর ক্লাসের প্রধান স্ট্রাইকার সে নিজেই। খেলাধূলায় দক্ষতা তথা তার ভাস্করের হাতে তৈরি কালো পাথরের মূর্তির মত চেহারার দৌলতে স্কুলের অনেক মেয়েরই ক্রাশ ছিল সে। শেষ পর্যন্ত ঘটনা এমন দাঁড়ালো যে এডোর ক্লাসের একটি বাঙালি ভদ্র ঘরের মেয়ে, যে কি না ওই স্কুলে কর্মরত শ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষকের সন্তান, সে পর্যন্ত এডোর প্রেমে পড়ে গেল।

    অবশ্য এই প্রেমের অবধিটা খুবই ক্ষণস্থায়ী ছিল। অনেকটাই কাফ লাভের মত ব্যাপার স্যাপার। যাই হোক এক সময় এডো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে ওদের চা বাগানেরই ফ্যাক্টরিতে তত্ত্বাবধায়ক ধরণের একটা কাজ পেয়ে গেল এবং নিজের সদ্যলব্ধ ওই কাজ নিয়ে দৈনন্দিন জীবন কাটাতে লাগলো।

    গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে গেলে এই গল্পের অবতারণা করার কোন প্রয়োজনই ছিল না। এডোর জীবনে সত্যিকারের মোড় এলো এর পরবর্তী কালে।

    চা বাগানে শ্রমিক আন্দোলন তখনও পর্যন্ত অতটা সংগঠিত ছিল না। ইউনিয়নের প্রবেশ সবে মাত্র হয়েছে। লাল পার্টির ইউনিয়ন। তরুণ তুর্কি এডোকে চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিতে বলা হলো। রাজনীতির গহীন চক্করে সেই হাতে খড়ি হলো এডোর।

    একবার ইউনিয়নের নেতৃত্ব করার সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভূতপূর্ব ভাবে এডোর চরিত্রের ও পরিবর্তন হতে শুরু হয়ে গেল। এতদিন সে একটা অত্যন্ত সাধারণ চরিত্রের হাসি খুশি মানুষ ছিল। নিজের খেলাধূলা, বন্ধুবান্ধব, কিছুটা মেয়েবাজি এই সব নিয়েই দিব্যি কেটে যাচ্ছিলো তার দিন। চাকরি পাওয়ার পর দিনের এক তৃতীয়াংশ সে ফ্যাক্টরীতেই কাটিয়ে দিত। বাকি সময় আড্ডা, বন্ধুবান্ধব ইত্যাদি নিয়ে বেশ মসৃণ ভাবেই কেটে যাচ্ছিলো তার দিন গুলো। কিন্তু একবার রাজনীতিতে ঢোকার পর ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করার সঙ্গে সঙ্গেই তার ব্যক্তিগত চরিত্রেরও পরিবর্তন ঘটা শুরু হয়ে গেল।

    রাজনীতি মানুষকে ক্ষমতার আস্বাদ চাখিয়ে মানুষের লোভ বাড়িয়ে তোলে। এডোর জীবনেও ঠিক তাই ঘটলো। এত দিন এডো এক সরল, অনাড়ম্বর জীবন কাটাচ্ছিল বেশ স্ফুর্তির সঙ্গেই। ইউনিয়নের নেতার নতুন ভূমিকায় ধীরে ধীরে তার চরিত্রের এক আমূল পরিবর্তন ঘটলো। সে হয়ে উঠলো অসহিষ্ণু, দাম্ভিক ও অর্থলিপ্সু। তার মেজাজেরও পরিবর্তন দেখা দিল। যে একেবারে সমাজের নিম্নস্তর থেকে সে উঠে এসেছে, নিজের পরিচয়ের সঙ্গে সেই স্তরের যোগকে সে লজ্জা এবং ঘৃণা করতে শুরু করে দিল। আত্মবিস্মৃত এই এডোকে পর্যবেক্ষণ করে এডোকে যারা রাজনীতির পাঠ পড়িয়েছিল তারা এডোর এই পরিবর্তনে খুশী হয়ে গেলো।

    রাজনীতির মঞ্চে এডোর উত্থান বেশ নাটকীয় ভঙ্গিমায়ই এগিয়ে চললো। চা বাগানের ক্ষুদ্র পরিসর থেকে ধীরে ধীরে তাকে তার ওপর সারির নেতারা আরো বেশি দায়িত্ব আর আরো বেশি কাজের ভার দিয়ে জেলা স্তরে নিয়ে এলো। দুচার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হঠাৎই দেখা গেল এডো তার এতদিনকার সেই লাল পার্টি ছেড়ে দিয়ে অন্য এক পার্টিতে যোগ দিল। ধরা যাক সে পার্টির নাম সবুজ পার্টি এবং রাজ্যে তারাই ক্ষমতাসীন দল। এই দল বদলের পালা সাঙ্গ হওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ক্ষমতাসীন দলটি তাকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে স্থানীয় একটি তফসিলী জাতি ও উপজাতি দের জন্য সংরক্ষিত আসনে তাদের দলের হয়ে দাঁড়ানোর জন্য মনোনীত করলো।

    এক সময় নির্বাচনও সমাপ্ত হলো। দেখা গেল এডো সংরক্ষিত ওই লোকসভা আসনটি জিতে নিয়েছে। বেশ কয়েক বছর বিভিন্ন স্তরে সে কাজ করেছিল তার আগের পার্টির হয়ে। অনগ্রসর জাতির একটা ঠাপ্পা আছে তার পিঠে। কিছু জনপ্রিয়তাও সে অর্জন করেছিল সে গত পাঁচ সাত বছরের রাজনৈতিক জীবনে। তার জেতার পেছনে এই সব কটা ফ্যাক্টরই কাজ করেছিল সে পার্টি বদল করা সত্ত্বেও।

    পরবর্তী পাঁচ বছর তার কেটে গেল জনপ্রতিনিধির কাজ বুঝতে ও সামলাতে। এর জন্য তাকে খুব বেশি মেহনত যে করতে হলো তা না। একটা বাঁধাধরা ছক ও গত থাকে একজন জনপ্রতিনিধির কাজের। তার বাইরে গিয়ে যারা কাজ করে তারা প্রকৃত অর্থেই মানুষের সেবা করতে চায়। এডোর মধ্যে সেরকম কোন সদিচ্ছাই ছিল না।

    এদিকে উত্তরবঙ্গে বহুদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদের বীজ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল। একদিকে দার্জিলিঙের নেপালী দের গোর্খাল্যান্ডের নামে এক আলাদা রাজ্যের দাবি, আবার উত্তরবঙ্গের কোচবিহার তথা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী ভূমিপুত্র রাজবংশী জনগোষ্ঠীর কামতাপুর নাম দিয়ে এক রাজ্যের দাবি এবং সর্বোপরি উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার ও নিম্ন আসামে বসবাসকারী বোড়ো উপজাতির বোড়োল্যান্ড বলে এক আলাদা রাজ্যের দাবি - এই একের পর এক দাবির চোটে উত্তরবঙ্গ বিচ্ছিন্নতাবাদের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়ে গেল। আর এর ফল ভুগতে থাকতে হলো সাধারণ মানুষদের।

    এই বিচ্ছিন্নতাবাদের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গুলোও তাদের নিজেদের ভোট ব্যাংক বানানোর স্বার্থে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী দল গুলোকে তলে তলে সমর্থন দিয়ে নিজেদের ছাতার তলায় টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে যেতে লাগলো।

    আজকের জমানার রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে নৈতিকতার ছিটেফোঁটাও আর অবশিষ্ট নেই। এরা শুধু যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা হাসিল করার লড়াইয়ে মত্ত। বাংলায় একটা কথা আছে "রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়"। বাংলার গরীব ও সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের লোকেদের জন্য এর থেকে বড় সত্য আর কিছু হতে পারে না। ভারতবর্ষের ত্রিস্তরের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আজ এক দুর্নীতির পীঠস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরীব, মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে সরকারী সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য যে বন্দোবস্তের প্রচলন করা হয়েছে, মানুষের মনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া দুর্নীতির বীজ সেই বন্দোবস্ত কে শুধু মাত্র দুর্নীতির আখড়াতে পরিণত করেই ক্ষান্ত হয় নি, পঞ্চায়েতের ক্ষমতাসীন সভ্যরা এক এক জন আলাদিনের আশ্চর্য্য প্রদীপ হাতে পাওয়ার মত বাড়ী, গাড়ি, ধনসম্পদে ফুলে উঠছে তাদের স্বল্প কালের রাজত্বেই। যা কিছু আর্থিক বা অন্য সরকারী অনুদান, সুবিধা ইত্যাদি পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছানোর কথা ছিল, সে সব কিছুই চলে যাচ্ছে রক্ষক থেকে ভক্ষকে পরিণত এই সব পঞ্চায়েতের সদস্যদের কাছে। রাস্তাঘাট বা অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজের জন্য সরকার থেকে যে আর্থিক অনুদান বরাদ্দ করা হচ্ছে, তারও সিংহ ভাগ খেয়ে নিচ্ছে এই পঞ্চায়েতের মানুষের মুখোশধারী শয়তানের দল।

    (২)

    দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় রুয়াক নদী আর মেকং নদীর সংযোগ স্থলের পাশেই থাইল্যান্ড, লাওস আর মায়ানমার, এই তিনটে দেশের সীমানার সমাপতন ঘটেছে। এই তিনটে দেশের সীমান্তবর্তী ৩৬৭০০০ বর্গ মাইল পাহাড় পরিবৃত এলাকা জুড়ে আছে বর্তমানে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আফিম উৎপাদন ও সরবরাহ কেন্দ্র। একুশ শতকের একেবারে প্রথম দিক পর্যন্ত এই এলাকা, যা নাকি সোনালী ত্রিভুজ বা গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল নামে কুখ্যাত, হেরোইন উৎপাদনে পৃথিবীতে শীর্ষ স্থানের অধিকারী ছিল। পরে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানের পাহাড় পরিবৃত সীমান্ত অঞ্চল গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল কে দ্বিতীয় স্থানে রেখে হেরোইন ও আফিম উৎপাদন ও সরবরাহে প্রথম স্থানে চলে যায়।

    সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আফিমের উৎপাদন ও বাণিজ্যে কিছুটা শ্লথ গতি দেখা যায়। আফিম আর হেরোইনের জায়গায় সিনথেটিক মাদক মেথামফেটামাইন তৈরি ও সরবরাহের কাজ অনেক বেশি প্রাধান্য পাওয়া শুরু হয়। এই কৃত্রিম মাদকও এই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলাকাতেই তৈরি হয়ে বিশ্বের সর্বত্র পাচার হতে থাকে।

    আসাম মণিপুর অঞ্চলে সক্রিয় এক মাফিয়া মাদক পাচার চক্র এই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলাকা থেকে মেথামফেটামাইন নামক এই নিষিদ্ধ সিনথেটিক মাদকটি পাচার করে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করার কাজ করছিল। এই কাজ সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য তাদের দরকার ছিল আসাম থেকে যখন মাদকের চালান গুলি উত্তরবঙ্গের মধ্যে দিয়ে ভারতের অন্যান্য জায়গায় চলে যাচ্ছে, তখন আসাম থেকে এই চালান যখন উত্তরবঙ্গে ঢুকছে তখন সেই কাজ যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে, তার জন্য স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির।

    মাদক পাচারকারী চক্রের নিজস্ব সূত্রের মাধ্যমে তারা এডোকে এই কাজের জন্য চিহ্নিত করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার ভার এই মাদক পাচার কার্য্যে আসাম উত্তরবঙ্গের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করে চলা একটি দলের ওপরে অর্পণ করে। স্থানীয় এই দলটি অল্প কিছু দিনের মধ্যে এডোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে একটি নিভৃত সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা কর।

    যথাসময়ে এই সাক্ষাৎকার সম্পন্ন হলো ও এডো কে সম্পূর্ণ আইন বিরুদ্ধ এই কাজের জন্য টাকার পাহাড়ের ওপর বসিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই ব্যাপারে সাহায্য করার সম্মতি আদায় করে নেওয়া হলো।
    এডো মাদক পাচারকারী চক্র কে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কয়েক মাস পরের ঘটনা। সোনালী ত্রিভুজ এলাকা থেকে একটা বেশ বড়সড় রকমের চালান মণিপুর - আসাম - পশ্চিমবঙ্গ হয়ে পাঞ্জাবে যাবে। পাঞ্জাবে এই কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা মাদকের দারুণ চাহিদা। ওই রাজ্যের তরুণ প্রজন্ম মেয়ে পুরুষ নির্বিশেষে এই মেথামফেটামাইন মাদকে ক্রমবর্ধমান হারে আসক্ত হয়ে পরছে। তাদের আসক্তিকে বজায় রাখা ও আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য মাদকের এই বিশাল পরিমাণের চালানটার গুরুত্ব অপরিসীম। কাজেই এই চালানকে সম্পূর্ন সুরক্ষিত অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে পাচার করানোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব এডোর।

    এমন একটা গুরুত্বপূর্ন কাজ যাতে করে মসৃণ ভাবে সম্পন্ন করা যায় সেই ব্যাপারে কিছু কৌশলগত আলোচনার জন্য এই মাদক পাচারকারী চক্রের সদর দফতর মায়ানমার থেকে এডো কে ডেকে পাঠানো হলো একটা বৈঠকে অংশগ্রহণ করার জন্য। অতঃপর এডো নির্ধারিত সময় মত মায়ানমারের এই বৈঠকে গিয়ে হাজির হলো। বৈঠকে এই চালানকে ঠিকঠাক মত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য যা কিছু কৌশলগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলো এবং এডো ও অন্যান্য যারা অন্য রাজ্যে এই কাজের জন্য ভারপ্রাপ্ত, তাদের কে সেইমত নিজের নিজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হলো।

    বৈঠক শেষ হওয়ার পর এডোদের নিয়ে যাওয়া হলো এই মাদক চক্রের যে প্রধান তার প্রাসাদে। সেখানে কিছু আমোদ প্রমোদের আয়োজন আছে। এডো সহ বাকি এজেন্টদের নিয়ে যাওয়া হলো প্রধানের প্রাসাদের ভেতরে অবস্থিত বিশাল এক চত্বরে। মার্বেল পাথরে বাঁধানো চত্বরে দাবার ছকের মত ৬৪ টি সাদা কালো বর্গাকৃতি ঘর বানানো আছে। প্রায় একটা ভলি বল কোর্টের সমান বর্গাকার সেই চত্বর, ঠিক যেন এক দাবার ছক। অদ্ভুত ব্যাপার হলো দাবার গুটি যেখানে যেখানে থাকার কথা, তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে কিছু অসহায় মানুষ যাদেরকে জোর করে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। এই মানুষ গুলোর সিংহ ভাগই এই অঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলিম সমাজের।
    মাদক পাচারকারী চক্রের প্রধান ও তার এক শাগরেদের মধ্যে দাবা খেলা চলছে। দুজনের হাতেই স্বয়ংক্রিয় পিস্তল। যে যখন যার গুটি খেয়ে ফেলছে সে তৎক্ষণাৎ তার হাতের পিস্তল থেকে গুলি চালিয়ে ওই খাওয়া গুটির জায়গায় যে মানুষটি দাঁড়িয়ে আছে তাকে মেরে ফেলছে। চত্বরের আশেপাশে প্রধানের কর্মচারী যারা আছে তারা তৎক্ষণাৎ ছুটে এসে সেই গুলিবিদ্ধ দেহ সরিয়ে ফেলছে। এই ভাবেই খেলা চলছে।
    এডো নিতান্ত দরিদ্র, নিম্নশ্রেণীর ঘর থেকে উঠে এসে ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সু একটা প্রাণী তে পরিণত হলেও এই ধরণের চরম, নারকীয় নৃশংসতা তার কল্পনার বাইরে। নিজের প্রাণের ভয়ে সে কিছু বলতে বা প্রতিবাদ করতেও পারছে না। অতএব অসহায় ভাবে চুপচাপ বসে বসে এই নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে বসে থাকা ছাড়া এডোর আর কিছুই করণীয় ছিল না।

    দুদিন পরে মায়ানমার থেকে আসামের কাছাড় জেলার শিলচর বিমান বন্দরে স্থলপথে যেতে যেতে এডো নিজের অসহায়তার কথা চিন্তা করছিল। টাকার লোভে সে এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। চক্রব্যূহে প্রবেশ সে নিজের ইচ্ছায় করেছে। কিন্তু এর থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা তার জানা নেই। এখন অনাগত ভবিষ্যতই বলবে এডো তার এই জীবনে ভয়ংকর চক্রব্যূহের এই জাল কেটে বেরিয়ে আসতে পারবে কি না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন