এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অচ্ছুতের সমস্যা - ভগত সিং

    TANJAN BOSE লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ জুলাই ২০২৩ | ২৯৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • কাঁকিনাড়াতে ১৯২৩ সালে যে কংগ্রেস অধিবেশন হয় তাতে মহম্মদ আলি জিন্না নিজের ভাষনে ভারতের দলিত সমাজকে হিন্দু আর মুসলিম মিশনারি সংস্থার মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার প্রস্তাব আনেন। এইভাবে দলিতদের বন্ধু সেজে সাহায্য করার নামে তাদের মধ্যে জাতিগত ভেদভাবনা তৈরি করার যে অপচেষ্টা শুরু হয় তার বিরুদ্ধে দেশব্যাপি শোরগোল পড়ে যায়। সেই সামাজিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভগৎ সিং ১৯২৮ সালে কীর্তি পত্রিকায় অচ্ছুতের সমস্যা নামে একটা প্রবন্ধ লেখেন। বর্তমান সময়ে ভগৎ সিংকে নিজেদের দলে টানতে ডান থেকে বাম সমস্ত দলই ব্যতিব্যস্ত। এরফলে তাঁর নাম নিয়ে বিভিন্ন প্রোপাগাণ্ডা মূলক লেখা সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এরই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং এর জন্য পড়তে গিয়ে উপরের লেখাটি চোখে পড়ে। সমুদ্র দা প্রথম এর খোঁজ দেয়। এর হিন্দি আর ইংরেজি অনুবাদ চোখে পড়লেও বাংলা কোন অনুবাদ চোখে পড়েনি। কিন্তু ভারতের দলিত সমাজের মূল সমস্যা আর মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের মুক্তির উপায় নিয়ে এই লেখা বাংলায় অনূদিত না হলে বাংলারই ক্ষতি বলে এই অধমের মত। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যখন ইউনিয়ন সরকার সরাসরি ব্রাহ্মণ্যবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম কারণে দলিত নিগ্রহের সংবাদ আমাদের কাছে আসছে, তখন ভগৎ সিং এর এই প্রবন্ধ শত বর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আজও কতটা প্রাসঙ্গিক তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বৃথা। তাই নিজ ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে নেমেছি এর বঙ্গানুবাদের অসাধ্য সাধনে। ভুলত্রুটি সত্বেও ভগৎ সিং এর চেতনা আপামর বাঙালির মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াই লক্ষ্য। লেখাটি অনুবাদ করা হয়েছে marxist.org তে প্রকাশিত হিন্দি প্রবন্ধ থেকে।

    অচ্ছুতের সমস্যা
    ভগৎ সিং

    আমাদের দেশের মতন দুরবস্থা অন্য কোন দেশের হয়নি। এখানে অদ্ভুত সব প্রশ্ন ওঠে মাঝেমধ্যেই। এরই মধ্যে অন্যতম প্রশ্ন অচ্ছুৎ সমস্যা নিয়ে। সমস্যা হল, ত্রিশ কোটি জনসংখ্যার দেশে যে ছ কোটি লোক অচ্ছুৎ, তাদের স্পর্শেই নাকি বাকিরা ধর্মচ্যুত হয়ে যাবে। তারা যদি কুঁয়ো থেকে জল নিতে যায়, কুঁয়ো অপবিত্র হয়ে যায়। এই কথা বিংশ শতাব্দীতে হচ্ছে এটা ভাবতেই লজ্জা লাগে।

    আমাদের দেশ আধ্যাত্মিকতার দেশ। কিন্তু আমরা মানুষকে মানুষ হিসাবে মর্যাদা দিতেও ইতস্তত করি, যেখানে পুরোপুরি বস্তুবাদী হিসাবে পরিচিত ইউরোপ কয়েক শতক ধরেই ইনক্লাবের জিগির তুলছে। তারা আমেরিকা আর ফ্রান্সের বিপ্লবের সময়ই সমতার ঘোষনা করেছেন। আজ রুশ দেশও এইরকম বিচ্ছিন্নতা ভুলে বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা সবসময়েই আত্মা পরমাত্মার অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তিত থাকি এবং অচ্ছুৎদের পৈতেধারণের অধিকার আছে কিনা, তারা বেদ শাস্ত্র পাঠে অধিকারী কিনা সেই নিয়ে বিতর্কে মেতে থাকি। আমরা অভিযোগ করি যে আমাদের সাথে বিদেশীরা ভাল ব্যবহার করে না। ইংরেজ প্রশাসন আমাদের শ্বেতাঙ্গদের সমকক্ষ মনে করে না। কিন্তু এই অভিযোগ করার যোগ্যতা কি আদৌ আমাদের আছে?

    শ্রী মহম্মদ নুর নামক সিন্ধের একজন মুসলমান ভদ্রলোক, যিনি বোম্বাই কাউন্সিলের সদস্য, এই বিষয়ে ১৯২৬ সালে বলেছেন,
    "যদি হিন্দু সমাজ নিজ জনগোষ্ঠীর মানুষদের সর্বসাধারণের স্কুলে ভর্তির এবং আঞ্চলিক বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, যিনি কয়েক লক্ষ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, যখন নিজ ভাই বেরাদরদের জল খাওয়ার মতন প্রাথমিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করেন, তাদের প্রশাসনের কাছে আরো অধিকার চাওয়ার কী অধিকার আছে? অন্য ভূখণ্ড থেকে আসা মানুষদের অভিযুক্ত করার আগে আমাদের দেখা উচিত আমরা নিজেদের লোকের সাথে কিভাবে ব্যবহার করি। আমরা কিভাবে উচ্চতর রাজনৈতিক অধিকারের দাবী জানাব যদি আমরাই নিজেদের ন্যুনতম অধিকার দিতে অস্বীকার করি? " হক কথা। কিন্তু যেহেতু একজন মুসলমান ব্যক্তি বলেছেন, হিন্দুরা বলবে যে দেখ, উনি ওই অচ্ছুতদের মুসলমান বানিয়ে নিজেদের দলভারী করতে চান।

    যখন তুমি ওদের জানোয়ারেরও অধম বলে মনে করবে তো ওরা অবশ্যই অন্য ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হতে চাইবে, যেখানে ওদের বেশি অধিকার পাওয়া যাবে, যেখানে ওদের সাথে মনুষ্যোচিত ব্যবহার করা হবে। তখন যদি বল যে এই দেখ খ্রীষ্টান আর মুসলিমরা হিন্দু ধর্মের ক্ষতি করছে, ভুল হবে।

    কথাগুলো সত্যি, কিন্তু এই শুনেই সবাই চিড়বিড় করে ওঠে। ঠিক এই ধরনের চিন্তা হিন্দুদেরও হয়েছিল। সনাতনী পণ্ডিতরাও এই সমস্যা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। মাঝেমাঝে "যুগান্তকারী" মানুষজনও এই সমস্যা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে, যিনি অচ্ছ্যুতদের এক বড় সমর্থক, পাটনা শহরে হিন্দু মহাসভার সম্মেলনে এই নিয়ে জোর বিতর্ক হয়েছিল। অনেক তর্ক বিতর্ক হয়। প্রশ্ন এই ছিল যে অচ্ছুতদের যজ্ঞোপবিত ধারণের অধিকার আছে কী না? এছাড়াও তাদের কি বেদশাস্ত্র অধ্যয়নের অধিকার আছে? বড় বড় সমাজ সংষ্কারক চুপ করে গেলেও, লালা লাজপত রায় সর্বসম্মতিক্রমে দুটো বিষয়েরই স্বীকৃতি আদায় করিয়ে হিন্দুধর্মের মর্যাদা রাখলেন। নইলে একটু ভেবে দেখুন কতটা লজ্জাজনক ঘটনা হত? একটা কুকুরও আমাদের কোলে বসতে পারে। আমাদের রান্নাঘরে নির্দ্বিধায় ঘুরতে পারে, কিন্তু একজন মানুষের স্পর্শে আমাদের জাত যায়। আজকের দিনেও মালব্য জির মতন বড় সমাজ সংষ্কারক, বিশাল অচ্ছুতপ্রেমী, না জানি আরো কত কী, একজন মেথরের হাতে মালা পরে নেন, কিন্তু কাপড় সমেত স্নান না করলে নিজেকে অশুদ্ধ মনে করেন। কী সুন্দর জিনিস। ভক্তপ্রিয় ভগবানের পূজা করার জন্য মন্দির বানানো হয়, কিন্তু তাতে অচ্ছুৎ প্রবেশ করলে মন্দির অশুদ্ধ হয়ে যায়! ভগবান নাকি রুষ্ট হন! যখন আমাদের ঘরেরই এই অবস্থা, তখন বাইরে সমানাধিকারের জন্য লড়াই কি আমাদের মানায়? তখন আমাদের এই ব্যবহারে কৃতঘ্নতাই প্রকাশ পায়। যারা নিচুস্তরের কাজ করে আমাদের স্বচ্ছন্দে বাস করতে সাহায্য করে তাদেরই আমরা দূরদূর করে তাড়াচ্ছি। আমরা পশুর পূজা করতে পারি, কিন্তু মানুষের পাশে বসতে পারিনা।

    আজকাল এই নিয়ে প্রচুর শোরগোল হচ্ছে। এই বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। দেশের মুক্তি কামনার চিন্তা যে হারে বেড়েছে, তাতে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা অন্য কোন সুবিধা না দিলেও একটা সুবিধা এনেছে। প্রত্যেকেই বেশী অধিকারের দাবীর উদ্দেশ্যে নিজ জাতের সংখ্যা বাড়াতে উৎসুক। মুসলিমরা একটু বেশিই এই বিষয়ে জোর দিচ্ছে। ওঁরা অচ্ছুতদের মুসলমান বানিয়ে নিজেদের সমানাধিকার দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। এতে হিন্দুদের অহং বোধ আহত হয়েছে। ঝামেলাও হয়েছে। শিখেরাও ভাবল যে আমরাও কেন পিছিয়ে থাকব? ওঁরাও অমৃত ছেটাতে শুরু করেছে। হিন্দু আর শিখদের মধ্যে যজ্ঞোপবিত ধারন বা চুল কাটা নিয়ে ঝগড়া হয়ে গেছে। এখন তিনটে দলই অচ্ছুতদের নিজের দিকে টানতে শুরু করেছে। এদিকে খ্রীষ্টানরা চুপচাপ নিজেদের দলভারী করে যাচ্ছে। হয়তো এইসব দোলাচলের মধ্যেই দেশের দূর্ভাগ্য কাটছে।

    এদিকে অচ্ছুতরা যখন দেখছে যে ওদের নিয়েই অন্যদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে আর ওদের নিয়ে সবাই টানাটানি করছে তখন ভাবল যে ওরাই আলাদা ভাবে সংগঠিত হবে। এতে ইংরেজ সরকারের কতটা হাত আছে জানা নেই, কিন্তু এই ধরনের প্রচারে সরকারী মেশিনারির প্রচুর প্রভাব আছে। "আদি ধর্ম মণ্ডল" এর মতন সংগঠনগুলি এই প্রচারেরই ফল।

    এখন আরেক প্রশ্ন উঠছে যে এই সমস্যার আদত সমাধান কোনটা? এর জবাব খুবই নির্দিষ্ট। প্রথমেই এটা বুঝতে হবে যে সব মানুষই সমান, জন্মসূত্রে বা কর্মসূত্রে কেউ ভিন্ন হয়ে যায়না। অর্থাৎ যেহেতু কেউ গরীব মেথরের ঘরে জন্ম নিয়েছেন, তারমানে সারা জীবন ময়লাই পরিষ্কার করে যাবেন, কোন রকম উচ্চতর কাজ করার অধিকার নেই, এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারনা। এইভাবেই আমাদের পূর্বপুরুষ আর্যরা এদের সাথে অন্যায় করেছিলেন এবং এদের নিচু বলে দূরে সরিয়ে নিম্নমানের কাজ করাতেন। "এখন কী করবে? চুপচাপ দিন কাটাও!" এভাবেই ওদের ধৈর্য ধরার উপদেশ দিয়ে ওঁরা অচ্ছুতদের দীর্ঘসময় ধরে শান্ত করে রাখেন। কিন্তু এটা খুবই পাপ কাজ ছিল। মানুষের ভিতর থেকে মনুষ্যত্বই শেষ করে দিয়েছিল। আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনির্ভরিতার চিন্তাকেই বিনষ্ট করে দিয়েছে। অনেক শোসন এবং অন্যায় হয়েছে এদের সাথে। এখন সবার প্রায়শ্চিত্ত করার সময়।

    এর সাথে আরেক সমস্যাও আছে। লোকেদের মনে আবশ্যক কাজের প্রতি ঘৃণা জন্মেছে। আমরা তাঁতিদেরও নিচু চোখে দেখেছি। আজ কাপড় বানায় যে তাকেও অচ্ছুৎ বলা হচ্ছে। ইউপিতে কাহারদেরও অচ্ছুৎ বলে মানা হয়। এতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এতে বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

    এই বিভাজনকে সামনে রেখে আমাদের আশু কর্তব্য এই যে আমরা নাতো এদের অচ্ছুৎ ভাবব, না বলব। সমস্যার সমাধান এই পথেই আসবে। নতুন ভারত সভা তথা নতুন কংগ্রেস যে পথ নিয়েছে তা যথেষ্ট ভাল। যাদের আজ পর্যন্ত অচ্ছুৎ বলে ডাকা হচ্ছে, তাদের কাছে এতদিনের পাপকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে, তাদের সমমানের মানুষ ভেবে, অমৃত ছেটানো, কলমা পড়া বা শুদ্ধিকরণ ব্যাতিত তাদের নিজেদের দলে সামিল করে তাদের হাতে জল খাওয়া এটাই উচিত পথ। নিজেদের মধ্যেই ভেদাভেদ করে কোন অধিকার না দেওয়া কখনই উচিত কাজ নয়।

    যখন গ্রামের দিকে মজুরদের মধ্যে প্রথম প্রথম প্রচার শুরু হয়, তখন সরকারি কর্মচারীদের কৃষকদের এই বলে উত্তেজিত করত যে দেখ এরা ভঙ্গী-চামারদের মাথায় চড়াচ্ছে যাতে এরা তোমাদের কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এতে কৃষকরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এদের বোঝা উচিত যে এদের অবস্থা ততদিন পর্যন্ত শুধরোবেনা যতদিন এরা এইসব গরীবদের নিচুজাত বলে নিজের পায়ের তলায় রাখতে চাইবে। সাধারণত বলা হয় যে এরা নোংরা। এর কারণ স্পষ্ট, এরা গরীব। গরিব রোগ সারাও। উঁচু জাতের গরীব লোকেরা কিছু কম নোংরা হয়না। নোংরা কাজ না করার অজুহাতও চলবেনা, কারণ মা সন্তানের ময়লা পরিষ্কার করলে মেথর তথা অচ্ছুৎ হয়ে যায়না।

    কিন্তু এই কাজ ততদিন পর্যন্ত সম্ভবপর হবেনা যতদিন না অচ্ছুতেরা নিজেরাই নিজেদের সংগঠিত করবেনা। আমি তো মনে করি তাদের নিজেদের সংগঠিত করে এবং গুনতিতে মুসলিমদের সমকক্ষ হওয়ার দরুন সমানাধিকারের দাবী যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক দিকনির্দেশ করছে। হয় জাতভেদের ঝামেলাই দূর করো,নইলে ওদের অধিকার ওদের দিয়ে দাও। অচ্ছুতদের স্কুল,কলেজ, কুঁয়া, এবং রাস্তা ব্যবহারের পূরো স্বাধীনতা দেওয়াই কাউন্সিল আর অ্যাসেম্বলির সদস্যদের মূল কর্তব্য। শুধুই মুখের কথা নয়, এদের গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে কুয়োতে ওঠাক। ওদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাক। কিন্তু যে বিধানসভায় জাতের অজুহাতে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত বিল নিয়ে হা-হুতাশ শুরু হয়, সেখানে তারা অচ্ছুতদের নিজেদের সামিল করার স্পর্ধা করবে কী করে?

    এইজন্য আমি মনে করি ওদের নিজস্ব জাতের প্রতিনিধি হোক। যে নিজেদের জন্য বেশি অধিকার চাইবে। আমি তো স্পষ্ট ভাষায় বলি, অচ্ছুৎ নামে অভিহিত আসল জনসেবক ভাইয়েরা, ওঠো! নিজেদের ইতিহাস দেখ। গুরু গোবিন্দ সিংহের ফৌজের আসল শক্তি ছিলে তোমরাই! তোমাদের ভরসাতে শিবাজী এমন কীর্তি স্থাপন করতে পেরেছেন যে আজও ওঁর নাম উজ্জ্বল। তোমাদের বলিদান স্বর্নাক্ষরে লেখা। তোমাদের প্রতিনিয়ত সেবার ফলে আমজনতাকে সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকতে দিয়ে যে পরম উপকার করছ, তা আমরা বুঝতে পারছিনা। ল্যান্ড - অ্যালিয়েনেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী তোমরা টাকা জোগাড় করেও জমি কিনতে পারবে না। তোমাদের উপর অত্যাচার এত বেশী হচ্ছে যে স্বয়ং মিস মেয়োও তোমাদের জন্য বলে উঠেছেন, -" ওঠো, নিজেদের শক্তিকে জান। সংঘবদ্ধ হও!" আসলে স্বয়ং চেষ্টা না করলে কিছুই উপলব্ধ হয়না। (Those who would be free must themselves strike the blow) স্বাধীনতার জন্য মুক্তিকামীদেরই চেষ্টা করতে হবে। মানুষের এমনই স্বভাব হয়ে গেছে যে ওরা নিজেদের জন্য বেশী করে অধিকার চায়, কিন্তু অধস্তনদের জুতোর নিচেই রাখতে পছন্দ করে। কথাতে আছে, "যেমন কুকুর তেমনই মুগুর"। অর্থাৎ সংঘবদ্ধভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দাও। তখন দেখবে, কেউই তোমাকে তোমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সাহস দেখাবে না। অন্যের খোরাক হওনা। অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া বন্ধ করো। কিন্তু আমলাতন্ত্রের ফাঁদে পড়োনা। এরা তোমার কোন সাহায্য করিতে চায়না, উলটে তোমাকেই দাবার বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। এই পুঁজিবাদী আমলাতন্ত্রই তোমাদের গরিব থাকার আসল কারণ। তাই ওদের সাথে কখনই মিশোনা। ওদের ফন্দি থেকে বেঁচে চলো। তাহলেই সব ঠিক হবে। তোমরাই আসল সর্বহারা, এককাট্টা হও। তোমাদের কিছু ক্ষতি হবে না। শুধু পরাধীনতার শিকল কেটে যাবে। ওঠো আর বর্তমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও। আস্তে আস্তে হওয়া সংস্কারে কিছুই হওয়ার নয়। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিপ্লবের সূচনা করো, এবং এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত থাক। তোমরাই তো দেশের মূল আধার। আসল শক্তি। ঘুমন্ত দৈত্য। ওঠো আর বিপ্লব শুরু করো।

    (লেখাটি চেতনার অন্বেষণে পত্রিকার মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত)

    ১ - ১৯২৮ সালে বোম্বাই বানানই ব্যবহার হত। তাই বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
    ২ - একপ্রকার নিচুজাত। মূলত জেলের কাজ করত।
    ৩ - এরা নিচুজাত হিসাবেই গন্য হয় মূলত। ঝাড়ুদারের কাজ করে মূলত।
    ৪ - আমেরিকান ঐতিহাসিক। পুরো নাম ক্যাথেরিন মেয়ো। এঁর লেখা বই মাদার ইন্ডিয়া ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন খারাপ দিক দিয়ে আলোচনা করেন। প্রচন্ড বিতর্কিত বই।
    ৫ - দাস বিদ্রোহের বিপ্লবী ফ্রেড্রিক ডগলাসের কোট। পুরো লাইনটা হল "Those who would be free must themselves strike the blow. Better even to die free than to live slaves."
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন