এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সিঙ্গাপুরের একটা সকাল, আমার চোখে 

    Atanu Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ জুন ২০২৩ | ৩১৯ বার পঠিত
  • এখানে সাতটা নাগাদ সূর্যোদয় হয়। আমি বারান্দায় বসে চা খেয়ে নতুন দিনের জন্য তৈরি হতে থাকি।
    ভাবনার মধ্যে থাকে কিছুটা বিগত দিনগুলো অথবা সামনের অজানা দিন। 
    আজকের দিনকে সেরকম একটা গুরুত্ব দিই না, মানে সেরকম ভাবে তাকে দু চোখ ভরে দেখি না, সেইজন্যই দিনটিও আমাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়।
    আজকে মনে হল, অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে এই কাল প্রবাহ, বর্তমানকে বাদ দিলে সব কিছু তো বধ্য জলায় গিয়ে পরবে। আর তাই তো আমার এখন হচ্ছে। 
    দেখি যদি নিজেকে কিছুটা বদলাতে পারি। অন্তত আজকের দিনটা।
    প্রথমে আকাশের দিকে মিনিট পাঁচেক তাকিয়ে থাকলাম। ঘন নীল আকাশের ক্যানভাসে কত রঙের মেঘ খেলে বেড়াচ্ছে। সাদা, কালো আর তাদের মিশেল। একদম ফ্রি। বই কিনতে হবে না, টিভি কিনতে হবে না, কোন আওয়াজ নেই, মেঘের গুরু গম্ভীর ডাক ছাড়া।
    কি ভাবে যে সময় নষ্ট করছি খবরের কাগজ পড়ে রোজ নিয়ম করে। নিজেকে প্রশ্ন করলাম, "গত সাত দিনের একটা করে খবর বলত দেখি।" একটা দুটো পারলাম, অথচ সময় গেছে, সাত দুগুনে আধ ঘণ্টা করে, মোট সাড়ে তিন ঘন্টা।
    তাহলে কি হল, এত সময় দিয়ে, হাতে রইল শূন্য।
    টিভি চ্যানেলের খবর, একই সময় নষ্ট। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, চলছে তো চলছেই। শেষ কোথায় কে জানে। খবর চলছে, আমি ভান করছি, শুনছি, আসলে অন্য কথা ভাবছি। এক কান দিয়ে ঢুকছে আর সেই কান দিয়ে ই বেরিয়ে যাচ্ছে। ভিতরে কিছুই যাচ্ছে না।
    এরপর চোখ নামিয়ে নিলাম বুকিটতিমা পাহাড়ে। পাহাড়ের ঢল দিয়ে জঙ্গল নেমে এসেছে। বনমোরগ ডেকে উঠছে, সবাইকে দিন শুরু করতে বলছে। 
    নানা রঙের পাখিরা ডেকে উঠছে, এক ডাল থেকে আরেকটা ডালে লাফিয়ে বেড়াছে। এক ঝাক টিয়া ওপর দিয়ে উড়ে গেল। এক জোড়া মুনিয়া পাশাপাশি বসে খুনসুটি করছে। একজন একা পরে গেছে। 
    একটানা ডেকে চলেছে, একটা তীব্র স্বরে। মাঝে মাঝেই সুরটা বদলে যাচ্ছে। হয়ত অভিমান করছে। ক্ষণিক অপেক্ষা করে উড়ে গেল, নতুন বন্ধু খুঁজে বের করতে। আজকের দিনে কেউ কারো জন্যে বসে থকেনা, সোজা কথা।
    এবার চোখ গেল পাশের বাড়িতে, বারান্দায়। সেই অশীতিপর বৃদ্ধ জামা প্যান্ট পরে এক্দম প্রস্তুত কাজে যাওয়ার জন্যে। এখন উনি একটু সময় পেয়েছেন, গাছে জল দিয়ে, তারপর বেরোবেন। ওনার চেহারার গড়ন অনেকটা আমার বাবার মতন। লম্বা, মেদ বিহীন। ওনাকে দেখে আমি উতসাহ পাই। যতক্ষণ বাড়িতে থাকেন, চেয়ারে বসে উনি বই পড়েন, জানলার পাশে বসে। কাল রাতে প্রায় একটা বাজে, আমি তখন ঘুমাতে যাব ভাবছি। দেখলাম উনি তখনও বই পরছেন। হয়ত প্রাচীন চীন সভ্যতার ইতিহাসে ডুবে আছেন। 
    এরপর চোখ নেমে এলো নীচে। অনেকে প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়েছেন। কেউ খুব জোরে হাটছেন। কেউ ধীরে। এক জোড়া পাশাপাশি হাটছেন, অতি বৃদ্ধ দম্পতি, পরস্পরের হাত ধরে হাঁটছে। একটা সময় নির্ভরতা অনেকখানি বেরে যায়। কম বয়সে আমার ভুলে যাই।
    বাইরে মাঠে অনেকে "তাই চি" করছে, এটা চীন দেশ থেকে এসেছে। খুব আসতে আসতে শরীর আর মনের সমন্বয়ের একটা শারীরিক কসরত। 
    করলে হয়ত আমার ছটফটানি কমে যেত, শরীর আর মন স্থির হত, তবে এখন ভেবে আর লাভ নেই, অনেক দেরী হয়ে গেছে।
    রোদ চরে গেছে, কিছুটা হেঁটে বাড়ির দিকে পা বারালাম। Peter cafe বন্ধ করে দিয়েছে, চোখের সামনে অনেক কিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কি আর করা, এটা মেনে নেওয়ার যুগ, সবকিছুই মেনে নিতে হবে।
    আজকের মতন আমার হিজিবিজি লেখা এখনেই শেষ করছি। 
    তবে, মনে হল, কাগজ পড়ার থেকে এটা অনেক ভালো সময় দিলাম।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন