কেকে অনেকটা ঠিকই ধরেছেন।
বজ্রযান ইত্যাদি আদি বৌদ্ধধর্মের কয়েকশো বছর পরের কথা। এটা মহাযানের বিজ্ঞানবাদ বা যোগাচার দার্শনিক স্কুলের (অসঙ্গ ও বসুবন্ধু) উপশাখা।
এখন এদের হাতে আদি বৌদ্ধধর্মের মূল তত্ত্বগুলো
, যেমন পতিচ্চসমূৎপাদ ( কার্য-কারণ সম্পর্কের নিয়ম) , অনাত্মবাদ, ক্ষণিকবাদ -- শব্দ মাত্র হয়ে রইল, অর্থাৎ তার মানে গুলো অনেক বদলে গেল।
দর্শনের স্তরে বিজ্ঞানবাদ আর বেদান্তের, বিশেষ করে অদ্বৈতবাদের বিশেষ ফারাক রইল না।
বসূবন্ধুর আলয় বিজ্ঞানে জ্ঞান ও জ্ঞাতার ঐক্য পুরোপুরি বৈদান্তিক।
গীতাতেও মোক্ষযোগে দেখুন:
"জ্ঞানং জ্ঞেয়ং পরিজ্ঞাতা ত্রিবিধা কর্মচোদনা,
করণং কর্মকর্তেতি ত্রিবিধ কর্মসংগ্রহ:।। (18/18)
অর্থাত সুচারুরূপে কর্মনিষ্পাদনের আবশ্যক শর্ত হল কর্তা, কর্ম ও করণের ঐক্য।
এইভাবে বেদান্তের ধারণায় যে দুই স্তরের সত্য--- বাবহারিক সত্য বা অস্তিত্বের নশ্বরত্ব বা ক্ষণিকত্ব বা আনসার্টেনটি এবং পারমার্থিক সত্যের যে সার্টেনটি বা শাশ্বত রূপ--- তাকে আত্মসাৎ করল মহাযানী স্কুলগুলো।
এই জায়গাটা আপনি ঠিক ধরেছেন।
তারপর তিব্বতী তন্ত্রের প্রভাবে যুক্ত হল বজ্রযান, যোগিনীযান ইত্যাদি। ক্রমশঃ এলেন তারাদেবী, পদ্মপাণি অবলোকিতেশ্বর ও অন্যান্য অনেক দেবদেবী।
এর সঙ্গে মূল বৌদ্ধধর্মের কোন সম্পর্ক নেই।
ফলে দর্শনের স্তরে এবং ধার্মিক আচার আচরণে হিন্দুধর্মের সঙ্গে ফারাক ক্রমশ: মুছে যেতে লাগল।
কেবল জন্মচিহ্ণ বা নাভির মত রয়ে গেল কিছু শব্দ, তার আদি কনোটেশন বদলে।
যেমন যীশুর বক্তব্য ছিল সূঁচের ছিদ্র দিয়ে উট যদিবা গলে যায়, তবু ধনীরা কোনদিন ঈশ্বরের করুণা পাবে না। গরীবেরা পাবে।
কিন্তু পরবর্তী কালে মার্টিন লুথারের প্রটেস্টান্টিজমের সময় এর নতুন ব্যাখ্যা হল -- একজন টাকাওলা মানুষও হৃদয়ের দিক থেকে নম্র অহংকারশূন্য হয়ে গরীবের পর্যায়ে হতে পারে।
একই ভাবে গোড়ার দিকের হীনযানের ( সর্বাস্তিবাদী ও সৌত্রান্তিক স্কুল) দেবদেবীহীন অনাত্মবাদী ক্ষণিকবাদী বৌদ্ধধর্মের রূপ বদলে গিয়ে তন্ত্রমন্ত্রে ভরপুর মহাযানী হয়ে যাওয়াটা হয়ত ভারত থেকে বৌদ্ধধর্মের প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।