হ্যাপীইজিগো, এদের সাইট আর অ্যাপ দুইই আছে। অনেকসময়ই অন্য সাইটের তুলনায় ৫০০- ৬০০ টাকা কমে টিকিট পাওয়া যায়। ২০১৯ থেকে আমি মাঝে মাঝেই কাটতাম। ২০২২এও কেটেছি, কোনও সমস্যা হয় নি। এমনকি একবার সকাল বিকেল গুলিয়ে রাত দুটোর টিকিট কেটে বসেছিলাম, সেও ওদের ফোন করে দিব্বি বদলে বিকেলের নিয়েছিলাম। গোলমাল হল ১৫ই নভেম্বর। পুণে থেকে বাগডোগরার টিকিট বুক করতে গেলে বার তিনেক পেমেন্ট ফেল হল। তখনই থামা উচিৎ ছিল কিন্তু ভাবলাম আরেকবার চেষ্টা করি। চতুর্থবারে পেমেন্ট দিব্বি গেল, ট্যাংট্যাং করে ৮৭৬৪/- টাকা কাটার ঘন্টিও বাজল ফোনে। কিন্তু টিকিট হল না। কি একটা এরর দেখিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গেল। এত দ্রুত হল যে স্ক্রিনশটও নেবার সময় পেলাম না।
তা আমি তখনও নিশ্চিন্ত যে ঠিকাছে এদের মেল আইডিতে মেল করলেই হবে, যেমন বরাবর করি। এর মধ্যে আবার ফোনে বার্তা এলো যে হ্যাপীইজিগো থেকে আমার ওমুক অর্ডার আইডির রিফান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তাতে আরোই নিশ্চিন্ত হয়ে ওদের সাইটে দেওয়া সাপোর্ট আইডিতে মেল করলাম। ব্যাস্স সেই শুরু। তারপর মেল করি উত্তর আসে না। ফোন করি, প্রথম দিকে দুই একবার ধরেছে কিন্তু ঘটনার বর্ণনায় রিফান্ড অবধি পৌঁছতেই কটাশ। তারপরে আর ফোন ধরে না। ১৮ই নভেম্বর থেকে দেখি ফোন নাম্বার নট রিচেবল। এবারে আমাকে ব্লক করেছে না ফোন নাম্বারই ছেড়ে দিয়েছে জানিনা। এদিকে টিকিট কাটার ছিল ১০ই ডিসেম্বরের জন্য, ২০ নভেম্বর নাগাদ দেখি দাম বাড়ছে। বাধ্য হয়ে মেকমাইট্রিপ থেকে কেটে নিলাম।
এরপরে শুরু হল শুন্যে মাথা ঠোকা, ট্যুইটারে হ্যাপীইজিগোকে ট্যাগ করে পোস্ট, মেল করে এফ আই আর করার ভয় দেখানো কিছুতেই কিছু কাজ হয় না। অ্যাপ থেকে হেল্প সাপোর্টেও যায় না। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহও পেরিয়ে যাবার পরে ট্যুইটারে খুব দুঃখ করে লিখেছিলাম যে এরকমভাবে ঠাকিয়ে এতগুলো টাকা মেরে দিচ্ছে কেউ কি কোনও উপায় বলতে পারে? পুণেরই আরেক ভদ্রমহিলা এসে GetMyRefund এর কথা জানালেন। বললেন তাঁরও এরকম টাকা আটকে রেখেছিল গেটমাইরিফান্ডের সাহায্যে ফেরত পেয়েছেন। তাড়াতাড়ি ওদের সাইটে গিয়ে নিজের কেস নথিবদ্ধ করলাম। এঁদের নিয়োগ করার সময় কোনও টাকাকড়ি দিতে হয় না। টাকা ফেরত পেলে ফেরত পাওয়া অঙ্কের ১০% দিতে হয়।
এঁদের তরফ থেকে আমোল পাটিল যোগাযোগ করে পুরো ডিটেলস চাইলেন। সমস্ত মেল এসেমেসের ছবি ইত্যাদি। সে হল ডিসেম্বরের ১৫-১৬ নাগাদ। এরপরে ওঁরা ওঁদের প্রসেস ফলো করলেন, প্রথমে চিঠি দেওয়া, ১৫ দিন অপেক্ষা করা ইত্যাদি। তারপরে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো। কিসের কি কোনও উত্তরই নেই। এরপরে আমাকে একটা চিঠি ড্রাফট করে দিয়ে মেল করতে বললেন। সে চিঠি লেখা হয়েছে পীযুষ গোয়াল, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, গুরগাঁওয়ের পুলিশ কমিশনার ইত্যাদিকে। এর সাথে আবার একটা চাইনিজ অক্ষরে লেখা ইমেলও ছিল, বোধয় HEG হেডকোয়ার্টারের আইডি হবে। তো এইবারে হেগ নড়েচড়ে বসল, বলল আমাকে নাকি টিকিট দেওয়া হয়েছে।
আমি টিকিটের ছবি দেখতে চাইলাম, সৌরভ নামে হেগের প্রতিনিধি একটা পিডিএফ পাঠালো। আমি রেগেমেগে গুরগাঁও পুলিশ কমিশনারকে অ্যাড্রেস করে এটা সাইবার ফ্রড আমায় সাহায্য করুন বলে মেল করলাম। কি আশ্চর্য্য ৩ দিনের মাথায় গুরগাঁও সাইবার সেল থেকে সত্যিই কেউ একজন ফোন করে পুরো কেস শুনলেন। আমায় বললেন গুরগাঁওতে গিয়ে এফ আই আর করতে। অপারগতা জানালাম, আমি পুণে থাকি। বললেন ঠিকাছে দেখছি কী করা যায়। আমোলকে বলতে বলল না এখন যাবার দরকার নেই। (দরকার থাকলেও যেতে পারতাম না অবশ্য) । গেল আরো দিন পনেরো কুড়ি।
আমোল আবার আরেকটা মেল করতে বলল, এবারে পিএমও ইন্ডিয়ার ইমেল আইডি যোগ হল ডিস্ট্রো লিস্টে। করলাম, তবে ওদের বয়ান না লিখে নিজের মত করে মডিফাই করে সাইবার ফ্রডের উপরে জোর দিলাম, পুণে সাইবার ক্রাইম বিভাগের আইডিও জুড়ে দিলাম। আর বললাম এই সাইট আর অ্যাপ অবিলম্বে ডাউন করা উচিৎ। আবার ৩-৪ দিনের মধ্যেই মেল এলো এক শনিবার রাত্রে, সোমবার সকাল ১০টায় গুরগাঁওয়ের কমিশনারের দপ্তরে কত নম্বর ঘরে যেন উপস্থিত হতে বলেছে। আবার মেলব্যাক করলাম পুণে থাকি যাওয়া সম্ভব নয়। পুণে সাইবার ক্রাইমও মেল করল নিকটস্থ থানায় উপস্থিত হয়ে এফ আই আর লজ করতে, তারপর ওরা দেখে নেবে। মোটামুটি ভাবছি গেটমাইরিফান্ড পারবে না, এইবারে থানায়ই যাই।
কনজ্যুমার ফোরামেও কেস করব ঠিক করলাম। তা গত পরশু ভর দুপুরে অফিসে কন্ফারেন্স কল চলছে এমত সময় গুরগাঁও সাইবার ক্রাইম বিভাগ থেকে জনৈক নবীন কুমার ফোন করলেন। তারপর দীর্ঘ জেরা। আবার জিগ্যেস করেন এই গুরগাঁওয়ের উকিলকে পেলাম কোত্থেকে যিনি নোটিশ দিয়েছেন? বারেবারেই জিগ্যেস করেন উকীলকে কত ফী দিয়েছি? বললাম আমি জানি না, গেটমাইরিফান্ড করেছে। টাকা পেলে ১০% নেবে। উনি কেমন রেগে গেলেন, ওহ উকীলকে ১০% দেবে? পুলিশ এদিকে কাজ করছে! বললাম তা পুলিশকেও পয়সা দিতে হবে নাকি? (ফোনে রেকর্ডার অন ছিল)। উনি আরো রেগে গেলেন 'পুলিশ ফ্রী তে কাজ করে, ফ্রীতেই তোমার টাকা ফেরত পাবে যদি সত্যি খোয়া গিয়ে থাকে। '
তারপর ঐ হেগের একজনকে কনফারেন্স কলে নিলেন। রাজেশ নাম। সে ব্যটা বলে অর্ডার আইডি দাও টাকা রিফান্ডের জেনুয়িন কেস হলে এক্ষুণি করে দিচ্ছি। নবীন বললেন হ্যাঁ এক্ষুণি দিচ্ছি। যাই হোক সেসব কল টল ছেড়ে উনি হোয়াটস্যাপে একটু পরে পাঠালেন দুটো স্ক্রিনশট, ঐ রাজেশ হতচ্ছাড়া শেয়ার করেছে একটায় টাকা যায় নি (ঐ ব্যর্থ অ্যাটেম্প্ট এর একটা ) আরেকটায় বলছে টিকিট জেনারেট হচ্ছে আর সাথে সেইই পিডিএফ যেটা ওদের সৌরভ দিয়েছিল। আমি রেগেমেগে আবার ব্যাঙ্কের কনফার্মেশান, রিফান্ডের জালি এসেমেসের স্ক্রিনশট, আমার লাগাতার মেল করে যাওয়া সব পাঠালাম সাইবার পুলিশকে।
সে আবার আমাকে ফোন করে বলে তোমায় রাজেশের নাম্বার দিচ্ছি ওকে বল সব ফাইল ওকে পাঠাও, আর না হলে পুণে পুলিশের কাছে যাও। আমি আর কিছু না বলে ঐ রাজেশের হোয়াটস্যাপে সব পাহিয়ে দিলাম। মনে মনে ভাবলাম শুক্রবার যাব হিঞ্জেওয়াড়ি থানায় আর সোম মঙ্গলবারে কনজ্যুমার কোর্টে। তা সেসব তো পরশুর কথা। কাল হঠাৎ মেসেজ এলো হ্যাপীইজিগো তোমার ৮৩৬৪/- টাকা রিফান্ড মঞ্জুর করেছে এবং ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিকাও। ক্লিকিয়ে দেখি লিখেছে ৪০০-টাকা ক্যাশ রিফান্ড আর বাকী ৮৩৬৪/-টাকা ব্যাঙ্কে যাবে। আমরা এয়ারলাইন্সের কাজে চেয়েছি।
আবার লেখা এয়ারলাইন্স থেকে আসতে ৪৫-৯০ দিনের মত লাগতে পারে। আমি প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে এটা ওদের নতুন ফ্রড। আবার দেড় থেকে তিনমাস। একবার ভাবলাম সেই মেলে সবাইকে লিখি আবার ভাবলাম দুত্তোর। কিন্তু নাহ আজ দুপুরে অবশেষে সত্যিই দেখি অ্যাকাউন্টে ৮৩৬৪/- টাকা ফেরত চলে এসেছে। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না দেখে। যাক সাড়ে তিনমাস লড়ে শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পেরেছি। শুধু ৪০০/- টাকার ক্যাশ রিফান্ডটা একটু শিশি বোতল হয়ে রইল (যাদিও আন্দাজ করছি কেসটা কী হয়েছে
)।
Getmyrefund
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।