এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মেট্রো রেল পরিষেবা: জাপান ও আমরা

    Rumjhum Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ এপ্রিল ২০২২ | ৮৮১ বার পঠিত
  • মেট্রো রেল পরিষেবা: জাপান ও আমরা
     
    ২০১৯ সালে জুলাই মাস নাগাদ কলকাতা শহরে মেট্রো স্টেশনে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়। এক ছেষট্টি বছরের বৃদ্ধের হাত মেট্রো রেলের দরজায় আটকে যায়। এবং এক বীভৎস দৃশ্যের 
    সাক্ষী থাকে এই শহরবাসী। তখন মহামারী আমাদের গ্রাস করে নি। অনেক মৃত্যু মিছিল পেরিয়ে আজ আবার আমরা বাইশ সালে দাঁড়িয়ে।
     
    ভারতবর্ষে শুরু হতে চলেছে বুলেট ট্রেন পরিষেবা, জাপান থেকে আসছে 'শিনকান্সেন' তথা বুলেট ট্রেনের প্রযুক্তি, এমন একটা খবরে ভারতবাসী হিসাবে গর্ব হওয়াটাই সঙ্গত। কিন্তু ২০১৯ সালে কলকাতা মেট্রোর মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের অনেকগুলো প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। এই দুর্ঘটনার দায় কার? বিদেশ থেকে প্রযুক্তি আমদানী করলেই কি সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? শুধু সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে কি আমরা নিজেদের বিশৃংখল আচরণের দায় এড়িয়ে যেতে পারি? 2019 সালে খোদ টোকিও শহরে অফিস টাইমে মেট্রো রেলে যাতায়াত করার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ওদেশের আর আমাদের মেট্রো পরিষেবার মধ্যে যে আকাশপাতাল পার্থক্য নজরে পড়েছে তা ভাগ করে নেওয়ার নাগরিক দায় এড়াতে পারা গেল না। 
     
    সাধারণত: সব দেশেই কিছু লিখিত ও কিছু অলিখিত নিয়ম থাকে। অলিখিত নিয়মগুলি আমাদের মতো দেশে সাধারণ নাগরিকের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায় না। কারণ সেই নিয়ম লঙ্ঘন অপরাধ হিসাবে গণ্য হয় না, বড় জোর পাশের মানুষটার কিছু অসুবিধা হতে পারে। এইখানেই জাপানের সাথে আমাদের মস্ত তফাৎ হয়ে যায়। জাপানে আর একটা তৃতীয় নিয়ম প্রবলভাবে সক্রিয়। তা হল নিয়মগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পালন করার নিয়ম। টোকিও এবং আশপাশের শহরতলী জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে আছে মেট্রো লাইন। অফিস টাইমে প্রচুর যাত্রী মেট্রো রেলের মাধ্যমে যাতায়াত করেন। তাঁরা প্রত্যেকে সব কটি লিখিত ও অলিখিত নিয়ম খুব যত্ন করে পালন করেন। যাঁরা মেট্রো রেলের কর্মী তাঁরাও তাঁদের কাজ খুবই যত্ন সহকারে করেন। কেমন সেই পরিচালন ব্যবস্থা? 
    1. স্টেশন চত্বরে ঢোকার চলমান সিঁড়িগুলোতে লাইন দেওয়ারও অলিখিত এক নিয়ম আছে। সিঁড়িতে বাঁদিক ঘেঁষে দাঁড়ানো হয়, ডানদিক খালি রাখা হয়। যাঁরা প্রবল তাড়ায় থাকেন তাঁরা যাতে এগিয়ে যেতে পারেন। এই নিয়ম অবশ্যই সহযাত্রীর সুবিধার কথা ভেবে সবাই মেনে চলেন। 
     
    2. প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান,কোনভাবেই গাঢ় হলুদ লাইনের যে সীমা নির্দেশ করা থাকে তার বাইরে যান না তাঁরা। 
          
    3.ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এলে, প্রথমে যাঁরা নামার তাঁদের     নামতে দেওয়া হয় তারপর  যাত্রীরা একে একে কামরায় ওঠেন। 
     
    4. কামরায় উঠে কেউ ফোনে কথা বলেন না।এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন লিখিত নির্দেশ নেই। 
     
    5. প্ল্যাটফর্মে প্রতি কুড়ি মিটারে অন্ততঃ একজন রেল কর্মী উপস্থিত থাকেন সঙ্গে একজন গার্ড। 
     
    6. ঊপস্থিত কর্মীরা প্রত্যেকটি কামরার সব যাত্রীর ওঠানামা তত্ত্বাবধান করেন এবং দরজা বন্ধ হলে সিগন্যাল দেওয়া হয় তবেই ড্রাইভার গাড়ি চালান। 
     
    7. প্লাটফর্ম  একটা ইমারজেন্সী ঘন্টার ব্যবস্থা করা আছে, যাতে কোন বিপদ বুঝলে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো কর্মী বা যাত্রী সেই ঘন্টা বাজাতে পারেন এবং ড্রাইভার সতর্ক হন। 
    8. জাপানের সময় জ্ঞান তো বিশ্ববন্দিত। প্রত্যেকটি ট্রেন সময়ে আসে এবং সময়ে ছাড়ে। 
     
     
    নিয়মনিষ্ঠা, যাত্রী সুরক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে পারার কারণেই জাপানের মেট্রো পরিষেবায় দুর্ঘটনার  সংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে কম।একটা দেশের নাগরিক ও কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই ইতিহাস গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সজল কাঞ্জিলালের মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল শুধু উন্নত দেশের প্রযুক্তি নয়, তাদের পরিচালন পদ্ধতি ও আম জনতার দুর্দান্ত শৃংখলাবোধ আমদানী করতে না পারলে এই লজ্জার হাত থেকে আমাদের মুক্তি নেই। 
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন