পশ্চিমবঙ্গের মহাবিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে আরেকটি বিনম্র নিবেদন। লেখক মহাবিপ্লবীদের অবস্থা খুব ভালোভাবেই দেখিয়েছেন। তাঁকে নমস্কার!
"দ্বিজাতিতত্ত্ব, ক্যাব, রেনেসাঁস, বিজেপি.... সব বুঝলাম। কিন্তু আটকাতেন কী দিয়ে?
-বিদ্যাসাগরকে ব্যবহার করে হবে না। গোবলয় অবধি তর্কটা পৌছানোর আগেই কেউ না কেউ এসে বলবেন যে বিদ্যাসাগর শূদ্রদের শিক্ষার বিরোধী ছিলেন, ইংরেজদের সাথে মিলে বাঙালী সত্তার বারোটা বাজিয়েছেন। বিদ্যাসাগর অস্ত্র হিসাবে ভোঁতা হয়ে গেলেন।
-রামমোহনকে ব্যবহার করবেন। সেখানেও গেরো। গোবলয় অবধি তর্কটা যাবেই না। তার আগেই কোন বন্ধু প্রমাণ করে দেবেন যে উনি ব্রাহ্মণ পাচকের রান্না ছাড়া খেতেন না, সতীদাহ বন্ধ করা কেবল উচ্চবর্ণের জন্য। অতএব রামমোহন অস্ত্রও ফেল।
-বিবেকানন্দ গোভক্তদের গোসন্তান বলে উপহাস করেছেন। কিন্তু বিবেকানন্দও অস্ত্রও ফেল হয়ে যাবে। না গোবলয়ের হাতে নয়, বন্ধুদের হাতে। কারন নারীদের নামে যা তা বলেছেন, বর্ণাশ্রমকে সমর্থন করেছেন। অতএব বিবেকানন্দ অস্ত্র ভোগে।
- চৈতন্যদেবের বর্ণাশ্রম বিরোধী বৈষ্ণব মত কোন কাজে আসবে না। কারন উনার মধ্যে কোন অলৌকিক ক্ষমতা ছিল না, উনি পেটুক ছিলেন, উড়িষ্যায় পালিয়েছিলেন। চৈতন্যদেব অস্ত্র ফেল।
রবীন্দ্রনাথকে ব্যবহার করবেন? সে গুড়েও বালি। এখানেও আপনাকে গোবলয়ের সাথে লড়তে হবে না। তার আগে বন্ধুরাই প্রমাণ করে দেবেন যে উনি বাউলদের থেকে গান চুরি করেছিলেন, জমিদার ছিলেন, অন্যের পরিশ্রমে বসে খেতেন প্লাস উনার লেখায় সত্যধর্মের ভাবাবেগ অনেকবার আহত হয়েছে। অতএব রবীন্দ্রনাথকেও ব্যবহার করা যাবে না।
শরৎচন্দ্রকে ব্যবহার করা যাবে না। এখানেও অবজেকশন তুলবেন বন্ধুরা, গোবলয় পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে না। উনি লিখেছিলেন "মুসলমান বনাম বাঙালীদের ফুটবল ম্যাচ" - ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। প্লাস উনি মুসলিম সমাজ নিয়ে বিশেষ কিছু লেখেন নি, যা লিখেছেন সেগুলো খুব ভাল কথা নয়।
বঙ্কিমচন্দ্রকে দিয়ে চলবে না। কারন বন্ধুদের মতে উনি 'বন্দেমাতরম' মন্ত্রের জন্মদাতা, অতএব সাম্প্রদায়িক। প্লাস অানন্দমঠের লড়াইটা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই বলে দেখানো হয় নি। (যদিও সেই সময় বন্দেমাতরম বললে পুলিশ গ্রেপ্তার করত এবং আনন্দমঠ বইটাকে বাড়িতে রাখলে লুকিয়ে রাখতে হত, এবং সেটাও পুলিশদের ভয়েই)।
নেতাজী হাত মিলিয়েছিলেন তোজোর সাথে, আবার ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কয়েকবছর মিলিটারি শাসন চেয়েছিলেন। অতএব নেতাজী যে ফ্যাসিজমের কবলে চলে গেছিলেন সেনিয়ে কোন সন্দেহ নেই। নেতাজী অস্ত্রও ভোঁতা। বন্ধুরাই বলবে, গোবলয় অবধি তর্কটা যাবেই না।
বন্ধুরা মোটামুটি প্রমাণ করে ফেলেছেন উপরের সব মনীষীরা আসলে হিন্দুত্ববাদী বা ছুপা হিন্দুত্ববাদী। কাজেই গোবলয়ের হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওনারা সহি অস্ত্র নয়।
তাহলে পড়ে রইল কী? ইসলামিক শাসনে সোনার বাংলার চিত্র এবং তিতুমীর। এদুটোয় আবার আপনার বিশ্বাস নেই। কারন প্রাক-ইসলামিক শাসনের বাংলার সমৃদ্ধি এবং ইসলামিক শাসনে বাংলার সমৃদ্ধির তুলনা নিয়ে কোন আলোচনা নেই। এবং আমার মত আপনিও সাম্প্রদায়িক - তাই তিতুমীরে আমরা নেই।
বাঙালীর অবস্থা পুরো ফাঁপা ঘটির মত। বাজালে আওয়াজ খুব হয়, কিন্তু ঠোকা লাগলেই চৌচির। অন্য কোন প্রাদেশিকতার সামনে পড়লেই ভেঙ্গে খান খান।"