এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বাকিসব  মোচ্ছব

  • কে ছিলেন শিবাজী? (১)

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২৮৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • কে ছিলেন শিবাজী?
    এক

    [ দিনটা ছিল ২০১৫ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি। মহারাষ্ট্রের কোলহাপুর শহরে ‘মর্নিং ওয়াক’ সেরে ঘরে ফিরছিলেন সি পি আই দলের স্থানীয় নেতা ও লেখক গোবিন্দ পানসরে ( বয়েস ৮২) এবং তাঁর স্ত্রী উমা (বয়েস ৬৭)। এমন সময় মোটরবাইকে চড়ে দু’জন এসে পয়েন্ট ব্ল্যাংক দূরত্বে তাঁদের গুলি করে পালিয়ে যায়। মুম্বাইয়ের হাসপাতালে বেঁচে উঠলেন উমা। কিন্তু গোবিন্দ মারা গেলেন চারদিন পরে।
    এর  দু’বছর আগে, ২০১৩ সালের অগাস্ট মাসে, ‘মর্নিং ওয়াক’ সেরে ঘরে ফেরার সময়  ঠিক একইভাবে নিহত হয়েছিলেন ‘অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির’ প্রতিষ্ঠাতা যুক্তিবাদী লেখক  ডাক্তার নরেন্দ্র দাভোলকর। হ্যাঁ, সিসিটিভি ফুটেজ ছিল। কিন্তু আজও দোষীরা শাস্তি পায়নি।
    তার ঠিক দু’বছর পরে ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে কর্নাটকের লুরুতে একই ভাবে ঘরের দোরগোড়ায় আততায়ীদের গুলিতে নিহত হলেন সাংবাদিক ও সামাজিক কার্যকর্তা গৌরী লঙ্কেশ।
    অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সিবি আই ইত্যাদির তদন্তের পর এখন কোর্টে কেস শুরু হয়েছে।
    গোবিন্দ পানসারে ঐতিহাসিক দস্তাবেজ, তথ্য ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অনেক ঐতিহাসিক মিথকে ভেঙে নতুন করে দাঁড় করাচ্ছিলেন। তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখনীয় কাজ  “হু ইজ শিবাজী?”
     আমি ওই বইটির থেকে গোটাকয় অধ্যায়ের অনুবাদ করে গুরুচন্ডালীর পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। প্রথমে শিবাজীর তিনটি চিঠিঃ একটি ঔরংজেবকে লেখা,  অন্য দুটি জুমলেদার হাবিলদার এবং কর আদায়ের জন্য সুবেদারকে লেখা।
      আমার ধারণা এর থেকে শিবাজীর ব্যক্তিত্ব ও প্রশাসন-চিন্তার খানিকটা পরিচয় পাওয়া যাবে। এর পরের দুই কিস্তিতে আসবে শিবাজীর ধর্মচিন্তা  এবং শিবাজীকে নিয়ে ইতিহাসের বিকৃতি।
     ইচ্ছে আছে এর পর নরেন্দ্র দাভোলকরের বই “Please Think” এরও অনুবাদ করব। ]


    চিঠি-১
    জজিয়া কর নিয়ে ঔরংজেবকে লেখা
    সির্কা ১৬৫৭

    ঔরংজেবকে শিবাজী, যেমনটি কথা ছিল

    ভাগ্যের ফেরে আমাকে বিদায় না জানিয়েই চলে আসতে হয়। ফিরে আসার পর শুনতে পেলাম শাহানশাহের রাজকোষ শূন্য। আরও শুনছি যে সাম্রাজ্যের অধীশ্বর নাকি হিন্দুদের থেকে জজিয়া আদায় করে তার দৌলতে দৈনন্দিন রাজকাজ চালাচ্ছেন। এর আগে সম্রাট আকবর অনেক বিচক্ষণতার সঙ্গে বাহান্ন বছর ধরে রাজত্ব করে গেছেন। তখন দাউদি ও মোহম্মদী সম্প্রদায়কে বাদ দিলে ব্রাহ্মণ, সেবাদাস আদি হিন্দুদের ধার্মিক আচার আচরণ সুরক্ষিত ছিল।  তাই তাঁকে অপার শ্রদ্ধায় ‘জগতগুরু’ বলা হত।  ফলে তিনি সব কাজেই সফল হলেন। একের পর এক দেশ জয় করলেন। এরপর সম্রাট নুরুদ্দিন জাহাঁগীর বাইশ বছর রাজত্ব করে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কৃপায় স্বর্গে গেলেন। শাহজাহানও বত্রিশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। ওঁরা ছিলেন বীর এবং সম্রাট হিসেবে শ্রদ্ধার পাত্র। ওঁরা বেশ কিছু নতুন প্রথা শুরু করেছিলেন। চাইলে ওঁরাও জজিয়া কর ধার্য করতে পারতেন। কিন্তু মানুষ, ছোট হোক বা বড়, সবাই তো ঈশ্বরের সন্তান। এবং তারা নিজের নিজের ধর্ম মেনে চলে।  ওঁরা কিন্তু কখনও অন্যায় আদেশ দেননি। আজও সবাই তাঁদের গুণগান করে। ছোট বড় সবাই ওঁদের আশীর্বাদ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করে।  ওইসব সম্রাটদের সর্বদা প্রজাবর্গের ভালমন্দের প্রতি দৃষ্টি ছিল
    কথা আছে--যে যেমন বীজ বপন করে সে তেমনই ফসল পায়।
     এবার আপনি দেখুন, আপনার শাসনকালে কতগুলো দুর্গ, কতগুলো রাজ্য হারিয়েছেন!  আর বাকি সবও হারাতে চলেছেন। কারণ, আপনি উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য কোন খারাপ কাজ করতেই পিছপা হন না। প্রজারা আজ দুর্দশাগ্রস্ত। একটি পরগণাও আপনাকে ফসলের এক প্রতিশত খাজনা দিচ্ছে না। এমনকি শাহানশাহ স্বয়ং ও তার সন্তানেরা আজ দারিদ্র্যময় জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছেন। তাহলে অন্য সব মহামাত্যের দিন কেমন করে কাটছে সেটা সহজেই অনুমেয়।
    মোদ্দা কথা, সৈনিকেরা হতোদ্যম,  বণিকের দল চেঁচামেচি শুরু করেছে এবং মুসলমানেরা কান্না জুড়েছে। আর হিন্দুরা ভেতরে ভেতরে জ্বলছে। অনেকেরই ঠিকমত খাবার জুটছে না। এই কি আপনার শাসন? এরপর শুরু হয়েছে জজিয়া।
    পূব থেকে পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ছে বার্তা যে হিন্দুস্থানের শাহানশাহ এবার ফকির, ব্রাহ্মণ, সেবাদাস, যোগী, সন্ন্যাসী, বৈরাগী, গরীব ও ছন্নছাড়াদের উপর জজিয়া ধার্য করেছেন। সম্রাট এরজন্যে বেশ গর্বিত, উনি বোধহয় তৈমুর শাহকেও ছাড়িয়ে গেছেন।
    কোরান একটি স্বর্গীয় গ্রন্থ, ঈশ্বরের বাণী। এর ফরমান-- ঈশ্বর সমস্ত মুসলমানের, এবং বাস্তবে গোটা বিশ্বের।  ভাল এবং মন্দ, সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। মসজিদে তাঁরই আরাধনা, মন্দিরে তাঁর উদ্দেশেই ঘন্টা বেজে ওঠে। অন্য কারও ধর্মের বিরোধ করার অর্থ নিজের ধর্মকে ভুলে যাওয়া, ঈশ্বরের ফরমানকে মুছে দেওয়া, আসলে এর মানে দাঁড়ায়- ঈশ্বরকে দোষ দেওয়া।
    অতএব আপনাকে ভালমন্দের মধ্যে একটা বেছে নিতে হবে। এটা খুব জরুরি, কারণ সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে  বদনাম করার অর্থ  সৃষ্টিকর্তাকেই বদনাম করা। দেখুন, জজিয়াকে কোনমতেই ন্যায়োচিত ঠাওরানো যায় না। সুলতান আমেদ গুজরাতি এভাবেই শাসন করলেন এবং দ্রুত ধুলোয় মিশে  ধুলো হয়ে গেলেন। যাদের অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া হয়, শেষমেশ তাদের মুখ থেকে এমন হলকা বেরোয় যা শয়তানের মুখের ধোঁয়া থেকেও গরম। অত্যাচারীরা শয়তানের চেয়ে তাড়াতাড়ি পুড়ে ছাই হয়। তাই বলি, নোংরা মনটা যত তাড়াতাড়ি ধুয়ে সাফ করা যায় , ততই মঙ্গল।
    আরও বলি, যদি আপনার সত্যধর্মের মানে হয় হিন্দুদের উপর অত্যাচার করা, তাহলে আপনার সেনাপতি রাজা জয় সিংয়ের থেকে জজিয়া আদায় করে শুরু করুন। তাহলে বাকি সবাই সহজেই মেনে নেবে।  গরীবেরা হোল সামান্য পিঁপড়ে ও ডাঁশের মত অভাজন। ওদের কষ্ট দেওয়ার মধ্যে কীসের বাহাদুরি! অবাক হয়ে দেখছি অনেকেই খড়ের গাদার মধ্যে আগুন লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন।
    তবে তাই হোক। সাম্রাজ্যের সুর্য এবার বীরত্বের পূর্ব শিখরচুড়া থেকে উজ্বল হয়ে জ্বলে উঠুক!

    চিঠি-২

    খাজনা আদায় নিয়ে সুবেদারকে
    ৫ সেপ্টেম্বর, ১৬৭৬

    শ্রী শংকর
      প্রভাবলী প্রদেশের সুবেদার রামজী অনন্তকে রাজশ্রী শিবাজী রাজার অভিনন্দন।
      আপনি বিনা তঞ্চকতা করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাষ্ট্রের সেবা করছেন। আপনার থেকে আশা যে আপনি একইরকম নিষ্ঠা সহকারে রাষ্ট্রের কৃষি ব্যবস্থার-- বীজ বোনা থেকে ফসল কাটা পর্য্যন্ত -দেখাশুনো করবেন। এবং তাতে আপনার কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকবে না। দেশ জুড়ে ফসলের ভাগাভাগি চলছে। উৎপন্ন ফসলে রাষ্ট্রের ও রায়তের মধ্যে কার কতটুকু ভাগ তা স্পষ্ট হওয়া দরকার। যদি কোনভাবে রায়তদের ঠকানো হয় তাহলে আপনি রাষ্ট্রের রোষের শিকার হবেন। রায়তের থেকে টাকা পয়সা নেওয়া আমার আদেশের বিপরীত। আশা করি আপনি খাদ্যশস্যের বদলে  টাকা আদায় করবেন না। আপনি শুধু ফসল থেকে আমাদের যতটুকু ভাগ তাই নেবেন। সেগুলো পরে ভাল দাম পেলে বিক্রি করা যাবে। তাতে রাষ্ট্রের লাভ হবে। সবরকম কর আদায় ফসলের উৎপাদনের ভিত্তিতেই হবে। তারপর সেগুলো ভাল করে গুদামে পুরে রেখে সঠিক মরশুমে বেচতে হবে। গোটা লেনদেনটাই এমন ভাবে করতে হবে যাতে পণ্যদ্রব্য ঠিক সময়ে চড়া দামে বিক্রি করা যায়। কোনরকম হেলাফেলা ও অপব্যয় করলে চলবে না। আপনি নারকোল, সুপুরি, গোলমরিচ এইভাবেই বিক্রি করাবেন। যদি দশটা বাজারে মুনাফায় বেচতে পারেন তাহলে নিজেও উপযুক্ত লাভ পাবেন।
    রায়তের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা দরকার। আপনি ওদের ফসল বোনার সময়েও সাহায্য করবেন। এরজন্য আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে এবং গাঁয়ে গাঁয়ে যেতে হবে। গাঁয়ের সব রায়তকে ডেকে একত্র করে সিদ্ধান্ত নেবেন যে কোন কৃষক ঠিক কোন ফসল বোনার উপযুক্ত এবং সেটা কতটা জমিতে বোনা উচিৎ। এসব তাদের পরিশ্রম করার ক্ষমতা ও অন্য কিছু কারণের উপর নির্ভর করবে। কিছু লোক হবে যারা ততটা সক্ষম নয়। তাদের কাছে হাল-বলদ নেই, খাবারও জোটে না। তাদের একজোড়া হালবলদ ও খাদ্যশস্য কেনার মত টাকা দিতে হবে। তারপর তারা যতটা পারে চাষ করুক। তাদের থেকে কোন সুদ নেবেন না, খালি মূল টাকাটা নেবেন, তাও যখন ওদের শোধ দেওয়ার মত অবস্থা হবে তখন। এ’ব্যাপারে লাখ দুই খরচ হলেও আমার আপত্তি নেই। শুধু আপনি সুনিশ্চিত করুন যে টাকাটা যেন যোগ্য লোকের হাতে পৌঁছয় এবং সমস্ত পড়তি জমি চাষের যোগ্য হয়ে ওঠে। এই পদক্ষেপ কৃষকদের উৎসাহিত করবে। চাষ করতে গিয়ে কারও লোকসান হলে তার রাজকোষে দেয় রাশি মকুব করা হবে। এই বিষয়ে আপনি সঠিক সময়ে আপনার উর্ধতন আধিকারিককে জানাবেন যাতে উনি মকুবের জন্য উপযুক্ত আদেশ জারি করতে পারেন। আমার বিশ্বাস, আপনি সাবধান হয়ে উপযুক্ত বিবেকবুদ্ধির সংগে আপনার দায়িত্ব পালন করবেন।

    চিঠি-৩

    চিপলুন প্রদেশের জুমলেদার ( খাজাঞ্চি), হাবিলদার এবং করণিককে,

    চিপলুন রাজ্যে আমাদের রাজকীয় সেনা শিবির ফেলে ছিল। বর্ষার কথা ভেবে দাভোল জনপদের ভাঁড়ারে খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য জিনিসপত্র মজুত করা হয়েছিল। কিন্তু এসব সেনাবাহিনীকে দিয়ে দেওয়া হয়। সমস্ত শস্য এবং চারা গেল সেনার থাকাখাওয়া ইত্যাদির জন্য। ফলে রায়তের ভোগান্তির অন্ত ছিল না। এইই নয়, প্রচন্ড গ্রীষ্মের দাবদাহে অশ্বারোহী বাহিনীকেও তাঁবু ফেলতে হোল। খরচ মেটাতে আমরা আমাদের করণিক এবং বিভিন্ন দুর্গের থেকে ধার করলাম। যদি এসব হিসেব করে খরচ না করা হয়, যদি এলোমেলো ভাবে উড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ওই সীমিত সাধন অল্পদিনেই ফুরিয়ে যাবে এবং তোমাদের ঘোর বর্ষায় অন্নাভাবে উপোষ করতে হবে। ঘোড়াগুলো মারা যাবে। এবং এই মৃত্যুর জন্য তোমরাই দায়ী হবে। তখন তোমরা হয়ত কৃষকদের জ্বালাতন করতে শুরু করবে। কেউ ছিনিয়ে নেবে ওদের ফসল, কেউ কেড়ে নেবে রুটি, কেউ খড় আর কেউ নেবে জ্বালানি কাঠ অথবা তরিতরকারি।  তোমরা এসব শুরু করলে কৃষকদের মধ্যে যারা এতদিন ঘরে ছিল তারা অত্যাচার ও লুঠতরাজের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে। কারও কপালে জুটবে অনাহার-মৃত্যু। এর মানে দাঁড়াবে- তোমরা মোগল আক্রমণকারীদের থেকেও খারাপ! কৃষকেরা অভিশাপ দেবে! সমস্ত দোষ নামবে তোমাদের মাথায়। কাজেই এখন থেকে ভাল করে বুঝে নাও—সেপাই হও অথবা সৈনিক— তোমাদের  ঠেলায় গ্রামবাসীদের কষ্টের বোঝার আঁটির উপর যেন একটা গাছের ডাল বা পাতাও না পড়ে!
    তোমাদের জন্য রাজকোষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তোমাদের যা চাই—খাবার বা ঘোড়ার জন্যে খড়, জ্বালানি কাঠ অথবা শাকসবজি— সব বাজার থেকে পয়সা  দিয়ে কিনে নাও। তোমাদের খাওয়া-পরার জন্য কারও উপর নির্ভর করতে হবে না, অযথা বলপ্রয়োগ করতে হবে না। আমাদের যোগান দেওয়া জিনিসপত্র হিসেব করে ব্যবহার করতে হবে যাতে বর্ষাকালটা পার হয়ে যায়। করণিক যা দেবে সবটাই নাও,তবে এমনভাবে খরচ কর যাতে একজনকেও আধপেটা খেয়ে থাকতে না হয়। আর ঘোড়াগুলো যেন দিনে দিনে তরতাজা হয়ে ওঠে। করণিকদের ধমকানো অনুচিত; যখন ইচ্ছে যা খুশি আবদার করা,ভান্ডার ও গুদাম আক্রমণ করে লুঠে নেওয়া –এসব নিতান্ত অনাবশ্যক।
    তোমাদের জানা আছে যে গরমকালে সৈন্যেরা কাঠের ঘরে শিবির বানিয়ে থাকে। কেউ  হয়ত অগ্নিকুন্ড জ্বালাবে, কেউ ভুলভাল জায়গায় উনুন বানাবে, কেউ তামাক খেতে আগুন চাইবে। চারদিকে শুকনো খড় ছড়ানো থাকে। যদি বাতাসের দিশা খেয়াল না করে আগুন জ্বালাও তাহলে খুব বড়সড় দুর্ঘটনা হতে পারে। একটা ঘরে আগুন লাগলে, সেটা অন্য ঘরেও ছড়িয়ে পড়বে। খড়ের গাদায় একটি ছোট্ট আগুনের ফুলকি ছিটকে পড়লেই সমস্তটায় আগুন ধরে যাবে।  তারপর আর কি, তখন তুমি রায়তদের মুন্ডচ্ছেদ কর বা করণিককে ধমকাও—তোমাদের শিবিরের জন্য ঘর বানাতে একটুকরো কাঠও বেঁচে থাকবে না। এটা সবার বোঝা উচিৎ।
     অতএব, সমস্ত দায়িত্বসম্পন্ন আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে তারা যেন পালা করে খেয়াল রাখে যাতে বহ্নুৎসব, উনুন বা দীপের পলতের থেকে আগুন না ধরে যায়। বিশেষকরে নেংটি ইঁদুরের দল জ্বলন্ত পলতে নিয়ে পালাতে দড়।  খড়ে আগুন লাগার থেকে রক্ষা করতে যা যা সম্ভব সব করতে হবে। তবেই বর্ষাকালে ঘোড়াগুলো বেঁচেবর্তে থাকবে।  এটা না করলে  ঘোড়া নেই, অশ্বারোহী বাহিনী নেই।  তখন কার দেখাশুনো করবে, কাকেই বা খাওয়াবে!  তোমরা ঝামেলার থেকে মুক্তি পাবে!
    তাই আমি এতসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নির্দেশ দিচ্ছি। 
    আবার বলছি--গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সমস্ত জুমলেদার, হাবিলদার ও করণিকেরা যেন এই সব খুঁটিনাটি পালনের ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নশীল হন।  তোমরা সবাই এবার কোমর বাঁধ, ভাল করে খোঁজখবর নিয়ে কাজ শুরু কর। যে এ’ব্যাপারে অবহেলা করবে, ভুল করবে, সে মারাঠা নামের অযোগ্য। এমন লোক কী করে আমার এখানে কাজ পাওয়ার আশা করে? জেনে রেখ,  বেচাল দেখলে কাউকে ছাড়া হবে না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sara Man | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:৪৩735772
  • এগিয়ে চলুন, পাশে আছি। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন