এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মেড ইন ফাউন্টেন পেন

    A B Nurul লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ জানুয়ারি ২০২২ | ৭৭৮ বার পঠিত
  • বুড়িগঙ্গা একটি নগর সভ্যতার নিউক্লিয়াস। বদ্বীপের হাজারো প্রবাহের মত এই নদীও প্রাচুর্য দিয়েছে তীরবর্তী জনপদকে। প্রাচীন এই প্রবাহকে কেন্দ্র করেই ঢাকা নগরীর গোড়াপত্তন। 


    ঢাকা। কারও কাছে মসলিনের শহর, কারও চোখে মসজিদের। ঢাকাইয়্যা আর বাঙালের সেই আদ্যিকালের রাজধানী আজও স্মার্ট হেরিটেজ। সেই যে রাজমহল থেকে স্থানান্তর হয়ে রাজধানী হলো ঢাকা, তারপর থেকে নানা উত্থান পতনের সাক্ষি এই বোবা নগরী। রাজধানী হিসেবে ৪শ বছর হলেও ঢাকা বুকে ধরে আছে ৬শ বছরের নগর ইতিহাস। মেগাসিটির টাইমলাইনে উত্তাল সময়ের কথা যেমন আছে তেমনি চাপা দেয়া আছে অব্যক্ত কাহন। অজানা সেই অধ্যায় জানতে ইতিহাসের অলিগলি হাঁটতে হয়, এক কাহন জানতে ঘাঁটতে হয় শিক্ষা-সংস্কৃতি আর জীবনাচরণের সাতকাহন। 


    প্রকৃত অর্থে ১৮৩৫ সালের আগে ঢাকা নগরীতে আধুনিক শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়েছিল তেমন প্রমাণ ইতিহাস সূত্রে পাওয়া যায় না। পূর্ববাংলা একটি পশ্চাদপদ জনপদ ছিল। এই জনপদে শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ছোঁয়া আসে ১৮৩৫ সালে। এ সময় ঢাকায় গভর্নমেন্ট কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এই স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার সূচনা হয়। 


    শিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে আরও একটি বিষয় আড়ালে, নিরবে, হাত ধরাধরি করে ইতিহাসের পথে হেঁটে গেছে, যার খোঁজ রাখেনি কেউ। সেকালের লেখার উপকরণ বা রাইটিং ইন্সট্রুমেন্টের খোঁজ করলে জানা যায় ওই অঞ্চলের আদিবাস ও শিক্ষা ব্যবস্থার হকিহত। রাইটিং ইনস্ট্রুমেন্ট ও ম্যাটারিয়ালের বিচিত্র ভাণ্ডারের মধ্যে কারিগরি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফাউন্টেন পেন একক প্রভাব বিস্তার করে আছে। সামাজিক নানা ক্ষেত্রে ফাউন্টেন পেনের অংশগ্রহণ শুধু লেখনি হিসেবেই পরিগণ্য হয়নি বরং মর্যাদা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেকসময় নিরীহ ও নিরপেক্ষ ফাউন্টেন পেনকে ব্যবহার করা হয়েছে উপহার বা উপঢৌকনের মতলবি বস্তু হিসেবে। বিয়ে-শাদির মত সামাজিক অনুষ্ঠানে যেমন উপহার হিসেবে মনভোলানো গেছে একটি পাইলট কলম দিয়ে; তেমনি কোনো দপ্তরের বড়বাবুকে ওয়াটারম্যান উপঢৌকন দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতেও দেখা গেছে অহরহ। এসব কারণে সোনার নিবের কলম শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। লেখার উপকরণ বলেই নয় বরং বিবিধ ব্যবহার আর অফবিট বিজনেসের চালন শক্তির ধারণা দেয় ফাউন্টেন পেন। স্থানীয় শিক্ষার বিস্তার ও মানোন্নয়ন সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যায় ফাউন্টেন পেনের তৎকালীন ইতিহাস ঘাঁটলে। এছাড়া ব্যবসা- বানিজ্যের একটি চিত্রও কালি কলমের ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে খুঁজে দেখা সম্ভব। সমাজ বদলের এই অবিচ্ছেদ্য এই অঙ্গটি এড়িয়ে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার রূপটি হয়তো ধরা যায় তবে অধরা রয়ে যায় প্রাচীন কালের কারিগরি ও মানবিক উন্নয়নের কথন। কে জানে, কোন কলমে স্বাক্ষর হয়েছিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পন কিংবা দেশভাগ হয়েছিল কোন ফাউন্টেন পেনের খোঁচায়? কাগজ, কালি ও কলমের ইতিহাস চর্চা আমাদের উজ্জীবিত করতে পারে এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে তথা নতুন পথের সন্ধানে।



    নতুন পথের সন্ধানে পুরনো শহরে হেঁটে বেড়ায় কিছু ক্ষ্যাপাটে মানুষ। ঢাকায় তারা Fountain Pen Culture নামের একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে যুথবদ্ধ। স্বেচ্ছাসেবী ও শৌখিনদের এই সংগঠনে লেখক একজন নগন্য সদস্য। নেটিজেনদের উ‌ৎসাহে শুরু হয় ফাউন্টেন পেনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার কার্যক্রম। যা শিগগিরই বই আকারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এটি সম্ভবত এই বিষয়ে বাংলায় প্রথম বই এমনকি অন্য ভাষাভাষি মানুষের জন্যও! 


    ফাউন্টেন পেনের ইতিহাস খুড়তে গিয়ে জানা গেল, সুপ্রাচীন কালে পূর্ব বাংলায় নিব তৈরি হয়ে আসছিল। কোম্পানির শাসনমলের বিভিন্ন নথি থেকে এ কথা এখন প্রমানিত যে ফরিদপুর, বরিশাল, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকার নিব তখন সুনাম কুড়িয়েছিল। দুইশ বছর আগে নিব তৈরির কারিগর ও বাজার সম্পর্কে জানা গেলেও ১৯৪৭ এর পর কলম তৈরির বিশদ জানা মুশকিল হয়ে পড়ে। দেশভাগের পর পূর্ব বাংলার মানচিত্র পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তর হলে অন্য অনেক কিছুর মতই ইতিহাস চাপা পড়তে থাকে। চাপা পড়তে থাকে নিব, কালি, কলম আর কাগজের ইতিহাসও। 


    শিক্ষাসহ সামাজিক নানা সূচকে পিছিয়ে থাকা জনপদ হওয়ায় পূর্ব বাংলায় ভালো রাইটিং ইনস্ট্রুমেন্ট ও ম্যাটারিয়াল খুব কমই ছিল। ভোক্তা শ্রেণির অভাবে পণ্যের যোগান ছিল নগণ্য। দু চারজন উচ্চশিক্ষিত বা ধনি শ্রেণির মানুষের কাছে দেখা মিলতো বিদেশি কলমের। বাজারে কলকাতা, বোম্বে আর মাদ্রাজের কলম কিছু পাওয়া যেত; আর ছিল আমেরিকা, লন্ডনের বিদেশি কিছু ডিপ, ফাউন্টেন ও ডেস্কপেন। এসব কলম কালেভদ্রে আমদানি হতো ঢাকার বাজারে। ডেস্ক পেন আবার এ অঞ্চলে পরিচিত ছিল হোল্ডার পেন নামে। দাপ্তরিক কাজে প্লাস্টিকের হালকা ও সুলভ ডেস্ক পেনের চাহিদা ছিল। সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে কর্তাদের টেবিলে শোভা পেত লম্বা আকৃতির কলমগুলো। প্রতিটি কালির জন্য আলাদা কলম থাকতো ডেস্কে। কালো কালির জন্য কালো কলম, লাল কালির জন্য কলমটা হতে হবে লাল। অবশ্য অফিস শেষে কর্মচারিদের পছন্দ ছিল পকেট পেন। হাতে ছাতা নিয়ে রাস্তায় হেঁটে যাওয়া কেরানীর বুক পকেটে উঁকি দিত সোনালী রংয়ের ক্লিপ। আবার কাচারিতে কিংবা বনিক শ্রেণির গদিতে গেলে দেখা মিলতো সাজিয়ে রাখা দামি হোল্ডার। তখন কলম একটি অতি প্রয়োজনীয় গ্যাজেট এবং একই সাথে হালের ফ্যাশন।


    স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের চাহিদা ছিল রংচংয়ে কলম। একটু ফ্যাশনেবল লেখন সামগ্রীর দিকে ঝোঁকটা তাদের বেশি। ঢাকার স্টেশনারি দোকানগুলোয় সুদৃশ্য প্যাকেটে বিক্রি হতো দেশি-বিদেশি ফাউন্টেন পেন। যদিও ততদিনে বড় শহরগুলোয় কলমের দু একটা কারখানা খুলে গেছে। সেসব কারখানায় ডিপপেনের নিব ও হোল্ডার বেশি পাওয়া যেত। কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বের সাথে সমানতালে পাল্লা দেয়ার চেষ্টা হতো এসব কারখানায়। একটি মানসম্পন্ন কলম পেতে সেসময় ভালো অর্থ খরচ করতে হতো। কারণ ফাউন্টেন পেন অনেকের কাছেই লাইফটাইম গ্যাজেট। ফাউন্টেন পেন যেহেতু প্রধান গ্যাজেট ছিল এবং লেখনি হিসেবে অবশ্য প্রয়োজনীয় তাই এই খাতে অর্থ ব্যয় করার লোকও পাওয়া যেতে লাগলো। ধীরে ধীরে ঢাকার বাজারও কলমে ভরে উঠলো।


    ১৯৬৫’র পর কমতে থাকলো ফাউন্টেন পেনের আমদানি। সরকারি নীতির কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় স্থানীয় শিল্প বিকাশের সুযোগ পেল। আরও বেশি করে দেখা যেতে লাগলো মেড ইন ঢাকা ফাউন্টেন পেন।  


    পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার পর ঢাকায় বেশকিছু কলম কোম্পানি গড়ে উঠেছিল। এসব কারখানা প্রতিষ্ঠা পায় বাঙালি-অবাঙালি মালিকানায়। করাচি, পেশোয়ার আর ইসলামাবাদের কিছু ব্যবসায়ি বুড়িগঙ্গা তীরে কলমের কারখানা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হলেন। এদের মধ্যে কেউ সফল হলেন কেউ ফিরে গেলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। আবার পশ্চিম পাকিস্তানের কোম্পানি ঢাকায় তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ নীতি প্রয়োগ করে একই ব্র্যান্ড দুই অঞ্চলে জনপ্রিয় করে তুললো।


    জনপ্রিয়তায় সেসময় সব কোম্পানিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল ঈগল’র কলম। ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদ জানা যায় না। তবে শুরুর দিকে তাদের নানা ধরণের ফিলিং ম্যাকানিজমের কলমের কথা জানা যায় বয়োঃজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে। কলম নিয়ে রীতিমত গবেষণা চালিয়েছিল কোম্পানিটি; বুঝেছিল ক্রেতার রুচি, তাই দ্রুত সুনাম অর্জন করে প্রতিষ্ঠান।


    দুই দশক একচেটিয়া ব্যবসার পর ঢাকার অন্য কলমগুলোর সাথে প্রতিযোগীতার মুখে পড়ে ঈগল। ঢাকার বাজর তখন স্বস্তা কলমে সয়লাব। সেসময় মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী পিস্টন ফিলার কলম বানাতো ঈগল কোম্পানি। ঢাকার ছোট ছোট কারখানাগুলোর তুলনায় তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল কয়েকগুন বেশি। তারউপর পণ্যের মান উন্নত করতে গিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছিলো। আবার খরচ কমিয়ে সাধারণ মানের পণ্য তৈরির পক্ষেও ছিল না কোম্পানি। এরকম নানা কারণে শেষ পর্যন্ত  লোকসানে পড়ে ঈগল। ক্রমাগত মন্দা আর স্থানীয় কলম কারখানাগুলোর স্বস্তা সরবরাহে দিশেহারা হয়ে পড়লো মালিকপক্ষ।


    ব্যবসায়িক এই অস্থিরতার মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। উত্তাল এই সময়ের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে সব অঙ্গনে। কলম কোম্পানিটি তাদের ব্যবসা গোটাতে থাকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের উর্দুভাষী মালিকসহ গোটা পরিবার পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে। পরে পাকিস্তানে গিয়ে তারা নতুনভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে বলে জানা যায়।


    দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশে ঈগল ব্র্যান্ডের কলম আবারও দেখা গেল। কেননা ঈগলের মালিক ও পুঁজি চলে গেলেও রয়ে যায় যন্ত্রপাতি ও লোকবল। সেই লোকবল ও যন্ত্রপাতির সাথে নতুন মূলধন আর শ্রমে জন্ম নেয় বাংলাদেশি ঈগল। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ি হাজী ইউসুফ চকবাজার এলাকায় ঈগল বাজারজাত শুরু করে। ব্র্যান্ডটি তার পুরনো ট্রেডমার্ক নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে এবং ক্রমাগত সাফল্য লাভ করে।  fL9Z5uh


    ছবি: বেলা


    বেলা : ১৯৬৮ সালে হাজী আবদুল ওয়াহাব ব্যবসার গোড়াপত্তন করেন। পরে তার বড় ছেলে আব্দুল ওয়াহেদ পরিসর বৃদ্ধি করেন। পকেট ও ডেস্ক দুই ধরণের কলমই বানাতো তারা। ডেস্কপেন সেসময় হোল্ডার কলম নামেও পরিচিত ছিল। tBqDxKT


    ছবি : ডায়মন্ড


    ডায়মন্ড : লালবাগ এলাকার আতশখানা লেনে ছিল ডায়মন্ড পেন’র আঁতুরঘর। আধুনিক ডিজাইনে মানসম্পন্ন কলম বানিয়ে একটানা দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছে কোম্পানিটি। হাজী নূর ইসলামের হাত ধরে প্রতিষ্ঠানটি বিংশ শতাব্দি পর্যন্ত টিকে ছিল। VvqLCBN


    ছবি: মাস্টার


    মাস্টার : এই কলমের সাথে জড়িয়ে আছে বেলা পেন’র স্মৃতি। বেলা পেন’র আব্দুল ওয়াহেদর দাবি, দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় তাদের ম্যানেজার মালেক মিয়াকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে মালেক মিয়া নিজেই গড়ে তোলেন স্বতন্ত্র ফ্যাক্টরি। বাজারে আসে মাস্টার পেন। তবে মাস্টার পেন’র সাথে মাস্টার কালির কোন সম্পর্ক নেই বলেও জানান ওয়াহেদ। jj6tYnY



    ছবি: ঊষা


    ঊষা : ৯০’র দশকে অনেক কলম কোম্পানির দরজা চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে গেলেও বাজারের ঊষা কলমের যোগান ছিল। তারা বেশ কিছু মডেলের লেখনি বাজারে যোগান দিতে থাকে। হাজী আবদুল মান্নান ছিলেন ঊষা পেন’র মালিক। নবাবগঞ্জে কারখানা আর সোয়ারীঘাটে অফিস স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদন চালু ছিল এই কলমের। RHwrLvs



     ছবি: সুলতান



    সুলতান : ইমামগঞ্জের যেখানে আজ বিসমিল্লাহ টাওয়ার দাড়িয়ে, সেখানেই জন্ম হয়েছিল সুলতান পেন’র। তখন ঠিকানা ছিল ১৪৮ মিটফোর্ড রোড। অফিস এবং কারখানা ছিল একই ঠিকানায়। আজকের বিসমিল্লাহ টাওয়ারের অতীত নাম ছিল আশ্রাফ ম্যানসন। কবির পেন ইন্ডাস্ট্রিজ নামের ইনজেকশন মোল্ডের কলম কারখানাটির উদ্যেক্তা হাজী মো. শরীফ। বেলা পেন ও সুলতান পেন সম্পর্কে দুই ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান। বেলা পেন’র ওয়াহেদ ও সুলতান পেন’র শরীফ আপন চাচাতো ভাই।  



    এছাড়া ১৯৪৭ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বেশকিছু নামি-বেনামি ফাউন্টেন পেন ঢাকার বাজারে কিনতে পাওয়া যেত। এসব ফাউন্টেন পেন স্থানীয়ভাবে তৈরি নাকি আমদানি করা তা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকার বিভিন্ন বানিজ্যিক কেন্দ্রে তখন শোকেসে শোভা পেত এবিসি, পপুলার, রাজা আর রক্সি ফাউন্টেন পেন। নবীন ৫৫, কুমকুম ,সিতারা, রনি, রঙ্গীলা, প্রাইমেক্স, সোয়ান, রাইটার, ডলার, জি এস লায়ন, অস্ট্রিচ।


    ছাত্র থেকে পেশাজীবী নানা শ্রেণির মানুষ এসব লেখনির উপর নির্ভরশীল ছিল। সেসময় অনেক কলম ছিল যা বানানো হতো একটি নির্দিষ্ট জেলায় বিক্রির জন্য। উৎপাদনের পর পুরো লট সরাসরি চলে যেত বড় কোন শহরে। ঢাকায় এসব কলমের বিক্রি ছিল না কারণ, ঢাকার নামকরা ব্র্যান্ডের কলমের দাম কিছুটা বেশি। সেই তুলনায় খুব স্বস্তায় জেলায় বিক্রি হতো কিছু কলম। আদালত পাড়া ও স্কুল এরিয়া ছিল এই ধরণের কলমের মূল বাজার।


    ওয়াহেদ পেন ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আবদুল ওয়াহেদ জানালেন, কলমের পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে না পারার আরেকটি কারণ হলো তখনকার বাজার ব্যবস্থা। অনুমোদনহীন অনেক কোম্পানি লুকিয়ে কলম বানাতো এবং সেগুলো বিভিন্ন কোম্পানির নামে বাজারজাত করতো। পুরনো কলম ব্যবসায়িদের তথ্যমতে, তাদের মধ্যে কিছু ব্যবসায়ি ছিলেন যারা কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কলম আমদানি করতেন। মেড ইন বাংলাদেশ বলা হলেও ওইসব কলম কলকাতার বিভিন্ন এরিয়াতে তৈরি হতো এবং বাংলাদেশি ব্যবসায়িদের চাহিদামাফিক নাম তাতে খোদাই করে দেয়া হতো। এজন্য অনেক ফাউন্টেন পেনের শেকড় পাওয়া যায় না। এছাড়া কলমের বাজার চালু রাখা ও প্রতিদ্বন্দীতার অংশ হিসেবে একই ফ্যাক্টরি একাধিক নামে ফাউন্টেন পেন বানাতো বলেও জানা যায়। ১৯৯৮ সালের পর ফাউন্টেন পেন বানানো বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশে। উৎপাদনের দরজা বন্ধের পর কিছুকাল যন্ত্রপাটিগুলো টিকে ছিল। তারপর উদ্যোক্তার অস্তিত্বের বিলোপ রুখতে পুঁজি তার পথ খুঁজে নিলো। বর্ষীয়ান নগরে ফাউন্টেন পেনের জন্ম-মৃত্যুর ইতিহাস চাপা পড়ে রইলো অযত্নে, নিভৃতে।




    আমিন বাবু 


    কালি,কলম ও কাগজ গবেষক


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Abhyu | 47.39.***.*** | ১১ জানুয়ারি ২০২২ ১০:৫৭502620
  • ভালো লাগল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন