এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সংরক্ষণ সম্পর্কে কিছু কথা (তৃতীয় পর্ব) 

    Swapan Kumar Mandal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ নভেম্বর ২০২১ | ৭৮০ বার পঠিত
  • এই বর্ণভেদ ক্রমশ জাতিভেদে রূপান্তরিত হয়ে দাস ব্যবস্থা, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং অধুনা একনায়কতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে থাকা ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টদের অল্প পয়সায় শ্রমের যোগান ব্যবস্থা পাকা করেছে, সেজন্যে অতি অবশ্যই ব্রাহ্মণ্যবাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এই হায়ারার্কি যুক্ত যে জাতিভেদ প্রথা আমাদের দেশে চালু আছে, তা এককথায় ইউনিক। আপনি এই জাতিভিত্তিক ব্যবস্থার যে অংশেই থাকুন না কেন আপনি তলায় অবস্থিত কোন জাতিকে পাবেন নিপীড়ন করার জন্য। এর কোন ব্যত্যয় নেই। অবশ্য, আপনি যদি জন্ম নেন কোন দলিত পরিবারে, তাহলে সব শোষণ যন্ত্রণা আপনাকে সইতে হবে। কারণ, এই পিরামিড ব্যবস্থার একেবারে শেষ ধাপে আপনার অবস্থান।

    সমস্ত ব্রাহ্মণ যে এই ব্রাহ্মণ্যবাদের সমর্থক তা কিন্তু নয়। যে কোন ব্যক্তি এই জাতপাত ভিত্তিক মনুবাদী সমাজ ব্যবস্থার সমর্থক হিসেবে ব্রাহ্মণ্যবাদের পৃষ্ঠপোষক হতে পারেন। এই জাতিভেদ ব্যবস্থার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। একটি হল জন্মের দ্বারা আপনার জাত ও সাথে পেশা নির্দিষ্ট হয়ে যায়। আর, নিজ নিজ জাতের মধ্যেই বিবাহ সম্পন্ন হয়। রক্তের তথাকথিত বিশুদ্ধতা রক্ষা করাই এন্ডোগামির উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, এই ব্যবস্থাকে একটি আদিম অবস্থার অপবিজ্ঞান, ইউজেনিক্স, বলা যেতে পারে। এদেশে শতকরা ৫ ভাগ বিবাহ হয় অন্য জাতে। অবশ্য, দেখা গেছে যে শহরাঞ্চলে যুবসমাজের শতকরা ২৫ জন এসবে বিশ্বাসী নয়। এই ব্যবস্থা বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে চলে আসছে বহু যুগ ধরে। বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে।

    এই জাতিভেদ ব্যাবস্থায় প্রাক পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে উচ্চ বর্ণের মানুষদের, শূদ্র ও অতিশূদ্রদের উৎপাদনে অন্যায় ভাবে ভাগ বসাতে কোন রকম বিবেক দংশনের জ্বালা অনুভূত হত না ।

    সামন্ত প্রভুদের দখলে থাকা জমিতে চাষ করতো নিম্ন বর্ণের মানুষেরা। এছাড়াও কায়িক পরিশ্রমের কাজকর্মকে ঘৃণার চোখে দেখতে অভ্যস্ত ছিল উচ্চ বর্ণের মানুষেরা। তারাই পড়াশোনা ও জ্ঞান অর্জন করার একমাত্র অধিকারী ছিল। তার ফলে তাদের মধ্যে নাক উঁচু এলিটিজম এর জন্ম হয়।

    এই ব্রাহ্মণ্যবাদী জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজের মধ্যে যুগে যুগে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। বিশেষত ১২০০ থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে যে ভক্তি আন্দোলন গড়ে ওঠে তাতে অনেক ব্রাহ্মণও অংশগ্রহণ করেন। এই আন্দোলনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম ছিল তুকারাম, কবির, নানক, রবিদাস ইত্যাদি। অপরদিকে রামানুজ, চৈতন্যদেবের নেতৃত্বে নরমপন্থী ভক্তি আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। এঁরা ঈশ্বরের কাছে সকল মানুষ সমান এই মতবাদ প্রচার করেন।

    এরপরে ব্রিটিশরা এই দেশে থিতু হয়। তারা ভারতবর্ষের ধুঁকতে থাকা জাতপাত ভিত্তিক সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে পুঁজিবাদী অর্থনীতির চালু করে। এই পর্যায়ে ভারতে প্রথম ব্রাহ্মণ্যবাদী চিন্তাধারার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান ছত্রপতি শাহু মহারাজ। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ। কোলাপুরের রাজা চতুর্থ শিবাজীর মৃত্যুর পরে রানী আনন্দীবাঈ সিংহাসনে আরোহণ করেন। সেসময় তিনি এক মৎস্যজীবীর পুত্রকে দত্তক নেন। এই ছেলেটিই হলো সাহু। রানীর মৃত্যুর পর ১৮৯৪ সালে সিংহাসনে বসেন ছত্রপতি সাহু। ইনি সর্বপ্রথম পিছিয়ে পড়া জাতিদের জন্য কোলাপুর রাজ্যে ৫০% সংরক্ষণ চালু করেন ২৬/৭/১৯০২ তে এক আদেশনামার মাধ্যমে। যুগ যুগ ধরে পিছিয়ে পড়া মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির জন্য তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

    তাঁর ‘ভেদাকোটা বিতর্ক' তৎকালীন ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তিনি লক্ষ্য করেন যে দলিতদের বিয়ে কিংবা শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান গুলিতে ব্রাহ্মণ পুরোহিত পাওয়া খুবই মুশকিল ছিল। এসব দেখে তিনি সংস্কৃত জানা অব্রাহ্মণদের ঐ পদে নিযুক্ত করেন। এর জন্য প্রচুর বিতর্ক হয় তথাপি তিনি সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

    সাবিত্রী-জ্যোতিরাও ফুলে-র সত্যশোধক সমাজ গড়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট অবদান আছে । এই সেই সাবিত্রী ফুলে, যাকে যাতায়াতের পথে উচ্চ বর্ণের লোকজন শুধু গালি ছুঁড়ে ক্ষান্ত হত না ইট, পাথর এমনকি বিষ্ঠা ছুঁড়তেও পিছপা হত না। তাঁর অপরাধ ছিল যে তিনি নিচু জাতের মেয়েদের স্কুলে পড়াশোনা শেখাতে যেতেন। এত বিরোধিতা সত্ত্বেও জ্যোতিরাও-সাবিত্রী-ফতিমা দলিত ও অন্যান্য নিচু জাতের শতাধিক ছাত্রীকে তিনটি স্কুল-কাম-হষ্টেলে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে শুরু করেছেন তখন কলকাতায় বেথুন সাহেব ও বিদ্যাসাগর মহাশয় মেয়েদের স্কুল জনা কুড়ি ছাত্রী নিয়ে ধুঁকছে।

    (ক্রমশ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • b | 14.139.***.*** | ১৮ নভেম্বর ২০২১ ১৫:১৭501281
  • ফাতিমা কে ?
  • Swapan Kumar Mandal | ১৯ নভেম্বর ২০২১ ১৪:৪৫501308
  • জ্যোতিরাও ফুলের পিতা জ্যোতিরাও এবং সাবিত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। তখন বন্ধু উসমান শেখ, তাঁদের আশ্রয় দেন। এই উসমান শেখের বোন হলো, ফতিমা।
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:59ed:1d4f:f0da:***:*** | ১৯ নভেম্বর ২০২১ ১৪:৫২501310
  • ফাতিমাকে নিয়ে ইতিহাসে খুব কম লেখা হয়েছে। তুলনায় সাবিত্রীবাই ফুলেকে নিয়ে চর্চা বিস্তর।
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:59ed:1d4f:f0da:***:*** | ১৯ নভেম্বর ২০২১ ১৪:৫৪501311
  • b এর জন্য
  • b | 14.139.***.*** | ১৯ নভেম্বর ২০২১ ১৭:২৯501316
  • ধন্যবাদ  দুজনকেই।
    স্বপনবাবুকে বলি, আরেকটু বড় করে লিখুন।
  • Swapan Kumar Mandal | ১৯ নভেম্বর ২০২১ ২১:৩৮501319
  • আমি লেখাটি একটু সংক্ষিপ্ত আকারে লিখেছি। আসলে, বড় করে লেখা আমার পক্ষে একটু অসুবিধাজনক। 
  • Swapan Kumar Mandal | ১৯ নভেম্বর ২০২১ ২১:৪৬501321
  • আপনি ঠিক বলেছেন। ফতিমাকে ইতিহাস মনে রাখেনি। সে'র প্রতি। 
  • b | 117.194.***.*** | ২০ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৫২501330
  • স্বপন, দুঃখিত, বুঝতে পারি নি। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন