- আপনি কি ভূত দেখেছেন?
- হ্যাঁ দেখেছি, কেন আপনি দেখেন নি? ভূত মানে তো অতীত, অতীত পেরিয়েই তো বর্তমানে এসে পৌঁছলাম। সুতরাং ভূত না দেখে তো আমাদের কারোরই কোনো উপায় নেই।।
- না মানে এই ভূত সেই ভূত নয়। বর্তমানে বসে বসে অতীতকে দেখা। যা দেখলেই গা ছমছম করে ওঠে।
- ওঃ, সে তো তাহলে সিনেমা। যেমন ধরুন উত্তম কুমার, কিংবা দেবিকা রানী কিংবা অড্রে হেপবার্ন এইরকম? কই সিনেমা হলে তাদের দেখতে তো ভয় লাগে না?
- আরে ধুর মশাই ভূত তো অন্ধকারে আসে, মুখ ঢেকে, কঙকাল হয়ে, তারপর হাড়ওয়ালা হাত বের করে খুলিওয়ালা মুখ বের করে নাঁকিসুঁরে হিঁ হিঁ করে হাসে।।
- ধুত্তোর, সে তো বাল্যখিল্যের গপ্পের বইতে থাকে, মেক আপ করে বানানো সিনেমাতে থাকে।।
- আরে না, না, অত সহজে এভাবে উড়িয়ে দেবেন না। তেঁনারা সত্যি সত্যিই আছেন। তৃপ্ত আত্মা হলে ভালো ভূত, কারো অনিষ্ট করে না, অতৃপ্ত আত্মা হলে খারাপ ভূত, প্রতিশোধ নিতে নেমে আসে অমাবস্যার রাতে। প্ল্যাঞ্চেট করলে নেমে এসে কতবার কতজনার কাছে কত কথাই না বলে কয়ে গেছেন, কালে কালে। সেসব তো অনেক বিখ্যাত বিদ্বান মানুষেও করেছেন, তাহলে বলতে চান তার কোনো যুক্তি নেই, সব বুজরুকি??
- তাহলে আর কি? খুন জখমের মামলাটামলা আর না করে খুনিকে খুন হয়ে যাওয়া ভূতের হাতে ছেড়ে দিলেই তো হয়। সেই তার যা ব্যবস্থা করার করবে। সময় আর সাক্ষী সাবুদ কিচ্ছুটি লাগবে না।
- আপনি না বড্ড বেয়াড়া যুক্তি দেন, ভূত বলে কিছু যদি না থাকবে তাহলে এতদিন ধরে মানুষ ভূত নিয়ে এত আলোচনা, গবেষণা, ভয়, ভীতি এসব পাচ্ছে কেন? অন্ধকার রাতে একলা পথে তাকে দেখছে কেন? ভুতুড়ে, ভৌতিক, ভীতিকর, এসব শব্দ ব্যকরণে আছে কেন? এলো কোত্থেকে??
- সত্যি! কী অকাট্য যুক্তি আপনার। মরলে মানুষ ভূত হয়, মানে অতীত হয়, মানে ভয়ঙ্কর হয়, মানে আগে জ্যান্ত অবস্থায় যাকে কাছে পেলে আপনি খুব খুশি হতেন, তিনি যদি অতিকষ্টে কিছু ব্যবস্থাদি করে আপনার কাছে ফেরত আসেন তাহলে আপনি তাকে দেখে ভয় পাবেন এবং পালাবেন, তাই তো?
তার মানে দাঁড়ালো, আপনি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঘুরে আসা মানুষটি ভয় পাচ্ছেন, মানে আপনি মৃত্যুকে ভয় পাচ্ছেন, মৃত্যুর দেশটাকে অন্ধকার কল্পনা করে নিজের অস্তিত্বকে সেখানে রাখতে ভয় পাচ্ছেন,আপনার চামড়া মাংস দিয়ে আবরণ করা কঙ্কালটাকে ভয় পাচ্ছেন, তার মানে এই ভূতের ভয় হচ্ছে আমাদের ভেতরে কল্পিত মৃত্যুর দেশটার প্রতি ভয়, আমাদের মৃত্যুর প্রতি ভয়। ভেতরের অসুন্দর কঙ্কালটাকে ভয়।
অন্ধকারকে ভয় পায়না, মৃত্যুকে ভয় পায়না এমন কোনো নির্ভীক মানুষকে আজ পর্যন্ত ভূতে ভয় পেতে দেখেছেন??
- আপনি এমন সব অকাট্য যুক্তি দিচ্ছেন না, শেষে না ভূত ব্যাপারটাতেই মানুষের বিশ্বাস হারিয়ে যায়।
- ওহ! বুঝেছি, তার মানে ভগবানের মতো ভূতটাও আপনাদের একটা ব্যবসা। তাই তো? ভূত থাকলেই ভিরমি থাকবে, ভিরমি থাকলেই ওঝা থাকবে, ওঝা থাকলেই ঝাড়ফুক অপবিজ্ঞান থাকবে, তেঁনাদের নিয়ে গপ্প, উপন্যাস লেখা হবে, তা বিক্রি করে ব্যবসা হবে, সিনেমা হবে, তা মানুষ দেখবে আর ভয় পাবে, আরও গেঁথে মনে বসাবে, নিজে বিশ্বাস করবে এবং অন্যকেও যুক্তি করে বিশ্বাস করতে বাধ্য করবে। এভাবেই চলতে থাকবে ভুল নিয়ে যুগ যুগ ধরে পথচলা।
- এসব এতো কনফিডেন্স এর সাথে এভাবে লিখবেন না, বলবেন না বুঝলেন।
- না, বড় দুক্ষে এখন নিজেরই ভূত হতে ইচ্ছে করছে, এটা প্রমাণ করার জন্য যে মানুষ বা যেকোনো প্রাণী মরে গেলে আর কোনোদিনই ফিরে আসে না, ভূত হয়েও না। প্রেত হয়েও না। বর্তমানের পরের অধ্যায়ের নাম হচ্ছে ভবিষ্যৎ, যা সত্যিই আমাদের কাছে অজানা, অচেনা এবং লোমহর্ষক। চলুন ভূতে আটকে না থেকে ভবিষ্যতে বিশ্বাস করি।
।। ত নি মা।।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।