সময় বয়ে যায়, আর সঙ্গে বদলে দিয়ে যায় মানুষ এবং তার জীবনযাত্রা, সঙ্গে বদলায় বাসস্থান-গ্রাম-শহর। ছোটবেলায় যে শহরের প্রতিটি কোনা ছিল নখদর্পনে আজ কালের ব্যবধানে সেই শহর অচেনা ঠেকে, বদলে যাওয়া শহরের মাঝে দাঁড়িয়ে দিকভ্রান্ত আজ আমি। ছেড়ে আসা শহরের পরিচিত গলি, পরিচিত পাড়া অচেনা চোখে তাকায়, যেন প্রশ্ন করে - "কে তুমি?"। অভিমান বুকে পাথরের মত চেপে বসে, প্রয়োজন আর সময় - এ দুই'এর চাপে পরদেশবাসী আমি ঠোঁট ফুলিয়ে উত্তর দিতে চাই "শহর, তুমি বদলে যাচ্ছো কেন? আমি যে তোমায় চিনতে পারছি না, আমি তোমায় খুব ভালবাসি, তুমি কি আমায় ভুলে গেছ শহর?" — মুচকি হাসে অচেনা শহর, বদলে যাওয়া রাস্তা ডাকে — হাঁটতে থাকি সে পথ ধরে। নাম বদলেছে তাই সময় লাগে খুঁজে বের করতে পরিচিত সব বাড়ী/বাজার/দোকান, এগুলোও কি বদলে গেল? আচ্ছা, ইঁট কাঠ কি বদলায়? ওদের কি কেউ বদল করে দিয়ে গেছে? নাকি নতুন করে ওরা মাথা তুলেছে? আচ্ছা শহর, একি দশা তোমার? সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে পড়ে আছ - তুমি তো এমন ছিলে না, তোমার সৌন্দর্য নিয়ে কত গর্ব করেছি, তোমার ছবিতে সাজিয়েছি আমার ফেসবুকের পাতা। কোথায় তোমার সে রূপ? উষ্ণতার অভাব কেন তোমার ভাঁড়ারে? প্রকৃতির তান্ডব তো আগেও সহ্য করেছ তুমি অনেক, তোমার শরীরের কেঁপে ওঠার অভিজ্ঞতা আজও মনের কোনে জমে আছে আর বর্ষার দাপটে জলমগ্ন তুমি - সেই শরীরে পা ডুবিয়ে হাঁটার দিনগুলো ভুলি কি করে বলো তো শহর? তাহলে আজ তোমার কি হল? কেন রুখে দাঁড়াতে পারছো না তুমি? কেন তুমি এত জবুথবু হয়ে যাচ্ছো? কি বলছো? বল - তুমি ঠিকই বলেছ শহর, যাদের তুমি কোলেপিঠে করে বড় করেছ আজ তারাই তোমার শরীর থেকে শুষে নিয়েছে উষ্ণতা, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রত্তাক্ত করেছে তোমাকে - তোমার আর প্রকৃতির মাঝে তৈরী হওয়া দলিলের বিরুদ্ধাচারণ করে তোমার ওপর গড়ে তুলেছে ইঁটের গাঁথনি, তাদের অসহিষ্ণুতার ফল ভোগ করছো তুমি - তোমায় যে আর এভাবে দেখতে ভাল লাগছে না শহর — কবে আবার সময়ের সঙ্গে বদলাবে তুমি? কবে আবার হয়ে উঠবে সেই আমার প্রিয় শহর, ভালবাসার শহর, প্রানের শহর?