বড় নদী বাঁধ ও বিপর্যয়।।
নিম্নচাপের বৃষ্টি কমে গেলেও পাঞ্চেত- মাইথন এবং মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে কয়েকদিন ধরেই গড়ে এক লক্ষ কিউসেক এর বেশি জল ছাড়া হচ্ছে। এই জলে দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। ঘাটাল, খানাকুল, আরামবাগ, উদয়নারায়নপুর ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলের তলায়। অতিবৃষ্টি ও বাঁধের জলে শিলাবতী- দামোদর- মুন্ডেশ্বরী- রূপনারায়ন নদীগুলোর জল দু'কূল উপচে ভাসিয়ে দিচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। রাস্তাগুলো নদীর চেহারা নিয়েছে, সেখানে নৌকা চলছে। হাজার হাজার পরিবারের ঘরে এক তলা পর্যন্ত জল উঠে গেছে। মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন একতলার খোলা ছাদে, দোতলা, তিনতলা বা ত্রাণ শিবিরে। কত। হাজার মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এখনও পর্যন্ত এই বন্যায় 16 জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চারিদিকে বিপন্ন মানুষের শুধুই আর্তরব - "খাবার জল দাও, আমাদের উদ্ধার কর-আমাদের বাঁচাও। যদিও সরকার প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী বন্যা কবলিত মানুষকে উদ্ধার ও ত্রাণ এর কাজে সাধ্যমত সাহায্য করছেন।।
কিন্তু প্রশ্ন হল-- কেন এমনটা হয় প্রায় ফি বছর?? এর পিছনে যে অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিকভাবে গড়ে তোলা বড় বড় নদী বাঁধগুলো দায়ী, সেই বিষয়ে নদী বিশেষজ্ঞ- পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা একমত। পলি পড়ে পড়ে জলাধারগুলোর জল ধারণ ক্ষমতা ক্রমশই কমছে। ফলে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই বাঁধ রক্ষা করতে প্রচুর জল ছাড়তে হয়। তার ফলে নিম্ন অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে , তৈরি হয় প্লাবন, বিপর্যস্ত হন হাজার হাজার মানুষ। অন্যদিকে সেচকার্যের অজুহাতে এই বাঁধগুলো নির্মিত হলেও শুখা মরসুমে চাষিরা তাঁদের চাষের জন্য ক্যানেল থেকে জল পান না বললেই হয়। এবং নদীতে বড় বড় বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীগুলোর নিম্ন ভাগ পলি জমে জমে মাঠে পরিণত হয়েছে- জলধারণ ক্ষমতা প্রায় শূন্যে নেমেছে। তাছাড়া এর ফলে জলজ প্রাণী সহ সামগ্রিকভাবে নদী বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত।
তাই সময় এসেছে বিপর্যয়কারী এই নদী বাঁধগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবার। পাশাপাশি নতুন করে প্রস্তাবিত সমস্ত বড় বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে সকলকে। দুরদর্শনে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে দেখতে এবং মেদিনীপুরের বন্ধুদের থেকে ভয়ানক খবর শুনে এই লেখা একটা তাৎক্ষণিক প্রয়াস। সকলে এই নিয়ে ভাববেন, মতামত দেবেন এই আশা রাখি। আলোচনা এগিয়ে চলুক এই প্রত্যাশায় এখানেই ইতি টানছি।।
সন্তোষ সেন- 3.8.21