সকালে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করতে করতে খবর পেলাম মাথা নাকি বেচা হয়ে গেছে। মাথা বেচার টা একটু বুঝিয়ে বলি। আমাদের এখানে একদল সুরকার আছে, যারা আমাদের নতুন নতুন সুর শোনায়, তাদের সুরের ঘোরে আমরা স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নে আমরা অনেক কিছু দেখি। আমরা দেখি বিশাল একটেবিল, সেই টেবিলে বসে আমরা বিশাল এক ভোজ খাচ্ছি সবাই সমান ভাবে। কেউ আবার আকাশে উড়ার, কেউ কেউ আবার মৃতগাছে আবার ফুল ফোটাবার স্বপ্ন দেখে। অনেকে আরও অনেক কিছুই দেখে থাকতে পারে, সেটা অবশ্য আমার জানা নেই। তাদের সুরের উন্মত্ততায় আমরা সব ভুলে যাই, সব ভুলে নিজেদের মাথা তাদের কাছে জমা দেই। তারা মাথায় নিত্যনতুন কম্পোজিশন সেট করতে থাকে। ইনপুট করতে থাকে। আউটপুট হিসেবে আমরা নিজেদের সব ভুলে নিরুদ্রপ জীবনে ফিরে যাই। মাঝে মাঝে তারা ধনুকে টংকার দেবার মতো ট্রিংয়ে টংকার দেয়, আমরাও টংটং করে উঠি। তেমনি এক সুরবিশারদ নাকি গত রোববারের হাটে আমাদের মাথা বেচে দিয়েছে। অবশ্য মাথা বেচার ব্যাপার টা আমার ঠিক মতো মাথায় ঢুকছে না। এটা কি মাথা জমা দেয়ার জন্য নাকি মাথা বেচে দেয়ার জন্য? হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। তবে বেসিনে আয়নায় দেখতে পাচ্ছি মাথা তার জায়গায় আছে বহাল তবিয়তে। চিকন ঘাঁড়, তার উপর চাপাভাঙা মুখ, মুখে খোঁচা দাঁড়ি, মাথা ভর্তি চুল। আয়নায় তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম মাথা কিভাবে বেচে? মাথার দাম কত? শামসুর দোকানের চিনির কেজির মতো কেজিদরে বিক্রি করে? নাকি ভ্যানের কলাওয়ালার মতো হালিদরে? কি জানি? অনেক কিছুই হতে পারে। পুরিয়ার মতোও হতে পারে। কাগজে মুড়ে রাস্তার চিপায় নিয়ে ডিলার দাঁড়ায়া থাকে। চুপিচুপি আশেপাশে দেখে তারপর কাছে গিয়ে হয়তো বলা লাগে, ' আছে নি মামু?' তারপর হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে রাস্তা মাপো। আয়নায় তাকিয়ে দাঁত মাজতে থাকলাম। অবশ্য আয়নায় যে মাথার সেটা কি আমার মাথা? মাথা বেচা হয়ে গিয়ে থাকলে সেটা আমার মাথা হয়ে থাকে কিভাবে?? কই যেন পড়েছি, মনে হয় কোন ইন্টারভিউর জন্য পড়া, আরশোলা নাকি মাথা ছাড়া অনেকদিন বাঁচতে পারে? তাহলে? বুঝতেছিনা। জগতের অনেক কিছুই আমি বুঝিনা। অনেক অনেকদিন আগেই কি গ্রেগর সামসার ঠিক একই অনূভুতি হয়েছিলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে? আয়নায় তার জায়গায় আরশোলা টাইপের কোন পোকা দেখে তার প্রথম অনুভূতি কি হয়েছিলো? সেও কি এরকম আরশোলার জীবন, খাদ্যাভাস নিয়ে ভাবা শুরু করেছিলো? হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এই রকম সকালে আমার কি করা দরকার? নাকাতার মতো, যে তার হারিয়ে যাওয়া ছায়ার অর্ধেক খুঁজে পাওয়ার জন্য অর্ধেক জাপান চষে ফেলেছিলো, তার মতো কি মাথা খুঁজতে বেরিয়ে পড়া দরকার নাকি আবার নিরুদ্রপ জীবনে ফিরে যাওয়া? আগেই বলেছি জগতের অনেক কিছুই আমার মাথায় ধরে না,অবশ্য মাথা কি আছে না নেই তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে! তবে এই রবিবারের সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি নিজেকে কেন জানি উচ্ছিষ্টভোজী আরশোলা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছিনা।