ভার্চুয়াল জগতটাই যে পুরো জগৎ নয় তার প্রমাণ পাওয়া গেল একুশের নির্বাচনে। হয়ত আগামীতে দেশের সবচেয়ে বড় নির্বাচনেও এই ছবি দেখা যাবে। ভার্চুয়াল জগতটা কেমন? ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যুইটার খুললেই আমাদের মত শান্তিকামী মানুষদের নিরাশ হতে হয়। বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল গুলির কমেন্ট বক্স বা সম্প্রীতির বার্তা বহনকারী কোন পোস্ট বা মুসলিমদের নিয়ে লেখা কোন পোস্টে একদল কচু খেকোর দলের ঘোঁৎ ঘোঁৎ -সূচক কমেন্ট পড়ে মনে বিষণ্ণতা ভর করে। একজন বিদ্বেষীকে সাপোর্ট করতে বেরিয়ে আসে অসংখ্য বিদ্বেষী। এরা প্রত্যেকে 'হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি' বা 'নাগপুর হাফপ্যান্ট ইউনিভার্সিটির' অনুসারী। এদেরকে ধরে ধরে যদি অন্তত একজন মুসলিমের নাম বলতে বলা হয়, যে তার কোন ক্ষতি করেছে, তাহলে সেকথার উত্তর না দিয়ে তারা বিশ্বব্যাপী মিথ্যা ইসলামোফোবিয়ার প্রসঙ্গ টেনে আনবে। সারা ভারত জুড়ে বিরাজমান ফ্যাসিবাদী শক্তির ধারক ও বাহক এই গোত্রের মানুষ গুলো যারা কেউ বেতনপ্রাপ্ত কেউ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আর এস এসের আই টি সেল কর্মী। যাদের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফল আর এস এসের মুখপাত্র বিজেপির ক্ষমতায়ন ও বিস্তার। কিন্ত দিন যত এগিয়েছে, এই একবাক্যে ঘেউ ঘেউ কারী শৃগালদের মিথ্যা প্ররোচনার ফাঁদে পা দেওয়ার আমাদের প্রবণতা কিছুটা হলেও কমেছে। তাছাড়া, আমরা যারা সারাক্ষণ ভার্চুয়াল জগতে ডুবে থাকি, ভাবি এটাই বোধ'য় জগৎ। এর বাইরে আমরা বেরোতে ও ভাবতে পারি না। কিন্ত আসলে এর বাইরের জগৎ বৃহত্তর৷ কোটি কোটি প্রৌঢ়- প্রৌঢ়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা যাঁরা দেশের প্রবীণ নাগরিক, যাঁরা দেশের বহু উত্থান পতনের সাক্ষী, যাঁরা মোবাইল ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত নন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যুইটার ব্যবহার তো দূর অস্ত, নামই শোনেননি তাঁরা দেশ নিয়ে চিন্তিত। চিন্তিত তাঁদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, এমন কি তাদের বাবা মায়েরাও এই দলে আছেন যারা রাতদিন সোস্যাল মিডিয়ায় হিংসা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। গ্রাম-গঞ্জের সেইসব অসংখ্য মানুষজন এই ভার্চুয়াল জগতের বাইরে আছেন যাঁরা শুধুমাত্র সকাল সন্ধ্যে ইশ্বর সাধনা, নিজের পরিবারের দুবেলার পেটের ভাত জোগাড় আর অবসরে বাঁশের মাচায় বসে চিত্ত বিনোদন ছাড়া আর তেমন কিছু নিয়ে ভাবিত নন। তাঁরা ধর্মমত নির্বিশেষে মিলে মিশে একই গ্রামের এপাড়া ওপাড়ায় বাস করেন। আর এস এস-বিজেপির নোংরা রাজনীতির নির্যাস এখনো তাঁদেরকে সিক্ত করতে পারেনি। একুশের এই ভোটটা ছিল মূলতঃ এই সমস্ত বাস্তব জগতের বাসিন্দা বনাম বেতনভুক ও স্বেচ্ছাসেবক আই টি সেল কর্মীদের। আর বলাই বাহুল্য, আই টি সেল বাস্তব জগতের সৈনিকদের কাছে ডাহা ফেল। সুতরাং আমাদের জন্যও সময় এসেছে এই ক্ষুদ্র ভার্চুয়াল জগতের কূপ থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবের সঙ্গে সাজুয্য রেখে সব ঘটনার যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসার এবং ভবিষ্যৎ ভারত নির্মানের কান্ডারী হওয়ার।