এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নেতাজি জন্মজয়ন্তী উদযাপন ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন - শ্বেতবাহন  মিত্র  

    SWETOBAHAN MITRA লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ মে ২০২১ | ১৫২৪ বার পঠিত
  • পশ্চিমবঙ্গের সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারর্পব শেষ হবার পরে ওঁরা নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছিলেন। মানে বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একাংশ - কতিপয় বিদ্বজন, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, রাজনৈতিক নেতা এবং বৃহৎ সংবাদপত্র গোষ্ঠী- যাঁরা বিচলিত ছিলেন এই চিন্তায় যে গেরুয়া রাজনৈতিক শিবির বাংলার মনীষীদের উত্তরাধিকারের দাবিদার হতে চাইছে-এমনকি সুনিপুণ প্রচার কৌশলে উত্তরাধিকার আত্মসাৎ করার চেষ্টাও করতে পারে।

    বিচলিত হওয়ার একটি জুতসই কারণ হাতের কাছেই ছিল- এই বাংলায় গেরুয়া শিবিরের মাথার উপর এমন কোনো সর্বজনমান্য মনীষী নেই যাঁর গৌরবগাথা ভোটের প্রচারে নিত্যদিন স্মরণ করা যাবে। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি গেরুয়া শিবিরে নিত্যস্মরণীয়। উনি শুধু হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠাতা নন, স্বাধীনতার অব্যবহিত আগে এবং পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষার জন্য আমৃত্যু নিবেদিত ছিলেন। সংশয়ের অবকাশ নেই যে শ্যামাপ্রসাদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের একমাত্র দাবীদার ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল’। কিন্তু মুশকিল হল ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বাংলায় সর্বজনমান্য-তাঁর সমকালে অথবা বর্তমান কালে-এমন দাবী গেরুয়া শিবিরও করে না। কারণ সহজবোধ্য। সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটার আগেই এই ভাবনার পরিধির বাইরে। রাজ্যের সংখাগুরু হিন্দু ভোটার নিছকই একমাত্রিক নির্বাচক গোষ্ঠী নন-হিন্দু পরিচয়ে কুণ্ঠিত নন অথচ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সঙ্গে অহি-নকুল সম্পর্ক, এমন ভোটারের শ্যামাপ্রসাদের জয়গানে আকৃষ্ট হবার কথা নয়।

    বছরের শুরুতে যে মনীষীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রশ্নে উপরিউল্লিখিত বুদ্ধিজীবীকুলের বিচলিত দশা প্রকাশ পেয়েছিল তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস। ৮ই জানুয়ারি সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার জানালেন নেতাজির ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী বছরভর উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির শীর্ষে আছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কথা উঠল বাঙালি দেশনায়কের জন্মজয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের শাসকদল পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচারে ফায়দা তুলতে চাইছে। মনে রাখা দরকার যে একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারও নেতাজির জন্মজয়ন্তী বছরভর উদযাপনের জন্য কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছিলেন। কমিটির মাথায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই প্রকারের সরকারী কর্মসুচী থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার সুযোগের কথা যখন আলোচনায় আসছে তখন তো এটাও অস্বীকারের উপায় নেই যে রাজ্যে কমিটির কাজের মাধ্যমে শাসক দলের কাছেও নির্বাচনী প্রচারে ফায়দা তোলার একইরকম সুযোগ ছিল।

    ২৩ শে জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের আয়োজনে নেতাজির জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রাঙ্গণে। ক্যালেন্ডারে এই দিনটিকে কেন্দ্রীয় সরকার ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে নামাঙ্কিত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিতর্ক উঠল দিনটি ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসেবে অভিহিত হলেই ভাল হত কারণ পরাক্রম শব্দটি বাঙালি মনন তথা ভাবাবেগের (নেতাজি সম্পর্কিত) যথার্থ প্রকাশ ঘটাতে অক্ষম। এ কি এক ছুতমার্গী প্রাদেশিক মন – অপছন্দ শব্দের অনুপ্রবেশ মাত্র নেতাজির দেশজোড়া কর্মকাণ্ডের ‘স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ’ বিস্মৃত হওয়া! না হলে দেশের মানুষের কাছে নেতাজীর জন্মদিবসের মাহাত্ম্য তুলে ধরার জন্য বাংলা শব্দভাণ্ডার আবশ্যক মনে করা হবে কেন? ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ প্রহরে স্বদেশের মাটিতে অনুপস্থিত যে জননায়ক এবং তাঁর মুক্তি ফৌজের নামে সারা দেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়েছিলেন, অন্তিম ধাক্কা দিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসককে, ৭৫ বছর পরেও রাজ্যের কোনো কোনো মহলে দেশবরেণ্য নায়কের ‍সর্বভারতীয় পরিচয়ের থেকেও গুরুত্বপুর্ন হয়ে যাচ্ছে তাঁর বাঙালী পরিচয়। ভাষাভিত্তিক জাত্যাভিমানের এই প্রকাশ কি বঙ্গ সংস্কৃতির যথার্থ অভিজ্ঞান বলে বিবেচিত হবে?

    নেতাজীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রশ্নটি সামনে আনা যাক। দু'মাসেরও বেশি ধরে নির্বাচনী প্রচারে বিভিন্ন মুখ থেকে আগুন ঝরেছে। লাশ পড়েছে নিজের নিয়মে। এসবের মধ্যেই বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস মাঝে মধ্যে নেতাজি এবং অন্যান্য মনীষীদের নাম ভাসিয়ে দিয়েছে বটে, কিন্তু ওই অবধি। নিতান্ত স্বস্তির কথা, নেতাজির কর্ম ও আদর্শকে উপজীব্য করে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ছলচাতুরী চোখে পড়েনি। নেতাজির রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রশ্নে সামান্য বিতর্কও উঠতে পারে, এমন উঁচু তারে বাঁধা প্রচার বিজেপি কেন, কোনো দলই করেনি। সম্ভবত করার কথা ভাবেও নি।

    সর্বজনমান্য মনীষীদের উত্তরাধিকারে সুত্রায়িত রাজনৈতিক পুঁজির বিষয়টি অন্য আর একটি প্রশ্ন সামনে হাজির করে। এই হিংসাবিদীর্ণ- শারীরিক ও মুখনিঃসৃত, তীব্র সাম্প্রদায়িক, দুর্নীতির অভিযোগে পারস্পরিক ব্যক্তিগত আক্রমণের রাজনৈতিক পটভূমিকায় কি ভাবা সম্ভব ছিল যে নির্বাচনী প্রচারের লগ্নে সমাজে সুনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন দল একদম উঠে পরে লেগে যাবে? ভোট প্রার্থীরা মনীষীদের উত্তরাধিকার দাবী করে বসবেন আর ভোটার অবাক বিস্ময়ে বলে বসবেন না,বা নিদেনপক্ষে ভেবে বসবেন না “কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়,…..আমি যেই দিকেতে চাই অবাক হয়ে যাই, অর্থ কোনো খুঁজে নাহি পাই রে”। কেন্দ্রীয় সরকারের নেতাজী জন্মজয়ন্তী উদযাপনের ঘোষণা শুনে উপরিউক্ত বুদ্ধিজীবীকুলের বিচলিত হওয়া কি নেহাতই কষ্টকল্পিত ভাবনা ছিল?

    নেতাজিকে আমরা বছরে একবার স্মরণ করি ফুল, মালা, গান, কুচকাওয়াজ, লেখা, বক্তৃতা, সেমিনারের মধ্যে দিয়ে। এই দিনটিতে নেতাজির কর্ম, আদর্শ, ত্যাগ, তিতিক্ষার আলোচনায় আমরা চেতনা ও আত্মগৌরবে শান দিই। আমাদের নেতাজি স্মরণে কোনো খাদ নেই -এই মর্যাদাপুর্ণ নিবেদনের নিজস্ব সামাজিক মুল্য আছে। তথাপি আমাদের দৈনন্দিন রাজনীতির প্রকৃতি ও প্রকরণে দেশনায়কের আদর্শ ও কর্মের দৃষ্টান্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে। আরো সোজা কথায় বললে আদর্শের কথা শুনতে ভালো, বলতে ভালো, কিন্তু আদর্শের বোঝা মাথায় রেখে রাজনীতিতে ‘মানুষের সেবা করা’ বড় কঠিন কাজ। স্বভাবতই, ভোটরঙ্গে মনীষীর আদর্শ প্রচারের কোনো রাজনৈতিক উপযোগিতা নেই। আমাদের রাজনীতির মনন, ভাষা, ভাষ্য, হিংসা-সন্ধি-মনোরঞ্জন, ধর্মভিত্তিক কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান, আর্থিক-নিয়ম-নিষ্ঠা-সততা কিংবা দুর্নীতি-স্বজনপোষণ, প্রতিশ্রুতি কিংবা ভাঁওতা -এইসবের মধ্যে দিয়ে জনজীবনের যে ভালো-মন্দ চেহারা ফুটে ওঠে, নির্বাচনী প্রচারের অভিমুখ এবং সারবত্তা তার থেকে বস্তুত আলাদা কিছু হতে পারে না।

    এই প্রেক্ষাপটে নেতাজির রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের বিষয়টি নিয়ে- কর্ম ও আদর্শের নিক্তিতে- নির্বাচনী প্রচার জমিয়ে তোলা যে কোনো দলের পক্ষেই ছিল অসম্ভবের কথা; কারণ সেটা ভোটারদের কাছে বাস্তবগ্রাহ্য আশা-আকাঙ্খা-ভবিষ্যৎ হিসেবে প্রতিপন্ন করা যেত না। তার মানে এই নয় যে মুল্যবোধ, নীতি ও আদর্শসমূহ প্রোথিত ছিল দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে, সেসব ধরে নিতে হবে অন্য যুগের অভিজ্ঞান, ২০২১ সালে তামাদি হয়ে গেছে। এইভাবে ভাবাটা সরলীকরণ হয়ে যাবে। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল আইডেন্টিটি পলিটিক্স – জাতিভিত্তিক চেতনা-সঞ্জাত রাজনীতি। এই রাজনীতির মনন ও শিকড় প্রোথিত আছে সামাজিক আন্দোলনে-একটি শুরু হয়েছিল উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে, অন্যটি গত শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষদিকে। নিছকই সময়ের দুরত্বে নীতি ও আদর্শসমুহ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় না, যদি সেসবের রাজনৈতিক উপযোগিতা থাকে।

    সাম্প্রতিক কালের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতিভিত্তিক চেতনার রাজনীতি আরও তীক্ষ্ণ হয়েছে। দলিত, আদিবাসী এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট নিজেদের ঝুলিতে টানার জন্য উচ্চগ্রামে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এইসব সম্প্রদায়ের বঞ্চনা, আশা,আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নপূরণের কথা উঠে এসেছে প্রচারে। মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রবর্তক শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমসাময়িক। মতুয়াদের আত্মচেতনা নির্মাণ তথা সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। দলিত সম্প্রদায়ের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে স্বয়ং গান্ধীজীর বিরুদ্ধাচারণ করে ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্দোলন শুরু করেছিলেন বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষদিকে। এই দুই সম্প্রদায়ের আত্মচেতনা নির্মাণ ও স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার নীতি ও আদর্শ বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে। ভোটের সংখ্যার গুরুত্বের নিরিখে রাজনৈতিক দলগুলি তাঁদের কথা বলতে বাধ্য হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রচারে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরকে স্মরণ করেছে। ডঃ আম্বেদকরকে স্মরণ করেছে। সর্বোপরি তাঁদের সামাজিক-রাজনৈতিক উত্তরাধিকার দখল করতে চেয়েছে। স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার এই রাজনীতি নিঃসন্দেহে ন্যায়সঙ্গত, সামাজিক প্রগতির নির্ণায়ক। এই রাজনীতির আদর্শ ও লক্ষ্যকে কাঁধে নিয়ে রাজনীতির কারবারীরা যদি রাজনৈতিক পুঁজি বাড়াতে পারেন তাতে দোষের কিছু নেই, বরং তাঁরা সাধুবাদের যোগ্য। বিপ্রতীপে, ২০২১ সালের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নেতাজির রাজনৈতিক উত্তরাধিকার দাবী করা অতীব দুরহ রাজনৈতিক সাধনার বিষয়; সুভাষচন্দ্র যেন তাঁর সকল কর্ম আদর্শ ত্যাগ তিতিক্ষা নিয়ে রয়ে গেছেন অনতিক্রম্য দুরত্বে।

    এবারে একটা অন্য প্রসঙ্গ ছুঁয়ে যাওয়া যাক। নির্বাচনী প্রচারে বারবার উঠে এসেছিল ‘বহিরাগত’ তত্ত্বের কথা। বলা হয়েছিল গুজরাতি মানুষজন এসে বাংলার রাজনীতির দখল নিতে চাইছেন। নির্বাচনী প্রচারের মধ্যে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবিপি আনন্দ চ্যানেলে সাক্ষাৎকার (২৫/৩/২০২১) দিয়েছিলেন। কথায় কথায় উনি বলেছিলেন যে সুভাষবাবু যখন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন কি উনি দেশের অন্যান্য প্রদেশে, যেমন ধরুন গুজরাটে,বহিরাগত হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছিলেন ! মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। দলীয় রাজনৈতিক বাক-বিতণ্ডার সঙ্গে একে এক করে ফেলা সমীচিন নয়। গত শতকের তিনের দশকে সুভাষচন্দ্রের সর্বভারতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্যতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ২০২১ এর বাংলার নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে ‘বহিরাগত’ তত্ত্বের অসারতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অমিত শাহ। আমরা যারা নেতাজির দেশের সাধারণ মানুষ তাদের কাছে নেতাজির সর্বভারতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে আজকের এই বহুধাবিভক্ত সমাজে। দেশের মানুষের কাছে সেদিন সুভাষচন্দ্রের গ্রহণযোগ্যতার চিত্রটি একবার দেখে নেওয়া যাক। ১৯৩৯ সালের জানুয়ারি মাসে কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র দ্বিতীয়বারের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১৫৮০। প্রতিদ্বন্দী পট্টভি সীতারামাইয়ার প্রাপ্ত ভোট ১৩৭৭। গান্ধীজীর মনোনীত প্রার্থীকে সুভাষচন্দ্র পরাজিত করেছিলেন, এই তাৎপর্যের পাশাপাশি উল্লেখের দাবি রাখে যে উনি বাংলা এবং পাঞ্জাবে তো বটেই, কেরল, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, তৎকালীন যুক্তপ্রদেশ (আজকের উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মিলিত প্রশাসনিক অঞ্চল) এবং আসামেও সীতারামাইায়ার চেয়ে ঢের বেশী ভোট পেয়েছিলেন।

    সুভাষচন্দ্রের ক্যারিশমার পরিচয় পাওয়া যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে সুভাষচন্দ্র সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। অক্টোবর মাসে স্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনাবাসী ভারতীয়দের আহ্বান জানান ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিতে। এই কাজে সুভাষচন্দ্রকে বিভিন্ন সভায় ভাষণ দিতে হত। অনাবাসী ভারতীয়দের সংখ্যাগুরু অংশ ছিলেন তামিল ভাষী। স্বদেশের সীমানা ছাড়িয়ে এমনই ছিল সুভাষচন্দ্রের জনপ্রিয়তা, যে হিন্দুস্তানিতে দেওয়া তাঁর ভাষণ মুখে মুখে তামিলে ভাষান্তরিত হয়ে সভার জনতার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ত। সুভাষচন্দ্রের আহবানে অনাবাসী ভারতীয়রা যে যেভাবে পেরেছিলেন সাড়া দিয়েছিলেন - কেউ আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগদান করে, কেউ বা সঞ্চিত অর্থ, সোনার অলংকার সবটুকু প্রিয় নেতাকে দান করে। লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনানীদের বিচার চলাকালীন জানা গিয়েছিল যে তৎকালীন মালয়ে বসবাসকারী লক্ষাধিক অনাবাসী ভারতীয় স্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতি তাঁদের আনুগত্য ঘোষণা করেছিলেন। লালকেল্লায় বিচারকদের কাছে এই তথ্যটি তুলে ধরা হয়েছিল আজাদ হিন্দ সরকারের বৈধতা প্রমাণের জন্য। এই সেদিন গণমাধ্যমে এক আলাপচারিতায় সিপিআইএম পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছিলেন যে রাজনীতির কাজে তাঁকে বহুবার তামিলনাড়ু যেতে হয়েছে - তাঁর অভিজ্ঞতায় ধরা পড়েছে তামিলনাড়ুর শহরে গ্রামে নেতাজির গৌরবগাথা মানুষের মুখে মুখে আজও ঘোরে।

    ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি ও তাঁর অবদানকে যতটা সম্ভব জনপরিসরে উঝ্য রাখা, এমনকি তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রামকেও তুচ্ছ করার বিষয়ে একটু চোখ রাখা যাক। নেতাজীর একটি জীবনী গ্রন্থ ‘অনির্বাণ জ্যোতি’। লেখক দেশের স্বাধীনতার জন্য সুভাষচন্দ্রের জীবনপণ যাত্রার মাহেন্দ্রক্ষণের সঙ্গী। ৩৮/২ এলগিন রোডে অন্তরীন সুভাষচন্দ্রকে ১৯৪১ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে জার্মান ওয়ান্ডারার গাড়ি চালিয়ে ডঃ শিশির কুমার বসু গোমো রেল স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিলেন- ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে হিসেবী কংগ্রেসী রাজনীতি বেআব্রু করে সুভাষচন্দ্রের অনন্য পথ এবার ছাড়িয়ে যাবে দেশের সীমানা। গ্রন্থের মুখবন্ধের একটি অংশে ডঃ বসু জানিয়েছেন “নেতাজী সুভাষচন্দ্রের এই সংক্ষিপ্ত জীবনী কংগ্রেসের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশের জন্য কংগ্রেসের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি আমাকে লিখতে অনুরোধ করেছিলেন। তাঁরা কিন্তু বইটি প্রকাশ করেননি এবং শেষ পর্যন্ত পাণ্ডুলিপিটি আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দেন”। মুখবন্ধের অন্য আরেকটি অংশে লেখক লিখেছেন “তিনের দশকের শেষ থেকে কংগ্রেস দলের ক্ষমতাসীন মহলের সুভাষচন্দ্রের প্রতি বিরূপ মনোভাবের কথা সকলেই জানেন- এমনকি বর্তমান নেতৃত্বও যেন উত্তরাধিকারসুত্রে এই বিরূপতা পেয়েছেন”। গ্রন্থটির প্রকাশকাল জুন ১৯৮৭। সমকালে (১৯৮২-১৯৮৭) ডঃ বসু চৌরঙ্গী কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত সদস্য। কংগ্রেসের টিকিটে। অতএব কংগ্রেস নেতৃত্বের সমালোচনা করা তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক ছিল না। প্রিয় ‘রাঙাকাকাবাবু’র প্রতি অন্যায়ে ব্যাক্তি শিশির বসুর এই খেদোক্তি ঐতিহাসিকের আতস কাঁচের নিচে ফেলে দেখলেও কিছুমাত্র গুরুত্ব হারায় না। ১৯৩৯ এর ত্রিপুরী অধিবেশন পরবর্তী ঘটনাক্রমে সুভাষচন্দ্রকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে অধ্যাপক সুমিত সরকারের স্পষ্ট অভিমত- কংগ্রেস নেতৃত্ব সুভাষচন্দ্রকে রাজনৈতিকভাবে খতম করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। সুভাষচন্দ্র “কোনদিন নীতির প্রশ্নে আপস করেননি-সেটা ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে হোক জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে হোক বা সমাজবাদী আন্দোলনের প্রশ্নেই হোক। তাকে অস্বীকার করে লোকসান হয়েছে আমাদেরই। ভারতের নতুন রাষ্ট্র গঠনে ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটা বড় ফাঁক থেকে গেছে”- ডঃ বসুর অভিমতের সঙ্গে একমত হবেন- স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি প্রজন্মে এমন মানুষের অমিল হবে না।

    একটা সুযোগ এসেছে নেতাজিকে অস্বীকারের রাজনীতিটাকেই পাল্টে দেওয়ার। অস্বীকারের রাজনীতিতে শুধু কায়েমি স্বার্থ মর্মে মর্মে জড়িত থাকে তাই নয়, থাকে হীনতা ও হীন্যমনতা বোধ। সমকালকে অতিক্রম করা মহানায়ককে যথোচিত মর্যাদা দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রচনায় হীন্যমনতা, বিবিধ ত্রুটিকে সংশোধন করে নেওয়ার সময় এখন এসেছে। ভারতের ইতিহাসে নেতাজির ন্যায়সঙ্গত স্থান নির্ধারণ যেমন জরুরী, তেমনই জরুরি নেতাজির নীতি, মুল্যবোধ, লেখাপত্র, কর্মজীবনের বিশিষ্ট দিক ও সর্বোপরি সর্বভারতীয় স্তরে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা, ক্যারিশমা, দেশ গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ চর্চা। গণমাধ্যম, জনস্বার্থে প্রচারিত হোর্ডিং,সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, চারুকলা, পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে দিয়ে এই চর্চাকে সংহত রুপ দেওয়া সম্ভব।

    উপরিউল্লিখিত কাজে কিছু উদ্যোগের প্রত্যাশা আমরা জাতীয় পর্যায়ের কমিটির কাছে করতে পারি। কমিটির গঠন বাস্তবিকই সর্বভারতীয় ৷ ৮৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে আছেন দুজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সহ সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সংসদে দুই কক্ষের বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতা ও সাংসদ এবং বিবিধ ক্ষেত্রের কৃতি ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা। নেতাজি জন্মজয়ন্তী উদযাপনের জন্য সরকারের বিভিন্ন নীতি, পরিকল্পনা, বিস্তারিত কর্মসূচির প্রস্তুতি পর্যায় থেকে রূপায়ন হবে কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে। কর্মসূচি কোন কোন দিনে রূপায়িত হবে সেটাও মোটের উপর ঠিক করবেন কমিটি।

    আর একটা কথা। কেন্দ্রে অথবা রাজ্যে যে কোনো সরকারি উদ্যোগ এবং কর্মসূচির প্রণয়ন ও রূপায়নের সূত্রে শাসক দলের রাজনৈতিক লাভের সম্ভাবনা থাকে। তাতে করে ন্যায্য সরকারি উদ্যোগ ও কর্মসূচির যাথার্থ্যতা, প্রয়োজনীয়তা, গুরত্ব ও উপযোগিতা হ্রাস পায় না। নির্বাচন পর্ব সমাপ্ত হল বটে, রাজনীতি নয়। পরের বছর জানুয়ারী মাসে নেতাজির জন্মজয়ন্তী উদযাপন নিয়ে আবার আমরা আলোচনায় মাতব। অথবা তরজায় । নেতাজিকে অস্বীকারের রাজনীতির ইতিহাসে নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা ব্যানার্জির দলের কোনো ভূমিকা নেই। অতএব দেশের মানুষের কাছে কোনো কৈফয়ৎ দেবার দায় তাঁদের নেই। তাঁদের কাছে বরং সুযোগ আছে নিজেদের নেতৃত্বাধীন দুটি কমিটিকে সঠিক দিশা দেখানোর।

    সুযোগ বেশী মমতা ব্যানার্জির। কারণ রাজ্য কমিটির প্রধান এবং জাতীয় কমিটির অন্যাতম সদস্য হিসাবে দুটি কমিটিতেই তাঁর অবদানের সুযোগ আছে। এই দুই নেতার দৃষ্টিভঙ্গি নির্ণয় করে দেবে নেতাজির জন্মজয়ন্তী উদযাপনের বাকি গতিপথ। কমিটি দুটির হাতে এখনো আছে মোটামুটি ৮ মাস সময়। দেশের মানুষের নজর থাকবে এই দুই কমিটির সহায়তায় দুই সরকার নেতাজি জন্মজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে কতটা কি কাজ করলেন।
    নেতাজি শুধুমাত্র ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের অংশ নন, দেশের মানুষের অনুভবে তাঁর নিত্য নির্মাণ।

    ২২.৫.২০২১

    ঋণ স্বীকারঃ

    1. এবিপি আনন্দ চ্যানেল
    2. Sumit Sarkar: Modern India- 1885-1947; Pearson India
    3. Sugata Bose: His Majesty’s Opponent; Penguin
    4. অনির্বান জ্যোতিঃ শিশিরকুমার বসু; দে'জ পাবলিশিং
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন