শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ের ঘোড়ায় চড়া নেতাজিকে দেখে নয়নের চোখে বিদ্যুতের ঝলকানি খেলে গেল। মারুতি অমনি থেকে নেমে ফুটপাতের দিকে পা বাড়ালো। ভাড়া আগেই মিটিয়ে দিয়েছিল। চোদ্দশো টাকা। সামনেই চোখে পড়লো সেই গোলবাড়ি রেস্টুরেন্টটা, যেখানে বছর কয়েক আগেই সে এসেছিল বাবার সাথে কষা মাংস আর ঘিয়ে ভাজা পরোটা খেতে। আজও সে এসেছে। একা। পকেটে সীমিত পয়সা। ভাবছে, গজার মোড় থেকে বাসে করে এলে অন্তত পেট ভরে খেতে পারতো। টাকা খরচ করার কথা দুবার ভাবতে হত না। স্যামসনের সুইচ টেপা হ্যান্ডসেটটা থেকে ভোডাফোনের সিমটা ফেলে দিয়ে, ফুটপাত ধরে হাঁটা শুরু করলো সে। গন্তব্য অজানা।
নয়ন আঠেরো বছরে পা দিয়ে যুবক এখন, এই বছরেই উচ্চমাধ্যমিক দেবে। বাড়িতে কথা কাটাকাটি করে, রাগ করে, অঙ্ক টিউশনি পড়তে না গিয়ে কলকাতা চলে এসেছে। মনে ভেবেছে অনেক হয়েছে মা বাবার ওপর নির্ভর করে জীবন কাটানো, এবার সে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করবে, একটা কাজ খুঁজে নেবে। সম্বল বলতে মায়ের মানি ব্যাগ থেকে চুরি করা হাজার দুয়েক টাকা। কলকাতা তার অচেনা নয়, অনেকবারই সে কলকাতাতে এসেছে, থেকেওছে। কিন্তু একা এই প্রথমবার, তাও আবার রাতের বেলা।
নয়ন কি পারবে একা একা কলকাতার বুকে কোনো কাজ খুঁজে নিতে? নাকি নয়নকে ফুটপাতেই বাকি জীবন কাটাতে হবে?