রাম রবীন্দ্রনাথ এবং by Shyamali Roy
সম্প্রতি দেখলাম হোয়াটস অ্যাপে একটি পোষ্ট যেখানে রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে যে বাংলার বাইরে রামকে যেভাবে পৌরুষের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয় বা তারা রামকে যে ভাবে ধর্মের প্রতীক হিসেবে গণ্য করে বাংলাদেশের মানুষ যে সেভাবে দেখে না তা বাংলাদেশেরই দুর্ভাগ্য।
"রামকে যাহারা যুদ্ধক্ষেত্রে ও কর্ম ক্ষেত্রে নরদেবতার আদর্শ বলিয়া গ্রহণ করিয়াছে তাহাদের পৌরুষ কর্তব্যনিষ্ঠা ও ধর্মপরতার আদর্শ আমাদের অপেক্ষা উচ্চতর"
অস্বীকার করার জায়গা নেই, তিনি বলেছেন, গ্রাম্য সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে একবারে শেষ লাইনে যা বলেছেন তার অর্থ এটাই দাঁড়ায়। কিন্তু লক্ষ্যনীয় এও যে তাঁর আলোচনা কিন্তু গ্রাম্য সাহিত্য নিয়ে। গ্রাম্য সাহিত্য রবীন্দ্রনাথের কাছে আলাদা মাত্রা দাবী করে। সুতরাং গ্রাম্য সাহিত্য নিয়ে পৃথক আলোচনা আছে। কথা প্রসঙ্গে রামাযণের কথা তুলতে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের "লোকসাহিত্যে*যেসব প্রবন্ধ আছে তা আক্ষরিক ভাবেই লোকসাহিত্যে র কথা ই। যা মুখে মুখে ফিরেছে কখনও গানের মত কখনও ছড়ার মত কখনও ঠাট্টা মশকরা মূলক গান প্রবচনের মাধ্যমে। সুতরাং সেই বই একেবারে শেষ প্রবন্ধের শেষ লাইন টি দিয়ে কিছু প্রমাণ হয় বলে মনে হয় না। এতগুলো কথা বলার কারণ উক্ত পোষ্টে উল্লেখ করে দেওয়া আছে বইটি এবং
রচনাটির নাম। প্রবন্ধটি "ভারতী"পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল বাংলা ১৩০৫সালে তথা ইংরেজি হিসেবে 1898খ্রীষ্টাব্দে। স্বাধীনতার জন্য অশান্ত ভারতবর্ষ।। কিছুদিন পরেই শুরু হবে বাংলাভাগের চক্রান্ত আর তার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ। এহেন সময়ে মুহূর্তে র জন্য হয়ত মনে হয়েছে বাঙালির পৌরুষকে জাগ্রত করার কথা। ' হয়তো' দিয়ে কিছু প্রমাণ করা যায় না সেকথা সত্যি। গ্রাম্য সাহিত্যের প্রতিটি অনুচ্ছেদ রাধাকৃষ্ঞ আর হরপার্বতী কে নিয়ে প্রচলিত ছড়া গান নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা আর অনুমান। ".. হরগৌরী সম্বনধীয় গ্রাম্যছড়া বাস্তব ভাবের। তাহা রচয়িতা শ্রোত্রী বর্গের একান্ত নিজের কথা। সেই সকল কাব্যে জামাতার নিন্দা স্ত্রী পুরুষের কলহ ও গৃহস্থালীর বর্ননা যাহা আছে তাহাতে রাজভাব দেবভাব কিছু ই নাই। তাহাতে বাংলাদেশের গ্রাম্য কুটিরের প্রাত্যহিক দৈন্যতা ও ক্ষুদ্রতা সমস্ত ই প্রতিবিম্বিত। কৈলাস ও হিমালয় আমাদের পানাপুকুরের ঘাটের সম্মুখে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এবং তাহাদের শিখর রাজি আমাদের আমবাগানের মাথা ছাড়াইয়া উঠিতে পারে নাই। যদি তাঁহারা নিজ নিজ মূর্তি ধারণ করিবার চেষ্টা মাত্র করিতেন তাহা হইলে বাংলার গ্রামের মধ্যে তাহাদের স্হান হইত না। "
আরো কত ছড়া কাহিনী র কথা আছে হরপার্বতী কে নিয়ে যা আমাদের ঘরে অহরহ ঘটে চলে।
অন্যদিকে রাধাকৃষ্ঞ বিষয়ে যেসব ছড়া প্রচলিত বলে তিনি সংগ্রহ কর লেন সেখানে কিন্তু গার্হস্থ্য বা সাংসারিক বিষয় গৌণ। বলতে গেলে কিছুই নেই। সে ছড়ায় গ্রামের কবি তাঁর কল্পনার সাথে মানসিকতার উত্তরণ ঘটাতে চান। "সেখানে বাস্তবিকতা র কোঠা পার হইয়া মানসিক রাজ্যে উত্তীর্ণ হ ইতে হয়। প্রাত্যহিক ঘটনা সাংসারিক ব্যাপার সামাজিক রহস্য সেখানে স্হান পায় না। সেই অপরূপ রাখালের রাজ্য বাঙালি ছড়া ও গীতিকারদের মানস রাজ্য।"
রবীন্দ্রনাথ রামকে নিয়ে যেসব কথা বলেছেন তা সবই 'প্রাচীন সাহিত্যে' যেখানে মহাকাব্য নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ। যে কোনসাহিত্য নিয়ে তাঁর বিচার বিশ্লেষণ যে মহামূল্যবান তা বলাই বাহুল্য। তিনি অবশ্যই জানতেন বাংলার প্রচলিত ছড়া নানান গল্প কথা যেমন হরগৌরীর বিবাহ সংসার যাপন মা মেনকা আর পিতা হিমালয়ের পরস্পর দোষারোপ আক্ষেপ বৎসরান্তে একবার মেয়ের দেখা পাওয়া এসব নিয়ে ই আবর্তিত। মহাকাব্য আর এইসব গ্রামীণ প্রচলিত ছড়া কখনো এক নাকি?
রামায়ণ মহাভারত আমাদের মহাকাব্য। মহাকাব্যের বিশাল ব্যাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি কাব্যকে দুভাগে ভাগ করে দেখছেন। এক হলো কোনো একলা কবির কথা আর এক হল কোন কাব্য বা বৃহৎ সম্প্রদায়ের কথা। এই বৃহৎ সম্প্রদায়ের তথা একটি জাতি ও জনপদের জীবন ধারা, তার মধ্যে অন্তর্নিহিত সমস্ত রকম বার্তা তা যুদ্ধের হতে পারে, সাংসারিক সামাজিক শিক্ষনীয সমস্ত রকম বিষয় নিয়ে যে কাব্য তা হল এক গভীর মহাকাব্য।
রামচন্দ্র ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। ভগবানের স্থান তো ভক্তদের হৃদয়ে প্রত্যেকটি ব্যক্তি ই তাঁর মনের ঈশ্বর সাধনা করতে পারেন। কেউ পুতুল পূজোয় বিশ্বাসী কেউ সর্ব মঙ্গলময় নিরাকার দেবতার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন।
বাল্মীকী চেয়ে ছিলেন দেবতা ও মানুষের সমস্ত রকম গুন আছে এমন একটি চরিত্র সৃষ্টি করতে।নারদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। সুতরাং রাম কাহিনী কল্পিত কাহিনী।
আমরা ভাবি চৈত্র মাসের নবমী তিথিতে রামে জন্মদিন। যে সময় বাঙালি অন্নপূর্ণা পূজো করে। রামকে দেবতা বলে যারা মানেন সেদিন রামকে পুজো করেন রামের মূর্তি নির্মাণ করে। সেই মূর্তির হাতে তীর ধনুক থাকে বটে তবে যুদ্ধ করার জন্য নয়। পায়েস দিয়ে পুজো দেওয়া হয়। নব রাত্রির ব্রত রাখেন যারা নয় টি কুমারীকে পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে পূজো করে নানা ধরনের উপহার প্রদান করেন। কোনোকোনো অঞ্চলে হয়তো লাঠি খেলার চল আছে তবে তা নেহাতই কুশলতা প্রদর্শন করার জন্য আনন্দ পাবার জন্য। শক্তি প্রদর্শন করার জন্য নয়।
অথচ এখন কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে সশস্ত্র রামকে তাঁর শক্তি মত্তার জন্য বিশেষ ভাবে প্রচার করতে। সেইটে করার জন্যই রবীন্দ্রনাথের সমস্ত রচনাবলী খুঁজে ঐ একটি লাইন কে প্রাধান্য দিয়ে বসছে।
সব মানুষই ঈশ্বরকে ডাকতে চায়। বিপদে পরে জীবনে একটি বারও ভগবানের নাম মুখে আনেনি এমন মানুষ বিরল। একশ্রেনীর লোকের কাছে রাম সেই বিপদভঞ্জন। কৃত্তিবাসী রামায়ণ বা তুলসী দাসের রাম কিন্তু নবনীতকোমলতনুদূর্বাদলশ্যাম। যুদ্ধের জন্য মোটেও উদগ্রীব নন
আমাদের গ্রাম্য বা লোকসাহিত্যের তুলনায় রবীন্দ্রনাথ রামায়ণকে অনেক বেশী মর্যাদা দিয়েছেন।।
গ্রাম্য সমাজে বা লোকসমাজে কোনদিন রামকে নিয়ে উন্মাদনা দেখা যায় নি এখনকার মত। রাম সেখানে ঘরের ছেলেটি হয়েই
থাকেন। এই বিশ্বাস কিন্তু রবীন্দ্রনাথেরই। প্রাচীন সাহিত্য গ্রন্থে বারবার বলেছেন যে সমস্ত রামাযণে যুদ্ধের চেয়ে সংসারের কাহিনী দাম্পত্য প্রেমের কাহিনী প্রাধান্য পেয়েছে।
সংসারের কূটকচালের ফল ভোগ করেছেন রাম। পিতার সম্মান রাখতে তে বনে যেতে হল, সীতাকে নিতে আপত্তি করলেন না। দাম্পত্য প্রেমের তো এখানেই জয় হল। রবীন্দ্রনাথের মতে "রামায়ণ আসলে কাব্য ধর্ম শাস্ত্র নহে"। তো এই বিশাল কাব্য র জন্মদাতা আদি কবি বাল্মীকী। কবির কল্পনাকে কে কবে সমাজ জীবনে ইতিহাস বলে প্রচার করেছে!
রাম নবমী কোথা দিয়ে আসত যেত তা পাঁজি মেনে চলা পন্ডিত পুরোহিত আর ঠাকুমা দিদিমারাই খবর রাখতেন। এখন দেখছি একদল লোক অস্ত্র হাতে নিয়ে কপালে লাল তিলক পরে রামের নামে জয় ধ্বনি দিয়ে শোভাযাত্রা করে রাম নবমী পালন করে ন
এমন তো কোনদিন দেখিনি।
স্বাধীনতা আন্দোলনের কোন উন্মাদনার প্রেক্ষাপটে মুহূর্তে র তরে তাঁর মনে রামের শৌর্যের কথা মনে পড়েছে কারণ তার আগেই তিনি বলছেন —"রামায়ণ কথায় একদিকে কর্তব্যের দুরূহ কাঠিন্য অপর দিকে ভাবের অপরিসীম মাধুর্য একত্র সম্মিলিত। তাহাতে দাম্পত্য, সৌভ্রাত্র, পিতৃভক্তি, প্রভুভক্তি,
প্রজাবাৎসল্য প্রভৃতি মনুষ্যের যত প্রকার উচ্চ অঙ্গের হৃদয় বন্ধন আছে তাহার শ্রেষ্ঠ আদর্শ পরিস্ফুট হইয়াছে। তাহাতে সর্ব প্রকারহৃদবৃত্তিকে মহৎ ধর্মনিয়মের দ্বারা পদে পদে সংযত. করিবার কঠোর শাসন প্রচারিত। " সুতরাং একটি মাত্র উদ্ধৃতি দিয়ে বাঙালির সমাজের মধ্যে রাম হনুমান ইত্যাদি র সেবা পুজোকে মিশিয়ে দেবার চেষ্টা করা অন্যায়। রামের জন্মভূমি কবির মনোভূমি। কোন পার্থিব জগতে তাঁর বসভুমি না। পৃথিবীর কোথায় তিনি জন্মেছিলেন তার সন্ধানে করার কি প্রয়োজন!
রামাযণে র যুদ্ধ রামসীতার দাম্পত্য প্রীতি কেই উজ্জ্বল করে তুলেছে। - "রামাযণে যুদ্ধ ব্যাপার যথেষ্ট আছে বটে তথাপি তাহা বীররসের কাব্য নহে। তাহাতে বাহুবলের গৌরব ঘোষিত হয় নাই। যুদ্ধ ঘটনাই মুখ্য বর্ননা র বিষয় নহে।" অতএব আমরাও জয় শ্রীরাম বলে হুংকার ছাড়া র প্রয়োজন দেখি না। রামকে স্মরণ করতে. জয় সিয়ারাম ও অনেক মানুষ বলে থাকেন। তারা কি ধর্মপ্রাণ হতে পারন না নাকি বাঙালি রা পল্লী জীবনে রামগাথা শোনেনা গায় না বলে ভক্তি কম আছে? অন্য রচনায় রবীন্দ্রনাথ বলছেন ঐ প্রাচীন সাহিত্যেই "আমাদের দেশে গার্হস্থ্য আশ্রমের যে অত্যন্ত উচ্চ স্থান ছিল এই কাব্য তাহা সপ্রমান করিতেছে।... গৃহাশ্রম ভারতীয় আর্য সমাজের ভিত্তি। রামায়ণ সেই গৃহাশ্রমের কথা।"
বারবার তিনি বলছেন "- বাহুবল নহে, জিগীষা নহে, রাষ্ট্রগৌরব নহে শান্তরসাস্পদ করুণার অশ্রুজলে অভিষিক্ত করিয়া তাহাকে সুমহৎ বীর্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন। "" অর্থাৎ রাম যদি সংসারসীমার মধ্যে ধরা না দিতেন, যদি পত্নীপ্রেমের দৃষ্টান্ত না দেখাতে পারতেন আবার একই সঙ্গে দেখালেন প্রজাদের মনতোষণের বাধ্যতা এরকমটি না হলে রামকে বাঙালির মনে ধরতনা। বীরত্ব আর অহংকার রের বড়াই করা রাম বাঙালির পছন্দ ছিল না। কিন্তু ঐ যে বাঙালি র আত্তীকরণের প্রবণতা তারই ফল ভুগতে হচ্ছে এখন। একদল মানুষ রাম নামের. বজ্রহুংকার ছেড়ে ছড়িয়ে বাধ্য করতে চাই
ছে রামকেই আমাদের প্রধান উপাস্যবলে বলে মনে করতে। অথচ রাম তো আমাদের আমবাঙালির কাছে প্রধান উপাস্য দেবতা নন। রামকৃষ্ণ র পরিবর্তে শুধু রাম, বিবেকানন্দ কেও উদ্ধৃত করে তারা আবার গোমা
তামাতি ও করে। অশিক্ষা কতদূর বিস্তারিত হয়েছে। বিবেকানন্দ র কাছে একদল লোক একবার গোমাতার পূজা করব বলে চাঁদা চাই তে গিয়ে মুখের মত জবাব পেয়েছিল। তিনি বলেছিলেন যে বুঝেছি তোমরা গোমাতার উপযুক্ত সন্তান, নতুবা আমার দেশের মানুষের এই দুর্দশা হয়। এসব ঘটনা তাদের জানা বোঝার বাইরে। হিন্দি বলয়ের রামপ্রীতি এখন ছড়িয়ে যাচ্ছে এখানেও। বাংলার মানুষ বাংলার সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। শুরু হয়েছে নতুন বাংরেজী আর "হিংলা" (সম্ভব ত চন্দ্রিলভট্টাচার্যর দেওয়া নাম)ভাষা। একটা বিদ্বেষ এরকম বিচ্ছিন্নতা কাজ করছে। ধর্মান্ধতা আরো বেশী জাঁকিয়ে বসেছে।
রবীন্দ্রনাথ ধর্মান্ধতা কে প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন এমন দুরাশা তারা যেন দুঃস্বপ্নেও না করে।
হিন্দু মৌলবাদী রা রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁকে একজন একনিষ্ঠ রামভক্ত অথবা হিন্দু বলে মনে করিয়ে নিজেদের সত্যি কারের সংস্কৃতির ধারক বলে মনে করলে বিরাট ভুল। যে নতুন প্রজন্ম এই বিরাট ভুলটা করছে তাদের রবীন্দ্রনাথকে ভালো করে জানতে হবে।
ঠাকুর পরিবারের একটি অংশ ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সেই পরিবারের ছেলে। মহর্ষি র ব্রাহ্ম ধর্ম ও সমাজ থেকেই তো রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা. সংস্কৃতি জীবন যাপনের ধারণা গড়ে উঠেছিল। তাছাড়া ব্রাহ্ম ধর্ম তো অনেক উদার,
নারী পুরুষের মেলামেশা, একসাথে আহারবিহার, বিলিতি আদব কায়দা রবীন্দ্রনাথ অপছন্দ করেন নি
বিলিতি আদব কায়দা শেখার জন্য বোম্বাই সহরে যেপরিবারে কিছু দিন কাটিয়েছিলেন তাদের মেয়ের সঙ্গে রীতিমত প্রনয় সম্পর্কও গড়ে উঠল। তাকে নিয়ে কবিতা গান তাঁর মুগ্ধতাই বুঝিয়ে দেয়।
যারা রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে রাম নামের হুংকার ছাড়ে তারা রোমিও বাহিনী তৈরি করে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশায় রাশ টানতে চায়, শুধু রাশটানা নয় তাদের মৃত্যু দন্ড দিতেও দুদন্ড ভাবে না।
অথচ
বাংলার তথা ভারতের কবি বিশ্বকবি হয়েও কি বাংলার সমাজ সংস্কৃতিকে ধরে রাখেন নি? শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা বা সেখানকার আশ্রমিক ভাবধারা বুঝলে তাঁর মানসিক অবস্থান বোঝা যাবে বোধহয়। এহেন মানুষের একটা রচনা থেকে একটু. উদ্ধৃতি দিয়ে রবীন্দ্রনাথের মনোভাব বোঝা র মত এত প্রজ্ঞবান মানুষ. আছে নাকি. এই অস্থির বিপন্ন অসুস্থ সময় কালে ? থাকলে তিনি নমস্য অবশ্যই।
আরো কত কথা ই না মনে আসে।
সাত হাজার বছর আগে রামাযণের সময় মুসলমান বলে কোন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিলোনা। যদি ধর্মের কথাই বলতে হয় হ্যাঁ একথা ঠিক যে হিন্দু ধর্ম কবে থেকে শুরু হল তা জানি না। বৈদিক ধর্ম পরম্পরা থেকে ই কি. আজকের এই পৌত্তলিক হিন্দু ধর্মের আগমন কিনা আমি জানি না। এত ইতিহাস বা সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আমার কোন বিদ্যাশিক্ষা নেই। কিন্তু বাবর? তিনি তো ইতিহাস। তাঁর তৈরি করা একটা মসজিদ কি করে হঠাৎ রামাযণের নায়ক রামের জন্মভূমি হয়ে গেল! তিনি নাকি দেবতা। ইসলাম ধর্ম সম্ভবত নবীনতম প্রচারিত ধর্ম। মাত্র দেড়টিহাজার বছর আগে তার আবির্ভাব। রামের সংগে কি তার যোগ সূত্র বুঝে উঠতে পারি না।
রামকে তার স্বজনেরাই গৃহচ্যূত করেছিল। পারিবারিক কূটনীতি বা বৃদ্ধ রাজা দশরথের তরুণী ভার্যার প্রতি প্রেম রামকে বনবাসে যেতে বাধ্য করল। তখন তো কোন. মুসলমান ছিল না।
আর রামকে সিংহাসন থেকে বঞ্চিত করার এই ছক কষা হয়েছিল সংসারের মধ্যে থেকেই।
সুতরাং রামকে বিশেষ কোন মহৎ সম্প্রদায়ের প্রতিভূ তৈরি করে সোল্লাসে রাম নামে জয়ধ্বনি করে বীরত্ব প্রকাশ করলেই সনাতন ধর্মের প্রভাব বিস্তার করবে ভাবা নির্বুদ্ধিতা।
সব মনীষীদেরই সব ধর্মের দেবদেবী বা মহাপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধার্হ বা অবিশ্বাসী হয়েও কখনও কখনও তাঁদের মানসিকতার গভীরে নিহিত কোন স্বকীয় ভাবনা প্রকাশ করতে পারেন এবং তা সময় এবং উপলক্ষ্য বিশেষে হতেই পারে। সেই একখানি কথা দিয়ে মনীষীদের মানসিকতার বিচার চলে না। অল্প বুদ্ধি অনুকরণে অভ্যস্ত কিছু - না - পাওয়া মানুষের মধ্যে একটা. ভুল চিন্তা ধারা প্রোথিত করে দেবার কাজটিই সন্তর্পনে করে চলেছে এক বিশেষ গোষ্ঠী।