গত সাত আট দশক ধরে ত্রিপুরায় বামপন্থীদের বিশেষত সিপিআই(এম)-এর শক্তির ভিত ছিল পাহাড়। এ রাজ্যে পাহাড়ের টংঘরেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের বীজতলা। যা পরে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এবারের ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ যা সংক্ষেপে এডিসি নামে পরিচিত সেখানকার ভোটে কমিউনিস্টদের ফল বেশ আতঙ্কজনক।
কিন্তু এই ক্ষয় গত তিন বছরে হয়নি। এই ক্ষয় শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। হয়তো রাজ্যের বাম নেতৃত্ব তা বুঝতেও পেরেছিলেন। কিন্তুন তা রোধ করার জন্য কোন ভুমিকা বাম নেতাদের ছিল কিনা তা জানা যায়নি। পরিসংখ্যাতেই তা ধরা পড়ে। ২০০৫ সালে এডিসি ভোটে বামফ্রন্ট পেয়েছিল প্রায় ৭২ শতাংশ ভোট। পাঁচ বছর পরে অর্থাৎ ২০১০ সালে তা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৬৩ শতাংশ ভোট। ২০১৫ সালে তা আরও কমে দাঁড়য় ৪৮ শতাংশ ভোট। কিন্তু এই তিনবারই বামফ্রন্ট ত্রিপুরার এডিসির ২৮ আসনের মধ্যে ২৮টিতেই জয়ী হয়েছিল। গত পনের বছরে এডিসি কোন বিরোধী সদস্য ছিল না। ভোটের শতাংশ কমলেও আসন সংখ্যা ঠিক ছিল বামফ্রন্টের। হয়তো তাই শতাংশের বিষয়টি তেমন করে অনেকের নজরে পড়েনি। আসন সংখ্যা নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন তারা। কিন্তু ২০২১ সালের এডিসি ভোটে একটি আসনও জিততে পারল না বামফ্রন্ট। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর ভোটের শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪.৫১শতাংশে।
এবার ভোটে বামফ্রন্টের ভোট চলে গেছে প্রদ্যোত কিশোরের নতুন দল তিপ্রা মথার কাছে। প্রকাশ্যে এ কাথা বাম নেতৃত্ব খোলাখুলি স্বীকার করুন বা না করুন এটাই বাস্তব। কারণ কি? তিনবছর আগে রাজ্য ক্ষমতা হারানোর পর সারা রাজ্যে বামকর্মীদের বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করে শাসক জোট। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস নামিয়ে আনা হয় ত্রিপুরার গ্রাম পাহাড়ে। এই জায়গায় বাম নেতৃত্ব যতটা এগিয়ে গিয়ে নিজেদের কর্মীদের আশ্রয় দেবার কথা ছিল তা তারা পারেননি। অনেক নেতা নিজেরাই ভয়ে এলাকায় ঢোকেন নি। কর্মীরা আস্থা হারিয়েছেন। সে জায়গায় পাহাড়ে এবার ভোটের সময় পাহাড়ের বাম ভোটাররা দেখেছেন শাসক দলের সন্ত্রাসের বিপক্ষে তাদের আশ্রয় এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো শক্তি আছে তিপ্রা মথার। তাই ভোটে তারা তিপ্রা ম্থাকেই বেছে নিয়েছেন।
এটা অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের মতোই ঘটনা হয়েছে। তৃণমূলের হাত থেকে বাঁচতে বাম ভোটাররা সেখানে রামকে যেমন বেছে নিয়েছিলেন লোকসভা নির্বাচনের সময় তারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ত্রিপুরাতেও। না হলে নতুন দল তিপ্রা মথা ৩৭ শতাংশের বেশি ভোট পেতে পারেনা। আর বামফ্রন্টও ১৪.৫১ শতাংশে নেমে আসতে পারেনা।
আগামী দুবছর পর ত্রিপুরায় বিধানসভার নির্বাচন। তার আগে যদি এই ফসকে যাওয়া ভোটারদের নিজেদের দিকে টেনে আনতে না পারে বাম নেতৃত্ব তা হলে সংকট আরও বাড়বে। তার আগে দরকার বাম নেতৃত্বকে একটু সাহসী হবার।