"পায়খানায় যাবে নাকি?" লুঙ্গির গিট অনেকক্ষণ ধরে খুলতে চেষ্টা করছেন দেখে বাবাকে জিজ্ঞেস করল শান্তনু। ঘড়িতে প্রায় এগারোটা। এখনো স্নানের সময় হয়নি। তাও যেতে চাইলে যাক, এই ভেবে খোঁজ নিলো।
- "হ্যাঁ, দেখি চেষ্টা করে"।
- "তোমার যা চেষ্টা, গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকবে, তারপর উঠে চলে আসবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না", মনে মনে ভাবল শান্তনু।
স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে অবশ্য বলল, "তোমার পায়খানা যাবার প্রয়োজনীয়তা ৫টি বাক্যে আলোচনা করো।"
বক্তৃতা দিতে ভালোবাসতেন বাবা, গুছিয়ে কথা বলার অভ্যাস ছিলো। স্নায়ু বৈকল্যজনিত রোগের কারণে ধীরে ধীরে শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা প্রকট হচ্ছে। দশটা কথা বললে একটা হয়ত অর্থবহ হয়। মানুষ চিনতেও অসুবিধা, মাইজি অর্থাৎ শান্তনুর দিদি এবং ওর মাকে চিনতে পারলেও, ওনার বাবুকে আর চিনতে পারেন না। শুধু দেখেন একটি ছেলে মাঝে মাঝে স্নান করাতে বা খাবার জন্য নিয়ে যায়, আর উদ্ভট উদ্ভট রসিকতা করে।
"এখন ওসব বলা যাবে না" স্পষ্ট উত্তর দিলেন বাবা, শান্তনুর ব্যঙ্গটা গায়ে মাখলেন না। "ওঠ, গামছা পড়ে নাও। স্নানটাও করে নিও একবারে। দাড়িটা কাটতে হবে আজকে"। লকডাউনের পর থেকে সেলুনও খুলেছে শান্তনু বাড়িতে, সপ্তাহে একদিন, একজন খদ্দের নিয়ে। সে খদ্দের দাড়ি কামাবার পর পকেটে হাত দিয়ে বলে, "আহা, তোমার পয়সা তো দিতে পারছিনা।" - "রেখে দিন, পরে মিটিয়ে দেবেন, খাতায় লিখে রাখছি" প্রত্যেকবার বলতে হয় শান্তনুকে।
হঠাৎই একটা বিষয় মাথায় এলো শান্তনুর। তেমন চিন্তার কিছু হয়ত নয়, তাও মনে হল বাবাকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, দেখা যাক উনি কি উত্তর দেন।
"এ দেশে কত সালে এসেছিলে?"
"এসেছি তো অনেকদিন আগে"।
"কাগজপত্র কিছু আছে? জিজ্ঞেস করলে দেখাতে পারবে? কবে থেকে এদেশে আছো, এসব?"
লজ্জামাখা গলায় উত্তর এল, " না সেসব আসলে তেমন কিছুতো নেই ঠিকই"।
"সাহেব কিন্তু জিজ্ঞেস করছেন, কারা কবে এদেশে এসেছে। ঠিকঠাক বলতে না পারলে কিন্তু বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবেন। তখন ' আমার সোনার বাংলা ' গান গাইতে হবে।" ভয় দেখানোর চেষ্টা করল একটু।
"সাহেবরা তো সব আমাদের ছোটবেলায় চলে গেছে।"
"এ সাহেব ব্রিটিশ নয়, আমাদের দেশের বড়কর্তা"- বোঝালো শান্তনু।
এতক্ষণে বাবা উঠে পড়েছেন, শান্তনু লুঙ্গিটা ছাড়িয়ে গামছাটা জড়িয়ে দিল কোমরে।
"যে এসব জিজ্ঞেস করছে, তার নিজেরই অস্তিত্ব থাকবে না", বাবার গলায় অদ্ভুত দৃঢ়তার ইঙ্গিত, অবাক করল শান্তনুকে। দশটা কথার মধ্যে নয়টা কথাই তো তাঁর অসংলগ্ন, গ্রাহ্য করার মত নয়। "বাঃ, এইরকম মনের জোর নিয়ে বসো পায়খানাতে, আর চিন্তা করতে হবে না"- তাও মুচকি হেসে বললো শান্তনু।
"তোমাদের দেশ কোন জায়গাতে ছিল যেন?" -, হাত ধরে পায়খানায় নিয়ে যেতে যেতে শুনতে পেলো, বাবা ওকে জিজ্ঞাসা করছেন।