এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চলচিত্রের খাতা | নিষাদ

    Abhradip Ghatak লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ মার্চ ২০২১ | ১৭৭৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • নিশুতি রাত। কিছুক্ষণ আগেই দারুণ বৃষ্টি হয়ে জঙ্গল ভিজে একসা। আমরা বাইকে লাটাগুড়ির গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ফিরছি। ঠাণ্ডা নেই প্রায়, কিন্তু বাতাসে ভেযা ভেজা ভাব, আলতো করে গালে ঠাণ্ডা বাতাস মাঝে মাঝে ছুঁয়ে যায়।

    জঙ্গলের মাঝে অদ্ভুত এক অপার্থিব আলো। সাদা আলো। চারদিকেই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।

    সবার হাঁতে পিঠে বুকে ঝোলান নানা রংবাহারি ক্যামেরা, ট্রাইপড, আর যা যা অস্ত্র শস্ত্র রয়েছে আর কি। এক্সট্রা শট নিয়ে আমরা প্রায়শই বের হচ্ছিলাম তখন। আর পর্বতপ্রমান যন্ত্র নিয়ে নড়ে নড়ে যেতে হত এক থান থেকে অন্য থানে।

    ফিল্মএ একটি দৃশ্যে একটি বাচ্চা মেয়ে রিসর্টে ঢুকছে আর নিজের খেয়ালেই অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তার ওপারে এক ওয়াচ টাওয়ারের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকে।এখানে এই ছবির জন্য আমাদের অনেক কিছু কায়দা করতে হয়। মেয়েটি যেখানে হাঁ করে চেয়ে ছিল তার ত্রিসীমানায় ওয়াচ টাওয়ার তো দুরে থাক একটা উঁচু ঢিবি পর্যন্ত নেই। অগত্যা আমাদের খুঁজে খুঁজে ওই রিসর্টের আসে পাশের চরিত্রের জঙ্গলের মত এক ওয়াচ টাওয়ার খুঁজে বের করে সেটার শট পরে নিয়ে রাখতে হয়। পরে জুড়ে দিলেই চলবে।

    সেই ওয়াচ টাওয়ার তুলে, আমরা চালসায় এক ছোট বাজারে, পর পর ৪-৫ কাপ চা খেয়ে ফিরছি।

    প্রথম চায়ে বৃষ্টি নামে। পঞ্চম চায়ে একটু ঝিরিঝিরি। ততক্ষণে রাত গড়াচ্ছে। আমাদের, তখন প্রাণ যায় যাক, এবার এগোই... অ্যাডামেন্ট ।

    রওনা দিলাম। দুপাশে অল্প অল্প চা বাগানের মধ্যে দিয়ে রাস্তা । গাড়ি অল্প অল্প যাচ্ছে, একটু দুরে আবছা জঙ্গলের রেখা দেখা যাচ্ছে, ওইখানে আমাদের ঢুকতে হবে ।

    আমার বাইকের পেছনে পদ্মপর্না ব্যাজার মুখে বসে রয়েছে।খানিকটা ভয়ে, খানিকটা ক্ষিদে, খানিক আমার খিটখিট সহ্য করে! বিজিত অন্য বাইকে,পেছনে জিকো বসে খচমচ করে কি যেন চিবোচ্ছে...হ্যাঁ করে থাকার ফলে,মাঝে মাঝেই মুখে পোকা ঢুকে যাচ্ছে, আর বিচ্ছিরি আলুসেদ্ধর মত মুখ করে, থু থু করে ফেলছে…

    এইরকম ভাবে আস্তে আস্তে আমরা ঢুকে গেলাম গভীর অরণ্যের মধ্যে। বৃষ্টি কমে গিয়ে এখন স্প্রে র মত হচ্ছে। আমরা বাইকের আলো নিভিয়ে দিয়ে চলা শুরু করলাম। সেই অপার্থিব আলো। চারদিকে অদ্ভুত সব শব্দ আর ঝিঁঝিঁর ডাক, যেটা পুর্ব পরিচিত, কিন্তু দু একটা শব্দ বাদে, বাকী অনেক শব্দই অচেনা।

    খালি পেটে আমার পেট ডাকছে, সেই শব্দ মিশে গেছে গরুমারার জঙ্গলে।

    মধ্যরাতে অরণ্যে দেখি খালি খিদে পায় !!

    আমরা ফিরছি জলপাইগুড়ি। বাড়ি বসে এত ফুটেজ ডাম্প করে তারপর ছুটি।

    এত শত ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় মহাকালের সেই বাক পার হয়ে এল… আর তার পরেই

    রাস্তার মাঝে, বেশ খানিকটা দূরে, সার বেধে কয়েকটি গাড়ি দাড়িয়ে রয়েছে…

    যারা জংগলের রাস্তায় যাতায়াত করেন, তারা বুঝতে পারবেন, যে এই জমায়েত সাধারণত হাতি বা বাইসন বের হলেই হয়…

    তার ওপর আমরা রয়েছি বাইকে। সব দিক খোলা, চিমসে মার্কা সরু, চুড়ান্ত ইনসিকিউরড,দুটি চাকা বসানো লোহার ফালি!!

    এতে আর কি আশা করা যায়।

    পদ্মপর্না, খোনা গলায়, আবেগে বেশ গান টান গাইছিল…হঠাতই

    দুরের জংগল জমায়েত দেখে, কি না কি ভেবে, অজানা আশংকায় গুম মেরে বসে রইল !!

    জিকো, ক্যামেরা হাতে, ঘন অন্ধকারের ছবি তুলবে বলে বিজিতের কানের কাছে বহুক্ষণ ধরেই ঘ্যানঘ্যান করছিলো। সামনে রাস্তা বন্ধ করে সার সার গাড়ির লাইন দেখে কি ভাবল কে জানে!! ক্যামেরা ঢুকিয়ে ভয়ংকর গম্ভীর হয়ে গেল।

    রাস্তার মাঝে কয়েকটি বাইসন বসে রয়েছে। দুপাশে গাড়ির জমায়েত, কেউ পার হতে পারছে না।

    দূর থেকে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু দূরে।

    আর গাড়ির এক জমায়েত হয়ে রয়েছে আশেপাশে।

    বাইসন ভয়ংকর। বাঘের থেকেও ডেনজারাস বলেই জানি !! বাইসন এর উপস্থিতিতে আমরা কেচো হয়ে আছি আর কি!বাইসনের ধাক্কায় মৃত্যু অনেক শুনেছি, দেখেছি খবরে।

    হাঁ করেই কিছুক্ষণ দাড়িয়ে আছি, আর সামনের গাড়ির মৃদু গুঞ্জন শুনছি।

    এর মধ্যেই এক ম্যাটাডোর আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চেঁচিয়ে বলে গেল…. আরে উও তো গাই হ্যায়।

    আমি খানিকক্ষণ হা করে আছি…

    লোকটা আর একটু মুখ বের করে "দাদা, গরু, গরু !!"

    বলেই সিংগারার মত মুখ করে খ্যা খ্যা করে হাসতে হাসতে হাওয়া হয়ে গেল, পিছনের জংগলের দিকে।

    ওহ। একপাল গরু!! জাস্ট

    আমরা এবার তুলনামূলক উৎফুল্ল হয়ে রওনা দিলাম আবার।

    এই ভাবে নিষাদ চলছে… ভয়ে ভাবনায়, আনন্দে, তিল তিল করে গড়ে উঠেছে এই নিষাদ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন