অবসরের সময় এগিয়ে আসছে। লোকে রিটায়ারমেন্টের জন্যে পয়সা জমায়। সে তো জমাতেই হবে। সেই সঙ্গে স্থির করেছি জায়গাও জমাব। ভারত-নেপাল-ভূটান-বাংলাদেশ-পাকিস্তানের নানা জায়গায়, যেখানে অবসরের আগে পরে গিয়ে সময় কাটান যেতে পারে। দুদিন হতে পারে, দু-হপ্তা হতে পারে, দু-মাস হতে পারে। পাহাড় বা জঙ্গল। নিজেদের অভিজ্ঞতা জানান। জায়গার নাম কী, ভারতের কোথায়, কবে গেছিলেন, ভালত্ব কী - এইসব। সঙ্গে দিয়ে দেবেন, যেতে চাইলে কোথায় কী ব্যবস্থা করতে হবে।
ভোরবেলা উঠে জিপে চেপে বন্যজন্তু দেখার শখ আমার নেই। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে সল্ট-লিকিং দেখারও। অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প যাবারও। শুঁড়িপথ বা চলনসই ট্রেল থাকলে বা না-থাকলেও চলবে। একটা পরিচ্ছন্ন ঘর, পরিস্কার কলঘর, পরিচ্ছন্ন খাবার ব্যবস্থা। রুটি-তরকারি-চা-ডিম হলেই চলে যাবে। কলের বাতি না থাকলেও, চলেগা। কিন্তু অবশ্যশর্ত নির্জনতা। ভিড়ভাট্টার বাইরে, অফ-সার্কিটে। যেন রাতে আকাশে তাকালে খালি চোখে ছায়াপথ দেখা যায়।
আশা করি এই চাহিদা নিয়ে আমার মতন অনেক লোকই আছেন। হয়ে যাক।
নেক্সট রিসেশনটা ঘনিয়ে এলে সস্তায় ছোটোমতো একটা ইয়ট কিনে রাখুন। রিটায়ারমেন্টটা জাঁকিয়ে পড়লে স্রেফ নোঙর তুলে পাল উড়িয়ে দেবেন।
আমার তো ঐই প্ল্যান।
আমার কাপ্তান বন্ধু শ্রীকান্ত ওকে ডেকহ্যান্ড হিসেবে নেবার জন্য হেবী ঝুলোঝুলি করে। কিন্তু আমি রাজি না। শ্রীকান্তটা হেবী মালখোর, ওটাকে নিলে ভুগতে হবে। মালখোর ক্যাপ্টেন সঙ্গে নিয়ে দুনিয়া ঘোরা যে কি ঝামেলার, সেটা বিশ্বেস না হয় তো টিনটিনকে জিজ্ঞেস করুন।
একেবারে সোলো সেলিং করব। সে এককদা, ইন্দোদা যতই বুকে ব্যাথার ভয় দেখাক। রিটায়ারমেন্টের পর আবার প্রাণের ভয় কি ! ! পরদিন অপিস না গেলে মাইনে তো কাটবে না।
ও হ্যাঁ ছায়াপথ... মেঘমুক্ত অমাবস্যার রাতে নিরক্ষরেখার ওপর গিয়ে ন্যাভিগেশন লাইট ছাড়া সব আলো নিভিয়ে দিয়ে আপার ডেকে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। দেখবেন ছায়াপথ কাকে বলে। একবার সে দৃশ্য দেখলে রিটায়ারমেন্টের আগের জীবন আর মনে পড়বে না, সে গ্যারান্টী আমি দিচ্ছি। টু ডি ছায়াপথ সবাই দেখে। ঐ ওপরে বলা কন্ডিশন ফুলফিল করলে আপনি দেখতে পাবেন থ্রি ডি ছায়াপথ। বহু বাঘা বাঘা কসমোলজিস্ট এমনকি এস্ট্রোনটও সে দৃশ্য থেকে বঞ্চিত। টিনটিনের মত ঘরে কোনো এস্ট্রোনট থাকলে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।
এইবারে একটা মনের মতন কিছু পেলাম। এইটাই হ্যাঁ এইটাই। গভীর সমুদ্রে নিরক্ষরেখার উপরে চিৎ হয়ে শুয়ে ছায়াপথ দেখা। বুকের উপরে ছায়াপথ। একেবারে দিগন্ত থেকে দিগন্ত। অর্ধেক অর্ধেক কোনাচে কোনাচে না। একেবারে পুরো। একেই কল্পনা কাজে লাগিয়ে জীবনবাবু বলতে গেছিলেন, "রূপসী ছায়াপথ যেন বুকের উপরে জেগে থাকে, তারই নিচে শুয়ে থাকি যেন আমি অর্ধনারীশ্বর"। আহ, আহ, আহ।
আমাকে নিয়ে যাবে দইওলা?
আমাকেও নিয়ে যেও।
দইওলার পিছনে লম্বা লাইন :-)
কিন্তু উনি দইওলা না। উনি সেই ক্রৌঞ্চদ্বীপের লোক। সেখানে অনেক পাখি। ঝর্ণাও আছে। :-)
হ্যঁ এই হলো রিটারামেন্ট জীবন। আমি ও ছায়াপথ।