এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বাকিসব  মোচ্ছব

  • কবিতা 

    সুজিত বসু
    বাকিসব | মোচ্ছব | ২৯ নভেম্বর ২০২০ | ১১৯৩ বার পঠিত
  • বৃষ্টির মাইথন

                        সুজিত বসু

    স্মৃতির ঝাঁপি খুললে বেরোয় গল্পগুলো দামী

    সোনার চেয়েও অনেক দামী, হয়তো খাঁটি হীরে

    গল্পগুলোর নাম দেবো না, থাক তারা অনামী

    নাম না জানা গল্পগুলো থাকুক মনের নীড়ে

     

    পুরোনো সেই দিনের কিছু গল্প চলুন শুনি

    শুনবেন না?আমি তেমন কেউকেটা নই বলে?

    নাই বা হলাম বিখ্যাত আর নাই বা হলাম গুণী

    ছাইচাপা সব স্মৃতির আগুন উঠবে দেখুন জ্বলে

     

    মাইক্রো মিনির চল ছিলনা, জিনসেরও তো নয়

    লজ্জামাখা শাড়িই তখন ঢাকতো যুবতীর

    বরতনু, বান্ধবীকে সম্বো্ধনে ভয়

    ‘’তুমি বলে ডাকবো ভাবলে লজ্জা দ্বিধার ভিড়

    বন্ধু এসে জানান দিল করছে সবাই বলাবলি

    মাইথনে টুর, শিল্পা যাবে, রত্না, বর্ষা যেতেও পারে

    অতর্কিতে মনের মধ্যে ভেসে উঠলো গানের কলি

    ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’

     

    কয়েক দিনেই জানতে পারি সত্যি এবার মাইথনে টুর

    শিল্পা বর্ষা অপর্ণা আর রত্না যাবে সঠিক খবর

    চতুর্দিকে কেকাধবনি, মন যেন আজ সত্যি ময়ূর

    হঠাৎ যেন দোল এসেছে, রঙ আবিরের বৃষ্টি অঝোর

     

    বাস ছাড়ল ঠিক সময়ে, ফুরিয়ে আসছে তখন বিকেল

    ঝলমলানো শাড়ির আভায় বাসের মধ্যে আলোর মেলা

    নিষ্ঠুর এক ঘোষণাতে নিভলো আলো, বাস হলো জেল

    হঠাৎ যেমন বৃষ্টি এলে ময়দানে হয় স্থগিত খেলা

     

     

    জেলের মধ্যে পৃথক যেমন পুরুষ নারী কয়েদীরা

    এখানে সেই একই নিয়ম, এক অধ্যাপক জানিয়ে দিলেন

    ডান সারিতে উদ্দামতা, বাম সারিতে সলাজ ব্রীড়া

    গভীর রাতে হয়না যাতে স্পর্শনিবিড় ভাব লেনদেন

     

    নিরানন্দ সবাই তবে বিশেষ ভাবে যারা যুবক

    কোনো সুদূর কল্পনাতেও ছিল না এই সম্ভাবনা

    সবাই পেলাম যন্ত্রণাময় হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ শক

    গানের কথাই  সত্যি  তবে, ভালোবাসা এক যাতনা

     

    ইতিউতি তাকায় সবাই, লোকদেখানো সজীবতা

    ডান সারিতে যদিও সবার বামদিকে এক একাগ্র ঝোঁক

    বুঝতে যাতে না পারা য়ায়, বলছে তারা ফালতু কথা

    পিছন সিটে পাহারা দেয় aধ্যাপকের সতর্ক চোখ

     

     

     

    আবহাওয়া তরল করে বান্ধবীদের সুরেলা গান

    যৌবনে যে মউ ঝরে তা স্পষ্ট করেন মাধুরীদি

    মন যে আমার কেউ চিনেছে আরতিদি বিশদ জানান

    গান গেয়ে মন জানাজানি তখন ছিল এই তো রীতি

     

    সুপ্রিয়াকে মন থেকে আজ সরাতে যে হবেই জানি

    কে বসবে তা বুঝছে সে কি, পেরিয়ে গেছি সহ্যসীমা

    কাঁটার মতো বিঁধছে পাশে না বসতে পারার গ্লানি

    রাজহংসী গ্রীবায় শুধু অহংকারের তেজ গরিমা

     

    চলতে চলতে সন্ধ্যে হলো, খানিক পরে রাত ঘনালো

    সবাই আমরা তলিয়ে গেলাম নিবিড় গভীর ঘুমের দেশে

    মধ্যরাতে চমকে জেগে দেখতে আমি পাইনা ভালো

    মুখ যে তখন আচ্ছন্ন তমসাময় কৃষ্ণকেশে

     

     

    আমার পাশে মানবী না স্বপ্নে দেখা আফ্রোদিতি

    ঘুমের ঘোরটা কাটলে বুঝি তারই মাথা আমার কাঁধে

    যে আছে মন জুড়ে আমার, বদলায় সে পরিস্থিতি

    বুঝতে পারি তলিয়ে যাচ্ছি অনিশ্চিতের গহীন খাদে

     

    প্রেমে পতন সবাই বলে, উত্থান তো কেউ বলে না

    তলাতে আর ভয় কি যখন অভয় দিচ্ছে সাহসিনী

    দুরেই ছিল কল্পনাতে, আজ মনে হয়  ভীষণ চেনা

    অনেক বছর পরেও দ্বিধা, ভুল করেছি কি করিনি

     

    সকালবেলা যাত্রা শেষে মাইথনে এক মেঘলা আকাশ

    পছন্দসই সঙ্গী নিয়ে যে যার মতো ঘুরতে থাকি

    সেতুর উপর আমার জন্য প্রতীক্ষাতে যে সর্বনাশ

    সারাজীবন কষ্ট দেবে বুঝতে পারি তার কথা কি

     

     

    ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতে জড়িয়ে ধরে আফ্রোদিতি

    শাড়ির নিচে প্রস্ফুটিত মনভোলানো উপত্যকা

    অনেক বছর পরেও মনে উজ্জ্বল সেই দিনের স্মৃতি

    বৃষ্টিমুখর ঘেরাটোপের মধ্যে আকুল সখী সখা

     

    সঙ্গিনী তার পাপড়ি খোলে, সাড়া  দিলাম সে আহ্বানে

    রঞ্জনী নয় চাকের মধু-র স্বাদই পেলাম ওষ্ঠাধরে

    প্রথম ঠোঁটে ঠোঁট মেলানোর হর্ষ কি তা সবাই জানে

    চুম্বনে যে বিষাদ থাকে তা জেনেছি অনেক পরে

     

     

    ঘষা কাচের দেওয়াল তুলে বর্ষা জড়ায় স্নেহের চাদর

    মাটির ভিজে গন্ধে সোঁদা পাগল করা মাদকতা

    বৃষ্টি থামলে হঠাৎ কাটে মদির নেশার নিষিদ্ধ ঘোর

    এবার বাড়ি ফেরার পালা, ফুরিয়ে আসছে আমার কথা

     

    কলেজ খুললে অধ্যাপকের কাছে যাওয়ার কঠিন আদেশ

    “ছি ছি বাসের মধ্যে রাতে দেখালি তুই কি সিনেমা”

    বুকটা তখন দুরুদুরু, সুখের স্মৃতির নেই কোনো লেশ

    ‘নিজেকে কি রাজেশ ভাবিস, বান্ধবীকে ভাবিস হেমা! !

     

    ভাবছি এবার তোর মামাকে সরাসরি গিয়েই বলি

    পড়াশুনোয় ফাঁকি দিয়ে ভাগনে করে প্রণয়ালাপ

    বান্ধবীকে বসিয়ে পাশে বাসের মধ্যে ঢলাঢলি

    ভাবছিল সে অন্ধকারই ঢেকে রাখবে তার সব পাপ’

     

    কি আর বলবো, নেই যে তখন পায়ের নিচে শক্ত জমি

    পরাশ্রয়ী বলেই তখন সহ্য করি সব অপমান

    ধরবে না এই অশক্ত হাত জানি তখন কেউ মরমী

    প্রতিশ্রুতি দিতেই হলো বুকের মধ্যে বেঁধে পাষাণ

     

     

     

    চেষ্টা সে খুব করেছিল অনেকবারই কাছে আসার

    দূরের থেকে দেখতে পেলেই পালিয়ে গেছি অন্তরালে

    মানসচোখে দেখতে পারি রক্তশূন্য মুখ যেন তার

    গুলিবিদ্ধ পশুর মতো গোপন করি মুখ আড়ালে

     

    অনেক বছর পরে ভাবি যদিই কোনো মন্ত্রবলে

    চিত্রপটটা বদলে যেত, জীবন বইতো অন্য বাঁকে

    হয়তো আসতো ঘূর্ণিঝড় আর আসতো বিপদরূপী কুমির

    সেই মানসী থাকলে পাশে এড়িয়ে যেতাম যে কৌশলে

    তা ভেবে আর কিই বা হবে, ঘর শধু আজ অশান্তিনীড়
    নিস্তরঙ্গ পানসে জীবন চাই না বলবো বিধাতাকে !

     

     

     

     

     

     

    নামটা কিন্তু বলিনি তার, একটা কোনো নাম বেছে নিন

    আজ নিশ্চয় পরস্ত্রী সে, এবং হয়তো সে জননী

    নাম বলা তাই ঠিক হবে না, তার কাছে থাক আর একটু ঋণ

    অস্পষ্ট দেখবো তাকে, শুনবো মৃদু পদধ্বনি

     

    সুখের সঙ্গে জীবন দিল অন্তবিহীন শোক

    মধুর স্মৃতির সঙ্গে দিল তিক্তকষায় শিক্ষা

    এবার নতশিরে অনুতাপের কথাই হোক

    এই কবিতার উদ্দেশ্য হয়তো ক্ষমাভিক্ষা।

     

     

     



     

     

     

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন