এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আকাঙ্খা 

    Chowdhury Production লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ নভেম্বর ২০২০ | ৭৯৫ বার পঠিত
  • আমার আব্বা তাহের উদ্দীন ব্যাপারী ব্যাপক পরিশ্রমী একজন মানুষ। যেই চাকরিতে তিনি এখন আছেন, সেইটাতে খুব একটা উন্নতির সুযোগ নাই বলে তার ধারণা। তাই প্রায় প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফিরেই উনি পড়তে বসেন টেকনিক্যাল দক্ষতা বাড়ানোর কোর্সগুলোর জন্য। শুক্রবার ছাড়া আমাদের সাথে একসাথে তার খেতে বসা হয় না বললেই চলে। আমাদের জন্য সবক্ষেত্রে সব থেকে ভালো প্রোডাক্টটা কিনে দিতে না পারার কষ্টটা তাকে পোড়ায়।

    আমি বা আমার ভাইদের কেউ যখনই বাসায় সময় না দেয়ার জন্য তার সাথে চিল্লাচিল্লি করি, উনি বলেন, "এগুলা কাদের জন্য করতেছি? তোমাদের জন্যই তো! আমি কি ইচ্ছা করে সময় দেই না!"

    অবশেষে একদিন সময় হলো তার পরিবারের সাথে কাটানোর। সেদিন ওনার একটা কোর্স ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছিল, বেশ ভালো ভাবেই পাশ করেছেন তিনি। আমরা সবাই সেটাকে সেলিব্রেট করতে একসাথে খেতে গেলাম বাইরে। অনেকদিন পর একটা ভালো ফ্যামিলি টাইম পার করেছিলাম আমরা।

    তবে পরীক্ষা শেষ হলেও তার ব্যস্ততা কমলো না, বরং আরো বাড়লো বলা যায়। কারণ পরীক্ষারা আসলে কখনো শেষ হয় না। এক পরীক্ষার সাফল্য ঠেলে দেয় অপেক্ষাকৃত কঠিন আরেক পরীক্ষার দিকে। এই প্রক্রিয়ার শুরু আছে, শেষ নাই। পরীক্ষা পাশের কয়েক মাস পরে আব্বা নতুন চাকরিতে যোগ দিলেন, এইখানে বেতন তূলনামূলক ভাবে বাড়লো। বাড়লো খাটনিও। তাই তিনি চাকরিতে উন্নতি করার জন্য মন-প্রাণ দিয়ে খাটতে লাগলেন মালিকপক্ষের নজর কাড়ার জন্য। এর সুবাদে বাড়িতে আসতে থাকলো ওয়াশিং মেশিন, বড় স্ক্রিণের টেলিভিশন সহ আরো সব জীবনকে সহজ করা যন্ত্র। এর সাথে নতুন ব্রান্ডের জামা, বাড়িতে পার্মানেন্ট বুয়া তো আছেই।

    আমরা সবই সবই পাচ্ছিলাম,পাচ্ছিলাম না খালি আব্বারে। ম্যানেজারিয়াল পোস্ট পাওয়ার জন্য উনি কোম্পানির কাজে মন-প্রাণ ঢেলে দিছিলেন। বাড়িতে খালি ঘুমাইতে আসতেন বলা যায়। তবে সেই ঘুমাইতেনও বেশি না, মাঝে মাঝেই অফিসের কাজে ল্যাপটপ নিয়ে বসতে হতো তাকে।কারো বিয়ে কী অন্য অনুষ্ঠানেও কদাচিৎ যাইতেন। গিফটের টাকা দিয়া তার দায়িত্বের ইতি টানতেন বেশিরভাগ সময়।

    কিন্তু আফসোসের ব্যাপার হলো এতকিছুর পরেও এক্সপেক্টেড পোস্টটার জন্য আরো দু-একজনের সাথে তাকেও ডাকা হলেও পদটা পেল অন্য একজন। এটাতে তিনি মুষড়ে পড়লেন। রাতে ঘুমাতে পারতেন না ঠিকভাবে। কয়েকদিন বাদে বাড়িতে ফেরার পর তাকে উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। সাথে রাজ্যের বাজার করে আনছিলেন। চিংড়ি মাছের আইটেমটা উনি নিজেই রান্না করলেন মহা উৎসাহ নিয়ে। রাতে খাওয়ার সময় অনেক বছর পর আমাদের সাথে প্রাণ খুলে গল্প করলেন, হাসলেন। তার কথাবার্তা কেমন একটু অসংলগ্ন ঠেকছিল। আসলে তাকে এভাবে দেখে আমরা অভ্যস্ত না। তিনি বললেন আজ থেকে আর অফিসে বেশি সময় দেবেন না। আগামী কয়েকদিন ছুটি নিয়েছেন আর এ কয়দিন আমাদের নিয়ে ঘুরবেন উনি। এইটা বলে প্রফুল্লচিত্তে ঘুমাতে গেলেন।

    পরদিন সকালে আব্বা আর জাগলেন না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন